1. সেই দিন যিরূশালেমস্থ মণ্ডলীর প্রতি বড়ই তাড়না উপস্থিত হইল, তাহাতে প্রেরিতবর্গ ছাড়া অন্য সকলে যিহূদিয়ার ও শমরিয়ার জনপদে ছিন্নভিন্ন হইয়া পড়িল।
2. আর কয়েক জন ভক্ত লোক স্তিফানের কবর দিলেন, ও তাঁহার নিমিত্ত মহাবিলাপ করিলেন।
3. কিন্তু শৌল মণ্ডলীর উচ্ছেদ সাধন করিতে লাগিলেন, ঘরে ঘরে প্রবেশ করিয়া পুরুষ ও স্ত্রীলোকদিগকে টানিয়া আনিয়া কারাগারে সমর্পণ করিতে লাগিলেন।
4. তখন যাহারা ছিন্নভিন্ন হইয়াছিল, তাহারা চারিদিকে ভ্রমণ করিয়া সুসমাচারের বাক্য প্রচার করিল।
5. আর ফিলিপ শমরিয়ার নগরে গিয়া লোকদের কাছে খ্রীষ্টকে প্রচার করিতে লাগিলেন।
6. আর লোকসমূহ ফিলিপের কথা শুনিয়া ও তাঁহার কৃত চিহ্ন-কার্য্য সকল দেখিয়া একচিত্তে তাঁহার কথায় অবধান করিল।
7. কারণ অশুচি আত্মাবিষ্ট অনেক লোক হইতে সেই সকল আত্মা উচ্চৈঃস্বরে চেঁচাইয়া বাহির হইয়া আসিল, এবং অনেক পক্ষাঘাতী ও খঞ্জ সুস্থ হইল;
8. তাহাতে ঐ নগরে বড়ই আনন্দ হইল।
9. কিন্তু শিমোন নামে এক ব্যক্তি ছিল, সে পূর্ব্বাবধি সেই নগরে যাদুক্রিয়া করিত ও শমরীয় জাতিকে চমৎকৃত করিত, আপনাকে এক জন মহাপুরুষ বলিত;
10. তাহার কথায় ছোট বড় সকলে অবধান করিত, বলিত, এ ব্যক্তি ঈশ্বরের সেই শক্তি, যাহা মহতী নামে আখ্যাত।
11. তাহারা যে তাহার কথায় অবধান করিত, তাহার কারণ এই যে, বহুকাল অবধি সে আপন যাদুক্রিয়া দ্বারা তাহাদিগকে চমৎকৃত করিয়া আসিতেছিল।
12. কিন্তু ফিলিপ ঈশ্বরের রাজ্য ও যীশু খ্রীষ্টের নাম বিষয়ক সুসমাচার প্রচার করিলে তাহারা যখন তাঁহার কথায় বিশ্বাস করিল, তখন পুরুষ ও স্ত্রীলোকেরাও বাপ্তাইজিত হইতে লাগিল।
13. আর শিমোন আপনিও বিশ্বাস করিল, এবং বাপ্তাইজিত হইয়া ফিলিপের সঙ্গে সঙ্গেই থাকিল; আর অনেক চিহ্ন-কার্য্য ও মহাপরাক্রমের কার্য্য সাধিত হইতেছে দেখিয়া চমৎকৃত হইল।
14. যিরূশালেমে প্রেরিতগণ যখন শুনিতে পাইলেন যে শমরীয়েরা ঈশ্বরের বাক্য গ্রহণ করিয়াছে, তখন তাঁহারা পিতর ও যোহনকে তাহাদের নিকটে প্রেরণ করিলেন।
15. তাঁহারা আসিয়া তাহাদের নিমিত্ত প্রার্থনা করিলেন, যেন তাহারা পবিত্র আত্মা পায়;
16. কেননা এ পর্য্যন্ত তাহাদের কাহারও উপরে পবিত্র আত্মা পতিত হন নাই; কেবল তাহারা প্রভু যীশুর নামে বাপ্তাইজিত হইয়াছিল।
17. তখন তাঁহারা তাহাদের উপরে হস্তার্পণ করিলেন, আর তাহারা পবিত্র আত্মা পাইল।
18. আর শিমোন যখন দেখিল, প্রেরিতদের হস্তার্পণ দ্বারা পবিত্র আত্মা দত্ত হইতেছেন, তখন সে তাঁহাদের নিকটে টাকা আনিয়া কহিল,
19. আমাকেও এই ক্ষমতা দিউন, যেন আমি যাহার উপরে হস্তার্পণ করিব, সে পবিত্র আত্মা পায়।
20. কিন্তু পিতর তাহাকে বলিলেন, তোমার রৌপ্য তোমার সঙ্গে বিনষ্ট হউক, কেননা ঈশ্বরের দান তুমি টাকা দিয়া ক্রয় করিতে মনস্থ করিয়াছ।
21. এই বিষয়ে তোমার অংশ কি অধিকার কিছুই নাই; কারণ তোমার হৃদয় ঈশ্বরের সাক্ষাতে সরল নয়।
