পবিত্র বাইবেল

গডস গ্রেইস গিফট
মথি
1. [1] পরে তিনি নৌকায় উঠিয়া পার হইলেন, এবং নিজ নগরে আসিলেন। আর দেখ, কয়েকটী লোক তাঁহার নিকটে এক জন পক্ষাঘাতীকে আনিল, সে খাটের উপরে শয়ান ছিল।
2. যীশু তাহাদের বিশ্বাস দেখিয়া সেই পক্ষাঘাতীকে কহিলেন, বৎস, সাহস কর, তোমার পাপ ক্ষমা হইল।
3. আর দেখ, কয়েক জন অধ্যাপক মনে মনে কহিল, এ ব্যক্তি ঈশ্বর-নিন্দা করিতেছে।
4. তখন যীশু তাহাদের চিন্তা বুঝিয়া কহিলেন, তোমরা কেন মনে মনে কুচিন্তা করিতেছ?
5. কারণ কোন্‌টা সহজ, ‘তোমার পাপ ক্ষমা হইল’ বলা, না ‘তুমি উঠিয়া বেড়াও’ বলা?
6. কিন্তু পৃথিবীতে পাপ ক্ষমা করিতে মনুষ্যপুত্রের ক্ষমতা আছে, ইহা যেন তোমরা জানিতে পার, এই জন্য — তিনি সেই পক্ষাঘাতীকে বলিলেন — উঠ, তোমার শয্যা তুলিয়া লও, এবং তোমার ঘরে চলিয়া যাও।
7. তখন সে উঠিয়া আপন গৃহে চলিয়া গেল।
8. তাহা দেখিয়া লোকসমূহ ভীত হইল, আর ঈশ্বর মনুষ্যকে এমন ক্ষমতা দিয়াছেন বলিয়া তাহার গৌরব করিল।
9. আর সে স্থান হইতে যাইতে যাইতে যীশু দেখিলেন, মথি নামক এক ব্যক্তি করগ্রহণ-স্থানে বসিয়া আছে; তিনি তাহাকে কহিলেন, আমার পশ্চাৎ আইস। তাহাতে সে উঠিয়া তাঁহার পশ্চাৎ গমন করিল।
10. পরে তিনি গৃহমধ্যে ভোজন করিতে বসিয়াছেন, আর দেখ, অনেক করগ্রাহী ও পাপী আসিয়া যীশুর এবং তাঁহার শিষ্যদের সহিত বসিল।
11. তাহা দেখিয়া ফরীশীরা তাঁহার শিষ্যদিগকে কহিল, তোমাদের গুরু কি জন্য করগ্রাহী ও পাপীদের সহিত ভোজন করেন?
12. তাহা শুনিয়া তিনি কহিলেন, সুস্থ লোকদের চিকিৎসকে প্রয়োজন নাই, বরং পীড়িতদেরই প্রয়োজন আছে।
13. কিন্তু তোমরা গিয়া শিক্ষা কর, এই বচনের মর্ম্ম কি, “আমি দয়াই চাই, বলিদান নয়”; কেননা আমি ধার্ম্মিকদিগকে নয়, কিন্তু পাপীদিগকে ডাকিতে আসিয়াছি।
14. তখন যোহনের শিষ্যগণ তাঁহার নিকটে আসিয়া কহিল, ফরীশীরা ও আমরা অনেক বার উপবাস করি, কিন্তু আপনার শিষ্যগণ উপবাস করে না, ইহার কারণ কি?
