পবিত্র বাইবেল

বাইবেল সোসাইটি অফ ইন্ডিয়া (BSI)
মথি
1. সেই দণ্ডে শিষ্যেরা যীশুর নিকটে আসিয়া বলিলেন, তবে স্বর্গ-রাজ্যের মধ্যে শ্রেষ্ঠ কে?
2. তিনি একটী শিশুকে আপনার নিকটে ডাকিয়া তাঁহাদের মধ্যে দাঁড় করাইলেন, এবং কহিলেন,
3. আমি তোমাদিগকে সত্য কহিতেছি, তোমরা যদি না ফির ও শিশুদের ন্যায় না হইয়া উঠ, তবে কোন মতে স্বর্গ-রাজ্যে প্রবেশ করিতে পাইবে না।
4. অতএব যে কেহ আপনাকে এই শিশুর মত নত করে, সেই স্বর্গ-রাজ্যে শ্রেষ্ঠ।
5. আর যে কেহ ইহার মত একটী শিশুকে আমার নামে গ্রহণ করে, সে আমাকেই গ্রহণ করে;
6. কিন্তু যে ক্ষুদ্রগণ আমাতে বিশ্বাস করে, যে কেহ তাহাদের মধ্যে এক জনেরও বিঘ্ন জন্মায়, তাহার গলায় বৃহৎ যাঁতা বাঁধিয়া তাহাকে সমুদ্রের অগাধ জলে ডুবাইয়া দেওয়া বরং তাহার পক্ষে ভাল।
7. বিঘ্ন প্রযুক্ত জগৎকে ধিক্‌! কেননা বিঘ্ন অবশ্যই উপস্থিত হইবে; কিন্তু ধিক্‌ সেই ব্যক্তিকে, যাহার দ্বারা বিঘ্ন উপস্থিত হইবে।
8. আর তোমার হস্ত কিম্বা চরণ যদি তোমার বিঘ্ন জন্মায়, তবে তাহা কাটিয়া ফেলিয়া দেও; দুই হস্ত কিম্বা দুই চরণ লইয়া অনন্ত অগ্নিতে নিক্ষিপ্ত হওয়া অপেক্ষা বরং খঞ্জ কিম্বা নুলা হইয়া জীবনে প্রবেশ করা তোমার ভাল।
9. আর তোমার চক্ষু যদি তোমার বিঘ্ন জন্মায়, তবে তাহা উপড়াইয়া ফেলিয়া দেও; দুই চক্ষু লইয়া অগ্নিময় নরকে নিক্ষিপ্ত হওয়া অপেক্ষা বরং একচক্ষু হইয়া জীবনে প্রবেশ করা তোমার ভাল।
10. দেখিও, এই ক্ষুদ্রগণের মধ্যে একটীকেও তুচ্ছ করিও না; কেননা আমি তোমাদিগকে কহিতেছি, তাহাদের দূতগণ স্বর্গে সতত আমার স্বর্গস্থ পিতার মুখ দর্শন করেন।
11.
12. তোমাদের কেমন বোধ হয়? কোন ব্যক্তির যদি এক শত মেষ থাকে, আর তাহাদের মধ্যে একটী হারাইয়া যায়, তবে সে কি অন্য নিরানব্বইটা ছাড়িয়া পর্ব্বতে গিয়া ঐ হারান মেষটীর অন্বেষণ করে না?
13. আর যদি সে কোন ক্রমে সেটী পায়, তবে আমি তোমাদিগকে সত্য কহিতেছি, যে নিরানব্বইটা হারাইয়া যায় নাই, তাহাদের অপেক্ষা সেইটীর নিমিত্ত সে অধিক আনন্দ করে।
14. সেইরূপ এই ক্ষুদ্রগণের মধ্যে এক জনও যে বিনষ্ট হয়, তোমাদের স্বর্গস্থ পিতার এমন ইচ্ছা নয়।
15. আর যদি তোমার ভ্রাতা তোমাক নিকটে কোন অপরাধ করে, তবে যাও, যখন কেবল তোমাতে ও তাহাতে থাক, তখন সেই দোষ তাহাকে বুঝাইয়া দেও। যদি সে তোমার কথা শুনে, তুমি আপন ভ্রাতাকে লাভ করিলে।
16. কিন্তু যদি সে না শুনে, তবে আর দুই এক ব্যক্তিকে সঙ্গে লইয়া যাও, যেন “দুই কিম্বা তিন জন সাক্ষীর মুখে সমস্ত কথা নিষ্পন্ন হয়।”
17. আর যদি সে তাহাদের কথা অমান্য করে, মণ্ডলীকে বল; আর যদি মণ্ডলীর কথাও অমান্য করে, সে তোমার নিকটে পরজাতীয় লোকের ও করগ্রাহীর তুল্য হউক।
18. আমি তোমাদিগকে সত্য কহিতেছি, তোমরা পৃথিবীতে যাহা কিছু বদ্ধ করিবে, তাহা স্বর্গে বদ্ধ হইবে; এবং পৃথিবীতে যাহা কিছু মুক্ত করিবে, তাহা স্বর্গে মুক্ত হইবে।
19. আবার আমি তোমাদিগকে সত্য কহিতেছি, পৃথিবীতে তোমাদের দুই জন যাহা কিছু যাচ্ঞা করিবে, সেই বিষয়ে যদি একচিত্ত হয়, তবে আমার স্বর্গস্থ পিতা কর্ত্তৃক তাহাদের জন্য তাহা করা যাইবে।
20. কেননা যেখানে দুই কি তিন জন আমার নামে একত্র হয়, সেইখানে আমি তাহাদের মধ্যে আছি।
21. তখন পিতর তাঁহার নিকটে আসিয়া কহিলেন, প্রভু, আমার ভ্রাতা আমার নিকটে কত বার অপরাধ করিলে আমি তাহাকে ক্ষমা করিব? কি সাত বার পর্য্যন্ত?
