পবিত্র বাইবেল

গডস গ্রেইস গিফট
সামুয়েল ১
1. পর্ব্বতময় ইফ্রয়িম প্রদেশস্থ রামাথয়িম-সোফীম-নিবাসী ইল্‌কানা নামে এক জন ইফ্রয়িমীয় ছিলেন; তিনি সুফের বৃদ্ধ প্রপৌত্র, তোহের প্রপৌত্র, ইলীহূর পৌত্র, যিরোহমের পুত্র।
2. তাঁহার দুই স্ত্রী; এক জনের নাম হান্না, আর এক জনের নাম পনিন্না; পনিন্নার সন্তান হইয়াছিল, কিন্তু হান্নার সন্তান হয় নাই।
3. এই ব্যক্তি প্রতিবৎসর আপন নগর হইতে শীলোতে গিয়া বাহিনীগণের সদাপ্রভুর উদ্দেশে প্রণিপাত ও বলিদান করিতেন। সেই স্থানে এলির দুই পুত্র হফ্‌নি ও পীনহস সদাপ্রভুর যাজক ছিল।
4. আর যজ্ঞের দিনে ইল্‌কানা আপন স্ত্রী পনিন্নাকে ও তাঁহার সমস্ত পুত্রকন্যাকে অংশ দিতেন;
5. কিন্তু হান্নাকে দ্বিগুণ অংশ দিতেন; কেননা তিনি হান্নাকে ভালবাসিতেন, কিন্তু সদাপ্রভু হান্নার গর্ভ রুদ্ধ করিয়াছিলেন।
6. সদাপ্রভু তাঁহার গর্ভ রুদ্ধ করাতে সপত্নী তাঁহার মনস্তাপ জন্মাইবার চেষ্টায় তাঁহাকে বিরক্ত করিতেন।
7. বৎসর বৎসর যখন হান্না সদাপ্রভুর গৃহে যাইতেন, তখন তাঁহার স্বামী ঐরূপ করিতেন, এবং পনিন্নাও ঐ প্রকারে তাঁহাকে বিরক্ত করিতেন; তাই তিনি ভোজন না করিয়া ক্রন্দন করিতেন।
8. তাহাতে তাঁহার স্বামী ইল্‌কানা তাঁহাকে কহিতেন, হান্না, কেন কাঁদিতেছ? কেন ভোজন করিতেছ না? তোমার মন শোকাকুল কেন? তোমার কাছে দশ পুত্র হইতেও কি আমি উত্তম নহি?
9. একদা শীলোতে ভোজন পান সাঙ্গ হইলে হান্না উঠিলেন। তখন সদাপ্রভুর মন্দির-দ্বারের কাছে এলি যাজক আসনের উপরে বসিয়া ছিলেন।
10. আর হান্না তিক্তপ্রাণা হইয়া সদাপ্রভুর উদ্দেশে প্রার্থনা করিতে ও অনেক রোদন করিতে লাগিলেন।
11. তিনি মানত করিয়া কহিলেন, হে বাহিনীগণের সদাপ্রভু, যদি তুমি তোমার এই দাসীর দুঃখের প্রতি দৃষ্টিপাত কর, আমাকে স্মরণ কর, ও আপন দাসীকে ভুলিয়া না গিয়া আপন দাসীকে পুত্রসন্তান দেও, তবে আমি চিরদিনের জন্য তাহাকে সদাপ্রভুর উদ্দেশে নিবেদন করিব; তাহার মস্তকে ক্ষুর উঠিবে না।
12. যতক্ষণ হান্না সদাপ্রভুর সাক্ষাতে দীর্ঘ প্রার্থনা করিলেন, ততক্ষণ এলি তাঁহার মুখের দিকে চাহিয়া রহিলেন।
13. কেননা হান্না মনে মনে কথা কহিতেছিলেন, কেবল তাঁহার ওষ্ঠাধর নড়িতেছিল, কিন্তু তাঁহার স্বর শুনা গেল না; এই জন্য এলি তাঁহাকে মত্তা জ্ঞান করিলেন।
14. তাই এলি তাঁহাকে কহিলেন, তুমি কতক্ষণ মত্ত হইয়া থাকিবে? তোমার দ্রাক্ষারস তোমা হইতে দূর কর।
