1. তৎপরে এই ঘটনা হইল; যিষ্রিয়েলীয় নাবোতের এক দ্রাক্ষাক্ষেত্র ছিল, তাহা যিষ্রিয়েলে শমরিয়ার রাজা আহাবের রাজবাটীর পার্শ্বেই ছিল।
2. আহাব নাবোৎকে কহিলেন, তোমার দ্রাক্ষাক্ষেত্র আমাকে দেও; আমি উহা সব্জির ক্ষেত্র করিব, কারণ উহা আমার বাটীর নিকটবর্ত্তী; উহার পরিবর্ত্তে তোমাকে আরও উত্তম একখানি দ্রাক্ষাক্ষেত্র দিব; কিম্বা যদি তোমার বিহিত বোধ হয়, তবে তাহার মূল্য রৌপ্য মুদ্রা তোমাকে দিব।
3. নাবোৎ আহাবকে কহিলেন, আমি যে আপন পৈতৃক অধিকার আপনাকে দিই, সদাপ্রভু ইহা নিবারণ করুন।
4. তখন, ‘আমি পৈতৃক অধিকার আপনাকে দিব না,’ যিষ্রিয়েলীয় নাবোতের উক্ত এই কথায় আহাব বিষণ্ণ ও রুষ্ট হইয়া আপন গৃহে আসিলেন, এবং শয্যাতে পড়িয়া রহিলেন, মুখ ফিরাইয়া থাকিলেন, খাদ্য গ্রহণ করিলেন না।
5. তখন তাঁহার স্ত্রী ঈষেবল তাঁহার নিকটে আসিয়া তাঁহাকে কহিল, তোমার মন এমন বিষণ্ণ কেন যে, তুমি আহার কর না?
6. তিনি তাহাকে কহিলেন, আমি যিষ্রিয়েলীয় নাবোৎকে বলিয়াছিলাম, টাকা লইয়া তোমার দ্রাক্ষাক্ষেত্র আমাকে দেও; কিম্বা যদি সন্তুষ্ট হও, তবে আমি তাহার পরিবর্ত্তে আর একখানি দ্রাক্ষাক্ষেত্র তোমাকে দিব; তাহাতে সে উত্তর করিল, আমি আমার দ্রাক্ষাক্ষেত্র আপনাকে দিব না।
7. তখন তাঁহার স্ত্রী ঈষেবল তাঁহাকে কহিল, এখন তুমিই না ইস্রায়েলের উপরে রাজত্ব করিতেছ? উঠ, আহার কর; তোমার চিত্ত প্রফুল্ল হউক; আমি যিষ্রিয়েলীয় নাবোতের দ্রাক্ষাক্ষেত্র তোমাকে দিব।
8. পরে সে আহাবের নাম করিয়া কতকগুলি পত্র লিখিয়া তাঁহার মুদ্রায় মুদ্রাঙ্কিত করিল, আর নাবোতের প্রতিবাসিগণের, তাঁহার বসতি-নগরের প্রাচীন ও প্রধান লোকদের, নিকটে সেই সকল পত্র প্রেরণ করিল।
9. পত্রে সে এই কথা লিখিয়াছিল, তোমরা উপবাস ঘোষণা কর, ও লোকদের মধ্যে নাবোৎকে উচ্চস্থানে বসাও।
10. আর পাষণ্ড দুই জন পুরুষকে তাহার সম্মুখে বসাইয়া দেও; তাঁহারা তাহার বিরুদ্ধে এই সাক্ষ্য দিউক যে, ‘তুমি ঈশ্বরকে ও রাজাকে জলাঞ্জলি দিয়াছ’। পরে তাহাকে বাহিরে লইয়া গিয়া প্রস্তরাঘাতে বধ কর।
11. পরে তাহার নগরস্থ লোকেরা, নগরবাসী প্রাচীন ও প্রধানবর্গ, ঈষেবলের প্রেরিত আজ্ঞানুসারে, তাহার প্রেরিত পত্রের লিখনানুসারে, কর্ম্ম করিল।
12. তাহারা উপবাস ঘোষণা করিল, এবং লোকদের মধ্যে নাবোৎকে উচ্চস্থানে বসাইল।
13. পরে পাষণ্ড দুই জন পুরুষ আসিয়া তাহার সম্মুখে বসিল; সেই দুই পাষণ্ড পুরুষ লোকদের সাক্ষাতে নাবোতের বিরুদ্ধে এই সাক্ষ্য দিল যে, নাবোৎ ঈশ্বরকে ও রাজাকে জলাঞ্জলি দিয়াছে। তাহাতে লোকেরা তাঁহাকে নগরের বাহিরে লইয়া গিয়া প্রস্তরাঘাতে বধ করিল।
14. পরে তাহারা ঈষেবলের নিকটে এই সংবাদ পাঠাইল, নাবোৎ প্রস্তরাঘাতে মারা পড়িয়াছে।
