পবিত্র বাইবেল

গডস গ্রেইস গিফট
রাজাবলি ২

Notes

No Verse Added

রাজাবলি ২ অধ্যায় 4

1. একদা শিষ্য-ভাববাদিগণের মধ্যে এক জনের স্ত্রী ইলীশায়ের কাছে কাঁদিয়া কহিল, আপনার দাস আমার স্বামী মরিয়াছেন; আপনি জানেন, আপনার দাস সদাপ্রভুকে ভয় করিতেন; এখন মহাজন আমার দুইটী সন্তানকে দাস করিবার জন্য লইয়া যাইতে আসিয়াছে। 2. ইলীশায় তাহাকে বলিলেন, আমি তোমার নিমিত্ত কি করিতে পারি? বল দেখি, ঘরে তোমার কি আছে? সে কহিল, এক বাটী তৈল ব্যতিরেকে আপনার দাসীর আর কিছু নাই। 3. তখন তিনি কহিলেন, যাও, বাহির হইতে তোমার সমস্ত প্রতিবাসীর কাছে শূন্য পাত্র চাহিয়া আন, অল্প আনিও না। 4. পরে ভিতরে গিয়া তুমি ও তোমার পুত্রেরা ঘরে থাকিয়া দ্বার রুদ্ধ কর, এবং সেই সকল পাত্রে তৈল ঢাল; এক এক পাত্র পূর্ণ হইলে তাহা এক দিকে রাখ। 5. পরে সে স্ত্রীলোক তাঁহার নিকট হইতে প্রস্থান করিল, আর সে ও তাহার পুত্রেরা ঘরে থাকিয়া দ্বার রুদ্ধ করিল; তাহারা পুনঃপুনঃ তাহাকে পাত্র আনিয়া দিল, এবং সে তৈল ঢালিল। 6. সমস্ত পাত্র পূর্ণ হইলে পর সে আপন পুত্রকে কহিল, আর পাত্র আন। পুত্র কহিল, আর পাত্র নাই। তখন তৈলের স্রোত বদ্ধ হইল। 7. পরে সে গিয়া ঈশ্বরের লোককে সংবাদ দিল। তিনি কহিলেন, যাও, সেই তৈল বিক্রয় করিয়া তোমার ঋণ পরিশোধ কর, এবং যাহা অবশিষ্ট থাকিবে, তদ্দ্বারা তুমি ও তোমার পুত্রেরা দিনপাত কর। 8. এক দিন ইলীশায় শূনেমে যান। তথায় এক ধনবতী মহিলা ছিলেন; তিনি আগ্রহ সহকারে তাঁহাকে ভোজনের নিমন্ত্রণ করিলেন। পরে যত বার তিনি ঐ পথ দিয়া যাইতেন, তত বার আহার করণার্থে সেই স্থানে যাইতেন। 9. আর সেই মহিলা আপন স্বামীকে কহিলেন, দেখ, আমি বুঝিতে পারিয়াছি, এই যে ব্যক্তি আমাদের নিকট দিয়া যখন তখন যাতায়াত করেন, ইনি ঈশ্বরের এক জন পবিত্র লোক। 10. বিনয় করি, আইস, আমরা প্রাচীরের উপরে একটী ক্ষুদ্র কুঠরী নির্ম্মাণ করি, এবং তাহার মধ্যে তাঁহার নিমিত্ত একখানি খাট, একখানি মেজ, একখানি আসন ও একটী পিলসুজ রাখি; তিনি আমাদের এখানে আসিলে সেই স্থানে থাকিবেন। 11. এক দিন ইলীশায় সেখানে আসিলেন; আর সেই কুঠরীতে প্রবেশ করিয়া শয়ন করিলেন। 12. পরে তিনি আপন চাকর গেহসিকে কহিলেন, তুমি ঐ শূনেমীয়াকে ডাক। তাহাতে সে তাঁহাকে ডাকিলে সেই স্ত্রীলোকটী তাঁহার সম্মুখে দাঁড়াইলেন। 13. তখন ইলীশায় গেহসিকে কহিলেন, উহাঁকে বল, দেখুন, আমাদের নিমিত্ত আপনি এই সকল চিন্তা করিলেন, এখন আপনার নিমিত্ত কি করিতে হইবে? রাজার কিম্বা সেনাপতির নিকটে আপনার কি কোন নিবেদন আছে? তিনি উত্তর করিলেন, আমি আপন লোকদের মধ্যে বাস করিতেছি। 