1 [1] সেই সময়ে যীশু বিশ্রামবারে শস্যক্ষেত্র দিয়া গমন করিলেন; আর তাঁহার শিষ্যেরা ক্ষুধিত হওয়াতে শীষ ছিঁড়িয়া ছিঁড়িয়া খাইতে লাগিলেন।2 কিন্তু ফরীশীরা তাহা দেখিয়া তাঁহাকে বলিল, দেখ, বিশ্রামবারে যাহা করা বিধেয় নয়, তাহাই তোমার শিষ্যগণ করিতেছে।3 তিনি তাহাদিগকে কহিলেন, দায়ূদ ও তাঁহার সঙ্গীরা ক্ষুধিত হইলে তিনি যাহা করিয়াছিলেন, তাহা কি তোমরা পাঠ কর নাই?4 তিনি ত ঈশ্বরের গৃহে প্রবেশ করিলেন, এবং তাঁহারা দর্শন-রুটী ভোজন করিলেন, যাহা তাঁহার ও তাঁহার সঙ্গীদের ভোজন করা বিধেয় ছিল না, কেবল যাজকবর্গেরই বিধেয় ছিল ।5 আর তোমরা কি ব্যবস্থায় পাঠ কর নাই যে, বিশ্রামবারে যাজকেরা ধর্ম্মধামে বিশ্রামবার লঙ্ঘন করিলেও নির্দ্দোষ থাকে?6 কিন্তু আমি তোমাদিগকে বলিতেছি, এই স্থানে ধর্ম্মধাম হইতে মহান্ এক ব্যক্তি আছেন।7 কিন্তু “আমি দয়াই চাই, বলিদান নয়,” এই কথার অর্থ কি, তাহা যদি তোমরা জানিতে, তবে নির্দ্দোষদিগকে দোষী করিতে না।8 কেননা মনুষ্যপুত্র বিশ্রামবারের কর্ত্তা।9 পরে তিনি তথা হইতে চলিয়া গিয়া তাহাদের সমাজ-গৃহে প্রবেশ করিলেন।10 আর দেখ, একটী লোক, তাহার একখানি হাত শুকাইয়া গিয়াছিল। তখন তাহারা তাঁহাকে জিজ্ঞাসা করিল, বিশ্রামবারে কি সুস্থ করা বিধেয়? তাঁহার উপরে দোষারোপ করিবার নিমিত্ত ইহা বলিল।11 তিনি তাহাদিগকে কহিলেন, তোমাদের মধ্যে এমন ব্যক্তি কে, যে একটী মেষ রাখে, আর সেটী যদি বিশ্রামবারে গর্ত্তে পড়িয়া যায়, সে কি তাহা ধরিয়া তুলিবে না?12 তবে মেষ হইতে মনুষ্য আরও কত শ্রেষ্ঠ! অতএব বিশ্রামবারে সৎকর্ম্ম করা বিধেয়।13 তখন তিনি সেই লোকটীকে কহিলেন, তোমার হাত বাড়াইয়া দেও; তাহাতে সে বাড়াইয়া দিল, আর তাহা অন্যটীর ন্যায় পুনরায় সুস্থ হইল।14 পরে ফরীশীরা বাহিরে গিয়া তাঁহার বিরুদ্ধে মন্ত্রণা করিতে লাগিল, কি প্রকারে তাঁহাকে বিনষ্ট করিতে পারে।15 যীশু তাহা জানিয়া তথা হইতে চলিয়া গেলেন; অনেক লোক তাঁহার পশ্চাৎ পশ্চাৎ গমন করিল, আর তিনি সকলকে সুস্থ করিলেন,16 এবং এই দৃঢ় আজ্ঞা দিলেন, তোমরা আমার পরিচয় দিও না।17 —যেন যিশাইয় ভাববাদী দ্বারা কথিত এই বচন পূর্ণ হয়,18 “দেখ, আমার দাস, তিনি আমার মনোনীত, আমার প্রিয়, আমার প্রাণ তাঁহাতে প্রীত, আমি তাঁহার উপরে আপন আত্মাকে স্থাপন করিব, আর তিনি জাতিগণের কাছে ন্যায়বিচার প্রচার করিবেন।