1 তখন স্বর্গ-রাজ্য এমন দশটী কুমারীর তুল্য বলিতে হইবে, যাহারা আপন আপন প্রদীপ লইয়া বরের সহিত সাক্ষাৎ করিতে বাহির হইল।2 তাহাদের মধ্যে পাঁচ জন নির্বুদ্ধি, আর পাঁচ জন সুবুদ্ধি ছিল।3 কারণ যাহারা নির্বুদ্ধি, তাহারা আপন আপন প্রদীপ লইল, সঙ্গে তৈল লইল না;4 কিন্তু সুবুদ্ধিরা আপন আপন প্রদীপের সহিত পাত্রে করিয়া তৈল লইল।5 আর বর বিলম্ব করাতে সকলে ঢুলিতে ঢুলিতে ঘুমাইয়া পড়িল।6 পরে মধ্য রাত্রে এই উচ্চরব হইল, দেখ, বর! তাঁহার সহিত সাক্ষাৎ করিতে বাহির হও।7 তাহাতে সেই কুমারীরা সকলে উঠিল, এবং আপন আপন প্রদীপ সাজাইল।8 আর নির্বুদ্ধিরা সুবুদ্ধিদিগকে বলিল, তোমাদের তৈল হইতে আমাদিগকে কিছু দেও, কেননা আমাদের প্রদীপ নিবিয়া যাইতেছে।9 কিন্তু সুবুদ্ধিরা উত্তর করিয়া কহিল, হয় ত তোমাদের ও আমাদের জন্য কুলাইবে না; তোমরা বরং বিক্রেতাদের নিকটে গিয়া আপনাদের জন্য ক্রয় কর।10 তাহারা ক্রয় করিতে যাইতেছে, ইতিমধ্যে বর আসিলেন; এবং যাহারা প্রস্তুত ছিল, তাহারা তাঁহার সঙ্গে বিবাহবাটীতে প্রবেশ করিল; আর দ্বার রুদ্ধ হইল।11 শেষে অন্য সকল কুমারীও আসিয়া কহিতে লাগিল, প্রভু, প্রভু, আমাদিগকে দ্বার খুলিয়া দিউন।12 কিন্তু তিনি উত্তর করিয়া কহিলেন, তোমাদিগকে সত্য কহিতেছি, আমি তোমাদিগকে চিনি না।13 অতএব জাগিয়া থাক; কেননা তোমরা সেই দিন বা সেই দণ্ড জান না।14 কারণ মনে কর, যেন কোন ব্যক্তি বিদেশে যাইতেছেন, তিনি আপন দাসদিগকে ডাকিয়া নিজ সম্পত্তি তাহাদের হস্তে সমর্পণ করিলেন।15 তিনি এক জনকে পাঁচ তালন্ত, অন্য জনকে দুই তালন্ত, এবং আর এক জনকে এক তালন্ত, যাহার যেরূপ শক্তি, তাহাকে তদনুসারে দিলেন; পরে বিদেশে চলিয়া গেলেন।16 যে পাঁচ তালন্ত পাইয়াছিল, সে তখনই গেল, তাহা দিয়া ব্যবসা করিল, এবং আর পাঁচ তালন্ত লাভ করিল।17 যে দুই তালন্ত পাইয়াছিল, সেও তদ্রূপ করিয়া আর দুই তালন্ত লাভ করিল।18 কিন্তু যে এক তালন্ত পাইয়াছিল, সে গিয়া ভূমিতে গর্ত্ত খুঁড়িয়া আপন প্রভুর টাকা লুকাইয়া রাখিল।19 দীর্ঘকালের পর সেই দাসদিগের প্রভু আসিয়া তাহাদের নিকট হইতে হিসাব লইলেন।20 তখন যে পাঁচ তালন্ত পাইয়াছিল, সে আসিয়া আরও পাঁচ তালন্ত আনিয়া কহিল, প্রভু, আপনি আমার নিকটে পাঁচ তালন্ত সমর্পণ করিয়াছিলেন; দেখুন, আর পাঁচ তালন্ত লাভ করিয়াছি।21 তাহার প্রভু তাহাকে কহিলেন, বেশ, উত্তম ও বিশ্বস্ত দাস; তুমি অল্প বিষয়ে বিশ্বস্ত হইলে, আমি তোমাকে বহু বিষয়ের উপরে নিযুক্ত করিব; তুমি আপন প্রভুর আনন্দের সহভাগী হও।22 পরে যে দুই তালন্ত পাইয়াছিল, সেও আসিয়া কহিল, প্রভু, আপনি আমার নিকটে দুই তালন্ত সমর্পণ করিয়াছিলেন; দেখুন, আর দুই তালন্ত লাভ করিয়াছি।23 তাহার প্রভু তাহাকে কহিলেন, বেশ! উত্তম ও বিশ্বস্ত দাস; তুমি অল্প বিষয়ে বিশ্বস্ত হইলে, আমি তোমাকে বহু বিষয়ের উপরে নিযুক্ত করিব; তুমি আপন প্রভুর আনন্দের সহভাগী হও।24 পরে যে এক তালন্ত পাইয়াছিল, সেও আসিয়া কহিল, প্রভু, আমি জানিতাম, আপনি কঠিন লোক; যেখানে বুনেন নাই, সেইখানে কাটিয়া থাকেন, ও যেখানে ছড়ান নাই, সেইখানে কুড়াইয়া থাকেন।25 তাই আমি ভীত হইয়া গিয়া আপনার তালন্ত ভূমির মধ্যে লুকাইয়া রাখিয়াছিলাম; দেখুন, আপনার যাহা আপনি পাইলেন।