1. [1] পরে যীশু ধর্ম্মধাম হইতে বাহির হইয়া গমন করিতেছেন, এমন সময়ে তাঁহার শিষ্যেরা তাঁহাকে ধর্ম্মধামের গাঁথনি সকল দেখাইবার জন্য নিকটে আসিলেন।
2. কিন্তু তিনি উত্তর করিয়া তাঁহাদিগকে কহিলেন, তোমরা কি এই সকল দেখিতেছ না? আমি তোমাদিগকে সত্য কহিতেছি, এই স্থানের একখানি পাথর অন্য পাথরের উপরে থাকিবে না, সমস্তই ভূমিসাৎ হইবে।
3. পরে তিনি জৈতুন পর্ব্বতের উপরে বসিলে শিষ্যেরা বিরলে তাঁহার নিকটে আসিয়া বলিলেন, আমাদিগকে বলুন দেখি, এই সকল ঘটনা কখন্ হইবে? আর আপনার আগমনের এবং যুগান্তের চিহ্ন কি?
4. যীশু উত্তর করিয়া তাঁহাদিগকে কহিলেন, দেখিও, কেহ যেন তোমাদিগকে না ভুলায়।
5. কেননা অনেকে আমার নাম ধরিয়া আসিবে, বলিবে, আমিই সেই খ্রীষ্ট, আর অনেক লোককে ভুলাইবে।
6. আর তোমরা যুদ্ধের কথা ও যুদ্ধের জনরব শুনিবে; দেখিও, ব্যাকুল হইও না; কেননা এ সকল অবশ্যই ঘটিবে, কিন্তু তখনও শেষ নয়।
7. কারণ জাতির বিপক্ষে জাতি ও রাজ্যের বিপক্ষে রাজ্য উঠিবে, এবং স্থানে স্থানে দুর্ভিক্ষ ও ভূমিকম্প হইবে।
8. কিন্তু এ সকলই যাতনার আরম্ভ মাত্র।
9. সেই সময়ে লোকেরা ক্লেশ দিবার জন্য তোমাদিগকে সমর্পণ করিবে, ও তোমাদিগকে বধ করিবে, আর আমার নাম প্রযুক্ত সমুদয় জাতি তোমাদিগকে দ্বেষ করিবে।
10. আর তৎকালে অনেকে বিঘ্ন পাইবে, এক জন অন্যকে সমর্পণ করিবে, এক জন অন্যকে দ্বেষ করিবে।
11. আর অনেক ভাক্ত ভাববাদী উঠিয়া অনেককে ভুলাইবে।
12. আর অধর্ম্মের বৃদ্ধি হওয়াতে অধিকাংশ লোকের প্রেম শীতল হইয়া যাইবে।
13. কিন্তু যে কেহ শেষ পর্য্যন্ত স্থির থাকিবে, সেই পরিত্রাণ পাইবে।
14. আর সর্ব্বজাতির কাছে সাক্ষ্য দিবার নিমিত্ত রাজ্যের এই সুসমাচার সমুদয় জগতে প্রচার করা যাইবে; আর তখন শেষ উপস্থিত হইবে।
15. অতএব যখন দেখিবে, ধ্বংসের যে ঘৃণার্হ বস্তু দানিয়েল ভাববাদী দ্বারা উক্ত হইয়াছে, তাহা পবিত্র স্থানে দাঁড়াইয়া আছে,— যে জন পাঠ করে, সে বুঝুক,
16. —তখন যাহারা যিহূদিয়াতে থাকে, তাহারা পাহাড় অঞ্চলে পলায়ন করুক;
17. যে কেহ ছাদের উপরে থাকে, সে গৃহ হইতে জিনিষপত্র লইবার জন্য নীচে না নামুক;
18. আর যে কেহ ক্ষেত্রে থাকে, সে আপন বস্ত্র লইবার নিমিত্ত পশ্চাতে ফিরিয়া না আসুক।
19. হায়, সেই সময়ে গর্ভবতী এবং স্তন্যদাত্রীদিগের সন্তাপ হইবে!
