পবিত্র বাইবেল

বাইবেল সোসাইটি অফ ইন্ডিয়া (BSI)
লুক

রেকর্ড

লুক অধ্যায় 23

1 পরে তাহারা দল শুদ্ধ সকলে উঠিয়া তাঁহাকে পীলাতের কাছে লইয়া গেল। 2 আর তাহারা তাঁহার উপরে দোষারোপ করিয়া বলিতে লাগিল, আমরা দেখিতে পাইলাম যে, এ ব্যক্তি আমাদের জাতিকে বিগড়িয়া দেয়, কৈসরকে রাজস্ব দিতে বারণ করে, আর বলে যে, আমিই খ্রীষ্ট রাজা। 3 তখন পীলাত তাঁহাকে জিজ্ঞাসা করিলেন, তুমি কি যিহূদীদের রাজা? তিনি তাঁহাকে উত্তর করিয়া কহিলেন, তুমিই বলিলে। 4 তখন পীলাত প্রধান যাজকগণকে ও সমাগত লোকদিগকে কহিলেন, আমি এই ব্যক্তির কোন দোষই পাইতেছি না। 5 কিন্তু তাহারা আরও জোর করিয়া বলিতে লাগিল, এ ব্যক্তি সমুদয় যিহূদিয়ায় এবং গালীল অবধি এই স্থান পর্য্যন্ত শিক্ষা দিয়া প্রজাদিগকে উত্তেজিত করে। 6 ইহা শুনিয়া পীলাত জিজ্ঞাসা করিলেন, এ ব্যক্তি কি গালীলীয়? 7 পরে যখন তিনি জানিতে পারিলেন, ইনি হেরোদের অধিকারের লোক, তখন তাঁহাকে হেরোদের নিকটে পাঠাইয়া দিলেন, কেননা সেই সময়ে তিনিও যিরূশালেমে ছিলেন। 8 যীশুকে দেখিয়া হেরোদ অতিশয় আনন্দিত হইলেন, কেননা তিনি তাঁহার বিষয়ে শুনিয়াছিলেন, এই জন্য অনেক দিন হইতে তাঁহাকে দেখিতে বাঞ্ছা করিতেছিলেন, এবং তাঁহার কৃত কোন চিহ্ন দেখিবার আশা করিতে লাগিলেন। 9 তিনি তাঁহাকে অনেক কথা জিজ্ঞাসা করিলেন, কিন্তু যীশু তাঁহাকে কোন উত্তর দিলেন না। 10 আর প্রধান যাজকগণ ও অধ্যাপকেরা দাঁড়াইয়া উগ্রভাবে তাঁহার উপর দোষারোপ করিতেছিল। 11 আর হেরোদ ও তাঁহার সেনারা তাঁহাকে তুচ্ছ করিলেন, ও বিদ্রূপ করিলেন, এবং জমকাল পোষাক পরাইয়া তাঁহাকে পীলাতের নিকটে ফিরিয়া পাঠাইলেন। 12 সেই দিন হেরোদ ও পীলাত পরস্পর বন্ধু হইয়া উঠিলেন, কেননা পূর্ব্বে তাঁহাদের মধ্যে শত্রুভাব ছিল। 13 পরে পীলাত প্রধান যাজকগণ, অধ্যক্ষগণ ও প্রজাদিগকে একত্র ডাকিয়া তাহাদিগকে কহিলেন, 14 তোমরা এ ব্যক্তিকে আমার নিকটে এই বলিয়া আনিয়াছ যে, এ লোককে বিপথে লইয়া যায়; আর দেখ, আমি তোমাদের সাক্ষাতে বিচার করিলেও, তোমরা ইহার উপরে যে সকল দোষ আরোপ করিতেছ, তাহার মধ্যে এই ব্যক্তির কোন দোষই পাইলাম না; 15 আর হেরোদও পান নাই, কেননা তিনি ইহাকে আমাদের নিকটে ফিরিয়া পাঠাইয়াছেন; আর দেখ, এ ব্যক্তি প্রাণদণ্ডের যোগ্য কিছুই করে নাই। 