1. ঐ সময়ে গিলিয়দীয় যিপ্তহ বলবান বীর ছিলেন; তিনি এক বেশ্যার পুত্র; গিলিয়দ তাঁহার জন্ম দিয়াছিলেন।
2. আর গিলিয়দের স্ত্রী তাঁহার জন্য কয়েকটী পুত্র প্রসব করিল; পরে সেই স্ত্রীজাত পুত্রেরা যখন বয়ঃপ্রাপ্ত হইল, তখন যিপ্তহকে তাড়াইয়া দিল, কহিল, আমাদের পিতৃকুলের মধ্যে তুমি অধিকার পাইবে না, কেননা তুমি অপর এক স্ত্রীর পুত্র।
3. তাহাতে যিপ্তহ আপন ভ্রাতাদের সম্মুখ হইতে পলাইয়া গিয়া টোব দেশে প্রবাস করিলেন; এবং কতকগুলিন অসারচিত্ত লোক যিপ্তহের কাছে একত্র হইল, তাহারা তাঁহার সঙ্গে বাহিরে যাইত।
4. কিছু কাল পরে অম্মোন-সন্তানগণ ইস্রায়েলের সহিত যুদ্ধ করিতে লাগিল।
5. তখন ইস্রায়েলের সহিত অম্মোন-সন্তানগণ যুদ্ধ করাতে গিলিয়দের প্রাচীনবর্গ যিপ্তহকে টোব দেশ হইতে আনিতে গেল।
6. তাহারা যিপ্তহকে কহিল, আইস, তুমি আমাদের অধ্যক্ষ হও, আমরা অম্মোন-সন্তানদের সহিত যুদ্ধ করিব।
7. যিপ্তহ গিলিয়দের প্রাচীনবর্গকে কহিলেন, তোমরাই কি আমাকে ঘৃণা করিয়া আমার পিতৃকুল হইতে আমাকে তাড়াইয়া দেও নাই? এখন বিপদ্গ্রস্ত হইয়াছ বলিয়া আমার কাছে কেন আসিলে?
8. তখন গিলিয়দের প্রাচীনবর্গ যিপ্তহকে কহিল, এখন আমরা তোমার নিকটে ফিরিয়া আসিয়াছি, যেন তুমি আমাদের সঙ্গে গিয়া অম্মোন-সন্তানদের সহিত যুদ্ধ করিতে পার, এবং আমাদের অর্থাৎ গিলিয়দ-নিবাসী সমস্ত লোকের প্রধান হও।
9. তখন যিপ্তহ গিলিয়দের প্রাচীনবর্গকে কহিলেন, তোমরা যদি অম্মোন-সন্তানগণের সহিত যুদ্ধ করণার্থে আমাকে পুনর্ব্বার স্বদেশে লইয়া যাও, আর সদাপ্রভু যদি আমার হস্তে তাহাদিগকে সমর্পণ করেন, তবে আমিই কি তোমাদের প্রধান হইব?
10. তখন গিলিয়দের প্রাচীনবর্গ যিপ্তহকে কহিল, সদাপ্রভু আমাদের মধ্যে সাক্ষী; আমরা অবশ্য তোমার কথা অনুসারে কার্য্য করিব।
11. পরে যিপ্তহ গিলিয়দের প্রাচীনবর্গের সহিত গেলেন; তাহাতে লোকেরা তাঁহাকে আপনাদের প্রধান ও শাসনকর্ত্তা করিল; পরে যিপ্তহ মিস্পাতে সদাপ্রভুর সাক্ষাতে আপনার সমস্ত কথা কহিলেন।
12. পরে যিপ্তহ অম্মোন-সন্তানদের রাজার নিকটে দূত পাঠাইয়া কহিলেন, আমার সহিত তোমার বিষয় কি যে, তুমি আমার সহিত যুদ্ধ করিতে আমার দেশে আসিলে?
