পবিত্র বাইবেল

গডস গ্রেইস গিফট
মার্ক

মার্ক অধ্যায় 6

অসম্মানিত ভাববাদী 1 যীশু সেই স্থান ত্যাগ করে তাঁর শিষ্যদের সঙ্গে নিয়ে নিজের নগরে গেলেন। 2 বিশ্রামদিন উপস্থিত হলে তিনি সমাজভবনে শিক্ষা দিতে লাগলেন। তাঁর শ্রোতাদের অনেকেই এতে বিস্মিত হল। তারা প্রশ্ন করল, “এই লোকটি কোথা থেকে এমন জ্ঞান পেল? সে এসব অলৌকিক কাজ কীভাবে করছে? 3 এ কি সেই ছুতোরমিস্ত্রি নয়? এ কি মরিয়মের পুত্র নয় এবং যাকোব, যোষি, যিহূদা ও শিমোনের দাদা নয়? ওর বোনেরাও কি এখানে আমাদের মধ্যে নেই?” তারা তাঁর উপরে বিরূপ হয়ে উঠল। 4 যীশু তাদের বললেন, “নিজের নগরে আপনজনদের মধ্যে ও নিজের গৃহে ভাববাদী অসম্মানিত হন।” 5 তিনি সেখানে আর কোনো অলৌকিক কাজ করতে পারলেন না, কেবলমাত্র কয়েকজন অসুস্থ ব্যক্তির উপরে হাত রাখলেন ও তাদের সুস্থ করলেন। 6 তাদের বিশ্বাসের অভাব দেখে তিনি অবাক হয়ে গেলেন। যীশু বারোজন শিষ্যকে পাঠালেন তারপর যীশু গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে ঘুরে ঘুরে শিক্ষা দিতে লাগলেন। 7 তিনি সেই বারোজনকে তাঁর কাছে ডেকে, দুজন দুজন করে তাঁদের পাঠালেন। তিনি তাঁদের অশুচি আত্মার উপরে কর্তৃত্ব করার ক্ষমতাও প্রদান করলেন। 8 তাঁর নির্দেশগুলি ছিল এরকম: “যাত্রার উদ্দেশে একটি ছড়ি ছাড়া আর কিছুই সঙ্গে নিয়ো না—কোনো খাবার, কোনো থলি বা কোমরের বেল্টে কোনো অর্থও নয়। 9 চটিজুতো পরো, কিন্তু কোনো অতিরিক্ত পোশাক নিয়ো না। 10 কোনো বাড়িতে প্রবেশ করলে, সেই নগর পরিত্যাগ না করা পর্যন্ত তোমরা সেখানেই থেকো। 11 আর কোনো স্থানের মানুষ যদি তোমাদের স্বাগত না জানায়, বা তোমাদের বাক্যে কর্ণপাত না করে, সেই স্থান ছেড়ে যাওয়ার সময় তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্যস্বরূপ তোমাদের পায়ের ধুলো ঝেড়ে ফেলো।” 12 তাঁরা বেরিয়ে পড়লেন ও প্রচার করতে লাগলেন, যেন লোকেরা মন পরিবর্তন করে। 13 তাঁরা বহু ভূত বিতাড়িত করলেন ও অনেক অসুস্থ মানুষকে তেল দিয়ে অভিষেক করে তাদের রোগনিরাময় করলেন। বাপ্তিষ্মদাতা যোহনের মাথা কেটে ফেলা হল 14 15 রাজা হেরোদ এ সম্পর্কে শুনতে পেলেন, কারণ যীশুর নাম সুপরিচিত হয়ে উঠেছিল। কেউ কেউ বলছিল, “বাপ্তিষ্মদাতা যোহন মৃতলোক থেকে উত্থাপিত হয়েছেন, সেই কারণে এইসব অলৌকিক ক্ষমতা তাঁর মধ্যে সক্রিয় রয়েছে।” 16 অন্যেরা বলল, “তিনি এলিয়।” কিন্তু আরও অন্যেরা দাবি করল, “উনি একজন ভাববাদী, বা পুরাকালের ভাববাদীদের মতোই একজন।” 