19 তিনি কলহ করিবেন না, উচ্চশব্দও করিবেন না, পথে কেহ তাঁহার রব শুনিতে পাইবে না।20 তিনি থেৎলা নল ভাঙ্গিবেন না, সধূম শলিতা নির্ব্বাণ করিবেন না, যে পর্য্যন্ত না ন্যায়বিচার জয়ীরূপে প্রচলিত করেন।21 আর তাঁহার নামে পরজাতিগণ প্রত্যাশা রাখিবে।”22 তখন এক জন ভূতগ্রস্ত তাঁহার নিকটে আনীত হইল, সে অন্ধ ও গোঁগা; আর তিনি তাহাকে সুস্থ করিলেন, তাহাতে সেই গোঁগা কথা কহিতে ও দেখিতে লাগিল।23 ইহাতে সমস্ত লোক চমৎকৃত হইল ও বলিতে লাগিল, ইনিই কি সেই দায়ূদ সন্তান?24 কিন্তু ফরীশীরা তাহা শুনিয়া কহিল, এ ব্যক্তি আর কিছুতে নয়, কেবল ভূতগণের অধিপতি বেল্সবূলের দ্বারাই ভূত ছাড়ায়।25 তাহাদের চিন্তা জানিয়া তিনি তাহাদিগকে কহিলেন, যে কোন রাজ্য আপনার বিপক্ষে ভিন্ন হয়, তাহা উচ্ছিন্ন হয়; এবং যে কোন নগর কিম্বা পরিবার আপনার বিপক্ষে ভিন্ন হয়, তাহা স্থির থাকিবে না।26 আর শয়তান যদি শয়তানকে ছাড়ায়, সে ত আপনারই বিপক্ষে ভিন্ন হইল; তবে তাহার রাজ্য কি প্রকারে স্থির থাকিবে?27 আর আমি যদি বেল্সবূলের দ্বারা ভূত ছাড়াই, তবে তোমাদের সন্তানেরা কাহার দ্বারা ছাড়ায়? এই জন্য তাহারাই তোমাদের বিচারকর্ত্তা হইবে।28 কিন্তু আমি যদি ঈশ্বরের আত্মা দ্বারা ভূত ছাড়াই, তবে সুতরাং ঈশ্বরের রাজ্য তোমাদের কাছে আসিয়া পড়িয়াছে।29 আর অগ্রে সেই বলবান্ ব্যক্তিকে না বাঁধিয়া কে কেমন করিয়া সেই বলবানের গৃহে প্রবেশ করিয়া তাহার ঘরের দ্রব্য লুট করিতে পারিবে? বাঁধিলে পরেই সে তাহার ঘর লুট করিবে।30 যে আমার সপক্ষ নয়, সে আমার বিপক্ষ; এবং যে আমার সহিত কুড়ায় না, সে ছড়াইয়া ফেলে।31 এই কারণ আমি তোমাদিগকে বলিতেছি, মনুষ্যদের সকল পাপ ও নিন্দার ক্ষমা হইবে, কিন্তু পবিত্র আত্মার নিন্দার ক্ষমা হইবে না।32 আর যে কেহ মনুষ্যপুত্রের বিরুদ্ধে কোন কথা কহে, সে ক্ষমা পাইবে; কিন্তু যে কেহ পবিত্র আত্মার বিরুদ্ধে কথা কহে, সে ক্ষমা পাইবে না, ইহকালেও নয়, পরকালেও নয়।33 হয় গাছকে ভাল বল, এবং তাহার ফলকেও ভাল বল; নয় গাছকে মন্দ বল, এবং তাহার ফলকেও মন্দ বল; কেননা ফল দ্বারাই গাছ চেনা যায়।34 হে সর্পের বংশেরা, তোমরা মন্দ হইয়া কেমন করিয়া ভাল কথা কহিতে পার? কেননা হৃদয় হইতে যাহা ছাপিয়া উঠে, মুখ তাহাই বলে।35 ভাল মানুষ ভাল ভাণ্ডার হইতে ভাল দ্রব্য বাহির করে, এবং মন্দ মানুষ মন্দ ভাণ্ডার হইতে মন্দ দ্রব্য বাহির করে।