13. তাহাতে অম্মোন-সন্তানগণের রাজা যিপ্তহের দূতগণকে কহিলেন, কারণ এই, ইস্রায়েল যখন মিসর হইতে আইসে, তখন, অর্ণোন অবধি যব্বোক ও যর্দ্দন পর্য্যন্ত আমার ভূমি হরণ করিয়াছিল; অতএব এখন নির্ব্বিরোধে তাহা ফিরাইয়া দেও।
14. তাহাতে যিপ্তহ অম্মোন-সন্তানগণের রাজার নিকটে পুনর্ব্বার দূত পাঠাইলেন;
15. তিনি তাঁহাকে কহিলেন, যিপ্তহ এই কথা কহেন, মোয়াবের ভূমি কিম্বা অম্মোন-সন্তানগণের ভূমি ইস্রায়েল হরণ করে নাই।
16. কিন্তু মিসর হইতে আসিবার সময়ে ইস্রায়েল সূফসাগর পর্য্যন্ত প্রান্তরের মধ্যে ভ্রমণ করিয়া যখন কাদেশে উপস্থিত হয়,
17. তখন ইদোমের রাজার নিকটে দূত পাঠাইয়া বলিয়াছিল, বিনয় করি, আপনি নিজ দেশের মধ্য দিয়া আমাকে যাইতে দিউন, কিন্তু ইদোমের রাজা সে কথায় কাণ দিলেন না; আর সেইরূপ মোয়াবের রাজার নিকটে বলিয়া পাঠাইলে তিনিও সম্মত হইলেন না; অতএব ইস্রায়েল কাদেশে রহিল।
18. পরে তাহারা প্রান্তরের মধ্য দিয়া গিয়া ইদোম দেশ ও মোয়াব দেশ প্রদক্ষিণপূর্ব্বক মোয়াব দেশের পূর্ব্বদিক্ দিয়া আসিয়া অর্ণোনের ওপারে শিবির স্থাপন করিল, মোয়াবের সীমার মধ্যে প্রবেশ করিল না, কেননা অর্ণোন মোয়াবের সীমা।
19. পরে ইস্রায়েল হিষ্বোনের রাজা, ইমোরীয়দের রাজা, সীহোনের নিকটে দূত পাঠাইল; ইস্রায়েল তাঁহাকে কহিল, বিনয় করি, আপনি নিজ দেশের মধ্য দিয়া আমাদিগকে নিজ স্থানে যাইতে দিউন।
20. কিন্তু সীহোন ইস্রায়েলকে বিশ্বাস করিয়া আপন সীমার মধ্য দিয়া যাইতে দিলেন না; সীহোন আপনার সমস্ত লোক একত্র করিয়া যহসে শিবির স্থাপন করিলেন; ইস্রায়েলের সহিত যুদ্ধ করিলেন।
21. আর ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভু সীহোনকে ও তাঁহার সমস্ত লোককে ইস্রায়েলের হস্তে সমর্পণ করিলেন, ও তাহারা তাহাদিগকে আঘাত করিল; এইরূপে ইস্রায়েল সেই দেশনিবাসী ইমোরীয়দের সমস্ত দেশ অধিকার করিল।
22. তাহারা অর্ণোন অবধি যব্বোক পর্য্যন্ত ও প্রান্তর অবধি যর্দ্দন পর্য্যন্ত ইমোরীয়দের সমস্ত অঞ্চল অধিকার করিল।
23. সুতরাং ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভু আপন প্রজা ইস্রায়েলের সম্মুখে ইমোরীয়দিগকে অধিকারচ্যুত করিলেন; এখন আপনি কি তাহাদের দেশ অধিকার করিবেন?
24. আপনার কমোশ দেব আপনাকে অধিকারার্থে যাহা দেন, আপনি কি তাহারই অধিকারী নহেন? আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু আমাদের সম্মুখে যাহাদিগকে অধিকারচ্যুত করিয়াছেন, সে সমস্তের অধিকারী আমরাই আছি।
25. বলুন দেখি, মোয়াবের রাজা সিপ্পোরের পুত্র বালাক হইতে আপনি কি শ্রেষ্ঠ? তিনি কি ইস্রায়েলের সহিত বিবাদ করিয়াছিলেন, না তাহাদের সহিত যুদ্ধ করিয়াছিলেন?
26. হিষ্বোনে ও তাহার উপনগরসমূহে, অরোয়েরে ও তাহার উপনগরসমূহে এবং অর্ণোন তটসমীপস্থ সমস্ত নগরে তিন শত বৎসরাবধি ইস্রায়েল বাস করিতেছে; এত দিনের মধ্যে আপনারা কেন সে সমস্ত ফিরাইয়া লন নাই?