16 অতএব আমি ইহাকে শাস্তি দিয়া ছাড়িয়া দিব। 17 (ঐ পর্ব্বসময়ে তাহাদের জন্য এক জনকে তাঁহার ছাড়িয়া দিতেই হইত।) 18 কিন্তু তাহারা দলশুদ্ধ সকলে চীৎকার করিয়া বলিল, ইহাকে দূর কর, আমাদের জন্য বারাব্বাকে ছাড়িয়া দেও। 19 নগরের মধ্যে দাঙ্গা ও নরহত্যা হওয়া প্রযুক্ত সেই ব্যক্তি কারাবদ্ধ হইয়াছিল। 20 পরে পীলাত যীশুকে মুক্ত করিবার বাসনায় আবার তাহাদের কাছে কথা বলিলেন। 21 কিন্তু তাহারা চেঁচাইয়া বলিতে লাগিল, ক্রুশে দেও, উহাকে ক্রুশে দেও। 22 পরে তিনি তৃতীয় বার তাহাদিগকে কহিলেন, কেন? এ কি অপরাধ করিয়াছে? আমি ইহার প্রাণদণ্ডের যোগ্য কোন দোষই পাই নাই, অতএব ইহাকে শাস্তি দিয়া ছাড়িয়া দিব। 23 কিন্তু তাহারা উচ্চ রবে উগ্র ভাবে চাহিতে থাকিল, যেন তাঁহাকে ক্রুশে দেওয়া হয়; আর তাহাদের রব প্রবল হইল। 24 তখন পীলাত তাহাদের যাচ্ঞা অনুসারে করিতে আজ্ঞা দিলেন; 25 দাঙ্গা ও নরহত্যা প্রযুক্ত কারাবদ্ধ যে ব্যক্তিকে তাহারা চাহিল, তিনি তাহাকে মুক্ত করিলেন, কিন্তু যীশুকে তাহাদের ইচ্ছার অধীনে সমর্পণ করিলেন। 26 পরে তাহারা তাঁহাকে লইয়া যাইতেছে, ইতিমধ্যে শিমোন নামে এক জন কুরীণীয় লোক পল্লীগ্রাম হইতে আসিতেছিল, তাহারা তাহাকে ধরিয়া তাহার স্কন্ধে ক্রুশ রাখিল, যেন সে যীশুর পশ্চাৎ পশ্চাৎ তাহা বহন করে। 27 আর অনেক লোক তাঁহার পশ্চাৎ পশ্চাৎ চলিল; এবং অনেকগুলি স্ত্রীলোক ছিল, তাহারা তাঁহার জন্য হাহাকার ও বিলাপ করিতেছিল। 28 কিন্তু যীশু তাহাদের দিকে ফিরিয়া কহিলেন, ওগো যিরূশালেমের কন্যাগণ, আমার জন্য কাঁদিও না, বরং আপনাদের এবং আপন আপন সন্তান-সন্ততির জন্য কাঁদ। 29 কেননা দেখ, এমন সময় আসিতেছে, যে সময়ে লোকে বলিবে, ধন্য সেই স্ত্রীলোকেরা, যাহারা বন্ধ্যা, যাহাদের উদর কখনও প্রসব করে নাই, যাহাদের স্তন কখনও দুগ্ধ দেয় নাই। 30 সেই সময়ে লোকেরা পর্ব্বতগণকে বলিতে আরম্ভ করিবে, আমাদের উপরে পড়; এবং উপপর্ব্বতগণকে বলিবে, আমাদিগকে ঢাকিয়া রাখ। 31 কারণ লোকেরা সরস বৃক্ষের প্রতি যদি এমন করে, তবে শুষ্ক বৃক্ষে কি না ঘটিবে? 32 আরও দুই জন লোক, দুই জন দুষ্কর্ম্মকারী, হত হইবার জন্য তাঁহার সঙ্গে নীত হইল। 