26 কিন্তু তাহার প্রভু উত্তর করিয়া তাহাকে কহিলেন, দুষ্ট অলস দাস, তুমি নাকি জানিতে, আমি যেখানে বুনি নাই, সেইখানে কাটি, এবং যেখানে ছড়াই নাই, সেইখানে কুড়াই?27 তবে পোদ্দারদের হাতে আমার টাকা রাখিয়া দেওয়া তোমার উচিত ছিল; তাহা করিলে আমি আসিয়া আমার যাহা তাহা সুদের সহিত পাইতাম।28 অতএব তোমরা ইহার নিকট হইতে ঐ তালন্ত লও, এবং যাহার দশ তালন্ত আছে, তাহাকে দেও;29 কেননা যে কোন ব্যক্তির নিকটে আছে, তাহাকে দত্ত হইবে, তাহাতে তাহার বাহুল্য হইবে; কিন্তু যাহার নাই, তাহার যাহা আছে, তাহাও তাহার নিকট হইতে নীত হইবে।30 আর তোমরা ঐ অনুপযোগী দাসকে বাহিরের অন্ধকারে ফেলিয়া দেও; সেই স্থানে রোদন ও দন্তঘর্ষণ হইবে।31 আর যখন মনুষ্যপুত্র সমুদয় দূত সঙ্গে করিয়া আপন প্রতাপে আসিবেন, তখন তিনি নিজ প্রতাপের সিংহাসনে বসিবেন।32 আর সমুদয় জাতি তাঁহার সম্মুখে একত্রীকৃত হইবে; পরে তিনি তাহাদের এক জন হইতে অন্য জনকে পৃথক্ করিবেন, যেমন পালরক্ষক ছাগ হইতে মেষ পৃথক্ করে;33 আর তিনি মেষদিগকে আপনার দক্ষিণদিকে ও ছাগদিগকে বামদিকে রাখিবেন।34 তখন রাজা আপনার দক্ষিণ দিকে স্থিত লোকদিগকে বলিবেন, আইস, আমার পিতার আশীর্ব্বাদ পাত্রেরা, জগতের পত্তনাবধি যে রাজ্য তোমাদের জন্য প্রস্তুত করা গিয়াছে, তাহার অধিকারী হও।35 কেননা আমি ক্ষুধিত হইয়াছিলাম, আর তোমরা আমাকে আহার দিয়াছিলে; পিপাসিত হইয়াছিলাম, আর আমাকে পান করাইয়াছিলে; অতিথি হইয়াছিলাম, আর আমাকে আশ্রয় দিয়াছিলে;36 বস্ত্রহীন হইয়াছিলাম, আর আমাকে বস্ত্র পরাইয়াছিলে; পীড়িত হইয়াছিলাম, আর আমার তত্ত্বাবধান করিয়াছিলে; কারাগারস্থ হইয়াছিলাম, আর আমার নিকটে আসিয়াছিলে।37 তখন ধার্ম্মিকেরা উত্তর করিয়া তাঁহাকে বলিবে, প্রভু, কবে আপনাকে ক্ষুধিত দেখিয়া ভোজন করাইয়াছিলাম, কিম্বা পিপাসিত দেখিয়া পান করাইয়াছিলাম?38 কবেই বা আপনাকে অতিথি দেখিয়া আশ্রয় দিয়াছিলাম, কিম্বা বস্ত্রহীন দেখিয়া বস্ত্র পরাইয়াছিলাম?39 কবেই বা আপনাকে পীড়িত কিম্বা কারাগারস্থ দেখিয়া আপনার নিকটে গিয়াছিলাম?40 তখন রাজা উত্তর করিয়া তাহাদিগকে বলিবেন, আমি তোমাদিগকে সত্য কহিতেছি, আমার এই ভ্রাতৃগণের—এই ক্ষুদ্রতমদিগের—মধ্যে এক জনের প্রতি যখন ইহা করিয়াছিলে, তখন আমারই প্রতি করিয়াছিলে।41 পরে তিনি বামদিকে স্থিত লোকদিগকেও বলিবেন, ওহে শাপগ্রস্ত সকল, আমার নিকট হইতে দূর হও, দিয়াবলের ও তাহার দূতগণের জন্য যে অনন্ত অগ্নি প্রস্তুত করা গিয়াছে, তাহার মধ্যে যাও।42 কেননা আমি ক্ষুধিত হইয়াছিলাম, আর তোমরা আমাকে আহার দেও নাই; পিপাসিত হইয়াছিলাম, আর আমাকে পান করাও নাই;43 অতিথি হইয়াছিলাম, আর আমাকে আশ্রয় দেও নাই; বস্ত্রহীন হইয়াছিলাম, আর আমাকে বস্ত্র পরাও নাই; পীড়িত ও কারাগারস্থ হইয়াছিলাম, আর আমার তত্ত্বাবধান কর নাই।44 তখন তাহারাও উত্তর করিবে, বলিবে, প্রভু, কবে আপনাকে ক্ষুধিত, কি পিপাসিত, কি অতিথি, কি বস্ত্রহীন, কি পীড়িত, কি কারাগারস্থ দেখিয়া আপনার পরিচর্য্যা করি নাই?45 তখন তিনি উত্তর করিয়া তাহাদিগকে বলিবেন, আমি তোমাদিগকে সত্য কহিতেছি, তোমরা এই ক্ষুদ্রতমদিগের কোন এক জনের প্রতি যখন ইহা কর নাই, তখন আমারই প্রতি কর নাই।46 পরে ইহারা অনন্ত দণ্ডে, কিন্তু ধার্ম্মিকেরা অনন্ত জীবনে প্রবেশ করিবে।