17 কিন্তু হেরোদ একথা শুনে বললেন, “যে যোহনের আমি মাথা কেটেছিলাম, তিনি মৃতলোক থেকে উত্থাপিত হয়েছেন!” কারণ হেরোদ স্বয়ং যোহনকে গ্রেপ্তার করার আদেশ দিয়েছিলেন এবং তাঁকে শিকলে বেঁধে কারাগারে বন্দি করেছিলেন। তাঁর ভাই ফিলিপের স্ত্রী হেরোদিয়ার জন্য তিনি এ কাজ করেছিলেন, কারণ তিনি তাকে বিবাহ করেছিলেন। 18 এর কারণ হল, যোহন ক্রমাগত হেরোদকে বলতেন, “ভাইয়ের স্ত্রীর সঙ্গে সহবাস করা আপনার পক্ষে ন্যায়সংগত নয়।” 19 সেই কারণে, হেরোদিয়া যোহনের বিরুদ্ধে অসন্তোষ পোষণ করছিল ও তাঁকে হত্যা করতে চেয়েছিল। কিন্তু তার পক্ষে তা করা সম্ভব ছিল না। 20 কারণ, হেরোদ যোহনকে ভয় করতেন এবং তিনি একজন ধার্মিক ও পবিত্র মানুষ জেনে তাঁকে সুরক্ষা দিতেন। হেরোদ যখন যোহনের কথা শুনলেন, তখন তিনি অত্যন্ত হতবুদ্ধি হয়ে পড়লেন, তবুও তিনি তাঁর কথা শুনতে ভালোবাসতেন। 21 অবশেষে এক সুযোগ এসে গেল। হেরোদ তাঁর জন্মদিনে তাঁর উচ্চপদস্থ কর্মচারী, সেনাধক্ষ্য ও গালীলের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের জন্য এক ভোজসভার আয়োজন করলেন। 22 সেখানে হেরোদিয়ার মেয়ে এসে নৃত্য পরিবেশন করে হেরোদ ও ভোজে আগত অতিথিদের সন্তুষ্ট করল। রাজা সেই মেয়েকে বললেন, “তুমি যা খুশি আমার কাছে চাইতে পারো, আমি তা তোমাকে দেব।” 23 তিনি শপথ করে তাকে প্রতিশ্রুতি দিলেন, “তুমি যা চাইবে, অর্ধেক রাজত্ব হলেও আমি তোমাকে তাই দেব।” 24 25 সে বাইরে গিয়ে তার মাকে জিজ্ঞাসা করল, “আমি কী চাইব?” তার মা উত্তর দিল, “বাপ্তিষ্মদাতা যোহনের মাথা।” 26 মেয়েটি তখনই ভিতরে প্রবেশ করে রাজাকে তার অনুরোধ জানাল, “আমি চাই, আপনি একটি থালায় বাপ্তিষ্মদাতা যোহনের মাথা এনে এখনই আমাকে দিন।” রাজা অত্যন্ত মর্মাহত হলেন, কিন্তু তাঁর নিজের শপথের জন্য ও যাঁরা তাঁর সঙ্গে ভোজসভায় বসেছিলেন, তাঁদের জন্য তিনি তাকে প্রত্যাখ্যান করতে চাইলেন না। 27 তিনি তক্ষুনি যোহনের মাথা কেটে নিয়ে আসার আদেশ দিয়ে একজন ঘাতককে পাঠালেন। লোকটি কারাগারে গিয়ে যোহনের মাথা কাটল। 28 সে থালায় করে তাঁর কাঁটা মাথা নিয়ে এল। তিনি তা নিয়ে সেই মেয়েটিকে দিলেন ও সে তা নিয়ে তার মাকে দিল। 29 একথা শুনে যোহনের শিষ্যেরা এসে তাঁর শরীর নিয়ে গেল ও কবরে শুইয়ে দিল। পাঁচ হাজার মানুষকে খাওয়ানো 30 প্রেরিতশিষ্যেরা যীশুর চারপাশে জড়ো হয়ে তাঁদের সমস্ত কাজ ও শিক্ষাদানের বিবরণ দিলেন। 31 সেই সময় এত বেশি লোক সেখানে যাওয়া-আসা করছিল যে, তাঁরা খাবার খাওয়ারও সুযোগ পাচ্ছিলেন না। তিনি তাঁদের বললেন, “তোমরা আমার সঙ্গে কোনো নির্জন স্থানে চলো ও সেখানেই কিছু সময় বিশ্রাম করো।” 32 তাই তাঁরা নিজেরাই নৌকায় করে এক নির্জন স্থানে গেলেন। 