33 পরে মাথার খুলি নামক স্থানে গিয়া তাহারা তথায় তাঁহাকে এবং সেই দুই দুষ্কর্ম্মকারীকে ক্রুশে দিল, এক জনকে তাঁহার দক্ষিণ পার্শ্বে ও অন্য জনকে বাম পার্শ্বে রাখিল। 34 তখন যীশু কহিলেন, পিতঃ, ইহাদিগকে ক্ষমা কর, কেননা ইহারা কি করিতেছে, তাহা জানে না। পরে তাহারা তাঁহার বস্ত্রগুলি বিভাগ করিয়া গুলিবাঁট করিল। 35 লোকসমূহ দাঁড়াইয়া দেখিতেছিল। অধ্যক্ষেরাও তাঁহাকে উপহাস করিয়া বলিতে লাগিল, ঐ ব্যক্তি অন্য অন্য লোককে রক্ষা করিত, যদি ও ঈশ্বরের সেই খ্রীষ্ট, তাঁহার মনোনীত হয়, আপনাকে রক্ষা করুক; 36 আর সেনাগণও তাঁহাকে বিদ্রূপ করিল, নিকটে গিয়া তাঁহার কাছে অম্লরস লইয়া বলিতে লাগিল, 37 তুমি যদি যিহূদীদের রাজা হও, তবে আপনাকে রক্ষা কর। 38 আর তাঁহার ঊর্দ্ধে এই অধিলিপি ছিল, “এ ব্যক্তি যিহূদীদের রাজা।” 39 আর যে দুই দুষ্কর্ম্মকারীকে ক্রুশে টাঙ্গান গিয়াছিল, তাহাদের মধ্যে এক জন তাঁহাকে নিন্দা করিয়া বলিতে লাগিল, তুমি নাকি সেই খ্রীষ্ট? আপনাকে ও আমাদিগকে রক্ষা কর। 40 কিন্তু অন্য জন উত্তর দিয়া তাহাকে অনুযোগ করিয়া কহিল, তুমি কি ঈশ্বরকেও ভয় কর না? তুমি ত একই দণ্ড পাইতেছ। 41 আর আমরা ন্যায়সঙ্গত দণ্ড পাইতেছি; কারণ যাহা যাহা করিয়াছি, তাহারই সমুচিত ফল পাইতেছি; কিন্তু ইনি অপকার্য্য কিছুই করেন নাই। 42 পরে সে কহিল, যীশু, আপনি যখন আপন রাজ্যে আসিবেন, তখন আমাকে স্মরণ করিবেন। 43 তিনি তাহাকে কহিলেন, আমি তোমাকে সত্য বলিতেছি, অদ্যই তুমি পরমদেশে আমার সঙ্গে উপস্থিত হইবে। 44 তখন বেলা অনুমান ষষ্ঠ ঘটিকা, আর নবম ঘটিকা পর্য্যন্ত সমুদয় দেশ অন্ধকারময় হইয়া রহিল। 45 সূর্য্যের আলো রহিল না, আর মন্দিরের তিরস্করিণী মাঝামাঝি চিরিয়া গেল। 46 আর যীশু উচ্চ রবে চীৎকার করিয়া কহিলেন, পিতঃ তোমার হস্তে আমার আত্মা সমর্পণ করি; আর এই বলিয়া তিনি প্রাণত্যাগ করিলেন। 47 যাহা ঘটিল, তাহা দেখিয়া শতপতি ঈশ্বরের গৌরব করিয়া কহিলেন, সত্য, এই ব্যক্তি ধার্ম্মিক ছিলেন। 48 আর যে সমস্ত লোক এই দৃশ্য দেখিবার জন্য সমাগত হইয়াছিল, তাহারা যাহা যাহা ঘটিল, তাহা দেখিয়া বক্ষে করাঘাত করিতে করিতে ফিরিয়া গেল। 49 আর তাঁহার পরিচিত সকলে, এবং যে স্ত্রীলোকেরা তাঁহার সঙ্গে গালীল হইতে আসিয়াছিলেন, তাঁহারা দূরে দাঁড়াইয়া এই সমস্ত দেখিতেছিলেন। 