পবিত্র বাইবেল

বাইবেল সোসাইটি অফ ইন্ডিয়া (BSI)
লুক

রেকর্ড

লুক অধ্যায় 8

1 ইহার পরেই তিনি ঘোষণা করিতে করিতে এবং ঈশ্বরের রাজ্যের সুসমাচার প্রচার করিতে করিতে নগরে নগরে ও গ্রামে গ্রামে ভ্রমণ করিলেন, আর তাঁহার সঙ্গে সেই বারো জন, 2 এবং যাঁহারা দুষ্ট আত্মা কিম্বা রোগ হইতে মুক্তা হইয়াছিলেন, এমন কএকটী স্ত্রীলোক ছিলেন, মগ্দলীনী নাম্নী মরিয়ম, যাঁহা হইতে সাত ভূত বাহির হইয়াছিল, 3 যোহানা, যিনি হেরোদের বিষয়াধ্যক্ষ কূষের স্ত্রী, এবং শোশন্না ও অন্য অনেকগুলি স্ত্রীলোক ছিলেন; তাঁহারা আপন আপন সম্পত্তি হইতে তাঁহাদের পরিচর্য্যা করিতেন। 4 আর যখন বিস্তর লোক সমাগত হইতেছিল, এবং ভিন্ন ভিন্ন নগর হইতে লোকেরা তাঁহার নিকট আসিতেছিল, তখন তিনি দৃষ্টান্ত দ্বারা কহিলেন, 5 বীজবাপক আপন বীজ বপন করিতে গেল। বপনের সময়ে কতক বীজ পথের পার্শ্বে পড়িল, তাহাতে তাহা পদতলে দলিত হইল, ও আকাশের পক্ষিগণ তাহা খাইয়া ফেলিল। 6 আর কতক পাষাণের উপরে পড়িল, তাহাতে তাহা অঙ্কুরিত হইলে রস না পাওয়াতে শুকাইয়া গেল। 7 আর কতক কাঁটাবনের মধ্যে পড়িল, তাহাতে কাঁটা সকল সঙ্গে সঙ্গে অঙ্কুরিত হইয়া তাহা চাপিয়া রাখিল। 8 আর কতক বীজ উত্তম ভূমিতে পড়িল, তাহাতে তাহা অঙ্কুরিত হইয়া শত গুণ ফল উৎপন্ন করিল। এই কথা বলিয়া তিনি উচ্চ রবে কহিলেন, যাহার শুনিতে কাণ থাকে, সে শুনুক। 9 পরে তাঁহার শিষ্যগণ তাঁহাকে জিজ্ঞাসা করিলেন, ঐ দৃষ্টান্তের ভাব কি? 10 তিনি কহিলেন, ঈশ্বরের রাজ্যের নিগূঢ় তত্ত্ব সকল তোমাদিগকে জানিতে দেওয়া হইয়াছে; কিন্তু আর সকলের নিকটে দৃষ্টান্ত দ্বারা বলা গিয়াছে; যেন তাহারা দেখিয়াও না দেখে, এবং শুনিয়াও না বুঝে। 11 দৃষ্টান্তটী এই; সেই বীজ ঈশ্বরের বাক্য। 12 আর তাহারাই পথের পার্শ্বের লোক, যাহারা শুনিয়াছে, পরে দিয়াবল আসিয়া তাহাদের হৃদয় হইতে সেই বাক্য হরণ করিয়া লয়, যেন তাহারা বিশ্বাস করিয়া করিয়া পরিত্রাণ না পায়। 13 আর তাহারাই পাষাণের উপরের লোক, যাহারা শুনিয়া আনন্দপূর্ব্বক সেই বাক্য গ্রহণ করে, কিন্তু তাহাদের মূল নাই, তাহারা অল্প কালমাত্র বিশ্বাস করে, আর পরীক্ষার সময়ে সরিয়া পড়ে। 14 আর যাহা কাঁটাবনের মধ্যে পড়িল, তাহা এমন লোক, যাহারা শুনিয়াছে, কিন্তু চলিতে চলিতে জীবনের চিন্তা ও ধন ও সুখভোগের দ্বারা চাপা পড়ে, এবং পক্ব ফল উৎপন্ন করে না। 