22. অতএব তোমার এই দুষ্টতা হইতে মন ফিরাও; এবং প্রভুর কাছে বিনতি কর, কি জানি, তোমার হৃদয়ের কল্পনার ক্ষমা হইলেও হইতে পারে;
23. কেননা আমি দেখিতেছি, তুমি কটুভাবরূপ পিত্তে ও অধর্ম্মরূপ বন্ধনে পড়িয়া রহিয়াছ।
24. তখন শিমোন উত্তর করিয়া কহিল, আপনারাই আমার জন্য প্রভুর কাছে বিনতি করুন, যেন আপনারা যাহা যাহা বলিলেন, তাহার কিছুই আমার প্রতি না ঘটে।
25. পরে তাঁহারা সাক্ষ্য দিয়া ও প্রভুর বাক্য বলিয়া যিরূশালেমে ফিরিয়া যাইতে যাইতে শমরীয়দের অনেক গ্রামে সুসমাচার প্রচার করিলেন।
26. পরে প্রভুর এক দূত ফিলিপকে এই কথা কহিলেন, উঠ, দক্ষিণ দিকে, যে পথ যিরূশালেম হইতে ঘসার দিকে নামিয়া গিয়াছে, সেই পথে যাও; সেই স্থান প্রান্তর।
27. তাহাতে তিনি উঠিয়া গমন করিলেন। আর দেখ, ইথিয়পিয়া দেশের এক ব্যক্তি, ইথিয়পীয়দের কান্দাকি রাণীর অধীন উচ্চপদস্থ এক জন নপুংসক, যিনি রাণীর সমস্ত ধনকোষের অধ্যক্ষ ছিলেন, তিনি ভজনা করিবার জন্য যিরূশালেমে আসিয়াছিলেন;
28. পরে ফিরিয়া যাইতেছিলেন, এবং আপন রথে বসিয়া যিশাইয় ভাববাদীর গ্রন্থ পাঠ করিতেছিলেন।
29. তখন আত্মা ফিলিপকে কহিলেন, নিকটে যাও, ঐ রথের সঙ্গ ধর।
30. তাহাতে ফিলিপ দৌড়িয়া নিকটে গিয়া শুনিলেন, তিনি যিশাইয় ভাববাদীর গ্রন্থ পাঠ করিতেছেন; ফিলিপ কহিলেন, আপনি যাহা পাঠ করিতেছেন, তাহা কি বুঝিতে পারিতেছেন?
31. তিনি কহিলেন, কেহ আমাকে বুঝাইয়া না দিলে কেমন করিয়া বুঝিতে পারিব? পরে তিনি ফিলিপকে আপনার কাছে উঠিয়া বসিতে নিবেদন করিলেন।
32. শাস্ত্রের যে কথা তিনি পড়িতেছিলেন, তাহা এই, “তিনি হত হইবার জন্য মেষের ন্যায় নীত হইলেন, এবং লোমচ্ছেদকের সম্মুখে মেষশাবক যেমন নীরব থাকে, সেইরূপ তিনি মুখ খুলেন না।
33. তাঁহার হীনাবস্থায় তাঁহার সম্বন্ধীয় বিচার অপনীত হইল, তাঁহার সমকালীন লোকদের বর্ণনা কে করিতে পারে? যেহেতুক তাঁহার জীবন পৃথিবী হইতে অপনীত হইল।”
34. নপুংসক উত্তর করিয়া ফিলিপকে বলিলেন, নিবেদন করি, ভাববাদী কাহার বিষয়ে এই কথা কহেন? নিজের বিষয়ে, না অন্য কাহারও বিষয়ে?
35. তখন ফিলিপ মুখ খুলিয়া শাস্ত্রের সেই বচন হইতে আরম্ভ করিয়া তাঁহার কাছে যীশু-বিষয়ক সুসমাচার প্রচার করিলেন।
36. পরে পথে যাইতে যাইতে তাঁহারা কোন এক জলাশয়ের নিকটে উপস্থিত হইলেন; তখন নপুংসক কহিলেন, এই দেখুন, জল আছে; আমার বাপ্তাইজিত হইবার বাধা কি?
37.
38. (37) পরে তিনি রথ থামাইতে আজ্ঞা করিলেন, আর ফিলিপ ও নপুংসক উভয়ে জলমধ্যে নামিলেন এবং ফিলিপ তাঁহাকে বাপ্তাইজ করিলেন।
39. (38) আর যখন তাঁহারা জলের মধ্য হইতে উঠিলেন, তখন প্রভুর আত্মা ফিলিপকে হরণ করিয়া লইয়া গেলেন, এবং নপুংসক আর তাঁহাকে দেখিতে পাইলেন না, ফলে তিনি আনন্দ করিতে করিতে আপন পথে চলিয়া গেলেন।
40. (39) কিন্তু ফিলিপকে অস্দোদে দেখিতে পাওয়া গেল; আর তিনি নগরে নগরে ভ্রমণ করিয়া সুসমাচার প্রচার করিতে করিতে শেষে কৈসরিয়াতে উপস্থিত হইলেন।