50 আর দেখ, যোষেফ নামে এক ব্যক্তি ছিলেন, তিনি মন্ত্রী, এক জন সৎ ও ধার্ম্মিক লোক, 51 এই ব্যক্তি উহাদের মন্ত্রণাতে ও ক্রিয়াতে সম্মত হন নাই; তিনি যিহূদীদের অরিমাথিয়া নগরের লোক; তিনি ঈশ্বরের রাজ্যের অপেক্ষা করিতেছিলেন। 52 এই ব্যক্তি পীলাতের নিকটে গিয়া যীশুর দেহ যাচ্ঞা করিলেন; 53 পরে তাহা নামাইয়া সরু চাদরে জড়াইলেন, এবং শৈলে খোদিত এমন এক কবরমধ্যে তাঁহাকে রাখিলেন, যাহাতে কখনও কাহাকেও রাখা যায় নাই। 54 সেই দিন আয়োজনের দিন, এবং বিশ্রামবারের আরম্ভ সন্নিকট হইতেছিল। 55 আর যে স্ত্রীলোকেরা তাঁহার সহিত গালীল হইতে আসিয়াছিলেন, তাঁহারা পশ্চাৎ পশ্চাৎ গিয়া সেই কবর, এবং কি প্রকারে তাঁহার দেহ রাখা যায়, 56 তাহা দেখিলেন; পরে ফিরিয়া গিয়া সুগন্ধি দ্রব্য ও তৈল প্রস্তুত করিলেন।
1. পরে তাহারা দল শুদ্ধ সকলে উঠিয়া তাঁহাকে পীলাতের কাছে লইয়া গেল। 2. আর তাহারা তাঁহার উপরে দোষারোপ করিয়া বলিতে লাগিল, আমরা দেখিতে পাইলাম যে, এ ব্যক্তি আমাদের জাতিকে বিগড়িয়া দেয়, কৈসরকে রাজস্ব দিতে বারণ করে, আর বলে যে, আমিই খ্রীষ্ট রাজা। 3. তখন পীলাত তাঁহাকে জিজ্ঞাসা করিলেন, তুমি কি যিহূদীদের রাজা? তিনি তাঁহাকে উত্তর করিয়া কহিলেন, তুমিই বলিলে। 4. তখন পীলাত প্রধান যাজকগণকে ও সমাগত লোকদিগকে কহিলেন, আমি এই ব্যক্তির কোন দোষই পাইতেছি না। 5. কিন্তু তাহারা আরও জোর করিয়া বলিতে লাগিল, এ ব্যক্তি সমুদয় যিহূদিয়ায় এবং গালীল অবধি এই স্থান পর্য্যন্ত শিক্ষা দিয়া প্রজাদিগকে উত্তেজিত করে। 6. ইহা শুনিয়া পীলাত জিজ্ঞাসা করিলেন, এ ব্যক্তি কি গালীলীয়? 7. পরে যখন তিনি জানিতে পারিলেন, ইনি হেরোদের অধিকারের লোক, তখন তাঁহাকে হেরোদের নিকটে পাঠাইয়া দিলেন, কেননা সেই সময়ে তিনিও যিরূশালেমে ছিলেন। 8. যীশুকে দেখিয়া হেরোদ অতিশয় আনন্দিত হইলেন, কেননা তিনি তাঁহার বিষয়ে শুনিয়াছিলেন, এই জন্য অনেক দিন হইতে তাঁহাকে দেখিতে বাঞ্ছা করিতেছিলেন, এবং তাঁহার কৃত কোন চিহ্ন দেখিবার আশা করিতে লাগিলেন। 9. তিনি তাঁহাকে অনেক কথা জিজ্ঞাসা করিলেন, কিন্তু যীশু তাঁহাকে কোন উত্তর দিলেন না। 10. আর প্রধান যাজকগণ ও অধ্যাপকেরা দাঁড়াইয়া উগ্রভাবে তাঁহার উপর দোষারোপ করিতেছিল। 