33 কিন্তু সেই স্থান ত্যাগ করার সময় বহু মানুষ তাঁদের চিনতে পারল। লোকেরা সব নগর থেকে দৌড়ে গিয়ে তাঁদের আগেই সেখানে উপস্থিত হল। 34 তীরে নেমে যীশু যখন অনেক লোককে দেখতে পেলেন, তিনি তাদের প্রতি করুণায় পূর্ণ হলেন। কারণ তারা ছিল পালকহীন মেষপালের মতো। তাই তিনি তাদের বহু বিষয়ে শিক্ষা দিতে লাগলেন। 35 এসময় দিনের প্রায় অবসান হয়ে এল। তাই শিষ্যেরা তাঁর কাছে এসে বললেন, “এ এক নির্জন এলাকা, আর ইতিমধ্যে অনেক দেরিও হয়ে গেছে। 36 লোকদের বিদায় দিন, যেন তারা কাছাকাছি গ্রাম বা পল্লিতে যেতে পারে ও নিজেদের জন্য কিছু খাবার কিনতে পারে।” 37 38 কিন্তু প্রত্যুত্তরে তিনি বললেন, “তোমরা তাদের কিছু খেতে দাও।” তাঁরা তাঁকে বললেন, “এর জন্য ছয় মাসের বেতনের সমান পরিমাণ অর্থের[* গ্রিক: দুশো দিনার। ] প্রয়োজন হবে। আমরা কি গিয়ে অত পরিমাণ অর্থ ব্যয় করে রুটি কিনে লোকদের খেতে দেব?” 39 তিনি তাঁদের জিজ্ঞাসা করলেন, “তোমাদের কাছে কতগুলি রুটি আছে? যাও গিয়ে দেখো।” তারা খুঁজে দেখে বললেন, “পাঁচটি রুটি, আর দুটি মাছও আছে।” তখন যীশু লোকদের সবুজ ঘাসে দলে দলে বসাবার জন্য শিষ্যদের নির্দেশ দিলেন। 40 তারা এক-একটা সারিতে একশো জন ও পঞ্চাশ জন করে বসে গেল। 41 সেই পাঁচটি রুটি ও দুটি মাছ নিয়ে যীশু স্বর্গের দিকে দৃষ্টি দিলেন, ধন্যবাদ দিলেন ও রুটিগুলিকে ভাঙলেন। তারপর তিনি সেগুলি লোকদের পরিবেশন করার জন্য তাঁর শিষ্যদের হাতে তুলে দিলেন। তিনি সেই মাছ দুটিও সবার মধ্যে ভাগ করে দিলেন। 42 তারা সকলে খেয়ে পরিতৃপ্ত হল। 43 আর শিষ্যেরা অবশিষ্ট রুটি ও মাছের টুকরো সংগ্রহ করে বারো ঝুড়ি পূর্ণ করলেন। 44 যতজন পুরুষ খাবার খেয়েছিল, তাদের সংখ্যা ছিল পাঁচ হাজার। যীশু জলের উপরে হাঁটলেন 45 পর মুহূর্তেই যীশু তাঁর শিষ্যদের নৌকায় তুলে দিয়ে তাঁর যাওয়ার আগেই তাঁদের বেথসৈদায় যেতে বললেন, ইতিমধ্যে তিনি সকলকে বিদায় দিলেন। 46 তাঁদের বিদায় করে তিনি প্রার্থনা করার জন্য একটি পাহাড়ে উঠে গেলেন। 47 সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলে। নৌকা ছিল সাগরের মাঝখানে, কেবলমাত্র তিনি একা স্থলে ছিলেন। 48 তিনি দেখলেন, প্রতিকূল বাতাসে শিষ্যেরা অতিকষ্টে নৌকা বইছিল। রাত্রি চতুর্থ প্রহরে তিনি সাগরে, জলের উপরে হেঁটে শিষ্যদের কাছে চললেন। তিনি তাঁদের পাশ কাটিয়ে যেতে চাইলেন। 49 কিন্তু তাঁকে সাগরের উপর দিয়ে হেঁটে যেতে দেখে তাঁরা তাঁকে কোনও ভূত মনে করলেন। 50 তাঁরা চিৎকার করে উঠলেন, কারণ তাঁরা সবাই তাঁকে দেখে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলেন। তিনি তক্ষুনি তাঁদের সঙ্গে কথা বললেন। তিনি বললেন, “সাহস করো! এ আমি! ভয় পেয়ো না।” 