15 আর যাহা উত্তম ভূমিতে পড়িল, তাহা এমন লোক, যাহারা সৎ ও উত্তম হৃদয়ে বাক্য শুনিয়া ধরিয়া রাখে, এবং ধৈর্য্য সহকারে ফল উৎপন্ন করে। 16 আর প্রদীপ জ্বালিয়া কেহ পাত্র দিয়া ঢাকে না, কিম্বা খাটের নীচে রাখে না, কিন্তু দীপাধারের উপরেই রাখে, যেন যাহারা ভিতরে যায়, তাহারা আলো দেখিতে পায়। 17 কারণ এমন গুপ্ত কিছুই নাই, যাহা প্রকাশিত হইবে না; এবং এমন লুক্কায়িত কিছুই নাই, যাহা জানা যাইবে না ও প্রকাশ পাইবে না। 18 অতএব দেখিও, তোমরা কিরূপে শুন; কেননা যাহার আছে, তাহাকে দেওয়া যাইবে; আর যাহার নাই, তাহার বোধে যাহা আছে, তাহাও তাহার নিকট হইতে লওয়া যাইবে। 19 আর তাঁহার মাতা ও ভ্রাতৃগণ তাঁহার নিকটে আসিলেন, কিন্তু জনতা প্রযুক্ত তাঁহার সহিত সাক্ষাৎ করিতে পারিলেন না। 20 পরে তাঁহাকে জানান হইল, আপনার মাতা ও আপনার ভ্রাতারা আপনাকে দেখিবার বাসনায় বাহিরে দাঁড়াইয়া আছেন। 21 তিনি উত্তর করিয়া তাহাদিগকে কহিলেন, এই যে ব্যক্তিরা ঈশ্বরের বাক্য শুনে ও পালন করে, ইহারাই আমার মাতা ও ভ্রাতৃগণ। 22 এক দিন তিনি স্বয়ং ও তাঁহার শিষ্যগণ একখানি নৌকায় উঠিলেন; আর তিনি তাঁহাদিগকে বলিলেন, আইস, আমরা হ্রদের ওপারে যাই; তাহাতে তাঁহারা খুলিয়া দিলেন। 23 কিন্তু তাঁহারা নৌকা ছাড়িয়া দিলে তিনি নিদ্রা গেলেন, আর হ্রদে ঝড় আসিয়া পড়িল, তাহাতে নৌকা জলে পূর্ণ হইতে লাগিল, ও তাঁহারা সঙ্কটে পড়িলেন। 24 পরে তাঁহারা নিকটে গিয়া তাঁহাকে জাগাইয়া কহিলেন, নাথ, নাথ, আমরা মারা পড়িলাম। তখন তিনি জাগিয়া উঠিয়া বায়ুকে ও জলের তরঙ্গকে ধমক্‌ দিলেন, আর উভয়ই থামিয়া গেল, ও শান্তি হইল। 25 পরে তিনি তাঁহাদিগকে কহিলেন, তোমাদের বিশ্বাস কোথায়? তখন তাঁহারা ভীত হইয়া আশ্চর্য্য জ্ঞান করিলেন, পরস্পর কহিলেন, ইনি তবে কে যে বায়ুকে ও জলকেও আজ্ঞা দেন, আর তাহারা ইহাঁর আজ্ঞা মানে? 26 পরে তাঁহারা গালীলের পরপারস্থ গেরাসেনীদের অঞ্চলে পহুঁছিলেন। 27 আর তিনি স্থলে নামিলে ঐ নগরের একটা ভূতগ্রস্ত লোক সম্মুখে উপস্থিত হইল; সে অনেক দিন হইতে কাপড় পরিত না, ও গৃহে বাস করিত না, কিন্তু কবরে থাকিত। 28 যীশুকে দেখিবামাত্র সে চীৎকার করিয়া উঠিল, এবং তাঁহার সম্মুখে পড়িয়া উচ্চ রবে কহিল, হে যীশু, পরাৎপর ঈশ্বরের পুত্র, আপনার সহিত আমার সম্পর্ক কি? আপনাকে বিনতি করি, আমাকে যাতনা দিবেন না। 