22. যীশু তাঁহাকে কহিলেন, তোমাকে বলিতেছি না, সাত বার পর্য্যন্ত, কিন্তু সত্তর গুণ সাত বার পর্য্যন্ত।
23. এজন্য স্বর্গ-রাজ্য এমন এক জন রাজার তুল্য, যিনি আপন দাসগণের কাছে হিসাব লইতে চাহিলেন।
24. তিনি হিসাব আরম্ভ করিলে, এক জন তাঁহার নিকটে আনীত হইল, যে তাঁহার দশ সহস্র তালন্ত ধারিত।
25. কিন্তু তাহার পরিশোধ করিবার সঙ্গতি না থাকাতে তাহার প্রভু তাহাকে ও তাহার স্ত্রী পুত্রাদি সর্ব্বস্ব বিক্রয় করিয়া আদায় করিতে আজ্ঞা করিলেন।
26. তাহাতে সে দাস তাঁহার চরণে পড়িয়া প্রণিপাত করিয়া কহিল, হে প্রভু, আমার প্রতি ধৈর্য্য ধরুন, আমি আপনার সমস্তই পরিশোধ করিব।
27. তখন সে দাসের প্রভু করুণাবিষ্ট হইয়া তাহাকে মুক্ত করিলেন ও তাহার ঋণ ক্ষমা করিলেন।
28. কিন্তু সেই দাস বাহিরে গিয়া তাহার সহদাসদের মধ্যে এক জনকে, দেখিতে পাইল, যে তাহার এক শত সিকি ধারিত; সে তাহাকে ধরিয়া গলাটিপি দিয়া কহিল, তুই যা ধারিস্‌, তাহা পরিশোধ কর্‌।
29. তখন তাহার সহদাস তাহার চরণে পড়িয়া বিনতিপূর্ব্বক কহিল, আমার প্রতি ধৈর্য্য ধর, আমি তোমার ঋণ পরিশোধ করিব।
30. তথাপি সে সম্মত হইল না, কিন্তু গিয়া তাহাকে কারাগারে ফেলিয়া রাখিল, যে পর্য্যন্ত ঋণ পরিশোধ না করে।
31. এই ব্যাপার দেখিয়া তাহার সহদাসেরা বড়ই দুঃখিত হইল, আর আপনাদের প্রভুর কাছে গিয়া সমস্ত বৃত্তান্ত বলিয়া দিল।
32. তখন তাহার প্রভু তাহাকে কাছে ডাকাইয়া কহিলেন, দুষ্ট দাস! তুমি আমার কাছে বিনতি করাতে আমি তোমার ঐ সমস্ত ঋণ ক্ষমা করিয়াছিলাম;
33. আমি যেমন তোমার প্রতি দয়া করিয়াছিলাম, তেমনি তোমার সহদাসের প্রতি দয়া করা কি তোমারও উচিত ছিল না?
34. আর তাহার প্রভু ক্রুদ্ধ হইয়া পীড়নকারীদের নিকটে তাহাকে সমর্পণ করিলেন, যে পর্য্যন্ত সে সমস্ত ঋণ পরিশোধ না করে।
35. আমার স্বর্গীয় পিতাও তোমাদের প্রতি এইরূপ করিবেন, যদি তোমরা প্রতিজন অন্তঃকরণের সহিত আপন আপন ভ্রাতাকে ক্ষমা না কর।

রেকর্ড

Total 28 অধ্যায়গুলির, Selected অধ্যায় 18 / 28
1 সেই দণ্ডে শিষ্যেরা যীশুর নিকটে আসিয়া বলিলেন, তবে স্বর্গ-রাজ্যের মধ্যে শ্রেষ্ঠ কে?