51 তারপর তিনি তাঁদের কাছে নৌকায় উঠলেন। বাতাস থেমে গেল। তাঁরা সম্পূর্ণরূপে বিস্মিত হলেন, 52 কারণ তাঁরা সেই রুটির বিষয়ে কিছুই বুঝতে পারেননি, তাঁদের হৃদয় কঠিন হয়ে পড়েছিল। 53 তাঁরা সাগরের অপর পারে গিয়ে গিনেষরৎ প্রদেশে নৌকা থেকে নামলেন ও নৌকা নোঙর করলেন। 54 তাঁরা নৌকা থেকে নামা মাত্রই লোকেরা যীশুকে চিনতে পারল। 55 তারা সেখানকার সমগ্র অঞ্চলে ছুটে গেল এবং যেখানেই যীশু আছেন শুনতে পেল, তারা সেখানেই খাটে করে পীড়িতদের বয়ে নিয়ে এল। 56 আর যেখানেই তিনি গেলেন—গ্রামে, নগরে বা পল্লি-অঞ্চলে—সেখানেই তারা পীড়িতদের বাজারের মধ্যে এনে রাখল। তারা মিনতি করল, তিনি যেন তাঁর পোশাকের আঁচলও তাদের স্পর্শ করতে দেন। আর যারাই তাঁকে স্পর্শ করল, তারা সবাই সুস্থ হল।
অসম্মানিত ভাববাদী 1 যীশু সেই স্থান ত্যাগ করে তাঁর শিষ্যদের সঙ্গে নিয়ে নিজের নগরে গেলেন। .::. 2 বিশ্রামদিন উপস্থিত হলে তিনি সমাজভবনে শিক্ষা দিতে লাগলেন। তাঁর শ্রোতাদের অনেকেই এতে বিস্মিত হল। তারা প্রশ্ন করল, “এই লোকটি কোথা থেকে এমন জ্ঞান পেল? সে এসব অলৌকিক কাজ কীভাবে করছে? .::. 3 এ কি সেই ছুতোরমিস্ত্রি নয়? এ কি মরিয়মের পুত্র নয় এবং যাকোব, যোষি, যিহূদা ও শিমোনের দাদা নয়? ওর বোনেরাও কি এখানে আমাদের মধ্যে নেই?” তারা তাঁর উপরে বিরূপ হয়ে উঠল। .::. 4 যীশু তাদের বললেন, “নিজের নগরে আপনজনদের মধ্যে ও নিজের গৃহে ভাববাদী অসম্মানিত হন।” .::. 5 তিনি সেখানে আর কোনো অলৌকিক কাজ করতে পারলেন না, কেবলমাত্র কয়েকজন অসুস্থ ব্যক্তির উপরে হাত রাখলেন ও তাদের সুস্থ করলেন। .::. 6 তাদের বিশ্বাসের অভাব দেখে তিনি অবাক হয়ে গেলেন। যীশু বারোজন শিষ্যকে পাঠালেন তারপর যীশু গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে ঘুরে ঘুরে শিক্ষা দিতে লাগলেন। .::. 7 তিনি সেই বারোজনকে তাঁর কাছে ডেকে, দুজন দুজন করে তাঁদের পাঠালেন। তিনি তাঁদের অশুচি আত্মার উপরে কর্তৃত্ব করার ক্ষমতাও প্রদান করলেন। .::. 8 তাঁর নির্দেশগুলি ছিল এরকম: “যাত্রার উদ্দেশে একটি ছড়ি ছাড়া আর কিছুই সঙ্গে নিয়ো না—কোনো খাবার, কোনো থলি বা কোমরের বেল্টে কোনো অর্থও নয়। .::. 9 চটিজুতো পরো, কিন্তু কোনো অতিরিক্ত পোশাক নিয়ো না। .::. 10 কোনো বাড়িতে প্রবেশ করলে, সেই নগর পরিত্যাগ না করা পর্যন্ত তোমরা সেখানেই থেকো। .::. 