29 কারণ তিনি সেই অশুচি আত্মাকে লোকটী হইতে বাহির হইয়া যাইতে আজ্ঞা করিলেন; কেননা ঐ আত্মা দীর্ঘকাল অবধি তাহাকে ধরিয়াছিল, আর শৃঙ্খল ও বেড়ী দ্বারা বদ্ধ হইয়া রক্ষিত হইলেও সে বন্ধন ছিঁড়িয়া ভূতের বশে নির্জ্জন স্থানে চালিত হইত। 30 যীশু তাহাকে জিজ্ঞাসা করিলেন, তোমার নাম কি? সে কহিল, বাহিনী; কেননা অনেক ভূত তাহার মধ্যে প্রবেশ করিয়াছিল। 31 পরে তাহারা তাঁহাকে বিনতি করিতে লাগিল, যেন তিনি তাহাদিগকে রসাতলে চলিয়া যাইতে আজ্ঞা না দেন। 32 সেই স্থানে পর্ব্বতের উপরে বৃহৎ এক শূকরপাল চরিতেছিল; তাহাতে ভূতগণ তাঁহাকে বিনতি করিল, যেন তিনি তাহাদিগকে শূকরদের মধ্যে প্রবেশ করিতে অনুমতি দেন; তিনি তাহাদিগকে অনুমতি দিলেন। 33 তখন ভূতগণ সেই লোকটী হইতে বাহির হইয়া শূকরদিগের মধ্যে প্রবেশ করিল, তাহাতে সেই পাল বেগে ঢালু পাড় দিয়া দৌড়িয়া গিয়া হ্রদে পড়িয়া ডুবিয়া মরিল। 34 এই ঘটনা দেখিয়া, যাহারা সেগুলিকে চরাইতেছিল, তাহারা পলায়ন করিল, এবং নগরে ও পল্লীতে পল্লীতে সংবাদ দিল। 35 তখন কি ঘটিয়াছে, দেখিবার জন্য লোকেরা বাহির হইল, এবং যীশুর নিকটে আসিয়া দেখিল, যে লোকটী হইতে ভূতগণ বাহির হইয়াছে, সে কাপড় পরিয়া ও সুবোধ হইয়া যীশুর চরণতলে বসিয়া আছে; তাহাতে তাহারা ভয় পাইল। 36 আর যাহারা দেখিয়াছিল, তাহারা সেই ভূতগ্রস্থ কিরূপে সুস্থ হইয়াছিল, তাহা তাহাদিগকে বলিল। 37 তাহাতে গেরাসেনীদের প্রদেশের চারিদিকের সমস্ত লোক তাঁহাকে বিনতি করিল, যেন তিনি তাহাদের নিকট হইতে চলিয়া যান; কেননা তাহারা মহাভয়ে আক্রান্ত হইয়াছিল, তখন তিনি নৌকায় উঠিয়া ফিরিয়া আসিলেন। 38 আর যাহা হইতে ভূতগণ বাহির হইয়াছিল, সেই লোকটী প্রার্থনা করিল, যেন তাঁহার সঙ্গে থাকিতে পারে; 39 কিন্তু তিনি তাহাকে বিদায় করিয়া কহিলেন, তুমি তোমার গৃহে ফিরিয়া যাও, এবং তোমার নিমিত্ত ঈশ্বর যে যে মহৎ কার্য্য করিয়াছেন, তাহার বৃত্তান্ত বল। তাহাতে সে চলিয়া গিয়া, যীশু তাহার জন্য যে যে মহৎ কার্য্য করিয়াছেন, তাহা নগরের সর্ব্বত্র প্রচার করিতে লাগিল। 40 যীশু ফিরিয়া আসিলে লোকেরা তাঁহাকে সাদরে গ্রহণ করিল; কারণ সকলে তাঁহার অপেক্ষা করিতেছিল। 41 আর দেখ, যায়ীর নামে এক ব্যক্তি আসিলেন; তিনি সমাজ-গৃহের এক জন অধ্যক্ষ। তিনি যীশুর চরণে পড়িয়া তাঁহার গৃহে আসিতে তাঁহাকে বিনতি করিতে লাগিলেন; 42 কারণ তাঁহার একটী মাত্র কন্যা ছিল, বয়স কমবেশ বারো বৎসর, আর সে মৃতপ্রায় হইয়াছিল। যীশু যখন যাইতেছিলেন, লোকেরা তাঁহার উপরে চাপাচাপি করিয়া পড়িতে লাগিল। 