15. হান্না উত্তর করিলেন, হে আমার প্রভু, তাহা নয়, আমি দুঃখিনী স্ত্রী, দ্রাক্ষারস কিম্বা সুরা পান করি নাই, কিন্তু সদাপ্রভুর সাক্ষাতে আমার মনের কথা ভাঙ্গিয়া বলিয়াছি।
16. আপনার এই দাসীকে আপনি পাষণ্ড মনে করিবেন না; বস্তুতঃ আমার চিন্তার ও মনস্তাপের বাহুল্য প্রযুক্ত আমি এই পর্য্যন্ত কথা কহিতেছিলাম।
17. তখন এলি উত্তর করিলেন, তুমি শান্তিতে যাও; ইস্রায়েলের ঈশ্বরের কাছে যাহা যাচ্ঞা করিলে, তাহা তিনি তোমাকে দিউন।
18. হান্না কহিলেন, আপনার দৃষ্টিতে আপনার এই দাসী অনুগ্রহ প্রাপ্ত হউক। পরে সেই স্ত্রী আপন পথে চলিয়া গেলেন, এবং ভোজন করিলেন; তাঁহার মুখ আর বিষণ্ণ রহিল না।
19. পরে তাঁহারা প্রত্যূষে উঠিয়া সদাপ্রভুর সম্মুখে প্রণিপাত করিলেন, এবং ফিরিয়া রামায় আপন বাটীতে আসিলেন। আর ইল্‌কানা আপন স্ত্রী হান্নার পরিচয় লইলে সদাপ্রভু তাঁহাকে স্মরণ করিলেন।
20. তাহাতে নিরূপিত সময়ের মধ্যে হান্না গর্ভধারণ করিয়া পুত্র প্রসব করিলেন; আর ‘আমি সদাপ্রভুর কাছে ইহাকে যাচ্ঞা করিয়া লইয়াছি’ এই বলিয়া তাহার নাম শমূয়েল রাখিলেন।
21. পরে তাঁহার স্বামী ইল্‌কানা ও তাঁহার সমস্ত পরিবার সদাপ্রভুর উদ্দেশে বার্ষিক বলিদান ও মানত নিবেদন করিতে গেলেন; কিন্তু হান্না গেলেন না;
22. কারণ তিনি স্বামীকে কহিলেন, বালকটী স্তন্য ত্যাগ করিলেই আমি তাহাকে লইয়া যাইব, তাহাতে সে সদাপ্রভুর সাক্ষাতে নীত হইয়া নিত্য সে স্থানে থাকিবে।
23. তাঁহার স্বামী ইল্‌কানা তাঁহাকে কহিলেন, তোমার দৃষ্টিতে যাহা ভাল বোধ হয়, তাহাই কর; তাহার স্তন্য ত্যাগ পর্য্যন্ত বিলম্ব কর; সদাপ্রভু কেবল আপন বাক্য স্থির করুন। অতএব সে স্ত্রী গৃহে রহিলেন, এবং বালকটী যাবৎ স্তন্য ত্যাগ না করিল, তাবৎ তাহাকে স্তন্যপান করাইলেন।
24. পরে তাহার স্তন্য ত্যাগ হইলে তিনি তিনটী বৃষ, এক ঐফা সূজী ও এক কূপা দ্রাক্ষারসের সহিত তাহাকে শীলোতে সদাপ্রভুর গৃহে লইয়া গেলেন; তখন বালকটী অল্পবয়স্ক ছিল।
25. পরে তাঁহারা বৃষ বলিদান করিলেন ও বালকটীকে এলির কাছে আনিলেন।
26. আর হান্না কহিলেন, হে আমার প্রভু, আপনার প্রাণের দিব্য, হে আমার প্রভু, যে স্ত্রী সদাপ্রভুর উদ্দেশে প্রার্থনা করিতে করিতে এই স্থানে আপনার সম্মুখে দাঁড়াইয়াছিল, সে আমি।
27. আমি এই বালকের জন্য প্রার্থনা করিয়াছিলাম; আর সদাপ্রভুর কাছে যাহা চাহিয়াছিলাম, তাহা তিনি আমাকে দিয়াছেন।
28. এই জন্য আমিও ইহাকে সদাপ্রভুকে দিলাম; এ চিরজীবনের জন্য সদাপ্রভুকে দত্ত। পরে তাঁহারা সেই স্থানে সদাপ্রভুকে প্রণিপাত করিলেন।
Total 31 অধ্যায়গুলির, Selected অধ্যায় 1 / 31