11 আর কোনো স্থানের মানুষ যদি তোমাদের স্বাগত না জানায়, বা তোমাদের বাক্যে কর্ণপাত না করে, সেই স্থান ছেড়ে যাওয়ার সময় তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্যস্বরূপ তোমাদের পায়ের ধুলো ঝেড়ে ফেলো।” .::. 12 তাঁরা বেরিয়ে পড়লেন ও প্রচার করতে লাগলেন, যেন লোকেরা মন পরিবর্তন করে। .::. 13 তাঁরা বহু ভূত বিতাড়িত করলেন ও অনেক অসুস্থ মানুষকে তেল দিয়ে অভিষেক করে তাদের রোগনিরাময় করলেন। .::. বাপ্তিষ্মদাতা যোহনের মাথা কেটে ফেলা হল 14 .::. 15 রাজা হেরোদ এ সম্পর্কে শুনতে পেলেন, কারণ যীশুর নাম সুপরিচিত হয়ে উঠেছিল। কেউ কেউ বলছিল, “বাপ্তিষ্মদাতা যোহন মৃতলোক থেকে উত্থাপিত হয়েছেন, সেই কারণে এইসব অলৌকিক ক্ষমতা তাঁর মধ্যে সক্রিয় রয়েছে।” .::. 16 অন্যেরা বলল, “তিনি এলিয়।” কিন্তু আরও অন্যেরা দাবি করল, “উনি একজন ভাববাদী, বা পুরাকালের ভাববাদীদের মতোই একজন।” .::. 17 কিন্তু হেরোদ একথা শুনে বললেন, “যে যোহনের আমি মাথা কেটেছিলাম, তিনি মৃতলোক থেকে উত্থাপিত হয়েছেন!” কারণ হেরোদ স্বয়ং যোহনকে গ্রেপ্তার করার আদেশ দিয়েছিলেন এবং তাঁকে শিকলে বেঁধে কারাগারে বন্দি করেছিলেন। তাঁর ভাই ফিলিপের স্ত্রী হেরোদিয়ার জন্য তিনি এ কাজ করেছিলেন, কারণ তিনি তাকে বিবাহ করেছিলেন। .::. 18 এর কারণ হল, যোহন ক্রমাগত হেরোদকে বলতেন, “ভাইয়ের স্ত্রীর সঙ্গে সহবাস করা আপনার পক্ষে ন্যায়সংগত নয়।” .::. 19 সেই কারণে, হেরোদিয়া যোহনের বিরুদ্ধে অসন্তোষ পোষণ করছিল ও তাঁকে হত্যা করতে চেয়েছিল। কিন্তু তার পক্ষে তা করা সম্ভব ছিল না। .::. 20 কারণ, হেরোদ যোহনকে ভয় করতেন এবং তিনি একজন ধার্মিক ও পবিত্র মানুষ জেনে তাঁকে সুরক্ষা দিতেন। হেরোদ যখন যোহনের কথা শুনলেন, তখন তিনি অত্যন্ত হতবুদ্ধি হয়ে পড়লেন, তবুও তিনি তাঁর কথা শুনতে ভালোবাসতেন। .::. 21 অবশেষে এক সুযোগ এসে গেল। হেরোদ তাঁর জন্মদিনে তাঁর উচ্চপদস্থ কর্মচারী, সেনাধক্ষ্য ও গালীলের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের জন্য এক ভোজসভার আয়োজন করলেন। .::. 22 সেখানে হেরোদিয়ার মেয়ে এসে নৃত্য পরিবেশন করে হেরোদ ও ভোজে আগত অতিথিদের সন্তুষ্ট করল। রাজা সেই মেয়েকে বললেন, “তুমি যা খুশি আমার কাছে চাইতে পারো, আমি তা তোমাকে দেব।” .::. 23 তিনি শপথ করে তাকে প্রতিশ্রুতি দিলেন, “তুমি যা চাইবে, অর্ধেক রাজত্ব হলেও আমি তোমাকে তাই দেব।” .::. 24 .::. 25 সে বাইরে গিয়ে তার মাকে জিজ্ঞাসা করল, “আমি কী চাইব?” তার মা উত্তর দিল, “বাপ্তিষ্মদাতা যোহনের মাথা।” .::. 