20. আর প্রার্থনা কর, যেন তোমাদের পলায়ন শীতকালে কিম্বা বিশ্রামবারে না ঘটে।
21. কেননা তৎকালে এরূপ “মহাক্লেশ উপস্থিত হইবে, যেরূপ জগতের আরম্ভ অবধি এ পর্য্যন্ত কখনও হয় নাই, কখনও হইবেও না” ।
22. আর সেই দিনের সংখ্যা যদি কমাইয়া দেওয়া না যাইত, তবে কোন প্রাণীই রক্ষা পাইত না; কিন্তু মনোনীতদের জন্য সেই দিনের সংখ্যা কমাইয়া দেওয়া যাইবে।
23. তখন যদি কেহ তোমাদিগকে বলে, দেখ, সেই খ্রীষ্ট এখানে, কিম্বা ওখানে, তোমরা বিশ্বাস করিও না।
24. কেননা ভাক্ত খ্রীষ্টেরা ও ভাক্ত ভাববাদীরা উঠিবে, এবং এমন মহৎ মহৎ চিহ্ন ও অদ্ভুত অদ্ভুত লক্ষণ দেখাইবে যে, যদি হইতে পারে, তবে মনোনীতদিগকেও ভুলাইবে।
25. দেখ, আমি পূর্ব্বেই তোমাদিগকে বলিলাম।
26. অতএব লোকে যদি তোমাদিগকে বলে, ‘দেখ, তিনি প্রান্তরে,’ তোমরা বাহিরে যাইও না; ‘দেখ, তিনি অন্তরাগারে,’ তোমরা বিশ্বাস করিও না।
27. কারণ বিদ্যুৎ যেমন পূর্ব্বদিক্ হইতে নির্গত হইয়া পশ্চিমদিক পর্য্যন্ত প্রকাশ পায়, তেমনি মনুষ্যপুত্রের আগমন হইবে।
28. যেখানে মড়া থাকে, সেইখানে শকুন যুটিবে।
29. আর সেই সময়ের ক্লেশের পরেই “সূর্য্য অন্ধকার হইবে, চন্দ্র জ্যোৎস্না দিবে না, আকাশ হইতে তারাগণের পতন হইবে ও আকাশমণ্ডলের পরাক্রম সকল বিচলিত হইবে”।
30. আর তখন মনুষ্যপুত্রের চিহ্ন আকাশে দেখা যাইবে, আর তখন পৃথিবীর সমুদয় গোষ্ঠী বিলাপ করিবে, এবং “মনুষ্যপুত্রকে আকাশীয় মেঘরথে পরাক্রম ও মহা প্রতাপে আসিতে” দেখিবে।
31. আর তিনি মহা তূরীধ্বনি সহকারে আপন দূতগণকে প্রেরণ করিবেন; তাঁহারা আকাশের এক সীমা অবধি অন্য সীমা পর্য্যন্ত চারি বায়ু হইতে তাঁহার মনোনীতদিগকে একত্র করিবেন।
32. ডুমুরগাছ হইতে দৃষ্টান্ত শিখ; যখন তাহার শাখা কোমল হইয়া পত্র বাহির করে, তখন তোমরা জানিতে পার, গ্রীষ্মকাল সন্নিকট;
33. সেইরূপ তোমরা ঐ সকল ঘটনা দেখিলেই জানিবে, তিনি সন্নিকট, এমন কি, দ্বারে উপস্থিত।
34. আমি তোমাদিগকে সত্য কহিতেছি, এই কালের লোকদের লোপ হইবে না, যে পর্য্যন্ত না এ সমস্ত সিদ্ধ হয়।
35. আকাশের ও পৃথিবীর লোপ হইবে, কিন্তু আমার বাক্যের লোপ কখনও হইবে না।
36. কিন্তু সেই দিনের ও সেই দণ্ডের তত্ত্ব কেহই জানে না, স্বর্গের দূতগণও জানেন না, পুত্রও জানেন না, কেবল পিতা জানেন।
37. বাস্তবিক নোহের সময়ে যেরূপ হইয়াছিল, মনুষ্যপুত্রের আগমনও তদ্রূপ হইবে।
38. কারণ জলপ্লাবনের সেই পূর্ব্ববর্ত্তী কালে, জাহাজে নোহের প্রবেশ দিন পর্য্যন্ত, লোকে যেমন ভোজন ও পান করিত, বিবাহ করিত ও বিবাহিতা হইত,
39. এবং বুঝিতে পারিল না, যাবৎ না বন্যা আসিয়া সকলকে ভাসাইয়া লইয়া গেল; তদ্রূপ মনুষ্যপুত্রের আগমন হইবে।
40. তখন দুই জন ক্ষেত্রে থাকিবে, এক জনকে লওয়া যাইবে, এবং অন্য জনকে ছাড়িয়া যাওয়া হইবে।
41. দুইটী স্ত্রীলোক যাঁতা পিষিবে, এক জনকে লওয়া যাইবে, এবং অন্য জনকে ছাড়িয়া যাওয়া হইবে।
42. অতএব জাগিয়া থাক, কেননা তোমাদের প্রভু কোন্ দিন আসিবেন, তাহা তোমরা জান না।
43. কিন্তু ইহা জানিও, চোর কোন্ প্রহরে আসিবে, তাহা যদি গৃহকর্ত্তা জানিত, তবে জাগিয়া থাকিত, নিজ গৃহে সিঁধ কাটিতে দিত না।
44. এই জন্য তোমরাও প্রস্তুত থাক, কেননা যে দণ্ড তোমরা মনে করিবে না, সেই দণ্ডে মনুষ্যপুত্র আসিবেন।
45. এখন, সেই বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান্ দাস কে, যাহাকে তাহার প্রভু নিজ পরিজনের উপরে নিযুক্ত করিয়াছেন, যেন সে তাহাদিগকে উপযুক্ত সময়ে খাদ্য দেয়?
46. ধন্য সেই দাস, যাহাকে তাহার প্রভু আসিয়া সেইরূপ করিতে দেখিবেন।
47. আমি তোমাদিগকে সত্য কহিতেছি, তিনি তাহাকে আপন সর্ব্বস্বের অধ্যক্ষ করিবেন।
48. কিন্তু সেই দুষ্ট দাস যদি মনে মনে বলে, ‘আমার প্রভুর আসিবার বিলম্ব আছে,’
49. আর যদি আপন সহদাসদিগকে মারিতে, এবং মত্ত লোকদের সঙ্গে ভোজন ও পান করিতে, আরম্ভ করে,
50. তবে যে দিন সে অপেক্ষা না করিবে, এবং যে দণ্ড সে না জানিবে, সেই দিন সেই দণ্ডে সেই দাসের প্রভু আসিবেন;
51. আর তাহাকে দ্বিখণ্ড করিয়া কপটীদের মধ্যে তাহার অংশ নিরূপণ করিবেন; সেই স্থানে রোদন ও দন্তঘর্ষণ হইবে।