1 পর্ব্বতময় ইফ্রয়িম প্রদেশস্থ রামাথয়িম-সোফীম-নিবাসী ইল্‌কানা নামে এক জন ইফ্রয়িমীয় ছিলেন; তিনি সুফের বৃদ্ধ প্রপৌত্র, তোহের প্রপৌত্র, ইলীহূর পৌত্র, যিরোহমের পুত্র। 2 তাঁহার দুই স্ত্রী; এক জনের নাম হান্না, আর এক জনের নাম পনিন্না; পনিন্নার সন্তান হইয়াছিল, কিন্তু হান্নার সন্তান হয় নাই। 3 এই ব্যক্তি প্রতিবৎসর আপন নগর হইতে শীলোতে গিয়া বাহিনীগণের সদাপ্রভুর উদ্দেশে প্রণিপাত ও বলিদান করিতেন। সেই স্থানে এলির দুই পুত্র হফ্‌নি ও পীনহস সদাপ্রভুর যাজক ছিল। 4 আর যজ্ঞের দিনে ইল্‌কানা আপন স্ত্রী পনিন্নাকে ও তাঁহার সমস্ত পুত্রকন্যাকে অংশ দিতেন; 5 কিন্তু হান্নাকে দ্বিগুণ অংশ দিতেন; কেননা তিনি হান্নাকে ভালবাসিতেন, কিন্তু সদাপ্রভু হান্নার গর্ভ রুদ্ধ করিয়াছিলেন। 6 সদাপ্রভু তাঁহার গর্ভ রুদ্ধ করাতে সপত্নী তাঁহার মনস্তাপ জন্মাইবার চেষ্টায় তাঁহাকে বিরক্ত করিতেন। 7 বৎসর বৎসর যখন হান্না সদাপ্রভুর গৃহে যাইতেন, তখন তাঁহার স্বামী ঐরূপ করিতেন, এবং পনিন্নাও ঐ প্রকারে তাঁহাকে বিরক্ত করিতেন; তাই তিনি ভোজন না করিয়া ক্রন্দন করিতেন। 8 তাহাতে তাঁহার স্বামী ইল্‌কানা তাঁহাকে কহিতেন, হান্না, কেন কাঁদিতেছ? কেন ভোজন করিতেছ না? তোমার মন শোকাকুল কেন? তোমার কাছে দশ পুত্র হইতেও কি আমি উত্তম নহি? 9 একদা শীলোতে ভোজন পান সাঙ্গ হইলে হান্না উঠিলেন। তখন সদাপ্রভুর মন্দির-দ্বারের কাছে এলি যাজক আসনের উপরে বসিয়া ছিলেন। 10 আর হান্না তিক্তপ্রাণা হইয়া সদাপ্রভুর উদ্দেশে প্রার্থনা করিতে ও অনেক রোদন করিতে লাগিলেন। 11 তিনি মানত করিয়া কহিলেন, হে বাহিনীগণের সদাপ্রভু, যদি তুমি তোমার এই দাসীর দুঃখের প্রতি দৃষ্টিপাত কর, আমাকে স্মরণ কর, ও আপন দাসীকে ভুলিয়া না গিয়া আপন দাসীকে পুত্রসন্তান দেও, তবে আমি চিরদিনের জন্য তাহাকে সদাপ্রভুর উদ্দেশে নিবেদন করিব; তাহার মস্তকে ক্ষুর উঠিবে না। 12 যতক্ষণ হান্না সদাপ্রভুর সাক্ষাতে দীর্ঘ প্রার্থনা করিলেন, ততক্ষণ এলি তাঁহার মুখের দিকে চাহিয়া রহিলেন। 13 কেননা হান্না মনে মনে কথা কহিতেছিলেন, কেবল তাঁহার ওষ্ঠাধর নড়িতেছিল, কিন্তু তাঁহার স্বর শুনা গেল না; এই জন্য এলি তাঁহাকে মত্তা জ্ঞান করিলেন। 14 তাই এলি তাঁহাকে কহিলেন, তুমি কতক্ষণ মত্ত হইয়া থাকিবে? তোমার দ্রাক্ষারস তোমা হইতে দূর কর। 15 হান্না উত্তর করিলেন, হে আমার প্রভু, তাহা নয়, আমি দুঃখিনী স্ত্রী, দ্রাক্ষারস কিম্বা সুরা পান করি নাই, কিন্তু সদাপ্রভুর সাক্ষাতে আমার মনের কথা ভাঙ্গিয়া বলিয়াছি। 