1 পরে তিনি তথা হইতে প্রস্থান করিয়া আপন দেশে আসিলেন, এবং তাঁহার শিষ্যেরা তাঁহার পশ্চাৎ গমন করিলেন।2 বিশ্রামবার উপস্থিত হইলে তিনি সমাজ-গৃহে উপদেশ দিতে লাগিলেন; তাহাতে অনেক লোক তাঁহার কথা শুনিয়া চমৎকৃত হইয়া কহিল, ইহার এ সকল কোথা হইতে হইয়াছে? ইহাকে যে জ্ঞান দত্ত হইয়াছে, এবং ইহার হস্ত দ্বারা যে এরূপ পরাক্রম-কার্য্য সকল সম্পন্ন হয়, এই বা কি?3 এ কি সেই সূত্রধর, মরিয়মের সেই পুত্র এবং যাকোব, যোষি, যিহূদা ও শিমোনের ভাই নয়? এবং ইহার ভগিনীরা কি এখানে আমাদের মধ্যে নাই? এইরূপে তাহারা তাঁহাতে বিঘ্ন পাইতে লাগিল।4 তখন যীশু তাহাদিগকে কহিলেন, আপনার দেশ ও আত্মীয় স্বজন এবং আপনার বাটী ভিন্ন আর কোথাও ভাববাদী অসম্মানিত হন না।5 তখন তিনি সে স্থানে আর কোন পরাক্রম-কার্য্য করিতে পারিলেন না, কেবল কয়েক জন রোগগ্রস্ত লোকের উপরে হস্তার্পণ করিয়া তাহাদিগকে সুস্থ করিলেন।6 আর তিনি তাহাদের অবিশ্বাস প্রযুক্ত আশ্চর্য্য জ্ঞান করিলেন। পরে তিনি চারিদিকে গ্রামে গ্রামে ভ্রমণ করিয়া উপদেশ দিলেন।7 আর তিনি সেই বারো জনকে ডাকিয়া দুই দুই জন করিয়া তাঁহাদিগকে প্রেরণ করিতে আরম্ভ করিলেন; এবং তাঁহাদিগকে অশুচি আত্মাদের উপরে ক্ষমতা দান করিলেন;8 আর আজ্ঞা করিলেন, তোমরা যাত্রার জন্য এক এক যষ্টি ব্যতিরেকে আর কিছু লইও না, রুটীও না, ঝুলিও না, গেঁজিয়ায় পয়সাও না;9 কিন্তু পায়ে পাদুকা দেও, আর দুইটা আঙ্রাখা পরিও না।10 তিনি তাঁহাদিগকে আরও কহিলেন, তোমরা যে কোন স্থানে যে বাটীতে প্রবেশ করিবে, সেই স্থান হইতে প্রস্থান করা পর্য্যন্ত সেই বাটীতেই থাকিও।11 আর যে কোন স্থানের লোকে তোমাদিগকে গ্রহণ না করে, এবং তোমাদের কথাও না শুনে, তথা হইতে প্রস্থান করিবার সময় তাহাদের উদ্দেশে সাক্ষ্যের জন্য আপন আপন পায়ের ধূলা ঝাড়িয়া ফেলিও।12 পরে তাঁহারা প্রস্থান করিয়া এই কথা প্রচার করিলেন যে, লোকেরা মন ফিরাউক।13 আর তাঁহারা অনেক ভূত ছাড়াইলেন, ও অনেক পীড়িত লোককে তৈল মাখাইয়া তাহাদিগকে সুস্থ করিলেন।14 আর হেরোদ রাজা তাঁহার কথা শুনিতে পাইলেন, কেননা তাঁহার নাম প্রসিদ্ধ হইয়াছিল। তখন তিনি বলিলেন, যোহন বাপ্তাইজক মৃতগণের মধ্য হইতে উঠিয়াছেন, আর সেই জন্য পরাক্রম সকল তাঁহাতে কার্য্য সাধন করিতেছে।15 কিন্তু কেহ কেহ বলিল, উনি এলিয়; এবং কেহ কেহ বলিল, উনি এক জন ভাববাদী, ভাববাদীদের মধ্যে কোন এক জনের সদৃশ।16 কিন্তু হেরোদ তাঁহার কথা শুনিয়া বলিলেন, আমি যে যোহনের মস্তক ছেদন করিয়াছি, তিনিই উঠিয়াছেন।17 কারণ হেরোদ আপন ভাই ফিলিপের স্ত্রী হেরোদিয়ার নিমিত্ত আপনি লোক পাঠাইয়া যোহনকে ধরিয়া কারাগারে বদ্ধ করিয়াছিলেন, কেননা তিনি তাহাকে বিবাহ করিয়াছিলেন।18 কারণ যোহন হেরোদকে বলিয়াছিলেন, ভাইয়ের স্ত্রীকে রাখা আপনার বিধেয় নয়।