43 আর, একটী স্ত্রীলোক, যে বারো বৎসর অবধি প্রদর রোগগ্রস্ত হইয়াছিল, যে চিকিৎসকদের পিছনে সর্ব্বস্ব ব্যয় করিয়াও কাহারও দ্বারা সুস্থ হইতে পারে নাই, 44 সে পশ্চাৎ দিকে আসিয়া তাঁহার বস্ত্রের থোপ স্পর্শ করিল; আর তৎক্ষণাৎ তাহার রক্তস্রাব বদ্ধ হইল। 45 তখন যীশু কহিলেন, কে আমাকে স্পর্শ করিল? সকলে অস্বীকার করিলে পিতর ও তাঁহার সঙ্গীরা বলিলেন, নাথ, লোকসমূহ চাপাচাপি করিয়া আপনার উপরে পড়িতেছে। 46 কিন্তু যীশু কহিলেন, আমাকে কেহ স্পর্শ করিয়াছে, কেননা আমি টের পাইয়াছি আমা হইতে শক্তি বাহির হইল। 47 স্ত্রীলোকটী যখন দেখিল, সে গুপ্ত নহে, তখন কাঁপিতে কাঁপিতে আসিল, এবং তাঁহার সম্মুখে প্রণিপাত করিয়া, কি নিমিত্ত তাঁহাকে স্পর্শ করিয়াছিল এবং কি প্রকারে তৎক্ষণাৎ সুস্থ হইয়াছিল, তাহা সকল লোকের সাক্ষাতে বর্ণনা করিল। 48 তিনি তাহাকে কহিলেন, বৎসে! তোমার বিশ্বাস তোমাকে সুস্থ করিল; শান্তিতে চলিয়া যাও। 49 তিনি কথা কহিতেছেন, এমন সময়ে সমাজাধ্যক্ষের বাটী হইতে এক জন আসিয়া কহিল, আপনার কন্যার মৃত্যু হইয়াছে, গুরুকে আর কষ্ট দিবেন না। 50 তাহা শুনিয়া যীশু তাঁহাকে উত্তর করিলেন, ভয় করিও না, কেবল বিশ্বাস কর, তাহাতে সে সুস্থ হইবে। 51 পরে তিনি সেই বাটীতে উপস্থিত হইলে, পিতর, যাকোব ও যোহন এবং বালিকাটীর পিতা ও মাতা ছাড়া আর কাহাকেও প্রবেশ করিতে দিলেন না। 52 তখন সকলে তাহার জন্য কাঁদিতেছিল, ও বিলাপ করিতেছিল। তিনি কহিলেন, কাঁদিও না; সে মরে নাই, ঘুমাইয়া রহিয়াছে। 53 তখন তাহারা তাঁহাকে উপহাস করিল, কেননা তাহারা জানিত, সে মরিয়া গিয়াছে। 54 কিন্তু তিনি তাহার হাত ধরিয়া ডাকিয়া কহিলেন, বালিকে, উঠ। 55 তাহাতে তাহার আত্মা ফিরিয়া আসিল, ও সে তৎক্ষণাৎ উঠিল; আর তিনি তাহাকে কিছু আহার দিতে আজ্ঞা করিলেন। 56 ইহাতে তাহার পিতামাতা চমৎকৃত হইল, কিন্তু তিনি তাহাদিগকে আজ্ঞা করিলেন, এ ঘটনার কথা কাহাকেও বলিও না।
