1. এইরূপে যীশু আপন বারো জন শিষ্যের প্রতি আদেশ সমাপ্ত করিবার পর লোকদের নগরে নগরে উপদেশ দিবার ও প্রচার করিবার জন্য সে স্থান হইতে প্রস্থান করিলেন।
2. পরে যোহন কারাগারে থাকিয়া খ্রীষ্টের কর্ম্মের বিষয় শুনিয়া আপনার শিষ্যদের দ্বারা তাঁহাকে জিজ্ঞাসা করিয়া পাঠাইলেন,
3. ‘যাঁহার আগমন হইবে, সেই ব্যক্তি কি আপনি? না আমরা অন্যের অপেক্ষায় থাকিব?’
4. যীশু উত্তর করিয়া তাহাদিগকে কহিলেন, তোমরা যাও, যাহা যাহা শুনিতেছ ও দেখিতেছ, তাহার সংবাদ যোহনকে দেও;
5. অন্ধেরা দেখিতে পাইতেছে ও খঞ্জেরা চলিতেছে, কুষ্ঠীরা শুচিকৃত হইতেছে ও বধিরেরা শুনিতেছে, এবং মৃতেরা উত্থাপিত হইতেছে ও দরিদ্রদের নিকটে সুসমাচার প্রচারিত হইতেছে;
6. আর ধন্য সেই ব্যক্তি, যে আমাতে বিঘ্নের কারণ না পায়।
7. তাহারা চলিয়া যাইতেছে, এমন সময়ে যীশু লোকসমূহকে যোহনের বিষয়ে বলিতে লাগিলেন, তোমরা প্রান্তরে কি দেখিতে গিয়াছিলে?
8. কি বায়ুকম্পিত নল? তবে কি দেখিতে গিয়াছিলে? কি কোমল বস্ত্র পরিহিত কোন ব্যক্তিকে? দেখ, যাহারা কোমল বস্ত্র পরিধান করে, তাহারা রাজবাটীতে থাকে।
9. তবে কি জন্য গিয়াছিলে? কি এক জন ভাববাদীকে দেখিবার জন্য? হাঁ, আমি তোমাদিগকে বলিতেছি, ভাববাদী হইতেও শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিকে।
10. ইনি সেই ব্যক্তি, যাঁহার বিষয়ে লেখা আছে, “দেখ, আমি আপন দূতকে তোমার সম্মুখে প্রেরণ করি; সে তোমার অগ্রে তোমার পথ প্রস্তুত করিবে।”
11. আমি তোমাদিগকে সত্য বলিতেছি, স্ত্রীলোকের গর্ভজাত সকলের মধ্যে যোহন বাপ্তাইজক হইতে মহান্ কেহই উৎপন্ন হয় নাই, তথাপি স্বর্গ-রাজ্যে অতি ক্ষুদ্র যে ব্যক্তি, সে তাঁহা হইতে মহান্।
12. আর যোহন বাপ্তাইজকের কাল হইতে এখন পর্য্যন্ত স্বর্গ-রাজ্য বলে আক্রান্ত হইতেছে, এবং আক্রমীরা সবলে তাহা অধিকার করিতেছে।
13. কেননা সমস্ত ভাববাদী ও ব্যবস্থা যোহন পর্য্যন্ত ভাববাণী বলিয়াছে।
14. আর তোমরা যদি গ্রহণ করিতে সম্মত হও, তবে জানিবে, যে এলিয়ের আগমন হইবে, তিনি এই ব্যক্তি।
15. যাহার শুনিতে কাণ থাকে, সে শুনুক।
16. কিন্তু আমি কাহার সহিত এই কালের লোকদের তুলনা দিব? তাহারা এমন বালকদের তুল্য, যাহারা বাজারে বসিয়া আপনাদের সঙ্গিগণকে ডাকিয়া বলে,
17. ‘আমরা তোমাদের নিকটে বাঁশী বাজাইলাম, তোমরা নাচিলে না; আমরা বিলাপ করিলাম, তোমরা বুক চাপড়াইলে না।’
18. কারণ যোহন আসিয়া ভোজন পান করেন নাই; তাহাতে লোকে বলে, সে ভূতগ্রস্ত।
19. মনুষ্যপুত্র আসিয়া ভোজন পান করেন; তাহাতে লোকে বলে, ঐ দেখ, এক জন পেটুক ও মদ্যপায়ী, করগ্রাহীদের ও পাপীদের বন্ধু। কিন্তু প্রজ্ঞা নিজ কর্ম্মসমূহ দ্বারা নির্দ্দোষ বলিয়া গণিত হয়।
20. তখন যে যে নগরে তাঁহার সর্ব্বাপেক্ষা অধিক পরাক্রম-কার্য্য সম্পন্ন হইয়াছিল, তিনি সেই সকল নগরকে ভর্ৎসনা করিতে লাগিলেন, কেননা তাহারা মন ফিরায় নাই—
21. ‘কোরাসীন, ধিক্ তোমাকে! বৈৎসৈদা, ধিক্ তোমাকে! কেননা তোমাদের মধ্যে যে সকল পরাক্রম-কার্য্য করা গিয়াছে, সে সকল যদি সোর ও সীদোনে করা যাইত, তবে অনেক দিন পূর্ব্বে তাহারা চট পরিয়া ভস্মে বসিয়া মন ফিরাইত।
22. কিন্তু আমি তোমাদিগকে বলিতেছি, তোমাদের দশা হইতে বরং সোর ও সীদোনের দশা বিচার-দিনে সহনীয় হইবে।
23. আর হে কফরনাহূম, তুমি না কি স্বর্গ পর্য্যন্ত উচ্চীকৃত হইবে? তুমি পাতাল পর্য্যন্ত নামিয়া যাইবে; কেননা যে সকল পরাক্রম-কার্য্য তোমার মধ্যে করা গিয়াছে, সে সকল যদি সদোমে করা যাইত, তবে তাহা আজ পর্য্যন্ত থাকিত।
24. কিন্তু আমি তোমাদিগকে বলিতেছি, তোমার দশা হইতে বরং সদোম দেশের দশা বিচারদিনে সহনীয় হইবে।’
25. সেই সময়ে যীশু এই কথা কহিলেন, হে পিতঃ হে স্বর্গের ও পৃথিবীর প্রভু, আমি তোমার ধন্যবাদ করিতেছি, কেননা তুমি বিজ্ঞ ও বুদ্ধিমানদের হইতে এই সকল বিষয় গুপ্ত রাখিয়া শিশুদের নিকটে প্রকাশ করিয়াছ;
26. হাঁ, পিতঃ, কেননা ইহা তোমার দৃষ্টিতে প্রীতিজনক হইল।
27. সকলই আমার পিতা কর্ত্তৃক আমাকে সমর্পিত হইয়াছে; আর পুত্রকে কেহ জানে না, কেবল পিতা জানেন, এবং পিতাকে কেহ জানে না, কেবল পুত্র জানেন, এবং পুত্র যাহার নিকটে তাঁহাকে প্রকাশ করিতে ইচ্ছা করেন, সে জানে।
28. হে পরিশ্রান্ত ও ভারাক্রান্ত লোক সকল, আমার নিকটে আইস, আমি তোমাদিগকে বিশ্রাম দিব।
29. আমার যোঁয়ালি আপনাদের উপরে তুলিয়া লও, এবং আমার কাছে শিক্ষা কর, কেননা আমি মৃদুশীল ও নম্রচিত্ত; তাহাতে তোমরা আপন আপন প্রাণের জন্য বিশ্রাম পাইবে।
30. কারণ আমার যোঁয়ালি সহজ ও আমার ভার লঘু।