19 আর হেরোদিয়া তাঁহার প্রতি কুপিত হইয়া তাঁহাকে বধ করিতে চাহিতেছিল, কিন্তু পারিয়া উঠে নাই।20 কারণ হেরোদ যোহনকে ধার্ম্মিক ও পবিত্র লোক জানিয়া ভয় করিতেন ও তাঁহাকে রক্ষা করিতেন। আর তাঁহার কথা শুনিয়া তিনি অতিশয় উদ্বিগ্ন হইতেন, এবং তাঁহার কথা শুনিতে ভাল বাসিতেন।21 পরে এক সুবিধার দিন উপস্থিত হইল, যখন হেরোদ আপনার জন্মদিনে আপন মহৎ লোকদের, সেনাপতিগণের এবং গালীলের প্রধান লোকদের নিমিত্ত এক রাত্রিভোজ প্রস্তুত করিলেন;22 আর হেরোদিয়ার কন্যা ভিতরে আসিয়া ও নাচিয়া হেরোদ এবং যাঁহারা তাঁহার সঙ্গে ভোজে বসিয়াছিলেন, তাঁহাদের সন্তোষ জন্মাইল। তাহাতে রাজা সেই কন্যাকে কহিলেন, তোমার যাহা ইচ্ছা হয়, আমার কাছে চাও, আমি তোমাকে দিব।23 আর তিনি শপথ করিয়া তাহাকে কহিলেন, অর্দ্ধেক রাজ্য পর্য্যন্ত হউক, আমার কাছে যাহা চাহিবে, তাহাই তোমাকে দিব।24 তাহাতে সে বাহিরে গিয়া আপন মাতাকে জিজ্ঞাসা করিল, কি চাহিব? সে বলিল, যোহন বাপ্তাইজকের মস্তক।25 সে তৎক্ষণাৎ সত্বর রাজার নিকটে আসিয়া তাহা চাহিল, বলিল, আমি ইচ্ছা করি যে, আপনি এখনই যোহন বাপ্তাইজকের মস্তক থালায় করিয়া আমাকে দিউন।26 তখন রাজা অতিশয় দুঃখিত হইলেও আপন শপথ হেতু, এবং যাহারা ভোজে বসিয়াছিল, তাহাদের ভয়ে, তাহাকে ফিরাইয়া দিতে চাহিলেন না।27 আর রাজা তৎক্ষণাৎ এক জন সেনাকে পাঠাইয়া যোহনের মস্তক আনিতে আজ্ঞা করিলেন; সে কারাগারে গিয়া তাঁহার মস্তক ছেদন করিল,28 পরে তাঁহার মস্তক থালায় করিয়া আনিয়া সেই কন্যাকে দিল, এবং কন্যা আপন মাতাকে দিল।29 এই সংবাদ পাইয়া তাঁহার শিষ্যগণ আসিয়া তাঁহার দেহ লইয়া গিয়া কবরে রাখিল।30 পরে প্রেরিতেরা যীশুর নিকটে আসিয়া একত্র হইলেন; আর তাঁহারা যাহা কিছু করিয়াছিলেন, ও যাহা কিছু শিক্ষা দিয়াছিলেন, সে সমস্তই তাঁহাকে জানাইলেন।31 তিনি তাঁহাদিগকে কহিলেন, তোমরা বিরলে এক নির্জ্জন স্থানে আসিয়া কিছু কাল বিশ্রাম কর। কারণ অনেক লোক আসা যাওয়া করিতেছিল, তাই তাঁহাদের আহার করিবারও অবকাশ ছিল না।32 পরে তাঁহারা নৌকাযোগে বিরলে এক নির্জ্জন স্থানে যাত্রা করিলেন।33 কিন্তু লোকে তাঁহাদিগকে যাইতে দেখিল, এবং অনেকে তাঁহাদিগকে চিনিতে পারিল, তাই সকল নগর হইতে পদব্রজে সেখানে দৌড়িয়া তাঁহাদের অগ্রে গেল।34 তখন যীশু বাহির হইয়া বিস্তর লোক দেখিয়া তাহাদের প্রতি করুণাবিষ্ট হইলেন, কেননা তাহারা পালক-বিহীন মেষপালের ন্যায় ছিল; আর তিনি তাহাদিগকে অনেক বিষয় শিক্ষা দিতে লাগিলেন।35 পরে দিবা প্রায় অবসান হইলে তাঁহার শিষ্যগণ নিকটে আসিয়া তাঁহাকে কহিলেন, এ নির্জ্জন স্থান, এবং দিবাও অবসান-প্রায়;36 ইহাদিগকে বিদায় করুন, যেন ইহারা চারিদিকে পল্লীতে পল্লীতে ও গ্রামে গ্রামে গিয়া আপনাদের নিমিত্ত খাদ্য দ্রব্য কিনিতে পারে।