1. ইহার পরেই তিনি ঘোষণা করিতে করিতে এবং ঈশ্বরের রাজ্যের সুসমাচার প্রচার করিতে করিতে নগরে নগরে ও গ্রামে গ্রামে ভ্রমণ করিলেন, আর তাঁহার সঙ্গে সেই বারো জন, 2. এবং যাঁহারা দুষ্ট আত্মা কিম্বা রোগ হইতে মুক্তা হইয়াছিলেন, এমন কএকটী স্ত্রীলোক ছিলেন, মগ্দলীনী নাম্নী মরিয়ম, যাঁহা হইতে সাত ভূত বাহির হইয়াছিল, 3. যোহানা, যিনি হেরোদের বিষয়াধ্যক্ষ কূষের স্ত্রী, এবং শোশন্না ও অন্য অনেকগুলি স্ত্রীলোক ছিলেন; তাঁহারা আপন আপন সম্পত্তি হইতে তাঁহাদের পরিচর্য্যা করিতেন। 4. আর যখন বিস্তর লোক সমাগত হইতেছিল, এবং ভিন্ন ভিন্ন নগর হইতে লোকেরা তাঁহার নিকট আসিতেছিল, তখন তিনি দৃষ্টান্ত দ্বারা কহিলেন, 5. বীজবাপক আপন বীজ বপন করিতে গেল। বপনের সময়ে কতক বীজ পথের পার্শ্বে পড়িল, তাহাতে তাহা পদতলে দলিত হইল, ও আকাশের পক্ষিগণ তাহা খাইয়া ফেলিল। 6. আর কতক পাষাণের উপরে পড়িল, তাহাতে তাহা অঙ্কুরিত হইলে রস না পাওয়াতে শুকাইয়া গেল। 7. আর কতক কাঁটাবনের মধ্যে পড়িল, তাহাতে কাঁটা সকল সঙ্গে সঙ্গে অঙ্কুরিত হইয়া তাহা চাপিয়া রাখিল। 8. আর কতক বীজ উত্তম ভূমিতে পড়িল, তাহাতে তাহা অঙ্কুরিত হইয়া শত গুণ ফল উৎপন্ন করিল। এই কথা বলিয়া তিনি উচ্চ রবে কহিলেন, যাহার শুনিতে কাণ থাকে, সে শুনুক। 9. পরে তাঁহার শিষ্যগণ তাঁহাকে জিজ্ঞাসা করিলেন, ঐ দৃষ্টান্তের ভাব কি? 10. তিনি কহিলেন, ঈশ্বরের রাজ্যের নিগূঢ় তত্ত্ব সকল তোমাদিগকে জানিতে দেওয়া হইয়াছে; কিন্তু আর সকলের নিকটে দৃষ্টান্ত দ্বারা বলা গিয়াছে; যেন তাহারা দেখিয়াও না দেখে, এবং শুনিয়াও না বুঝে। 11. দৃষ্টান্তটী এই; সেই বীজ ঈশ্বরের বাক্য। 12. আর তাহারাই পথের পার্শ্বের লোক, যাহারা শুনিয়াছে, পরে দিয়াবল আসিয়া তাহাদের হৃদয় হইতে সেই বাক্য হরণ করিয়া লয়, যেন তাহারা বিশ্বাস করিয়া করিয়া পরিত্রাণ না পায়। 13. আর তাহারাই পাষাণের উপরের লোক, যাহারা শুনিয়া আনন্দপূর্ব্বক সেই বাক্য গ্রহণ করে, কিন্তু তাহাদের মূল নাই, তাহারা অল্প কালমাত্র বিশ্বাস করে, আর পরীক্ষার সময়ে সরিয়া পড়ে। 14. আর যাহা কাঁটাবনের মধ্যে পড়িল, তাহা এমন লোক, যাহারা শুনিয়াছে, কিন্তু চলিতে চলিতে জীবনের চিন্তা ও ধন ও সুখভোগের দ্বারা চাপা পড়ে, এবং পক্ব ফল উৎপন্ন করে না। 15. আর যাহা উত্তম ভূমিতে পড়িল, তাহা এমন লোক, যাহারা সৎ ও উত্তম হৃদয়ে বাক্য শুনিয়া ধরিয়া রাখে, এবং ধৈর্য্য সহকারে ফল উৎপন্ন করে। 16. আর প্রদীপ জ্বালিয়া কেহ পাত্র দিয়া ঢাকে না, কিম্বা খাটের নীচে রাখে না, কিন্তু দীপাধারের উপরেই রাখে, যেন যাহারা ভিতরে যায়, তাহারা আলো দেখিতে পায়। 