16 আপনার এই দাসীকে আপনি পাষণ্ড মনে করিবেন না; বস্তুতঃ আমার চিন্তার ও মনস্তাপের বাহুল্য প্রযুক্ত আমি এই পর্য্যন্ত কথা কহিতেছিলাম। 17 তখন এলি উত্তর করিলেন, তুমি শান্তিতে যাও; ইস্রায়েলের ঈশ্বরের কাছে যাহা যাচ্ঞা করিলে, তাহা তিনি তোমাকে দিউন। 18 হান্না কহিলেন, আপনার দৃষ্টিতে আপনার এই দাসী অনুগ্রহ প্রাপ্ত হউক। পরে সেই স্ত্রী আপন পথে চলিয়া গেলেন, এবং ভোজন করিলেন; তাঁহার মুখ আর বিষণ্ণ রহিল না। 19 পরে তাঁহারা প্রত্যূষে উঠিয়া সদাপ্রভুর সম্মুখে প্রণিপাত করিলেন, এবং ফিরিয়া রামায় আপন বাটীতে আসিলেন। আর ইল্‌কানা আপন স্ত্রী হান্নার পরিচয় লইলে সদাপ্রভু তাঁহাকে স্মরণ করিলেন। 20 তাহাতে নিরূপিত সময়ের মধ্যে হান্না গর্ভধারণ করিয়া পুত্র প্রসব করিলেন; আর ‘আমি সদাপ্রভুর কাছে ইহাকে যাচ্ঞা করিয়া লইয়াছি’ এই বলিয়া তাহার নাম শমূয়েল রাখিলেন। 21 পরে তাঁহার স্বামী ইল্‌কানা ও তাঁহার সমস্ত পরিবার সদাপ্রভুর উদ্দেশে বার্ষিক বলিদান ও মানত নিবেদন করিতে গেলেন; কিন্তু হান্না গেলেন না; 22 কারণ তিনি স্বামীকে কহিলেন, বালকটী স্তন্য ত্যাগ করিলেই আমি তাহাকে লইয়া যাইব, তাহাতে সে সদাপ্রভুর সাক্ষাতে নীত হইয়া নিত্য সে স্থানে থাকিবে। 23 তাঁহার স্বামী ইল্‌কানা তাঁহাকে কহিলেন, তোমার দৃষ্টিতে যাহা ভাল বোধ হয়, তাহাই কর; তাহার স্তন্য ত্যাগ পর্য্যন্ত বিলম্ব কর; সদাপ্রভু কেবল আপন বাক্য স্থির করুন। অতএব সে স্ত্রী গৃহে রহিলেন, এবং বালকটী যাবৎ স্তন্য ত্যাগ না করিল, তাবৎ তাহাকে স্তন্যপান করাইলেন। 24 পরে তাহার স্তন্য ত্যাগ হইলে তিনি তিনটী বৃষ, এক ঐফা সূজী ও এক কূপা দ্রাক্ষারসের সহিত তাহাকে শীলোতে সদাপ্রভুর গৃহে লইয়া গেলেন; তখন বালকটী অল্পবয়স্ক ছিল। 25 পরে তাঁহারা বৃষ বলিদান করিলেন ও বালকটীকে এলির কাছে আনিলেন। 26 আর হান্না কহিলেন, হে আমার প্রভু, আপনার প্রাণের দিব্য, হে আমার প্রভু, যে স্ত্রী সদাপ্রভুর উদ্দেশে প্রার্থনা করিতে করিতে এই স্থানে আপনার সম্মুখে দাঁড়াইয়াছিল, সে আমি। 27 আমি এই বালকের জন্য প্রার্থনা করিয়াছিলাম; আর সদাপ্রভুর কাছে যাহা চাহিয়াছিলাম, তাহা তিনি আমাকে দিয়াছেন। 28 এই জন্য আমিও ইহাকে সদাপ্রভুকে দিলাম; এ চিরজীবনের জন্য সদাপ্রভুকে দত্ত। পরে তাঁহারা সেই স্থানে সদাপ্রভুকে প্রণিপাত করিলেন।
Total 31 অধ্যায়গুলির, Selected অধ্যায় 1 / 31
×

Alert

×

Bengali Letters Keypad References