14. পরে ইলীশায় কহিলেন, তবে উহাঁর জন্য কি করিতে হইবে? গেহসি কহিল, নিশ্চয়ই উহাঁর পুত্র নাই, স্বামীও বৃদ্ধ। 15. ইলীশায় কহিলেন, উহাঁকে ডাক; পরে তাঁহাকে ডাকিলে তিনি দ্বারে দাঁড়াইলেন। 16. তখন ইলীশায় কহিলেন, এই ঋতুতে এই সময় পুনরায় উপস্থিত হইলে আপনি পুত্র ক্রোড়ে করিবেন। কিন্তু তিনি কহিলেন, না; হে প্রভু, হে ঈশ্বরের লোক, আপনার দাসীকে মিথ্যা কথা কহিবেন না। 17. পরে ইলীশায়ের বাক্যানুসারে সেই স্ত্রী গর্ভধারণ করিয়া সেই সময় পুনরায় উপস্থিত হইলে, পুত্র প্রসব করিলেন। 18. বালকটী বড় হইলে পর সে এক দিন ছেদকদের কাছে আপন পিতার নিকটে গেল। 19. পরে সে পিতাকে কহিল, আমার মাথা! আমার মাথা! তখন পিতা চাকরকে কহিলেন, তুমি ইহাকে তুলিয়া ইহার মাতার কাছে লইয়া যাও। 20. পরে সে তাহাকে তুলিয়া মাতার কাছে আনিলে বালকটী মধ্যাহ্নকাল পর্য্যন্ত তাঁহার ক্রোড়ে বসিয়া থাকিল, পরে মরিয়া গেল। 21. তখন মাতা উপরে গিয়া ঈশ্বরের লোকের খাটে তাহাকে শয়ন করাইলেন, পরে দ্বার রুদ্ধ করিয়া বাহিরে আসিলেন, 22. আর আপন স্বামীকে ডাকিয়া বলিলেন, বিনয় করি, তুমি চাকরদের এক জনকে ও একটী গর্দ্দভী আমার কাছে পাঠাইয়া দেও, আমি ঈশ্বরের লোকের কাছে তাড়াতাড়ি গিয়া ফিরিয়া আসিব। 23. তিনি কহিলেন, অদ্য তাঁহার নিকটে কেন যাইবে? অদ্য অমাবস্যাও নয়, বিশ্রামবারও নয়। নারী কহিলেন, মঙ্গল হইবে। 24. আর তিনি গর্দ্দভী সাজাইয়া আপন চাকরকে কহিলেন, গর্দ্দভী চালাইয়া চল, আজ্ঞা না পাইলে আমার গতি শিথিল করিও না। 25. পরে তিনি কর্মিল পর্ব্বতে ঈশ্বরের লোকের নিকটে চলিলেন। তখন ঈশ্বরের লোক তাঁহাকে দূর হইতে দেখিয়া আপন চাকর গেহসিকে কহিলেন, দেখ, ঐ সেই শূনেমীয়া; 26. এক বার দৌড়িয়া গিয়া উহাঁর সহিত সাক্ষাৎ কর, আর জিজ্ঞাসা কর, আপনার মঙ্গল? আপনার স্বামীর মঙ্গল? বালকটীর মঙ্গল? তিনি উত্তর করিলেন, মঙ্গল। 27. পরে পর্ব্বতে ঈশ্বরের লোকের কাছে উপস্থিত হইয়া তিনি তাঁহার চরণ ধরিলেন; তাহাতে গেহসি তাঁহাকে ঠেলিয়া দিবার জন্য নিকটে আসিল, কিন্তু ঈশ্বরের লোক কহিলেন, উহাঁকে থাকিতে দেও, উহাঁর প্রাণ শোকাকুল হইয়াছে, আর সদাপ্রভু আমাহইতে তাহা গোপন করিয়াছেন, আমাকে জানান নাই। 