17. কারণ এমন গুপ্ত কিছুই নাই, যাহা প্রকাশিত হইবে না; এবং এমন লুক্কায়িত কিছুই নাই, যাহা জানা যাইবে না ও প্রকাশ পাইবে না। 18. অতএব দেখিও, তোমরা কিরূপে শুন; কেননা যাহার আছে, তাহাকে দেওয়া যাইবে; আর যাহার নাই, তাহার বোধে যাহা আছে, তাহাও তাহার নিকট হইতে লওয়া যাইবে। 19. আর তাঁহার মাতা ও ভ্রাতৃগণ তাঁহার নিকটে আসিলেন, কিন্তু জনতা প্রযুক্ত তাঁহার সহিত সাক্ষাৎ করিতে পারিলেন না। 20. পরে তাঁহাকে জানান হইল, আপনার মাতা ও আপনার ভ্রাতারা আপনাকে দেখিবার বাসনায় বাহিরে দাঁড়াইয়া আছেন। 21. তিনি উত্তর করিয়া তাহাদিগকে কহিলেন, এই যে ব্যক্তিরা ঈশ্বরের বাক্য শুনে ও পালন করে, ইহারাই আমার মাতা ও ভ্রাতৃগণ। 22. এক দিন তিনি স্বয়ং ও তাঁহার শিষ্যগণ একখানি নৌকায় উঠিলেন; আর তিনি তাঁহাদিগকে বলিলেন, আইস, আমরা হ্রদের ওপারে যাই; তাহাতে তাঁহারা খুলিয়া দিলেন। 23. কিন্তু তাঁহারা নৌকা ছাড়িয়া দিলে তিনি নিদ্রা গেলেন, আর হ্রদে ঝড় আসিয়া পড়িল, তাহাতে নৌকা জলে পূর্ণ হইতে লাগিল, ও তাঁহারা সঙ্কটে পড়িলেন। 24. পরে তাঁহারা নিকটে গিয়া তাঁহাকে জাগাইয়া কহিলেন, নাথ, নাথ, আমরা মারা পড়িলাম। তখন তিনি জাগিয়া উঠিয়া বায়ুকে ও জলের তরঙ্গকে ধমক্‌ দিলেন, আর উভয়ই থামিয়া গেল, ও শান্তি হইল। 25. পরে তিনি তাঁহাদিগকে কহিলেন, তোমাদের বিশ্বাস কোথায়? তখন তাঁহারা ভীত হইয়া আশ্চর্য্য জ্ঞান করিলেন, পরস্পর কহিলেন, ইনি তবে কে যে বায়ুকে ও জলকেও আজ্ঞা দেন, আর তাহারা ইহাঁর আজ্ঞা মানে? 26. পরে তাঁহারা গালীলের পরপারস্থ গেরাসেনীদের অঞ্চলে পহুঁছিলেন। 27. আর তিনি স্থলে নামিলে ঐ নগরের একটা ভূতগ্রস্ত লোক সম্মুখে উপস্থিত হইল; সে অনেক দিন হইতে কাপড় পরিত না, ও গৃহে বাস করিত না, কিন্তু কবরে থাকিত। 28. যীশুকে দেখিবামাত্র সে চীৎকার করিয়া উঠিল, এবং তাঁহার সম্মুখে পড়িয়া উচ্চ রবে কহিল, হে যীশু, পরাৎপর ঈশ্বরের পুত্র, আপনার সহিত আমার সম্পর্ক কি? আপনাকে বিনতি করি, আমাকে যাতনা দিবেন না। 29. কারণ তিনি সেই অশুচি আত্মাকে লোকটী হইতে বাহির হইয়া যাইতে আজ্ঞা করিলেন; কেননা ঐ আত্মা দীর্ঘকাল অবধি তাহাকে ধরিয়াছিল, আর শৃঙ্খল ও বেড়ী দ্বারা বদ্ধ হইয়া রক্ষিত হইলেও সে বন্ধন ছিঁড়িয়া ভূতের বশে নির্জ্জন স্থানে চালিত হইত। 30. যীশু তাহাকে জিজ্ঞাসা করিলেন, তোমার নাম কি? সে কহিল, বাহিনী; কেননা অনেক ভূত তাহার মধ্যে প্রবেশ করিয়াছিল। 