11. আর হেরোদ ও তাঁহার সেনারা তাঁহাকে তুচ্ছ করিলেন, ও বিদ্রূপ করিলেন, এবং জমকাল পোষাক পরাইয়া তাঁহাকে পীলাতের নিকটে ফিরিয়া পাঠাইলেন। 12. সেই দিন হেরোদ ও পীলাত পরস্পর বন্ধু হইয়া উঠিলেন, কেননা পূর্ব্বে তাঁহাদের মধ্যে শত্রুভাব ছিল। 13. পরে পীলাত প্রধান যাজকগণ, অধ্যক্ষগণ ও প্রজাদিগকে একত্র ডাকিয়া তাহাদিগকে কহিলেন, 14. তোমরা এ ব্যক্তিকে আমার নিকটে এই বলিয়া আনিয়াছ যে, এ লোককে বিপথে লইয়া যায়; আর দেখ, আমি তোমাদের সাক্ষাতে বিচার করিলেও, তোমরা ইহার উপরে যে সকল দোষ আরোপ করিতেছ, তাহার মধ্যে এই ব্যক্তির কোন দোষই পাইলাম না; 15. আর হেরোদও পান নাই, কেননা তিনি ইহাকে আমাদের নিকটে ফিরিয়া পাঠাইয়াছেন; আর দেখ, এ ব্যক্তি প্রাণদণ্ডের যোগ্য কিছুই করে নাই। 16. অতএব আমি ইহাকে শাস্তি দিয়া ছাড়িয়া দিব। 17. (ঐ পর্ব্বসময়ে তাহাদের জন্য এক জনকে তাঁহার ছাড়িয়া দিতেই হইত।) 18. কিন্তু তাহারা দলশুদ্ধ সকলে চীৎকার করিয়া বলিল, ইহাকে দূর কর, আমাদের জন্য বারাব্বাকে ছাড়িয়া দেও। 19. নগরের মধ্যে দাঙ্গা ও নরহত্যা হওয়া প্রযুক্ত সেই ব্যক্তি কারাবদ্ধ হইয়াছিল। 20. পরে পীলাত যীশুকে মুক্ত করিবার বাসনায় আবার তাহাদের কাছে কথা বলিলেন। 21. কিন্তু তাহারা চেঁচাইয়া বলিতে লাগিল, ক্রুশে দেও, উহাকে ক্রুশে দেও। 22. পরে তিনি তৃতীয় বার তাহাদিগকে কহিলেন, কেন? এ কি অপরাধ করিয়াছে? আমি ইহার প্রাণদণ্ডের যোগ্য কোন দোষই পাই নাই, অতএব ইহাকে শাস্তি দিয়া ছাড়িয়া দিব। 23. কিন্তু তাহারা উচ্চ রবে উগ্র ভাবে চাহিতে থাকিল, যেন তাঁহাকে ক্রুশে দেওয়া হয়; আর তাহাদের রব প্রবল হইল। 24. তখন পীলাত তাহাদের যাচ্ঞা অনুসারে করিতে আজ্ঞা দিলেন; 25. দাঙ্গা ও নরহত্যা প্রযুক্ত কারাবদ্ধ যে ব্যক্তিকে তাহারা চাহিল, তিনি তাহাকে মুক্ত করিলেন, কিন্তু যীশুকে তাহাদের ইচ্ছার অধীনে সমর্পণ করিলেন। 26. পরে তাহারা তাঁহাকে লইয়া যাইতেছে, ইতিমধ্যে শিমোন নামে এক জন কুরীণীয় লোক পল্লীগ্রাম হইতে আসিতেছিল, তাহারা তাহাকে ধরিয়া তাহার স্কন্ধে ক্রুশ রাখিল, যেন সে যীশুর পশ্চাৎ পশ্চাৎ তাহা বহন করে। 27. আর অনেক লোক তাঁহার পশ্চাৎ পশ্চাৎ চলিল; এবং অনেকগুলি স্ত্রীলোক ছিল, তাহারা তাঁহার জন্য হাহাকার ও বিলাপ করিতেছিল। 