28. তখন স্ত্রীলোকটী কহিলেন, আমার প্রভুর কাছে আমি কি পুত্র চাহিয়াছিলাম? আমাকে প্রতারণা করিবেন না, এ কথা কি বলি নাই? 29. তখন ইলীশায় গেহসিকে কহিলেন, কটিবন্ধন কর, আমার এই যষ্টি হস্তে লইয়া প্রস্থান কর; কাহারও সহিত সাক্ষাৎ হইলে তাহাকে মঙ্গলবাদ করিও না, এবং কেহ মঙ্গলবাদ করিলে তাহাকে উত্তর দিও না; পরে বালকটীর মুখের উপরে আমার এই যষ্টি রাখিও। 30. তখন বালকের মাতা কহিলেন, জীবন্ত সদাপ্রভুর দিব্য, এবং আপনার জীবিত প্রাণের দিব্য, আমি আপনাকে ছাড়িব না। তখন ইলীশায় উঠিয়া তাঁহার পশ্চাতে পশ্চাতে চলিলেন। 31. ইতিমধ্যে গেহসি তাঁহাদের অগ্রে গিয়া বালকটীর মুখে ঐ যষ্টি রাখিল, তথাপি কোন শব্দ হইল না, অবধানের কোন লক্ষণও পাওয়া গেল না। অতএব গেহসি তাঁহার সহিত সাক্ষাৎ করিতে ফিরিয়া গিয়া তাঁহাকে কহিল, বালকটী জাগে নাই। 32. পরে ইলীশায় সেই গৃহে আসিলেন, আর দেখ, বালকটী মৃত, ও তাঁহার শয্যায় শায়িত। 33. তখন তিনি প্রবেশ করিলেন, এবং তাঁহাদের দুই জনকে বাহিরে রাখিয়া দ্বার রুদ্ধ করিয়া সদাপ্রভুর কাছে প্রার্থনা করিলেন। 34. আর [খাটে] উঠিয়া বালকটীর উপরে শয়ন করিলেন; তিনি তাহার মুখের উপরে আপন মুখ, চক্ষুর উপরে চক্ষু ও করতলের উপরে করতল দিয়া তাহার উপরে আপনি লম্বমান হইলেন; তাহাতে বালকটীর গাত্র উত্তাপযুক্ত হইতে লাগিল। 35. পরে তিনি ফিরিয়া আসিয়া গৃহমধ্যে একবার এদিক্‌ একবার ওদিক্‌ করিলেন, আবার উঠিয়া তাহার উপরে লম্বমান হইলেন; তাহাতে বালকটী সাত বার হাঁচিল, ও বালকটী চক্ষু মেলিল। 36. তখন তিনি গেহসিকে ডাকিয়া কহিলেন, ঐ শূনেমীয়াকে ডাক। সে তাঁহাকে ডাকিলে স্ত্রীলোকটী তাঁহার নিকটে আসিলেন। ইলীশায় কহিলেন, আপনার পুত্রকে তুলিয়া লউন। 37. তখন সে স্ত্রীলোক নিকটে গিয়া তাঁহার পদতলে পড়িয়া ভূমিতে প্রণিপাত করিলেন, এবং আপন পুত্রকে তুলিয়া লইয়া বাহিরে গেলেন। 38. ইলীশায় পুনর্ব্বার গিল্‌গলে উপস্থিত হইলেন; সেই সময়ে দেশে দুর্ভিক্ষ ছিল। তখন শিষ্য-ভাববাদিগণ তাঁহার সম্মুখে বসিয়াছিল; তিনি আপন চাকরকে আজ্ঞা দিলেন, বড় হাঁড়ী চড়াইয়া এই শিষ্য-ভাববাদিগণের জন্য ব্যঞ্জন পাক কর। 39. তখন তাহাদের এক জন তরকারি সংগ্রহ করিতে মাঠে গেল, এবং বনশসার লতা দেখিতে পাইয়া তাহার বুনো ফলে বস্ত্র পূর্ণ করিয়া আনিল, পরে তাহা কুটিয়া পাকের হাঁড়ীতে দিল; কিন্তু সেগুলি কি, তাহা তাহারা জানিল না। 40. পরে লোকদের ভোজনার্থে তাহা ঢালিলে তাহারা সেই ব্যঞ্জন খাইতে গিয়া চীৎকার করিয়া কহিল, হে ঈশ্বরের লোক, হাঁড়ীর মধ্যে মৃত্যু; আর তাহারা তাহা খাইতে পারিল না। 41. তখন তিনি কহিলেন, তবে কিছু ময়দা আন। পরে তিনি হাঁড়ীতে তাহা ফেলিয়া কহিলেন, লোকদের জন্য ঢালিয়া দেও, তাহারা ভোজন করুক। তাহাতে হাঁড়ীতে কিছুই মন্দ থাকিল না। 