27. আমি ত আপনাদের বিরুদ্ধে কোন দোষ করি নাই; কিন্তু আমার সহিত যুদ্ধ করাতে আপনি আমার প্রতি অন্যায় করিতেছেন; বিচারকর্ত্তা সদাপ্রভু অদ্য ইস্রায়েল-সন্তানগণের ও অম্মোন-সন্তানগণের মধ্যে বিচার করুন।
28. কিন্তু যিপ্তহের প্রেরিত এই সকল কথায় অম্মোন-সন্তানগণের রাজা কাণ দিলেন না।
29. পরে সদাপ্রভুর আত্মা যিপ্তহের উপরে আসিলেন, আর তিনি গিলিয়দ ও মনঃশি প্রদেশ দিয়া গিলিয়দের মিস্পীতে গমন করিলেন; এবং গিলিয়দের মিস্পী হইতে অম্মোন-সন্তানগণের নিকটে গেলেন।
30. আর যিপ্তহ সদাপ্রভুর উদ্দেশে মানত করিয়া কহিলেন, তুমি যদি অম্মোন-সন্তানগণকে নিশ্চয় আমার হস্তে সমর্পণ কর,
31. তবে অম্মোন-সন্তানগণের নিকট হইতে যখন আমি কুশলে ফিরিয়া আসিব, তখন যে কিছু আমার গৃহের কবাট হইতে নির্গত হইয়া আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করিতে আসিবে, তাহা নিশ্চয় সদাপ্রভুরই হইবে, আর আমি তাহা হোমবলিরূপে উৎসর্গ করিব।
32. পরে যিপ্তহ অম্মোন-সন্তানগণের সহিত যুদ্ধ করণার্থে তাহাদের নিকটে পার হইয়া গেলে সদাপ্রভু তাহাদিগকে তাঁহার হস্তে সমর্পণ করিলেন।
33. তাহাতে তিনি অরোয়ের অবধি মিন্নীতের নিকট পর্য্যন্ত বিংশতি নগরে এবং আবেল-করামীম পর্য্যন্ত অতি মহাসংহারে তাহাদিগকে সংহার করিলেন। এইরূপে অম্মোন-সন্তানগণ ইস্রায়েল-সন্তানগণের সাক্ষাতে নত হইল।
34. পরে যিপ্তহ মিস্পায় আপন বাটীতে আসিলেন, আর দেখ, তাঁহার সঙ্গে সাক্ষাৎ করিবার জন্য তাঁহার কন্যা তবল হস্তে করিয়া নৃত্য করিতে করিতে বাহিরে আসিতেছিল। সে তাঁহার একমাত্র সন্ততি, সে ছাড়া তাঁহার পুত্র কি কন্যা ছিল না।
35. তখন তাহাকে দেখিবামাত্র তিনি বস্ত্র ছিঁড়িয়া কহিলেন, হায় হায়, আমার বৎসে, তুমি আমাকে বড় ব্যাকুল করিলে; আমার কষ্টদায়কদের মধ্যে তুমি এক জন হইলে; কিন্তু আমি সদাপ্রভুর কাছে মুখ খুলিয়াছি, আর অন্যথা করিতে পারিব না।
36. সে তাঁহাকে কহিল, হে আমার পিতঃ, তুমি সদাপ্রভুর কাছে মুখ খুলিয়াছ, তোমার মুখ দিয়া যে কথা বাহির হইয়াছে, তদনুসারে আমার প্রতি কর, কেননা সদাপ্রভু তোমার জন্য তোমার শত্রুগণের, অম্মোন-সন্তানগণের, কাছে প্রতিশোধ লইয়াছেন।
37. পরে সে আপন পিতাকে কহিল, আমার জন্য একটী কাজ করা হউক; দুই মাসের জন্য আমাকে বিদায় দেও; আমি যাই, পর্ব্বতে গমন করি, এবং আমার কুমারীত্বের বিষয়ে সখীগণকে লইয়া বিলাপ করি।
38. তিনি কহিলেন, যাও; আর তাহাকে দুই মাসের জন্য পাঠাইয়া দিলেন; তখন সে আপন সখীগণের সহিত গিয়া পর্ব্বতের উপরে আপন কুমারীত্ব বিষয়ে বিলাপ করিল।
39. পরে দুই মাস গত হইলে সে পিতার নিকটে ফিরিয়া আসিল; পিতা যে মানত করিয়াছিলেন, তদনুসারে তাহার প্রতি করিলেন; সে পুরুষের পরিচয় পায় নাই। আর ইস্রায়েলের মধ্যে এই রীতি প্রচলিত হইল যে,
40. বৎসর বৎসর গিলিয়দীয় যিপ্তহের কন্যার যশঃকীর্ত্তন করিতে ইস্রায়েলীয় কন্যাগণ বৎসরের মধ্যে চারি দিবস গমন করে।