28. কিন্তু যীশু তাহাদের দিকে ফিরিয়া কহিলেন, ওগো যিরূশালেমের কন্যাগণ, আমার জন্য কাঁদিও না, বরং আপনাদের এবং আপন আপন সন্তান-সন্ততির জন্য কাঁদ। 29. কেননা দেখ, এমন সময় আসিতেছে, যে সময়ে লোকে বলিবে, ধন্য সেই স্ত্রীলোকেরা, যাহারা বন্ধ্যা, যাহাদের উদর কখনও প্রসব করে নাই, যাহাদের স্তন কখনও দুগ্ধ দেয় নাই। 30. সেই সময়ে লোকেরা পর্ব্বতগণকে বলিতে আরম্ভ করিবে, আমাদের উপরে পড়; এবং উপপর্ব্বতগণকে বলিবে, আমাদিগকে ঢাকিয়া রাখ। 31. কারণ লোকেরা সরস বৃক্ষের প্রতি যদি এমন করে, তবে শুষ্ক বৃক্ষে কি না ঘটিবে? 32. আরও দুই জন লোক, দুই জন দুষ্কর্ম্মকারী, হত হইবার জন্য তাঁহার সঙ্গে নীত হইল। 33. পরে মাথার খুলি নামক স্থানে গিয়া তাহারা তথায় তাঁহাকে এবং সেই দুই দুষ্কর্ম্মকারীকে ক্রুশে দিল, এক জনকে তাঁহার দক্ষিণ পার্শ্বে ও অন্য জনকে বাম পার্শ্বে রাখিল। 34. তখন যীশু কহিলেন, পিতঃ, ইহাদিগকে ক্ষমা কর, কেননা ইহারা কি করিতেছে, তাহা জানে না। পরে তাহারা তাঁহার বস্ত্রগুলি বিভাগ করিয়া গুলিবাঁট করিল। 35. লোকসমূহ দাঁড়াইয়া দেখিতেছিল। অধ্যক্ষেরাও তাঁহাকে উপহাস করিয়া বলিতে লাগিল, ঐ ব্যক্তি অন্য অন্য লোককে রক্ষা করিত, যদি ও ঈশ্বরের সেই খ্রীষ্ট, তাঁহার মনোনীত হয়, আপনাকে রক্ষা করুক; 36. আর সেনাগণও তাঁহাকে বিদ্রূপ করিল, নিকটে গিয়া তাঁহার কাছে অম্লরস লইয়া বলিতে লাগিল, 37. তুমি যদি যিহূদীদের রাজা হও, তবে আপনাকে রক্ষা কর। 38. আর তাঁহার ঊর্দ্ধে এই অধিলিপি ছিল, “এ ব্যক্তি যিহূদীদের রাজা।” 39. আর যে দুই দুষ্কর্ম্মকারীকে ক্রুশে টাঙ্গান গিয়াছিল, তাহাদের মধ্যে এক জন তাঁহাকে নিন্দা করিয়া বলিতে লাগিল, তুমি নাকি সেই খ্রীষ্ট? আপনাকে ও আমাদিগকে রক্ষা কর। 40. কিন্তু অন্য জন উত্তর দিয়া তাহাকে অনুযোগ করিয়া কহিল, তুমি কি ঈশ্বরকেও ভয় কর না? তুমি ত একই দণ্ড পাইতেছ। 41. আর আমরা ন্যায়সঙ্গত দণ্ড পাইতেছি; কারণ যাহা যাহা করিয়াছি, তাহারই সমুচিত ফল পাইতেছি; কিন্তু ইনি অপকার্য্য কিছুই করেন নাই। 42. পরে সে কহিল, যীশু, আপনি যখন আপন রাজ্যে আসিবেন, তখন আমাকে স্মরণ করিবেন। 43. তিনি তাহাকে কহিলেন, আমি তোমাকে সত্য বলিতেছি, অদ্যই তুমি পরমদেশে আমার সঙ্গে উপস্থিত হইবে। 