42. আর বাল্‌-শালিশা হইতে এক ব্যক্তি আসিল, সে ঈশ্বরের লোকের কাছে আশুপক্ক শস্যের রুটী, যবের কুড়িখানা রুটী ও ছালায় করিয়া শস্যের তাজা শীষ আনিল; আর তিনি কহিলেন, ইহা লোকদিগকে দেও, তাহারা ভোজন করুক। 43. তখন তাঁহার পরিচারক কহিল, আমি কি এক শত লোককে ইহা পরিবেষণ করিব? কিন্তু তিনি কহিলেন, ইহা লোকদিগকে দেও তাহারা ভোজন করুক; কেননা সদাপ্রভু এই কথা কহেন, তাহারা ভোজন করিবে, ও উদ্বৃত্ত রাখিবে। 44. অতএব সে তাহাদের সম্মুখে তাহা স্থাপন করিল, আর সদাপ্রভুর বাক্যানুসারে তাহারা ভোজন করিল, আর উদ্বৃত্তও রাখিল।
1. একদা শিষ্য-ভাববাদিগণের মধ্যে এক জনের স্ত্রী ইলীশায়ের কাছে কাঁদিয়া কহিল, আপনার দাস আমার স্বামী মরিয়াছেন; আপনি জানেন, আপনার দাস সদাপ্রভুকে ভয় করিতেন; এখন মহাজন আমার দুইটী সন্তানকে দাস করিবার জন্য লইয়া যাইতে আসিয়াছে। .::. 2. ইলীশায় তাহাকে বলিলেন, আমি তোমার নিমিত্ত কি করিতে পারি? বল দেখি, ঘরে তোমার কি আছে? সে কহিল, এক বাটী তৈল ব্যতিরেকে আপনার দাসীর আর কিছু নাই। .::. 3. তখন তিনি কহিলেন, যাও, বাহির হইতে তোমার সমস্ত প্রতিবাসীর কাছে শূন্য পাত্র চাহিয়া আন, অল্প আনিও না। .::. 4. পরে ভিতরে গিয়া তুমি ও তোমার পুত্রেরা ঘরে থাকিয়া দ্বার রুদ্ধ কর, এবং সেই সকল পাত্রে তৈল ঢাল; এক এক পাত্র পূর্ণ হইলে তাহা এক দিকে রাখ। .::. 5. পরে সে স্ত্রীলোক তাঁহার নিকট হইতে প্রস্থান করিল, আর সে ও তাহার পুত্রেরা ঘরে থাকিয়া দ্বার রুদ্ধ করিল; তাহারা পুনঃপুনঃ তাহাকে পাত্র আনিয়া দিল, এবং সে তৈল ঢালিল। .::. 6. সমস্ত পাত্র পূর্ণ হইলে পর সে আপন পুত্রকে কহিল, আর পাত্র আন। পুত্র কহিল, আর পাত্র নাই। তখন তৈলের স্রোত বদ্ধ হইল। .::. 7. পরে সে গিয়া ঈশ্বরের লোককে সংবাদ দিল। তিনি কহিলেন, যাও, সেই তৈল বিক্রয় করিয়া তোমার ঋণ পরিশোধ কর, এবং যাহা অবশিষ্ট থাকিবে, তদ্দ্বারা তুমি ও তোমার পুত্রেরা দিনপাত কর। .::. 8. এক দিন ইলীশায় শূনেমে যান। তথায় এক ধনবতী মহিলা ছিলেন; তিনি আগ্রহ সহকারে তাঁহাকে ভোজনের নিমন্ত্রণ করিলেন। পরে যত বার তিনি ঐ পথ দিয়া যাইতেন, তত বার আহার করণার্থে সেই স্থানে যাইতেন। .::. 9. আর সেই মহিলা আপন স্বামীকে কহিলেন, দেখ, আমি বুঝিতে পারিয়াছি, এই যে ব্যক্তি আমাদের নিকট দিয়া যখন তখন যাতায়াত করেন, ইনি ঈশ্বরের এক জন পবিত্র লোক। .::. 