15. যীশু তাঁহাদিগকে কহিলেন, বর সঙ্গে থাকিতে কি বাসরঘরের লোকে বিলাপ করিতে পারে? কিন্তু এমন সময় আসিবে, যখন তাহাদের নিকট হইতে বর নীত হইবেন; তখন তাহারা উপবাস করিবে।
16. পুরাতন বস্ত্রে কেহ কোরা কাপড়ের তালী দেয় না, কেননা তাহার তালীতে বস্ত্র ছিঁড়িয়া যায়, এবং আরও মন্দ ছিদ্র হয়।
17. আর লোকে পুরাতন কুপায় নূতন দ্রাক্ষারস রাখে না; রাখিলে কুপাগুলি ফাটিয়া যায়, তাহাতে দ্রাক্ষারস পড়িয়া যায়, কুপাগুলিও নষ্ট হয়; কিন্তু লোকে নূতন কুপাতেই টাট্‌কা দ্রাক্ষারস রাখে, তাহাতে উভয়েরই রক্ষা হয়।
18. তিনি তাহাদিগকে এই সকল কথা বলিতেছেন, আর দেখ, এক জন অধ্যক্ষ আসিয়া তাঁহাকে প্রণাম করিয়া কহিলেন, আমার কন্যাটী এতক্ষণ মরিয়া গিয়াছে; কিন্তু আপনি আসিয়া তাহার উপরে হস্তার্পণ করুন, তাহাতে সে বাঁচিবে।
19. তখন যীশু উঠিয়া তাঁহার পশ্চাৎ গমন করিলেন, তাঁহার শিষ্যগণও চলিলেন।
20. আর দেখ, বারো বৎসর অবধি প্রদর রোগগ্রস্ত একটী স্ত্রীলোক তাঁহার পশ্চাৎ দিকে আসিয়া তাঁহার বস্ত্রের থোপ স্পর্শ করিল;
21. কারণ সে মনে মনে বলিতেছিল, উহাঁর বস্ত্রমাত্র স্পর্শ করিতে পারিলেই আমি সুস্থ হইব।
22. তখন যীশু মুখ ফিরাইয়া তাহাকে দেখিয়া কহিলেন, বৎসে, সাহস কর, তোমার বিশ্বাস তোমাকে সুস্থ করিল। সেই দণ্ড অবধি স্ত্রীলোকটী সুস্থ হইল।
23. পরে যীশু সেই অধ্যক্ষের বাটীতে আসিয়া যখন দেখিলেন, বংশীবাদকগণ রহিয়াছে, ও লোকেরা কোলাহল করিতেছে,
24. তখন বলিলেন, সরিয়া যাও, কন্যাটী ত মরে নাই, ঘুমাইয়া রহিয়াছে। তখন তাহারা তাঁহাকে উপহাস করিল।
25. কিন্তু লোকদিগকে বাহির করিয়া দেওয়া হইলে তিনি ভিতরে গিয়া কন্যাটীর হাত ধরিলেন, তাহাতে সে উঠিল।
26. আর এই জনরব সেই দেশময় ব্যাপিল।
27. পরে যীশু সেখান হইতে প্রস্থান করিলে, দুই জন অন্ধ তাঁহার পশ্চাৎ পশ্চাৎ চলিল; তাহারা চেঁচাইয়া বলিতে লাগিল, হে দায়ূদ-সন্তান, আমাদের প্রতি দয়া করুন।
28. তিনি গৃহমধ্যে প্রবেশ করিলে পর সেই অন্ধেরা তাঁহার নিকটে আসিল; তখন যীশু তাহাদিগকে কহিলেন, তোমরা কি বিশ্বাস কর যে, আমি ইহা করিতে পারি? তাহারা তাঁহাকে বলিল, হাঁ, প্রভু।
29. তখন তিনি তাহাদের চক্ষু স্পর্শ করিলেন, আর কহিলেন, তোমাদের বিশ্বাস অনুসারে তোমাদের প্রতি হউক।
30. তখন তাহাদের চক্ষু খুলিয়া গেল। আর যীশু তাহাদিগকে দৃঢ়রূপে নিষেধ করিয়া দিলেন, কহিলেন, দেখিও, যেন কেহ ইহা জানিতে না পায়।
31. কিন্তু তাহারা বাহিরে গিয়া সেই দেশময় তাঁহার কীর্ত্তি প্রকাশ করিল।
32. তাহারা বাহিরে যাইতেছে, আর দেখ, লোকেরা এক ভূতগ্রস্ত গোঁগাকে তাঁহার নিকটে আনিল।
33. ভূত ছাড়ান হইলে সেই গোঁগা কথা কহিতে লাগিল; তখন লোক সকল আশ্চর্য্য জ্ঞান করিয়া কহিল, ইস্রায়েলের মধ্যে এমন কখনও দেখা যায় নাই।
34. কিন্তু ফরীশীরা বলিতে লাগিল, ভূতগণের অধিপতি দ্বারা সে ভূত ছাড়ায়।
35. আর যীশু সমস্ত নগরে ও গ্রামে ভ্রমণ করিতে লাগিলেন; তিনি লোকদের সমাজ-গৃহে উপদেশ দিলেন ও রাজ্যের সুসমাচার প্রচার করিলেন, এবং সর্ব্বপ্রকার রোগ ও সর্ব্বপ্রকার ব্যাধি আরোগ্য করিলেন।
