1. শৌলের সহিত তাঁহার কথা সাঙ্গ হইলে যোনাথনের প্রাণ দায়ূদের প্রাণে সংসক্ত হইল, এবং যোনাথন আপন প্রাণের মত তাঁহাকে ভালবাসিতে লাগিলেন।
2. আর শৌল ঐ দিবসে তাঁহাকে গ্রহণ করিলেন, তাঁহার পিতার বাটীতে ফিরিয়া যাইতে দিলেন না।
3. আর যোনাথন ও দায়ূদ এক নিয়ম করিলেন, কেননা যোনাথন তাঁহাকে প্রাণতুল্য ভালবাসিলেন।
4. আর যোনাথন আপন গাত্রের পরিচ্ছদ খুলিয়া দায়ূদকে দিলেন, নিজের সজ্জা, এমন কি, নিজের খড়্গ, ধনুক ও কটিবন্ধনও দিলেন।
5. পরে শৌল দায়ূদকে যে কোন স্থানে প্রেরণ করেন, দায়ূদ সেই স্থানে যান ও বুদ্ধিপূর্ব্বক চলেন, এই জন্য শৌল যোদ্ধাদের উপরে কর্ত্তৃত্বপদে তাঁহাকে নিযুক্ত করিলেন, আর তাহা সমস্ত লোকের দৃষ্টিতে এবং শৌলের দাসগণের দৃষ্টিতেও ভাল বোধ হইল।
6. পরে লোকেরা ফিরিয়া আসিলে যখন দায়ূদ পলেষ্টীয়দিগকে আঘাত করিয়া ফিরিয়া আসিতেছিলেন, তখন শৌল রাজার সঙ্গে সাক্ষাৎ করিতে ইস্রায়েলের সমস্ত নগর হইতে স্ত্রীলোকেরা তবলধ্বনি, আমোদ ও ত্রিতন্ত্রীবাদ্য পুরঃসর গান ও নৃত্য করিতে করিতে বাহির হইয়া আসিল।
7. সেই স্ত্রীলোকেরা অভিনয়ক্রমে পরস্পর গান করিয়া বলিল, শৌল বধিলেন সহস্র সহস্র, আর দায়ূদ বধিলেন অযুত অযুত।
8. তাহাতে শৌল অতি ক্রুদ্ধ হইলেন, তিনি এই কথায় অসন্তুষ্ট হইয়া কহিলেন, উহারা দায়ূদের বিষয়ে অযুত অযুতের কথা বলিল, ও আমার বিষয়ে কেবল সহস্র সহস্রের কথা বলিল; ইহাতে রাজত্ব ব্যতীত সে আর কি পাইবে?
9. সেই দিন অবধি শৌল দায়ূয়ের উপরে দৃষ্টি রাখিলেন।
10. পরদিবসে ঈশ্বর হইতে এক দুষ্ট আত্মা সবলে শৌলের উপরে আসিল, এবং তিনি গৃহমধ্যে প্রলাপ বকিতে লাগিলেন, আর দায়ূদ প্রত্যহ যেমন করিতেন, সেইরূপ হস্ত দ্বারা বাদ্য বাজাইতেছিলেন; তখন শৌলের হস্তে তাঁহার বড়শা ছিল।
11. শৌল সেই বড়শা নিক্ষেপ করিলেন, বলিলেন, আমি দায়ূদকে ভিত্তির সঙ্গে গাঁথিব; কিন্তু দায়ূদ দুই বার তাঁহার সম্মুখ হইতে সরিয়া গেলেন।
12. আর শৌল দায়ূদের বিষয়ে ভীত হইতে লাগিলেন, কারণ সদাপ্রভু দায়ূদের সহবর্ত্তী ছিলেন, কিন্তু শৌলকে ত্যাগ করিয়াছিলেন।
13. সেই জন্য শৌল আপনার নিকট হইতে তাঁহাকে দূর করিয়া দিলেন, ও সহস্রপতি পদে নিযুক্ত করিলেন; তাহাতে তিনি লোকদের সাক্ষাতে ভিতরে ও বাহিরে গমনাগমন করিতে লাগিলেন।
14. আর দায়ূদ আপন সমস্ত পথে বুদ্ধিপূর্ব্বক চলিতেন, এবং সদাপ্রভু তাঁহার সহবর্ত্তী ছিলেন।
15. তিনি বেশ বুদ্ধিপূর্ব্বক চলিতেছেন দেখিয়া শৌল তাঁহার বিষয়ে ত্রাসযুক্ত হইলেন।
16. কিন্তু সমস্ত ইস্রায়েল ও যিহূদা দায়ূদকে ভালবাসিত, কেননা তিনি তাহাদের সাক্ষাতে ভিতরে ও বাহিরে গমনাগণন করিতেন।
17. পরে শৌল দায়ূদকে কহিলেন, দেখ, আমার জ্যেষ্ঠা কন্যা মেরব, আমি তোমার সহিত তাহার বিবাহ দিব; তুমি কেবল আমার পক্ষে বিক্রমী হইয়া সদাপ্রভুর জন্য সংগ্রাম কর। কারণ শৌল কহিলেন, আমার হস্ত তাহার উপরে না উঠুক, কিন্তু পলেষ্টীয়দের হস্ত তাহার উপরে উঠুক।
18. আর দায়ূদ শৌলকে কহিলেন, আমি কে, এবং আমার প্রাণ কি, ইস্রায়েলের মধ্যে আমার পিতার গোষ্ঠীই বা কি যে, আমি রাজার জামাতা হই?