37 কিন্তু তিনি উত্তর করিয়া তাঁহাদিগকে কহিলেন, তোমরাই উহাদিগকে আহার দেও। তাঁহারা কহিলেন, আমরা গিয়া কি দুই শত সিকির রুটী কিনিয়া লইয়া উহাদিগকে খাইতে দিব?38 তিনি তাঁহাদিগকে বলিলেন, তোমাদের কাছে কয়খানা রুটী আছে? গিয়া দেখ। তাঁহারা দেখিয়া কহিলেন, পাঁচখানি রুটী এবং দুইটী মাছ আছে।39 তখন তিনি সকলকে সবুজ ঘাসের উপরে দলে দলে বসাইয়া দিতে আজ্ঞা করিলেন।40 তাহারা শত শত জন ও পঞ্চাশ পঞ্চাশ জন করিয়া সারি সারি বসিয়া গেল।41 পরে তিনি সেই পাঁচখানি রুটী ও দুইটী মাছ লইয়া স্বর্গের দিকে ঊর্দ্ধদৃষ্টি করিয়া আশীর্ব্বাদ করিলেন এবং সেই রুটী কয়খানি ভাঙ্গিয়া লোকদের সম্মুখে রাখিবার জন্য শিষ্যদিগকে দিতে লাগিলেন; আর সেই দুইটী মাছও সকলকে ভাগ করিয়া দিলেন।42 তাহাতে সকলে আহার করিয়া তৃপ্ত হইল।43 পরে তাঁহারা গুঁড়াগাঁড়ায় ভরা বারো ডালা এবং মাছও কিছু তুলিয়া লইলেন।44 যাহারা সেই রুটী ভোজন করিয়াছিল, তাহারা পাঁচ হাজার পুরুষ।45 পরে তিনি তৎক্ষণাৎ শিষ্যদিগকে দৃঢ় করিয়া বলিয়া দিলেন, যেন তাঁহারা নৌকায় উঠিয়া তাঁহার অগ্রে পরপারে বৈৎসৈদার দিকে যান, আর ইতিমধ্যে তিনি লোকদিগকে বিদায় দেন।46 লোকদিগকে বিদায় করিয়া তিনি প্রার্থনা করিবার জন্য পর্ব্বতে চলিয়া গেলেন।47 যখন সন্ধ্যা হইল, তখন নৌকাখানি সমুদ্রের মাঝখানে ছিল, এবং তিনি একাকী স্থলে ছিলেন।48 পরে সম্মুখ বাতাস প্রযুক্ত তাঁহারা নৌকা বাহিতে বাহিতে কষ্ট পাইতেছেন দেখিয়া, তিনি প্রায় চতুর্থ প্রহর রাত্রিতে সমুদ্রের উপর দিয়া হাঁটিয়া তাঁহাদের নিকটে আসিলেন, এবং তাঁহাদিগকে ছাড়াইয়া যাইতে উদ্যত হইলেন।49 কিন্তু সমুদ্রের উপর দিয়া তাঁহাকে হাঁটিতে দেখিয়া তাঁহারা মনে করিলেন, অপচ্ছায়া, আর চেঁচাইয়া উঠিলেন;50 কারণ সকলেই তাঁহাকে দেখিয়াছিলেন ও ব্যাকুল হইয়াছিলেন। কিন্তু তিনি তৎক্ষণাৎ তাঁহাদের সহিত কথা কহিলেন, তাঁহাদিগকে বলিলেন, সাহস কর, এ আমি, ভয় করিও না।51 পরে তিনি তাঁহাদের নিকটে নৌকায় উঠিলেন, আর বাতাস থামিয়া গেল; তাহাতে তাঁহারা মনে মনে যার পর নাই আশ্চর্য্য জ্ঞান করিলেন।52 কেননা রুটীর বিষয় তাঁহারা বুঝিতে পারেন নাই, তাঁহাদের অন্তঃকরণ কঠিন হইয়া পড়িয়াছিল।53 পরে তাঁহারা পার হইয়া স্থলে, গিনেষরৎ প্রদেশে, আসিয়া নৌকা লাগাইলেন।54 আর নৌকা হইতে বাহির হইলে লোকেরা তৎক্ষণাৎ তাঁহাকে চিনিয়া সমুদয় অঞ্চলে চারিদিকে দৌড়িতে লাগিল,55 আর পীড়িত লোকদিগকে খাটের উপরে করিয়া, তিনি যে কোন স্থানে আছেন শুনিতে পাইল, সেই স্থানে আনিতে লাগিল।56 আর গ্রামে, কি নগরে, কি পল্লীতে, যে কোন স্থানে তিনি প্রবেশ করিলেন, সেই স্থানে তাহারা পীড়িতদিগকে বাজারে বসাইল; এবং তাঁহাকে বিনতি করিল, যেন উহারা তাঁহার বস্ত্রের থোপমাত্র স্পর্শ করিতে পায়, আর যত লোক তাঁহাকে স্পর্শ করিল, সকলেই সুস্থ হইল।