10. বিনয় করি, আইস, আমরা প্রাচীরের উপরে একটী ক্ষুদ্র কুঠরী নির্ম্মাণ করি, এবং তাহার মধ্যে তাঁহার নিমিত্ত একখানি খাট, একখানি মেজ, একখানি আসন ও একটী পিলসুজ রাখি; তিনি আমাদের এখানে আসিলে সেই স্থানে থাকিবেন। .::. 11. এক দিন ইলীশায় সেখানে আসিলেন; আর সেই কুঠরীতে প্রবেশ করিয়া শয়ন করিলেন। .::. 12. পরে তিনি আপন চাকর গেহসিকে কহিলেন, তুমি ঐ শূনেমীয়াকে ডাক। তাহাতে সে তাঁহাকে ডাকিলে সেই স্ত্রীলোকটী তাঁহার সম্মুখে দাঁড়াইলেন। .::. 13. তখন ইলীশায় গেহসিকে কহিলেন, উহাঁকে বল, দেখুন, আমাদের নিমিত্ত আপনি এই সকল চিন্তা করিলেন, এখন আপনার নিমিত্ত কি করিতে হইবে? রাজার কিম্বা সেনাপতির নিকটে আপনার কি কোন নিবেদন আছে? তিনি উত্তর করিলেন, আমি আপন লোকদের মধ্যে বাস করিতেছি। .::. 14. পরে ইলীশায় কহিলেন, তবে উহাঁর জন্য কি করিতে হইবে? গেহসি কহিল, নিশ্চয়ই উহাঁর পুত্র নাই, স্বামীও বৃদ্ধ। .::. 15. ইলীশায় কহিলেন, উহাঁকে ডাক; পরে তাঁহাকে ডাকিলে তিনি দ্বারে দাঁড়াইলেন। .::. 16. তখন ইলীশায় কহিলেন, এই ঋতুতে এই সময় পুনরায় উপস্থিত হইলে আপনি পুত্র ক্রোড়ে করিবেন। কিন্তু তিনি কহিলেন, না; হে প্রভু, হে ঈশ্বরের লোক, আপনার দাসীকে মিথ্যা কথা কহিবেন না। .::. 17. পরে ইলীশায়ের বাক্যানুসারে সেই স্ত্রী গর্ভধারণ করিয়া সেই সময় পুনরায় উপস্থিত হইলে, পুত্র প্রসব করিলেন। .::. 18. বালকটী বড় হইলে পর সে এক দিন ছেদকদের কাছে আপন পিতার নিকটে গেল। .::. 19. পরে সে পিতাকে কহিল, আমার মাথা! আমার মাথা! তখন পিতা চাকরকে কহিলেন, তুমি ইহাকে তুলিয়া ইহার মাতার কাছে লইয়া যাও। .::. 20. পরে সে তাহাকে তুলিয়া মাতার কাছে আনিলে বালকটী মধ্যাহ্নকাল পর্য্যন্ত তাঁহার ক্রোড়ে বসিয়া থাকিল, পরে মরিয়া গেল। .::. 21. তখন মাতা উপরে গিয়া ঈশ্বরের লোকের খাটে তাহাকে শয়ন করাইলেন, পরে দ্বার রুদ্ধ করিয়া বাহিরে আসিলেন, .::. 22. আর আপন স্বামীকে ডাকিয়া বলিলেন, বিনয় করি, তুমি চাকরদের এক জনকে ও একটী গর্দ্দভী আমার কাছে পাঠাইয়া দেও, আমি ঈশ্বরের লোকের কাছে তাড়াতাড়ি গিয়া ফিরিয়া আসিব। .::. 23. তিনি কহিলেন, অদ্য তাঁহার নিকটে কেন যাইবে? অদ্য অমাবস্যাও নয়, বিশ্রামবারও নয়। নারী কহিলেন, মঙ্গল হইবে। .::. 24. আর তিনি গর্দ্দভী সাজাইয়া আপন চাকরকে কহিলেন, গর্দ্দভী চালাইয়া চল, আজ্ঞা না পাইলে আমার গতি শিথিল করিও না। .::. 25. পরে তিনি কর্মিল পর্ব্বতে ঈশ্বরের লোকের নিকটে চলিলেন। তখন ঈশ্বরের লোক তাঁহাকে দূর হইতে দেখিয়া আপন চাকর গেহসিকে কহিলেন, দেখ, ঐ সেই শূনেমীয়া; .::. 