26 মেয়েটি তখনই ভিতরে প্রবেশ করে রাজাকে তার অনুরোধ জানাল, “আমি চাই, আপনি একটি থালায় বাপ্তিষ্মদাতা যোহনের মাথা এনে এখনই আমাকে দিন।” রাজা অত্যন্ত মর্মাহত হলেন, কিন্তু তাঁর নিজের শপথের জন্য ও যাঁরা তাঁর সঙ্গে ভোজসভায় বসেছিলেন, তাঁদের জন্য তিনি তাকে প্রত্যাখ্যান করতে চাইলেন না। .::. 27 তিনি তক্ষুনি যোহনের মাথা কেটে নিয়ে আসার আদেশ দিয়ে একজন ঘাতককে পাঠালেন। লোকটি কারাগারে গিয়ে যোহনের মাথা কাটল। .::. 28 সে থালায় করে তাঁর কাঁটা মাথা নিয়ে এল। তিনি তা নিয়ে সেই মেয়েটিকে দিলেন ও সে তা নিয়ে তার মাকে দিল। .::. 29 একথা শুনে যোহনের শিষ্যেরা এসে তাঁর শরীর নিয়ে গেল ও কবরে শুইয়ে দিল। .::. পাঁচ হাজার মানুষকে খাওয়ানো 30 প্রেরিতশিষ্যেরা যীশুর চারপাশে জড়ো হয়ে তাঁদের সমস্ত কাজ ও শিক্ষাদানের বিবরণ দিলেন। .::. 31 সেই সময় এত বেশি লোক সেখানে যাওয়া-আসা করছিল যে, তাঁরা খাবার খাওয়ারও সুযোগ পাচ্ছিলেন না। তিনি তাঁদের বললেন, “তোমরা আমার সঙ্গে কোনো নির্জন স্থানে চলো ও সেখানেই কিছু সময় বিশ্রাম করো।” .::. 32 তাই তাঁরা নিজেরাই নৌকায় করে এক নির্জন স্থানে গেলেন। .::. 33 কিন্তু সেই স্থান ত্যাগ করার সময় বহু মানুষ তাঁদের চিনতে পারল। লোকেরা সব নগর থেকে দৌড়ে গিয়ে তাঁদের আগেই সেখানে উপস্থিত হল। .::. 34 তীরে নেমে যীশু যখন অনেক লোককে দেখতে পেলেন, তিনি তাদের প্রতি করুণায় পূর্ণ হলেন। কারণ তারা ছিল পালকহীন মেষপালের মতো। তাই তিনি তাদের বহু বিষয়ে শিক্ষা দিতে লাগলেন। .::. 35 এসময় দিনের প্রায় অবসান হয়ে এল। তাই শিষ্যেরা তাঁর কাছে এসে বললেন, “এ এক নির্জন এলাকা, আর ইতিমধ্যে অনেক দেরিও হয়ে গেছে। .::. 36 লোকদের বিদায় দিন, যেন তারা কাছাকাছি গ্রাম বা পল্লিতে যেতে পারে ও নিজেদের জন্য কিছু খাবার কিনতে পারে।” .::. 37 .::. 38 কিন্তু প্রত্যুত্তরে তিনি বললেন, “তোমরা তাদের কিছু খেতে দাও।” তাঁরা তাঁকে বললেন, “এর জন্য ছয় মাসের বেতনের সমান পরিমাণ অর্থের[* গ্রিক: দুশো দিনার। ] প্রয়োজন হবে। আমরা কি গিয়ে অত পরিমাণ অর্থ ব্যয় করে রুটি কিনে লোকদের খেতে দেব?” .::. 39 তিনি তাঁদের জিজ্ঞাসা করলেন, “তোমাদের কাছে কতগুলি রুটি আছে? যাও গিয়ে দেখো।” তারা খুঁজে দেখে বললেন, “পাঁচটি রুটি, আর দুটি মাছও আছে।” তখন যীশু লোকদের সবুজ ঘাসে দলে দলে বসাবার জন্য শিষ্যদের নির্দেশ দিলেন। .::. 40 তারা এক-একটা সারিতে একশো জন ও পঞ্চাশ জন করে বসে গেল। .::. 41 সেই পাঁচটি রুটি ও দুটি মাছ নিয়ে যীশু স্বর্গের দিকে দৃষ্টি দিলেন, ধন্যবাদ দিলেন ও রুটিগুলিকে ভাঙলেন। তারপর তিনি সেগুলি লোকদের পরিবেশন করার জন্য তাঁর শিষ্যদের হাতে তুলে দিলেন। তিনি সেই মাছ দুটিও সবার মধ্যে ভাগ করে দিলেন। .::. 