2 তিনি একটী শিশুকে আপনার নিকটে ডাকিয়া তাঁহাদের মধ্যে দাঁড় করাইলেন, এবং কহিলেন, 3 আমি তোমাদিগকে সত্য কহিতেছি, তোমরা যদি না ফির ও শিশুদের ন্যায় না হইয়া উঠ, তবে কোন মতে স্বর্গ-রাজ্যে প্রবেশ করিতে পাইবে না। 4 অতএব যে কেহ আপনাকে এই শিশুর মত নত করে, সেই স্বর্গ-রাজ্যে শ্রেষ্ঠ। 5 আর যে কেহ ইহার মত একটী শিশুকে আমার নামে গ্রহণ করে, সে আমাকেই গ্রহণ করে; 6 কিন্তু যে ক্ষুদ্রগণ আমাতে বিশ্বাস করে, যে কেহ তাহাদের মধ্যে এক জনেরও বিঘ্ন জন্মায়, তাহার গলায় বৃহৎ যাঁতা বাঁধিয়া তাহাকে সমুদ্রের অগাধ জলে ডুবাইয়া দেওয়া বরং তাহার পক্ষে ভাল। 7 বিঘ্ন প্রযুক্ত জগৎকে ধিক্‌! কেননা বিঘ্ন অবশ্যই উপস্থিত হইবে; কিন্তু ধিক্‌ সেই ব্যক্তিকে, যাহার দ্বারা বিঘ্ন উপস্থিত হইবে। 8 আর তোমার হস্ত কিম্বা চরণ যদি তোমার বিঘ্ন জন্মায়, তবে তাহা কাটিয়া ফেলিয়া দেও; দুই হস্ত কিম্বা দুই চরণ লইয়া অনন্ত অগ্নিতে নিক্ষিপ্ত হওয়া অপেক্ষা বরং খঞ্জ কিম্বা নুলা হইয়া জীবনে প্রবেশ করা তোমার ভাল। 9 আর তোমার চক্ষু যদি তোমার বিঘ্ন জন্মায়, তবে তাহা উপড়াইয়া ফেলিয়া দেও; দুই চক্ষু লইয়া অগ্নিময় নরকে নিক্ষিপ্ত হওয়া অপেক্ষা বরং একচক্ষু হইয়া জীবনে প্রবেশ করা তোমার ভাল। 10 দেখিও, এই ক্ষুদ্রগণের মধ্যে একটীকেও তুচ্ছ করিও না; কেননা আমি তোমাদিগকে কহিতেছি, তাহাদের দূতগণ স্বর্গে সতত আমার স্বর্গস্থ পিতার মুখ দর্শন করেন। 11 12 তোমাদের কেমন বোধ হয়? কোন ব্যক্তির যদি এক শত মেষ থাকে, আর তাহাদের মধ্যে একটী হারাইয়া যায়, তবে সে কি অন্য নিরানব্বইটা ছাড়িয়া পর্ব্বতে গিয়া ঐ হারান মেষটীর অন্বেষণ করে না? 13 আর যদি সে কোন ক্রমে সেটী পায়, তবে আমি তোমাদিগকে সত্য কহিতেছি, যে নিরানব্বইটা হারাইয়া যায় নাই, তাহাদের অপেক্ষা সেইটীর নিমিত্ত সে অধিক আনন্দ করে। 14 সেইরূপ এই ক্ষুদ্রগণের মধ্যে এক জনও যে বিনষ্ট হয়, তোমাদের স্বর্গস্থ পিতার এমন ইচ্ছা নয়। 15 আর যদি তোমার ভ্রাতা তোমাক নিকটে কোন অপরাধ করে, তবে যাও, যখন কেবল তোমাতে ও তাহাতে থাক, তখন সেই দোষ তাহাকে বুঝাইয়া দেও। যদি সে তোমার কথা শুনে, তুমি আপন ভ্রাতাকে লাভ করিলে। 16 কিন্তু যদি সে না শুনে, তবে আর দুই এক ব্যক্তিকে সঙ্গে লইয়া যাও, যেন “দুই কিম্বা তিন জন সাক্ষীর মুখে সমস্ত কথা নিষ্পন্ন হয়।” 17 আর যদি সে তাহাদের কথা অমান্য করে, মণ্ডলীকে বল; আর যদি মণ্ডলীর কথাও অমান্য করে, সে তোমার নিকটে পরজাতীয় লোকের ও করগ্রাহীর তুল্য হউক। 18 আমি তোমাদিগকে সত্য কহিতেছি, তোমরা পৃথিবীতে যাহা কিছু বদ্ধ করিবে, তাহা স্বর্গে বদ্ধ হইবে; এবং পৃথিবীতে যাহা কিছু মুক্ত করিবে, তাহা স্বর্গে মুক্ত হইবে। 