31. পরে তাহারা তাঁহাকে বিনতি করিতে লাগিল, যেন তিনি তাহাদিগকে রসাতলে চলিয়া যাইতে আজ্ঞা না দেন। 32. সেই স্থানে পর্ব্বতের উপরে বৃহৎ এক শূকরপাল চরিতেছিল; তাহাতে ভূতগণ তাঁহাকে বিনতি করিল, যেন তিনি তাহাদিগকে শূকরদের মধ্যে প্রবেশ করিতে অনুমতি দেন; তিনি তাহাদিগকে অনুমতি দিলেন। 33. তখন ভূতগণ সেই লোকটী হইতে বাহির হইয়া শূকরদিগের মধ্যে প্রবেশ করিল, তাহাতে সেই পাল বেগে ঢালু পাড় দিয়া দৌড়িয়া গিয়া হ্রদে পড়িয়া ডুবিয়া মরিল। 34. এই ঘটনা দেখিয়া, যাহারা সেগুলিকে চরাইতেছিল, তাহারা পলায়ন করিল, এবং নগরে ও পল্লীতে পল্লীতে সংবাদ দিল। 35. তখন কি ঘটিয়াছে, দেখিবার জন্য লোকেরা বাহির হইল, এবং যীশুর নিকটে আসিয়া দেখিল, যে লোকটী হইতে ভূতগণ বাহির হইয়াছে, সে কাপড় পরিয়া ও সুবোধ হইয়া যীশুর চরণতলে বসিয়া আছে; তাহাতে তাহারা ভয় পাইল। 36. আর যাহারা দেখিয়াছিল, তাহারা সেই ভূতগ্রস্থ কিরূপে সুস্থ হইয়াছিল, তাহা তাহাদিগকে বলিল। 37. তাহাতে গেরাসেনীদের প্রদেশের চারিদিকের সমস্ত লোক তাঁহাকে বিনতি করিল, যেন তিনি তাহাদের নিকট হইতে চলিয়া যান; কেননা তাহারা মহাভয়ে আক্রান্ত হইয়াছিল, তখন তিনি নৌকায় উঠিয়া ফিরিয়া আসিলেন। 38. আর যাহা হইতে ভূতগণ বাহির হইয়াছিল, সেই লোকটী প্রার্থনা করিল, যেন তাঁহার সঙ্গে থাকিতে পারে; 39. কিন্তু তিনি তাহাকে বিদায় করিয়া কহিলেন, তুমি তোমার গৃহে ফিরিয়া যাও, এবং তোমার নিমিত্ত ঈশ্বর যে যে মহৎ কার্য্য করিয়াছেন, তাহার বৃত্তান্ত বল। তাহাতে সে চলিয়া গিয়া, যীশু তাহার জন্য যে যে মহৎ কার্য্য করিয়াছেন, তাহা নগরের সর্ব্বত্র প্রচার করিতে লাগিল। 40. যীশু ফিরিয়া আসিলে লোকেরা তাঁহাকে সাদরে গ্রহণ করিল; কারণ সকলে তাঁহার অপেক্ষা করিতেছিল। 41. আর দেখ, যায়ীর নামে এক ব্যক্তি আসিলেন; তিনি সমাজ-গৃহের এক জন অধ্যক্ষ। তিনি যীশুর চরণে পড়িয়া তাঁহার গৃহে আসিতে তাঁহাকে বিনতি করিতে লাগিলেন; 42. কারণ তাঁহার একটী মাত্র কন্যা ছিল, বয়স কমবেশ বারো বৎসর, আর সে মৃতপ্রায় হইয়াছিল। যীশু যখন যাইতেছিলেন, লোকেরা তাঁহার উপরে চাপাচাপি করিয়া পড়িতে লাগিল। 43. আর, একটী স্ত্রীলোক, যে বারো বৎসর অবধি প্রদর রোগগ্রস্ত হইয়াছিল, যে চিকিৎসকদের পিছনে সর্ব্বস্ব ব্যয় করিয়াও কাহারও দ্বারা সুস্থ হইতে পারে নাই, 44. সে পশ্চাৎ দিকে আসিয়া তাঁহার বস্ত্রের থোপ স্পর্শ করিল; আর তৎক্ষণাৎ তাহার রক্তস্রাব বদ্ধ হইল। 