1. হায় হায়, আমার মস্তক কেন জলময় হইল না! আমার চক্ষু কেন অশ্রুর উনুই হইল না! তাহা হইলে আমি আমার জাতির কন্যার নিহতদের বিষয়ে দিবারাত্র রোদন করিতে পারিতাম।
2. হায় হায়, প্রান্তরে পথিকদের রাত্রিবাসার্থক কুটীরের ন্যায় কেন আমার কুটীর হয় নাই! হইলে আমি স্বজাতীয়দিগকে ত্যাগ করিয়া স্থানান্তরে যাইতে পারিতাম। কেননা তাহারা সকলে ব্যভিচারী ও বিশ্বাসঘাতকদের সমাজ।
3. তাহারা জিহ্বারূপ ধনুকে মিথ্যারূপ বাণ যোজনা করে; এবং দেশে বিশ্বস্ততার পক্ষে তাহাদের বিক্রম প্রকাশ হয় নাই; বরং তাহারা দুষ্টতা হইতে দুষ্টতার প্রতি অগ্রসর হয়, এবং তাহারা আমাকে জানে না, ইহা সদাপ্রভু কহেন।
4. তোমরা প্রত্যেকে আপন আপন বন্ধু হইতে সাবধান থাক, কোন ভ্রাতাকেও বিশ্বাস করিও না, কেননা প্রত্যেক ভ্রাতা নিতান্তই প্রতারণা করে, প্রত্যেক বন্ধু পরীবাদ করিয়া বেড়ায়।
5. প্রত্যেক জন আপন আপন বন্ধুকে প্রবঞ্চনা করে, সত্য কহে না; তাহারা আপন আপন জিহ্বাকে মিথ্যা বলিতে শিক্ষা দিয়াছে, তাহারা অপরাধ করিবার জন্য ক্লেশ স্বীকার করে।
6. তুমি ছলনার মধ্যস্থানে বাস করিতেছ; তাহারা ছলনা প্রযুক্ত আমাকে জানিতে অস্বীকার করে, ইহা সদাপ্রভু কহেন।
7. অতএব বাহিনীগণের সদাপ্রভু এই কথা কহেন, দেখ, আমি তাহাদিগকে গলাইব, তাহাদের পরীক্ষা করিব; আমার জাতির কন্যা হেতু আর কি করিব? তাহাদের জিহ্বা প্রাণনাশক বাণ;
8. তাহা ছলের কথা কহে; লোকে মুখে বন্ধুর সহিত প্রেমালাপ করে, কিন্তু অন্তরে তাহার জন্য ঘাঁটি বসায়।
9. সদাপ্রভু কহেন, আমি কি তাহাদিগকে এই সকলের প্রতিফল দিব না? আমার প্রাণ কি এই প্রকার জাতির প্রতিশোধ দিবে না?
10. আমি পর্ব্বতগণের বিষয়ে রোদন ও হাহাকার করিব, প্রান্তরস্থ চরাণিস্থানের বিষয়ে বিলাপ করিব, কেননা সে সকল দগ্ধ ও পথিকবিহীন হইল; পশুপালের রব আর শুনা যায় না, আকাশের পক্ষিগণ ও পশু সকল পলায়ন করিয়াছে, চলিয়া গিয়াছে।
11. আমি যিরূশালেমকে ঢিবি ও শৃগালদের বাসস্থান করিব; আমি যিহূদার নগর সকল নিবাসীবিহীন ধ্বংসস্থান করিব।
12. এই সকল বুঝিতে পারে, এমন জ্ঞানবান্ কে? সদাপ্রভুর মুখে বাক্য শুনিয়া জ্ঞাত করিতে পারে, এমন ব্যক্তি কে? দেশ কি জন্য বিনষ্ট ও মরুভূমির ন্যায় দগ্ধ ও পথিকবিহীন হইল?
