1 আর ফরীশীরা ও কয়েক জন অধ্যাপক যিরূশালেম হইতে আসিয়া তাঁহার নিকটে একত্র হইল।2 তাহারা দেখিল যে, তাঁহার কয়েক জন শিষ্য অশুচি অর্থাৎ অধৌত হস্তে আহার করিতেছে।3 —ফরীশিগণ ও যিহূদীরা সকলে প্রাচীনদের পরম্পরাগত বিধি মান্য করায় ভাল করিয়া হাত না ধুইয়া আহার করে না।4 আর বাজার হইতে আসিলে তাহারা স্নান না করিয়া আহার করে না; এবং তাহারা আরও অনেক বিষয় মানিবার আদেশ প্রাপ্ত হইয়াছে, যথা, ঘটী, ঘড়া ও পিত্তলের নানা পাত্র ধৌত করা।—5 পরে ফরীশীরা ও অধ্যাপকেরা তাঁহাকে জিজ্ঞাসা করিল, তোমার শিষ্যেরা প্রাচীনদের পরম্পরাগত বিধি অনুসারে চলে না, কিন্তু অশুচি হস্তে আহার করে, ইহার কারণ কি?6 তিনি তাহাদিগকে কহিলেন, কপটীরা, যিশাইয় তোমাদের বিষয়ে বিলক্ষণ ভাববাণী বলিয়াছেন, যেমন লেখা আছে, “এই লোকেরা ওষ্ঠাধরে আমার সম্মান করে, কিন্তু ইহাদের অন্তঃকরণ আমা হইতে দূরে থাকে।7 ইহারা অনর্থক আমার আরাধনা করে, মনুষ্যদের আদেশ ধর্ম্মসূত্র বলিয়া শিক্ষা দেয়।”8 তোমরা ঈশ্বরের আজ্ঞা ত্যাগ করিয়া মনুষ্যদের পরম্পরাগত বিধি ধরিয়া রহিয়াছ।9 তিনি তাহাদিগকে আরও কহিলেন, তোমাদের পরম্পরাগত বিধি পালনের নিমিত্ত তোমরা ঈশ্বরের আজ্ঞা বিলক্ষণ অমান্য করিতেছ।10 কেননা মোশি বলিয়াছেন, “তুমি আপন পিতাকে ও আপন মাতাকে সমাদর কর,” আর “যে কেহ পিতার কি মাতার নিন্দা করে, তাহার প্রাণদণ্ড হউক।”11 কিন্তু তোমরা বলিয়া থাক, মনুষ্য যদি পিতাকে কিম্বা মাতাকে বলে, ‘আমা হইতে যাহা দিয়া তোমার উপকার হইতে পারিত, তাহা কর্ব্বান্, অর্থাৎ ঈশ্বরকে দত্ত হইয়াছে,’12 তোমরা তাহাকে পিতার কি মাতার জন্য আর কিছুই করিতে দেও না।13 এইরূপে তোমাদের সমর্পিত পরম্পরাগত বিধি দ্বারা তোমরা ঈশ্বরের বাক্য নিষ্ফল করিতেছ; আর এই প্রকার অনেক ক্রিয়া করিয়া থাক।14 পরে তিনি লোকসমূহকে পুনরায় কাছে ডাকিয়া কহিলেন, তোমরা সকলে আমার কথা শুন ও বুঝ।15 মনুষ্যের বাহিরে এমন কিছুই নাই, যাহা তাহার ভিতরে গিয়া তাহাকে অশুচি করিতে পারে;16 কিন্তু যাহা যাহা মনুষ্য হইতে বাহির হয়, সেই সকলই মনুষ্যকে অশুচি করে।17 পরে তিনি লোকসমূহের নিকট হইতে গৃহমধ্যে আসিলে তাঁহার শিষ্যেরা তাঁহাকে সেই দৃষ্টান্তটীর ভাব জিজ্ঞাসা করিলেন।18 তিনি তাঁহাদিগকে কহিলেন, তোমরাও কি এমন অবোধ? তোমরা কি বুঝ না যে, যাহা কিছু বাহির হইতে মনুষ্যের ভিতরে যায়, তাহা তাহাকে অশুচি করিতে পারে না?19 তাহা ত তাহার হৃদয়ে প্রবেশ করে না, কিন্তু উদরে প্রবেশ করে, এবং বহিঃস্থানে গিয়া পড়ে। এ কথায় তিনি সমস্ত খাদ্য দ্রব্যকে শুচি বলিলেন।