19 আবার আমি তোমাদিগকে সত্য কহিতেছি, পৃথিবীতে তোমাদের দুই জন যাহা কিছু যাচ্ঞা করিবে, সেই বিষয়ে যদি একচিত্ত হয়, তবে আমার স্বর্গস্থ পিতা কর্ত্তৃক তাহাদের জন্য তাহা করা যাইবে। 20 কেননা যেখানে দুই কি তিন জন আমার নামে একত্র হয়, সেইখানে আমি তাহাদের মধ্যে আছি। 21 তখন পিতর তাঁহার নিকটে আসিয়া কহিলেন, প্রভু, আমার ভ্রাতা আমার নিকটে কত বার অপরাধ করিলে আমি তাহাকে ক্ষমা করিব? কি সাত বার পর্য্যন্ত? 22 যীশু তাঁহাকে কহিলেন, তোমাকে বলিতেছি না, সাত বার পর্য্যন্ত, কিন্তু সত্তর গুণ সাত বার পর্য্যন্ত। 23 এজন্য স্বর্গ-রাজ্য এমন এক জন রাজার তুল্য, যিনি আপন দাসগণের কাছে হিসাব লইতে চাহিলেন। 24 তিনি হিসাব আরম্ভ করিলে, এক জন তাঁহার নিকটে আনীত হইল, যে তাঁহার দশ সহস্র তালন্ত ধারিত। 25 কিন্তু তাহার পরিশোধ করিবার সঙ্গতি না থাকাতে তাহার প্রভু তাহাকে ও তাহার স্ত্রী পুত্রাদি সর্ব্বস্ব বিক্রয় করিয়া আদায় করিতে আজ্ঞা করিলেন। 26 তাহাতে সে দাস তাঁহার চরণে পড়িয়া প্রণিপাত করিয়া কহিল, হে প্রভু, আমার প্রতি ধৈর্য্য ধরুন, আমি আপনার সমস্তই পরিশোধ করিব। 27 তখন সে দাসের প্রভু করুণাবিষ্ট হইয়া তাহাকে মুক্ত করিলেন ও তাহার ঋণ ক্ষমা করিলেন। 28 কিন্তু সেই দাস বাহিরে গিয়া তাহার সহদাসদের মধ্যে এক জনকে, দেখিতে পাইল, যে তাহার এক শত সিকি ধারিত; সে তাহাকে ধরিয়া গলাটিপি দিয়া কহিল, তুই যা ধারিস্‌, তাহা পরিশোধ কর্‌। 29 তখন তাহার সহদাস তাহার চরণে পড়িয়া বিনতিপূর্ব্বক কহিল, আমার প্রতি ধৈর্য্য ধর, আমি তোমার ঋণ পরিশোধ করিব। 30 তথাপি সে সম্মত হইল না, কিন্তু গিয়া তাহাকে কারাগারে ফেলিয়া রাখিল, যে পর্য্যন্ত ঋণ পরিশোধ না করে। 31 এই ব্যাপার দেখিয়া তাহার সহদাসেরা বড়ই দুঃখিত হইল, আর আপনাদের প্রভুর কাছে গিয়া সমস্ত বৃত্তান্ত বলিয়া দিল। 32 তখন তাহার প্রভু তাহাকে কাছে ডাকাইয়া কহিলেন, দুষ্ট দাস! তুমি আমার কাছে বিনতি করাতে আমি তোমার ঐ সমস্ত ঋণ ক্ষমা করিয়াছিলাম; 33 আমি যেমন তোমার প্রতি দয়া করিয়াছিলাম, তেমনি তোমার সহদাসের প্রতি দয়া করা কি তোমারও উচিত ছিল না? 34 আর তাহার প্রভু ক্রুদ্ধ হইয়া পীড়নকারীদের নিকটে তাহাকে সমর্পণ করিলেন, যে পর্য্যন্ত সে সমস্ত ঋণ পরিশোধ না করে। 35 আমার স্বর্গীয় পিতাও তোমাদের প্রতি এইরূপ করিবেন, যদি তোমরা প্রতিজন অন্তঃকরণের সহিত আপন আপন ভ্রাতাকে ক্ষমা না কর।
Total 28 অধ্যায়গুলির, Selected অধ্যায় 18 / 28
×

Alert

×

Bengali Letters Keypad References