42 তারা সকলে খেয়ে পরিতৃপ্ত হল। .::. 43 আর শিষ্যেরা অবশিষ্ট রুটি ও মাছের টুকরো সংগ্রহ করে বারো ঝুড়ি পূর্ণ করলেন। .::. 44 যতজন পুরুষ খাবার খেয়েছিল, তাদের সংখ্যা ছিল পাঁচ হাজার। .::. যীশু জলের উপরে হাঁটলেন 45 পর মুহূর্তেই যীশু তাঁর শিষ্যদের নৌকায় তুলে দিয়ে তাঁর যাওয়ার আগেই তাঁদের বেথসৈদায় যেতে বললেন, ইতিমধ্যে তিনি সকলকে বিদায় দিলেন। .::. 46 তাঁদের বিদায় করে তিনি প্রার্থনা করার জন্য একটি পাহাড়ে উঠে গেলেন। .::. 47 সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলে। নৌকা ছিল সাগরের মাঝখানে, কেবলমাত্র তিনি একা স্থলে ছিলেন। .::. 48 তিনি দেখলেন, প্রতিকূল বাতাসে শিষ্যেরা অতিকষ্টে নৌকা বইছিল। রাত্রি চতুর্থ প্রহরে তিনি সাগরে, জলের উপরে হেঁটে শিষ্যদের কাছে চললেন। তিনি তাঁদের পাশ কাটিয়ে যেতে চাইলেন। .::. 49 কিন্তু তাঁকে সাগরের উপর দিয়ে হেঁটে যেতে দেখে তাঁরা তাঁকে কোনও ভূত মনে করলেন। .::. 50 তাঁরা চিৎকার করে উঠলেন, কারণ তাঁরা সবাই তাঁকে দেখে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলেন। তিনি তক্ষুনি তাঁদের সঙ্গে কথা বললেন। তিনি বললেন, “সাহস করো! এ আমি! ভয় পেয়ো না।” .::. 51 তারপর তিনি তাঁদের কাছে নৌকায় উঠলেন। বাতাস থেমে গেল। তাঁরা সম্পূর্ণরূপে বিস্মিত হলেন, .::. 52 কারণ তাঁরা সেই রুটির বিষয়ে কিছুই বুঝতে পারেননি, তাঁদের হৃদয় কঠিন হয়ে পড়েছিল। .::. 53 তাঁরা সাগরের অপর পারে গিয়ে গিনেষরৎ প্রদেশে নৌকা থেকে নামলেন ও নৌকা নোঙর করলেন। .::. 54 তাঁরা নৌকা থেকে নামা মাত্রই লোকেরা যীশুকে চিনতে পারল। .::. 55 তারা সেখানকার সমগ্র অঞ্চলে ছুটে গেল এবং যেখানেই যীশু আছেন শুনতে পেল, তারা সেখানেই খাটে করে পীড়িতদের বয়ে নিয়ে এল। .::. 56 আর যেখানেই তিনি গেলেন—গ্রামে, নগরে বা পল্লি-অঞ্চলে—সেখানেই তারা পীড়িতদের বাজারের মধ্যে এনে রাখল। তারা মিনতি করল, তিনি যেন তাঁর পোশাকের আঁচলও তাদের স্পর্শ করতে দেন। আর যারাই তাঁকে স্পর্শ করল, তারা সবাই সুস্থ হল।
  • মার্ক অধ্যায় 1  
  • মার্ক অধ্যায় 2  
  • মার্ক অধ্যায় 3  
  • মার্ক অধ্যায় 4  
  • মার্ক অধ্যায় 5  
  • মার্ক অধ্যায় 6  
  • মার্ক অধ্যায় 7  
  • মার্ক অধ্যায় 8  
  • মার্ক অধ্যায় 9  
  • মার্ক অধ্যায় 10  
  • মার্ক অধ্যায় 11  
  • মার্ক অধ্যায় 12  
  • মার্ক অধ্যায় 13  
  • মার্ক অধ্যায় 14  
  • মার্ক অধ্যায় 15  
  • মার্ক অধ্যায় 16  
×

Alert

×

Bengali Letters Keypad References