26. এক বার দৌড়িয়া গিয়া উহাঁর সহিত সাক্ষাৎ কর, আর জিজ্ঞাসা কর, আপনার মঙ্গল? আপনার স্বামীর মঙ্গল? বালকটীর মঙ্গল? তিনি উত্তর করিলেন, মঙ্গল। .::. 27. পরে পর্ব্বতে ঈশ্বরের লোকের কাছে উপস্থিত হইয়া তিনি তাঁহার চরণ ধরিলেন; তাহাতে গেহসি তাঁহাকে ঠেলিয়া দিবার জন্য নিকটে আসিল, কিন্তু ঈশ্বরের লোক কহিলেন, উহাঁকে থাকিতে দেও, উহাঁর প্রাণ শোকাকুল হইয়াছে, আর সদাপ্রভু আমাহইতে তাহা গোপন করিয়াছেন, আমাকে জানান নাই। .::. 28. তখন স্ত্রীলোকটী কহিলেন, আমার প্রভুর কাছে আমি কি পুত্র চাহিয়াছিলাম? আমাকে প্রতারণা করিবেন না, এ কথা কি বলি নাই? .::. 29. তখন ইলীশায় গেহসিকে কহিলেন, কটিবন্ধন কর, আমার এই যষ্টি হস্তে লইয়া প্রস্থান কর; কাহারও সহিত সাক্ষাৎ হইলে তাহাকে মঙ্গলবাদ করিও না, এবং কেহ মঙ্গলবাদ করিলে তাহাকে উত্তর দিও না; পরে বালকটীর মুখের উপরে আমার এই যষ্টি রাখিও। .::. 30. তখন বালকের মাতা কহিলেন, জীবন্ত সদাপ্রভুর দিব্য, এবং আপনার জীবিত প্রাণের দিব্য, আমি আপনাকে ছাড়িব না। তখন ইলীশায় উঠিয়া তাঁহার পশ্চাতে পশ্চাতে চলিলেন। .::. 31. ইতিমধ্যে গেহসি তাঁহাদের অগ্রে গিয়া বালকটীর মুখে ঐ যষ্টি রাখিল, তথাপি কোন শব্দ হইল না, অবধানের কোন লক্ষণও পাওয়া গেল না। অতএব গেহসি তাঁহার সহিত সাক্ষাৎ করিতে ফিরিয়া গিয়া তাঁহাকে কহিল, বালকটী জাগে নাই। .::. 32. পরে ইলীশায় সেই গৃহে আসিলেন, আর দেখ, বালকটী মৃত, ও তাঁহার শয্যায় শায়িত। .::. 33. তখন তিনি প্রবেশ করিলেন, এবং তাঁহাদের দুই জনকে বাহিরে রাখিয়া দ্বার রুদ্ধ করিয়া সদাপ্রভুর কাছে প্রার্থনা করিলেন। .::. 34. আর [খাটে] উঠিয়া বালকটীর উপরে শয়ন করিলেন; তিনি তাহার মুখের উপরে আপন মুখ, চক্ষুর উপরে চক্ষু ও করতলের উপরে করতল দিয়া তাহার উপরে আপনি লম্বমান হইলেন; তাহাতে বালকটীর গাত্র উত্তাপযুক্ত হইতে লাগিল। .::. 35. পরে তিনি ফিরিয়া আসিয়া গৃহমধ্যে একবার এদিক্‌ একবার ওদিক্‌ করিলেন, আবার উঠিয়া তাহার উপরে লম্বমান হইলেন; তাহাতে বালকটী সাত বার হাঁচিল, ও বালকটী চক্ষু মেলিল। .::. 36. তখন তিনি গেহসিকে ডাকিয়া কহিলেন, ঐ শূনেমীয়াকে ডাক। সে তাঁহাকে ডাকিলে স্ত্রীলোকটী তাঁহার নিকটে আসিলেন। ইলীশায় কহিলেন, আপনার পুত্রকে তুলিয়া লউন। .::. 37. তখন সে স্ত্রীলোক নিকটে গিয়া তাঁহার পদতলে পড়িয়া ভূমিতে প্রণিপাত করিলেন, এবং আপন পুত্রকে তুলিয়া লইয়া বাহিরে গেলেন। .::. 