13. সদাপ্রভু কহেন, কারণ এই, তাহারা আমার সেই ব্যবস্থা ত্যাগ করিয়াছে, যাহা আমি তাহাদের সম্মুখে রাখিয়াছিলাম; তাহারা আমার রবে কর্ণপাত করে নাই, সে পথে চলে নাই;
14. কিন্তু আপন আপন হৃদয়ের কঠিনতার ও বালদেবগণের অনুগমন করিয়াছে, তাহাদের পিতৃপুরুষেরা তাহাদিগকে এই শিক্ষা দিয়াছিল।
15. এই জন্য বাহিনীগণের সদাপ্রভু, ইস্রায়েলের ঈশ্বর, এই কথা কহেন, দেখ, আমি এই লোকদিগকে নাগদানা ভোজন করাইব, বিষবৃক্ষের রস পান করাইব।
16. তাহারা ও তাহাদের পিতৃপুরুষেরা যাহাদিগকে জানে নাই, এমন জাতিগণের মধ্যে তাহাদিগকে ছিন্নভিন্ন করিব, এবং যাবৎ তাহাদিগকে সংহার না করি, তাবৎ আমি তাহাদের পশ্চাতে পশ্চাতে খড়্গ প্রেরণ করিব।
17. বাহিনীগণের সদাপ্রভু এই কথা কহেন, তোমরা বিবেচনা কর, বিলাপকারিণীদিগকে ডাক, তাহারা আইসুক; জ্ঞানবতী স্ত্রীলোকদের কাছে লোক পাঠাও, তাহারা আইসুক।
18. তাহারা ত্বরায় আসিয়া আমাদের নিমিত্ত হাহাকার করুক, যেন আমাদের চক্ষু অশ্রুতে ভাসিয়া যায়, আমাদের চক্ষুর পাতা দিয়া জলধারা নির্গত হয়।
19. কারণ সিয়োন হইতে এই হাহাকার শব্দ শুনা যাইতেছে, আমরা কেমন হৃতসর্ব্বস্ব হইলাম। আমরা অতিশয় লজ্জিত হইলাম; কারণ আমরা দেশত্যাগী হইয়াছি, [শত্রুরা] আমাদের আবাস সকল ভূমিসাৎ করিল।
20. আহা! হে স্ত্রীলোকেরা, সদাপ্রভুর কথা শুন, তাঁহার মুখের বাক্য কর্ণে গ্রহণ কর, এবং আপন আপন কন্যাদিগকে হাহাকার করিতে শিক্ষা দেও, প্রত্যেকে আপন আপন প্রতিবাসিনীকে বিলাপ করিতে শিক্ষা দেও।
21. কেননা মৃত্যু আমাদের বাতায়নে উঠিল, তাহা আমাদের অট্টালিকায় প্রবেশ করিল; যেন বাহির হইতে বালকেরা উচ্ছিন্ন হয়, চক হইতে যুবকগণ উচ্ছিন্ন হয়।
22. তুমি বল, সদাপ্রভু এই কথা কহেন, মনুষ্যগণের শব সারের ন্যায় ক্ষেত্রে পতিত থাকিবে, ছেদকের পশ্চাতে যে শস্যগুচ্ছ পড়িয়া থাকে, তাহার তুল্য হইবে, কেহ তাহাদিগকে সংগ্রহ করিবে না।
23. সদাপ্রভু এই কথা কহেন, জ্ঞানবান্ আপন জ্ঞানের শ্লাঘা না করুক, বিক্রমী আপন বিক্রমের শ্লাঘা না করুক, ধনবান্ আপন ধনের শ্লাঘা না করুক।
24. কিন্তু যে ব্যক্তি শ্লাঘা করে, সে এই বিষয়ের শ্লাঘা করুক যে, সে বুঝিতে পারে ও আমার এই পরিচয় পাইয়াছে যে, আমি সদাপ্রভু পৃথিবীতে দয়া, বিচার ও ধার্ম্মিকতার অনুষ্ঠান করি, কারণ ঐ সকলে প্রীত, ইহা সদাপ্রভু কহেন।
25. সদাপ্রভু কহেন, দেখ, এমন সময় আসিতেছে, যে সময়ে আমি ছিন্নত্বক্দিগকে অচ্ছিন্নত্বক্ বলিয়া প্রতিফল দিব;
26. আমি মিসরকে, যিহূদাকে, ইদোমকে, অম্মোন-সন্তানগণকে, মোয়াবকে এবং প্রান্তরবাসী যাহারা আপনাদের কেশকোণ মুণ্ডন করিয়াছে, তাহাদের সকলকে [প্রতিফল দিব]; কেননা সমস্ত জাতি অচ্ছিন্নত্বক্, আর ইস্রায়েলের সমস্ত কুল হৃদয়ে অচ্ছিন্নত্বক্।