36 আর আমি তোমাদিগকে বলিতেছি, মনুষ্যেরা যত অনর্থক কথা বলে, বিচার-দিনে সেই সকলের হিসাব দিতে হইবে।37 কারণ তোমার বাক্য দ্বারা তুমি নির্দ্দোষ বলিয়া গণিত হইবে, আর তোমার বাক্য দ্বারাই তুমি দোষী বলিয়া গণিত হইবে।38 তখন কয়েক জন অধ্যাপক ও ফরীশী তাঁহাকে বলিল, হে গুরু, আমরা আপনার কাছে কোন চিহ্ন দেখিতে ইচ্ছা করি।39 তিনি উত্তর করিয়া তাহাদিগকে কহিলেন, এই কালের দুষ্ট ও ব্যভিচারী লোকে চিহ্নের অন্বেষণ করে, কিন্তু যোনা ভাববাদীর চিহ্ন ছাড়া আর কোন চিহ্ন ইহাদিগকে দেওয়া যাইবে না।40 কারণ যোনা যেমন তিন দিবারাত্র বৃহৎ মৎস্যের উদরে ছিলেন, তেমনি মনুষ্যপুত্রও তিন দিবারাত্র পৃথিবীর গর্ভে থাকিবেন।41 নীনবীয় লোকেরা বিচারে এই কালের লোকদের সহিত দাঁড়াইয়া ইহাদিগকে দোষী করিবে, কেননা তাহারা যোনার প্রচারে মন ফিরাইয়াছিল, আর দেখ, যোনা হইতে মহান্ এক ব্যক্তি এখানে আছেন।42 দক্ষিণ দেশের রাণী বিচারে এই কালের লোকদের সহিত উঠিয়া ইহাদিগকে দোষী করিবেন; কেননা শলোমনের জ্ঞানের কথা শুনিবার জন্য তিনি পৃথিবীর প্রান্ত হইতে আসিয়াছিলেন, আর দেখ, শলোমন হইতে মহান্ এক ব্যক্তি এখানে আছেন।43 আর অশুচি আত্মা যখন মনুষ্য হইতে বাহির হইয়া যায়, তখন জলবিহীন নানা স্থান দিয়া ভ্রমণ করতঃ বিশ্রামের অন্বেষণ করে, কিন্তু তাহা পায় না।44 তখন সে বলে, আমি যেখান হইতে বাহির হইয়া আসিয়াছি, আমার সেই গৃহে ফিরিয়া যাই; পরে সে আসিয়া তাহা শূন্য, মার্জ্জিত ও শোভিত দেখে।45 তখন সে গিয়া আপনা হইতে দুষ্ট অপর সাত আত্মাকে সঙ্গে লইয়া আইসে, আর তাহারা সেই স্থানে প্রবেশ করিয়া বাস করে; তাহাতে সেই মনুষ্যের প্রথম দশা হইতে শেষ দশা আরও মন্দ হয়। এই কালের দুষ্ট লোকদের প্রতি তাহাই ঘটিবে।46 তিনি লোকসমূহকে এই সকল কথা কহিতেছেন, এমন সময়ে, দেখ, তাঁহার মাতা ও ভ্রাতারা তাঁহার সহিত কথা কহিবার চেষ্টায় বাহিরে দাঁড়াইয়া ছিলেন।47 তখন এক ব্যক্তি তাঁহাকে কহিল, দেখুন, আপনার মাতা ও ভ্রাতারা আপনার সহিত কথা কহিবার চেষ্টায় বাহিরে দাঁড়াইয়া আছেন।48 কিন্তু যে এই কথা বলিল, তাহাকে তিনি উত্তর করিলেন, আমার মাতা কে? আমার ভ্রাতারাই বা কাহারা? পরে তিনি আপন শিষ্যগণের দিকে হাত বাড়াইয়া কহিলেন,49 এই দেখ, আমার মাতা ও আমার ভ্রাতারা;50 কেননা যে কেহ আমার স্বর্গস্থ পিতার ইচ্ছা পালন করে, সেই আমার ভ্রাতা ও ভগিনী ও মাতা।