44. তখন বেলা অনুমান ষষ্ঠ ঘটিকা, আর নবম ঘটিকা পর্য্যন্ত সমুদয় দেশ অন্ধকারময় হইয়া রহিল। 45. সূর্য্যের আলো রহিল না, আর মন্দিরের তিরস্করিণী মাঝামাঝি চিরিয়া গেল। 46. আর যীশু উচ্চ রবে চীৎকার করিয়া কহিলেন, পিতঃ তোমার হস্তে আমার আত্মা সমর্পণ করি; আর এই বলিয়া তিনি প্রাণত্যাগ করিলেন। 47. যাহা ঘটিল, তাহা দেখিয়া শতপতি ঈশ্বরের গৌরব করিয়া কহিলেন, সত্য, এই ব্যক্তি ধার্ম্মিক ছিলেন। 48. আর যে সমস্ত লোক এই দৃশ্য দেখিবার জন্য সমাগত হইয়াছিল, তাহারা যাহা যাহা ঘটিল, তাহা দেখিয়া বক্ষে করাঘাত করিতে করিতে ফিরিয়া গেল। 49. আর তাঁহার পরিচিত সকলে, এবং যে স্ত্রীলোকেরা তাঁহার সঙ্গে গালীল হইতে আসিয়াছিলেন, তাঁহারা দূরে দাঁড়াইয়া এই সমস্ত দেখিতেছিলেন। 50. আর দেখ, যোষেফ নামে এক ব্যক্তি ছিলেন, তিনি মন্ত্রী, এক জন সৎ ও ধার্ম্মিক লোক, 51. এই ব্যক্তি উহাদের মন্ত্রণাতে ও ক্রিয়াতে সম্মত হন নাই; তিনি যিহূদীদের অরিমাথিয়া নগরের লোক; তিনি ঈশ্বরের রাজ্যের অপেক্ষা করিতেছিলেন। 52. এই ব্যক্তি পীলাতের নিকটে গিয়া যীশুর দেহ যাচ্ঞা করিলেন; 53. পরে তাহা নামাইয়া সরু চাদরে জড়াইলেন, এবং শৈলে খোদিত এমন এক কবরমধ্যে তাঁহাকে রাখিলেন, যাহাতে কখনও কাহাকেও রাখা যায় নাই। 54. সেই দিন আয়োজনের দিন, এবং বিশ্রামবারের আরম্ভ সন্নিকট হইতেছিল। 55. আর যে স্ত্রীলোকেরা তাঁহার সহিত গালীল হইতে আসিয়াছিলেন, তাঁহারা পশ্চাৎ পশ্চাৎ গিয়া সেই কবর, এবং কি প্রকারে তাঁহার দেহ রাখা যায়, 56. তাহা দেখিলেন; পরে ফিরিয়া গিয়া সুগন্ধি দ্রব্য ও তৈল প্রস্তুত করিলেন।
  • লুক অধ্যায় 1  
  • লুক অধ্যায় 2  
  • লুক অধ্যায় 3  
  • লুক অধ্যায় 4  
  • লুক অধ্যায় 5  
  • লুক অধ্যায় 6  
  • লুক অধ্যায় 7  
  • লুক অধ্যায় 8  
  • লুক অধ্যায় 9  
  • লুক অধ্যায় 10  
  • লুক অধ্যায় 11  
  • লুক অধ্যায় 12  
  • লুক অধ্যায় 13  
  • লুক অধ্যায় 14  
  • লুক অধ্যায় 15  
  • লুক অধ্যায় 16  
  • লুক অধ্যায় 17  
  • লুক অধ্যায় 18  
  • লুক অধ্যায় 19  
  • লুক অধ্যায় 20  
  • লুক অধ্যায় 21  
  • লুক অধ্যায় 22  
  • লুক অধ্যায় 23  
  • লুক অধ্যায় 24  
×

Alert

×

Bengali Letters Keypad References