45. তখন যীশু কহিলেন, কে আমাকে স্পর্শ করিল? সকলে অস্বীকার করিলে পিতর ও তাঁহার সঙ্গীরা বলিলেন, নাথ, লোকসমূহ চাপাচাপি করিয়া আপনার উপরে পড়িতেছে। 46. কিন্তু যীশু কহিলেন, আমাকে কেহ স্পর্শ করিয়াছে, কেননা আমি টের পাইয়াছি আমা হইতে শক্তি বাহির হইল। 47. স্ত্রীলোকটী যখন দেখিল, সে গুপ্ত নহে, তখন কাঁপিতে কাঁপিতে আসিল, এবং তাঁহার সম্মুখে প্রণিপাত করিয়া, কি নিমিত্ত তাঁহাকে স্পর্শ করিয়াছিল এবং কি প্রকারে তৎক্ষণাৎ সুস্থ হইয়াছিল, তাহা সকল লোকের সাক্ষাতে বর্ণনা করিল। 48. তিনি তাহাকে কহিলেন, বৎসে! তোমার বিশ্বাস তোমাকে সুস্থ করিল; শান্তিতে চলিয়া যাও। 49. তিনি কথা কহিতেছেন, এমন সময়ে সমাজাধ্যক্ষের বাটী হইতে এক জন আসিয়া কহিল, আপনার কন্যার মৃত্যু হইয়াছে, গুরুকে আর কষ্ট দিবেন না। 50. তাহা শুনিয়া যীশু তাঁহাকে উত্তর করিলেন, ভয় করিও না, কেবল বিশ্বাস কর, তাহাতে সে সুস্থ হইবে। 51. পরে তিনি সেই বাটীতে উপস্থিত হইলে, পিতর, যাকোব ও যোহন এবং বালিকাটীর পিতা ও মাতা ছাড়া আর কাহাকেও প্রবেশ করিতে দিলেন না। 52. তখন সকলে তাহার জন্য কাঁদিতেছিল, ও বিলাপ করিতেছিল। তিনি কহিলেন, কাঁদিও না; সে মরে নাই, ঘুমাইয়া রহিয়াছে। 53. তখন তাহারা তাঁহাকে উপহাস করিল, কেননা তাহারা জানিত, সে মরিয়া গিয়াছে। 54. কিন্তু তিনি তাহার হাত ধরিয়া ডাকিয়া কহিলেন, বালিকে, উঠ। 55. তাহাতে তাহার আত্মা ফিরিয়া আসিল, ও সে তৎক্ষণাৎ উঠিল; আর তিনি তাহাকে কিছু আহার দিতে আজ্ঞা করিলেন। 56. ইহাতে তাহার পিতামাতা চমৎকৃত হইল, কিন্তু তিনি তাহাদিগকে আজ্ঞা করিলেন, এ ঘটনার কথা কাহাকেও বলিও না।
  • লুক অধ্যায় 1  
  • লুক অধ্যায় 2  
  • লুক অধ্যায় 3  
  • লুক অধ্যায় 4  
  • লুক অধ্যায় 5  
  • লুক অধ্যায় 6  
  • লুক অধ্যায় 7  
  • লুক অধ্যায় 8  
  • লুক অধ্যায় 9  
  • লুক অধ্যায় 10  
  • লুক অধ্যায় 11  
  • লুক অধ্যায় 12  
  • লুক অধ্যায় 13  
  • লুক অধ্যায় 14  
  • লুক অধ্যায় 15  
  • লুক অধ্যায় 16  
  • লুক অধ্যায় 17  
  • লুক অধ্যায় 18  
  • লুক অধ্যায় 19  
  • লুক অধ্যায় 20  
  • লুক অধ্যায় 21  
  • লুক অধ্যায় 22  
  • লুক অধ্যায় 23  
  • লুক অধ্যায় 24  
×

Alert

×

Bengali Letters Keypad References