15. নাবোৎ প্রস্তরাঘাতে মারা পড়িয়াছে, এই কথা শুনিবামাত্র ঈষেবল আহাবকে কহিল, উঠ, যিষ্রিয়েলীয় নাবোৎ টাকায় যে দ্রাক্ষাক্ষেত্র তোমাকে দিতে অসম্মত ছিল, তাহা গিয়া অধিকার কর; কেননা নাবোৎ জীবিত নাই, সে মরিয়াছে।
16. তখন নাবোৎ মরিয়াছে, এই কথা শুনিয়া আহাব উঠিয়া যিষ্রিয়েলীয় নাবোতের দ্রাক্ষাক্ষেত্র অধিকার করিতে গেলেন।
17. আর তিশ্বীয় এলিয়ের নিকটে সদাপ্রভুর এই বাক্য উপস্থিত হইল,
18. উঠ, শমরিয়া-নিবাসী ইস্রায়েলরাজ আহাবের সহিত সাক্ষাৎ করিতে যাও; দেখ, সে নাবোতের দ্রাক্ষাক্ষেত্রে রহিয়াছে, সে তাহা অধিকার করিতে গিয়াছে।
19. তুমি তাহাকে বলিবে, সদাপ্রভু এই কথা কহেন, তুমি কি নরহত্যা করিয়াছ, আবার [পরের] অধিকার কি হরণ করিয়াছ? আর তাহাকে বলিবে, সদাপ্রভু এই কথা কহেন, যে স্থানে কুকুরেরা নাবোতের রক্ত চাটিয়া খাইয়াছে, সেই স্থানে কুকুরেরা তোমার রক্তও চাটিয়া খাইবে।
20. তখন আহাব এলিয়কে কহিলেন, হে আমার শত্রু, তুমি কি আমাকে পাইয়াছ? তিনি কহিলেন, তোমাকে পাইয়াছি; কারণ সদাপ্রভুর দৃষ্টিতে যাহা মন্দ, তুমি তাহাই করিবার জন্য আপনাকে বিক্রয় করিয়াছ।
21. দেখ, আমি তোমার উপরে অমঙ্গল উপস্থিত করিব, ও তোমাকে নিঃশেষে ঝাঁটি দিব; এবং আহাব-বংশের প্রত্যেক পুরুষকে এবং ইস্রায়েলের মধ্যে বদ্ধ ও মুক্ত সকল লোককে উচ্ছেদ করিব।
22. আর আমি তোমার কুল নবাটের পুত্র যারবিয়ামের কুলের সমান ও অহিয়ের পুত্র বাশার কুলের সমান করিব; ইহার কারণ তোমার সেই অসন্তোষজনক আচার ব্যবহার, যদ্দ্বারা তুমি আমাকে অসন্তুষ্ট করিয়াছ, আর ইস্রায়েলকে পাপ করাইয়াছ।
23. আবার ঈষেবলের বিষয়েও সদাপ্রভু বলিলেন যে, কুকুরেরা যিষ্রিয়েলের দুর্গপ্রাচীরের কাছে ঈষেবলকে খাইবে।
24. আহাবের যে কেহ নগরে মরিবে, কুকুরেরা তাহাকে খাইবে; এবং যে কেহ মাঠে মরিবে, আকাশের পক্ষীরা তাহাকে খাইবে।
25. (আহাব, যিনি আপন স্ত্রী ঈষেবল কর্ত্তৃক উত্তেজিত হইয়া সদাপ্রভুর সাক্ষাতে কদাচরণ করিতে আপনাকে বিক্রয় করিয়াছিলেন, তাঁহার তুল্য আর কেহ কখনও হয় নাই।
26. আর সদাপ্রভু যে ইমোরীয়দিগকে ইস্রায়েল-সন্তানগণের সম্মুখ হইতে অধিকারচ্যুত করিয়াছিলেন, তাহাদের সমস্ত ক্রিয়ানুসারে তিনি পুত্তলিদের অনুগামী হইয়া অতিশয় ঘৃণার্হ কর্ম্ম করিতেন।)
27. আহাব যখন ঐ সকল কথা শুনিলেন, তখন আপন বস্ত্র ছিঁড়িলেন, এবং গায়ে চট বাঁধিয়া উপবাস করিলেন, চটে শয়ন করিলেন, এবং ধীরে ধীরে বেড়াইলেন।
28. পরে তিশ্বীয় এলিয়ের কাছে সদাপ্রভুর এই বাক্য উপস্থিত হইল,
29. আহাব আমার সাক্ষাতে আপনাকে অবনত করিয়াছে, ইহা কি তুমি দেখিতেছ? সে আমার সাক্ষাতে আপনাকে অবনত করিয়াছে, এই জন্য আমি তাহার জীবনকালে ঐ অমঙ্গল ঘটাইব না, কিন্তু তাহার পুত্রের জীবনকালে তাহার কুলের উপরে সেই অমঙ্গল উপস্থিত করিব।