19. কিন্তু শৌলের কন্যা মেরবকে দায়ূদের সহিত বিবাহ দিবার সময় উপস্থিত হইলে সে মহোলাতীয় অদ্রীয়েলকে দত্তা হইল।
20. পরে শৌলের কন্যা মীখল দায়ূদকে প্রেম করিতে লাগিলেন; তখন লোকেরা শৌলকে তাহা জানাইলে তিনি তাহাতে সন্তুষ্ট হইলেন।
21. শৌল কহিলেন, আমি তাহাকে সেই কন্যা দিব; সে তাহার ফাঁদস্বরূপ হউক, ও পলেষ্টীয়দের হস্ত তাহার উপরে উঠুক। অতএব শৌল দায়ূদকে কহিলেন, তুমি অদ্য দ্বিতীয় বার আমার জামাতা হও।
22. পরে শৌল আপন দাসগণকে আজ্ঞা দিলেন, তোমরা গোপনে দায়ূদের সহিত আলাপ করিয়া এই কথা বল, দেখ, তোমার প্রতি রাজা সন্তুষ্ট, এবং তাঁহার সমস্ত দাস তোমাকে ভালবাসে; অতএব এখন তুমি রাজার জামাতা হও।
23. শৌলের দাসগণ দায়ূদের কর্ণগোচরে এই কথা কহিল। দায়ূদ কহিলেন, রাজার জামাতা হওয়া কি তোমাদের কাছে লঘু বিষয় বোধ হয়? আমি ত দরিদ্র লোক, তুচ্ছের পাত্র।
24. পরে শৌলের দাসগণ তাঁহাকে সমাচার দিয়া কহিল, দায়ূদ এই প্রকার কথা বলেন।
25. শৌল কহিলেন, তোমরা দায়ূদকে এই কথা বল, রাজা কিছু পণ চাহেন না, কেবল রাজার শত্রুদের প্রতিশোধের জন্য পলেষ্টীয়দের এক শত লিঙ্গাগ্রত্বক্ চাহেন। শৌল মনে করিলেন, পলেষ্টীয়দের হস্ত দ্বারা দায়ূদকে নিপাত করা যাইবে।
26. পরে তাঁহার দাসগণ দায়ূদকে সেই কথা জানাইলে দায়ূদ রাজ-জামাতা হইতে তুষ্ট হইলেন।
27. তখন কাল সম্পূর্ণ হয় নাই; দায়ূদ আপন লোকদের সহিত উঠিয়া গিয়া পলেষ্টীয়দের দুই শত জনকে বধ করিলেন, এবং রাজার জামাতা হইবার জন্য দায়ূদ পূর্ণ সংখ্যানুসারে তাহাদের লিঙ্গাগ্রত্বক্ আনিয়া রাজাকে দিলেন; পরে শৌল তাঁহার সহিত আপন কন্যা মীখলের বিবাহ দিলেন।
28. আর শৌল দেখিয়া জানিতে পারিলেন যে, সদাপ্রভু দায়ূদের সহবর্ত্তী, এবং শৌলের কন্যা মীখল তাঁহাকে প্রেম করেন।
29. তাহাতে শৌল দায়ূদের বিষয়ে আরও ভীত হইলেন, আর শৌল সর্ব্বদাই দায়ূদের শত্রু থাকিলেন।
30. পরে পলেষ্টীয়দের অধ্যক্ষগণ বাহির হইতে লাগিলেন; কিন্তু যত বার বাহির হইলেন, তত বার শৌলের দাসগণের মধ্যে সর্ব্বাপেক্ষা দায়ূদ অধিক বুদ্ধিপূর্ব্বক চলিলেন, তাহাতে তাঁহার নাম অতিশয় সম্মানিত হইল।