38. ইলীশায় পুনর্ব্বার গিল্‌গলে উপস্থিত হইলেন; সেই সময়ে দেশে দুর্ভিক্ষ ছিল। তখন শিষ্য-ভাববাদিগণ তাঁহার সম্মুখে বসিয়াছিল; তিনি আপন চাকরকে আজ্ঞা দিলেন, বড় হাঁড়ী চড়াইয়া এই শিষ্য-ভাববাদিগণের জন্য ব্যঞ্জন পাক কর। .::. 39. তখন তাহাদের এক জন তরকারি সংগ্রহ করিতে মাঠে গেল, এবং বনশসার লতা দেখিতে পাইয়া তাহার বুনো ফলে বস্ত্র পূর্ণ করিয়া আনিল, পরে তাহা কুটিয়া পাকের হাঁড়ীতে দিল; কিন্তু সেগুলি কি, তাহা তাহারা জানিল না। .::. 40. পরে লোকদের ভোজনার্থে তাহা ঢালিলে তাহারা সেই ব্যঞ্জন খাইতে গিয়া চীৎকার করিয়া কহিল, হে ঈশ্বরের লোক, হাঁড়ীর মধ্যে মৃত্যু; আর তাহারা তাহা খাইতে পারিল না। .::. 41. তখন তিনি কহিলেন, তবে কিছু ময়দা আন। পরে তিনি হাঁড়ীতে তাহা ফেলিয়া কহিলেন, লোকদের জন্য ঢালিয়া দেও, তাহারা ভোজন করুক। তাহাতে হাঁড়ীতে কিছুই মন্দ থাকিল না। .::. 42. আর বাল্‌-শালিশা হইতে এক ব্যক্তি আসিল, সে ঈশ্বরের লোকের কাছে আশুপক্ক শস্যের রুটী, যবের কুড়িখানা রুটী ও ছালায় করিয়া শস্যের তাজা শীষ আনিল; আর তিনি কহিলেন, ইহা লোকদিগকে দেও, তাহারা ভোজন করুক। .::. 43. তখন তাঁহার পরিচারক কহিল, আমি কি এক শত লোককে ইহা পরিবেষণ করিব? কিন্তু তিনি কহিলেন, ইহা লোকদিগকে দেও তাহারা ভোজন করুক; কেননা সদাপ্রভু এই কথা কহেন, তাহারা ভোজন করিবে, ও উদ্বৃত্ত রাখিবে। .::. 44. অতএব সে তাহাদের সম্মুখে তাহা স্থাপন করিল, আর সদাপ্রভুর বাক্যানুসারে তাহারা ভোজন করিল, আর উদ্বৃত্তও রাখিল। .::.
  • রাজাবলি ২ অধ্যায় 1  
  • রাজাবলি ২ অধ্যায় 2  
  • রাজাবলি ২ অধ্যায় 3  
  • রাজাবলি ২ অধ্যায় 4  
  • রাজাবলি ২ অধ্যায় 5  
  • রাজাবলি ২ অধ্যায় 6  
  • রাজাবলি ২ অধ্যায় 7  
  • রাজাবলি ২ অধ্যায় 8  
  • রাজাবলি ২ অধ্যায় 9  
  • রাজাবলি ২ অধ্যায় 10  
  • রাজাবলি ২ অধ্যায় 11  
  • রাজাবলি ২ অধ্যায় 12  
  • রাজাবলি ২ অধ্যায় 13  
  • রাজাবলি ২ অধ্যায় 14  
  • রাজাবলি ২ অধ্যায় 15  
  • রাজাবলি ২ অধ্যায় 16  
  • রাজাবলি ২ অধ্যায় 17  
  • রাজাবলি ২ অধ্যায় 18  
  • রাজাবলি ২ অধ্যায় 19  
  • রাজাবলি ২ অধ্যায় 20  
  • রাজাবলি ২ অধ্যায় 21  
  • রাজাবলি ২ অধ্যায় 22  
  • রাজাবলি ২ অধ্যায় 23  
  • রাজাবলি ২ অধ্যায় 24  
  • রাজাবলি ২ অধ্যায় 25  
Common Bible Languages
West Indian Languages
×

Alert

×

bengali Letters Keypad References