20 তিনি আরও কহিলেন, মনুষ্য হইতে যাহা বাহির হয়, তাহাই মনুষ্যকে অশুচি করে।21 কেননা ভিতর হইতে, মনুষ্যদের অন্তঃকরণ হইতে, কুচিন্তা বাহির হয়22 —বেশ্যাগমন, চৌর্য্য, নরহত্যা, ব্যভিচার, লোভ, দুষ্টতা, ছল, লম্পটতা, কুদৃষ্টি, নিন্দা, অভিমান ও মূর্খতা;23 এই সকল মন্দ বিষয় ভিতর হইতে বাহির হয়, এবং মনুষ্যকে অশুচি করে।24 পরে তিনি উঠিয়া সে স্থান হইতে সোর ও সীদোন অঞ্চলে গমন করিলেন। আর তিনি এক বাটীতে প্রবেশ করিলেন, ইচ্ছা করিলেন, যেন কেহ জানিতে না পারে; কিন্তু গুপ্ত থাকিতে পারিলেন না।25 কারণ তখনই একটী স্ত্রীলোক, যাহার একটী মেয়ে ছিল, আর সেটীকে অশুচি আত্মায় পাইয়াছিল, তাঁহার বিষয় শুনিতে পাইয়া আসিয়া তাঁহার চরণে পড়িল।26 স্ত্রীলোকটী গ্রীক, জাতিতে সুর-ফৈনীকী। সে তাঁহাকে বিনতি করিতে লাগিল, যেন তিনি তাহার কন্যার ভূত ছাড়াইয়া দেন।27 তিনি তাহাকে কহিলেন, প্রথমে সন্তানেরা তৃপ্ত হউক, কেননা সন্তানদের খাদ্য লইয়া কুকুরদের কাছে ফেলিয়া দেওয়া ভাল নয়।28 কিন্তু স্ত্রীলোকটী উত্তর করিয়া তাঁহাকে কহিল, হাঁ, প্রভু, আর কুকুরেরাও মেজের নীচে ছেলেদের খাদ্যের গুঁড়াগাঁড়া খায়।29 তখন তিনি তাহাকে বলিলেন, এই বাক্য প্রযুক্ত চলিয়া যাও, তোমার কন্যার ভূত ছাড়িয়া গিয়াছে।30 পরে সে গৃহে গিয়া দেখিতে পাইল, কন্যাটী শয্যায় শুইয়া আছে, এবং ভূত বাহির হইয়া গিয়াছে।31 পরে তিনি সোর অঞ্চল হইতে বাহির হইলেন এবং সীদোন হইয়া দিকাপলি অঞ্চলের মধ্য দিয়া গালীল-সাগরের নিকটে আসিলেন।32 তখন লোকেরা এক জন বধির তোৎলাকে তাঁহার নিকটে আনিয়া তাঁহাকে তাহার উপরে হস্তার্পণ করিতে বিনতি করিল।33 তিনি তাহাকে ভিড়ের মধ্য হইতে বিরলে এক পার্শ্বে আনিয়া তাহার দুই কর্ণে আপন অঙ্গুলী দিলেন, থুথু ফেলিলেন, ও তাহার জিহ্বা স্পর্শ করিলেন।34 আর তিনি স্বর্গের দিকে ঊর্দ্ধদৃষ্টি করিয়া দীর্ঘ নিশ্বাস ছাড়িয়া তাহাকে কহিলেন, ইপ্ফাথা, অর্থাৎ খুলিয়া যাউক।35 তাহাতে তাহার কর্ণ খুলিয়া গেল, জিহ্বার বন্ধন মুক্ত হইল, আর সে স্পষ্ট কথা কহিতে লাগিল।36 পরে তিনি তাহাদিগকে আজ্ঞা করিলেন, তোমরা এ কথা কাহাকেও বলিও না; কিন্তু তিনি যত বারণ করিলেন, ততই তাহারা আরও অধিক প্রচার করিল।37 আর তাহারা যার পর নাই চমৎকৃত হইল, বলিল, ইনি সকলই উত্তমরূপে করিয়াছেন, ইনি বধিরদিগকে শুনিবার শক্তি, এবং বোবাদিগকে কথা কহিবার শক্তি দান করেন।