36. কিন্তু বিস্তর লোক দেখিয়া তিনি তাহাদের প্রতি করুণাবিষ্ট হইলেন, কেননা তাহারা ব্যাকুল ও ছিন্নভিন্ন ছিল, যেন পালকবিহীন মেষপাল।
37. তখন তিনি আপন শিষ্যদিগকে কহিলেন, শস্য প্রচুর বটে, কিন্তু কার্য্যকারী লোক অল্প;
38. অতএব শস্যক্ষেত্রের স্বামীর নিকটে প্রার্থনা কর, যেন তিনি নিজ শস্যক্ষেত্রে কার্য্যকারী লোক পাঠাইয়া দেন।
Total 28 অধ্যায়গুলির, Selected অধ্যায় 9 / 28
1 [1] পরে তিনি নৌকায় উঠিয়া পার হইলেন, এবং নিজ নগরে আসিলেন। আর দেখ, কয়েকটী লোক তাঁহার নিকটে এক জন পক্ষাঘাতীকে আনিল, সে খাটের উপরে শয়ান ছিল। 2 যীশু তাহাদের বিশ্বাস দেখিয়া সেই পক্ষাঘাতীকে কহিলেন, বৎস, সাহস কর, তোমার পাপ ক্ষমা হইল। 3 আর দেখ, কয়েক জন অধ্যাপক মনে মনে কহিল, এ ব্যক্তি ঈশ্বর-নিন্দা করিতেছে। 4 তখন যীশু তাহাদের চিন্তা বুঝিয়া কহিলেন, তোমরা কেন মনে মনে কুচিন্তা করিতেছ? 5 কারণ কোন্‌টা সহজ, ‘তোমার পাপ ক্ষমা হইল’ বলা, না ‘তুমি উঠিয়া বেড়াও’ বলা? 6 কিন্তু পৃথিবীতে পাপ ক্ষমা করিতে মনুষ্যপুত্রের ক্ষমতা আছে, ইহা যেন তোমরা জানিতে পার, এই জন্য — তিনি সেই পক্ষাঘাতীকে বলিলেন — উঠ, তোমার শয্যা তুলিয়া লও, এবং তোমার ঘরে চলিয়া যাও। 7 তখন সে উঠিয়া আপন গৃহে চলিয়া গেল। 8 তাহা দেখিয়া লোকসমূহ ভীত হইল, আর ঈশ্বর মনুষ্যকে এমন ক্ষমতা দিয়াছেন বলিয়া তাহার গৌরব করিল। 9 আর সে স্থান হইতে যাইতে যাইতে যীশু দেখিলেন, মথি নামক এক ব্যক্তি করগ্রহণ-স্থানে বসিয়া আছে; তিনি তাহাকে কহিলেন, আমার পশ্চাৎ আইস। তাহাতে সে উঠিয়া তাঁহার পশ্চাৎ গমন করিল। 10 পরে তিনি গৃহমধ্যে ভোজন করিতে বসিয়াছেন, আর দেখ, অনেক করগ্রাহী ও পাপী আসিয়া যীশুর এবং তাঁহার শিষ্যদের সহিত বসিল। 11 তাহা দেখিয়া ফরীশীরা তাঁহার শিষ্যদিগকে কহিল, তোমাদের গুরু কি জন্য করগ্রাহী ও পাপীদের সহিত ভোজন করেন? 12 তাহা শুনিয়া তিনি কহিলেন, সুস্থ লোকদের চিকিৎসকে প্রয়োজন নাই, বরং পীড়িতদেরই প্রয়োজন আছে। 13 কিন্তু তোমরা গিয়া শিক্ষা কর, এই বচনের মর্ম্ম কি, “আমি দয়াই চাই, বলিদান নয়”; কেননা আমি ধার্ম্মিকদিগকে নয়, কিন্তু পাপীদিগকে ডাকিতে আসিয়াছি। 14 তখন যোহনের শিষ্যগণ তাঁহার নিকটে আসিয়া কহিল, ফরীশীরা ও আমরা অনেক বার উপবাস করি, কিন্তু আপনার শিষ্যগণ উপবাস করে না, ইহার কারণ কি? 15 যীশু তাঁহাদিগকে কহিলেন, বর সঙ্গে থাকিতে কি বাসরঘরের লোকে বিলাপ করিতে পারে? কিন্তু এমন সময় আসিবে, যখন তাহাদের নিকট হইতে বর নীত হইবেন; তখন তাহারা উপবাস করিবে। 16 পুরাতন বস্ত্রে কেহ কোরা কাপড়ের তালী দেয় না, কেননা তাহার তালীতে বস্ত্র ছিঁড়িয়া যায়, এবং আরও মন্দ ছিদ্র হয়। 17 আর লোকে পুরাতন কুপায় নূতন দ্রাক্ষারস রাখে না; রাখিলে কুপাগুলি ফাটিয়া যায়, তাহাতে দ্রাক্ষারস পড়িয়া যায়, কুপাগুলিও নষ্ট হয়; কিন্তু লোকে নূতন কুপাতেই টাট্‌কা দ্রাক্ষারস রাখে, তাহাতে উভয়েরই রক্ষা হয়। 18 তিনি তাহাদিগকে এই সকল কথা বলিতেছেন, আর দেখ, এক জন অধ্যক্ষ আসিয়া তাঁহাকে প্রণাম করিয়া কহিলেন, আমার কন্যাটী এতক্ষণ মরিয়া গিয়াছে; কিন্তু আপনি আসিয়া তাহার উপরে হস্তার্পণ করুন, তাহাতে সে বাঁচিবে। 19 তখন যীশু উঠিয়া তাঁহার পশ্চাৎ গমন করিলেন, তাঁহার শিষ্যগণও চলিলেন। 20 আর দেখ, বারো বৎসর অবধি প্রদর রোগগ্রস্ত একটী স্ত্রীলোক তাঁহার পশ্চাৎ দিকে আসিয়া তাঁহার বস্ত্রের থোপ স্পর্শ করিল; 21 কারণ সে মনে মনে বলিতেছিল, উহাঁর বস্ত্রমাত্র স্পর্শ করিতে পারিলেই আমি সুস্থ হইব। 22 তখন যীশু মুখ ফিরাইয়া তাহাকে দেখিয়া কহিলেন, বৎসে, সাহস কর, তোমার বিশ্বাস তোমাকে সুস্থ করিল। সেই দণ্ড অবধি স্ত্রীলোকটী সুস্থ হইল। 23 পরে যীশু সেই অধ্যক্ষের বাটীতে আসিয়া যখন দেখিলেন, বংশীবাদকগণ রহিয়াছে, ও লোকেরা কোলাহল করিতেছে, 24 তখন বলিলেন, সরিয়া যাও, কন্যাটী ত মরে নাই, ঘুমাইয়া রহিয়াছে। তখন তাহারা তাঁহাকে উপহাস করিল। 25 কিন্তু লোকদিগকে বাহির করিয়া দেওয়া হইলে তিনি ভিতরে গিয়া কন্যাটীর হাত ধরিলেন, তাহাতে সে উঠিল। 26 আর এই জনরব সেই দেশময় ব্যাপিল। 27 পরে যীশু সেখান হইতে প্রস্থান করিলে, দুই জন অন্ধ তাঁহার পশ্চাৎ পশ্চাৎ চলিল; তাহারা চেঁচাইয়া বলিতে লাগিল, হে দায়ূদ-সন্তান, আমাদের প্রতি দয়া করুন। 28 তিনি গৃহমধ্যে প্রবেশ করিলে পর সেই অন্ধেরা তাঁহার নিকটে আসিল; তখন যীশু তাহাদিগকে কহিলেন, তোমরা কি বিশ্বাস কর যে, আমি ইহা করিতে পারি? তাহারা তাঁহাকে বলিল, হাঁ, প্রভু। 29 তখন তিনি তাহাদের চক্ষু স্পর্শ করিলেন, আর কহিলেন, তোমাদের বিশ্বাস অনুসারে তোমাদের প্রতি হউক। 30 তখন তাহাদের চক্ষু খুলিয়া গেল। আর যীশু তাহাদিগকে দৃঢ়রূপে নিষেধ করিয়া দিলেন, কহিলেন, দেখিও, যেন কেহ ইহা জানিতে না পায়। 31 কিন্তু তাহারা বাহিরে গিয়া সেই দেশময় তাঁহার কীর্ত্তি প্রকাশ করিল। 32 তাহারা বাহিরে যাইতেছে, আর দেখ, লোকেরা এক ভূতগ্রস্ত গোঁগাকে তাঁহার নিকটে আনিল। 33 ভূত ছাড়ান হইলে সেই গোঁগা কথা কহিতে লাগিল; তখন লোক সকল আশ্চর্য্য জ্ঞান করিয়া কহিল, ইস্রায়েলের মধ্যে এমন কখনও দেখা যায় নাই। 34 কিন্তু ফরীশীরা বলিতে লাগিল, ভূতগণের অধিপতি দ্বারা সে ভূত ছাড়ায়। 35 আর যীশু সমস্ত নগরে ও গ্রামে ভ্রমণ করিতে লাগিলেন; তিনি লোকদের সমাজ-গৃহে উপদেশ দিলেন ও রাজ্যের সুসমাচার প্রচার করিলেন, এবং সর্ব্বপ্রকার রোগ ও সর্ব্বপ্রকার ব্যাধি আরোগ্য করিলেন। 36 কিন্তু বিস্তর লোক দেখিয়া তিনি তাহাদের প্রতি করুণাবিষ্ট হইলেন, কেননা তাহারা ব্যাকুল ও ছিন্নভিন্ন ছিল, যেন পালকবিহীন মেষপাল। 37 তখন তিনি আপন শিষ্যদিগকে কহিলেন, শস্য প্রচুর বটে, কিন্তু কার্য্যকারী লোক অল্প; 38 অতএব শস্যক্ষেত্রের স্বামীর নিকটে প্রার্থনা কর, যেন তিনি নিজ শস্যক্ষেত্রে কার্য্যকারী লোক পাঠাইয়া দেন।
Total 28 অধ্যায়গুলির, Selected অধ্যায় 9 / 28
×

Alert

×

Bengali Letters Keypad References