পবিত্র বাইবেল

গডস গ্রেইস গিফট
এজেকিয়েল
1. সপ্তম বৎসরের পঞ্চম মাসে, মাসের দশম দিনে ইস্রায়েলের প্রাচীনবর্গের মধ্যে কয়েক জন পুরুষ সদাপ্রভুর কাছে অন্বেষণ করিবার জন্য আসিয়া আমার সম্মুখে বসিল।
2. তখন সদাপ্রভুর এই বাক্য আমার নিকটে উপস্থিত হইল,
3. হে মনুষ্য-সন্তান, তুমি ইস্রায়েলের প্রাচীনবর্গের সহিত আলাপ করিয়া তাহাদিগকে বল, প্রভু সদাপ্রভু এই কথা কহেন, তোমরা কি আমার কাছে অন্বেষণ করিতে আসিয়াছ? প্রভু সদাপ্রভু কহেন, আমার জীবনের দিব্য, আমি তোমাদিগকে আমার কাছে অন্বেষণ করিতে দিব না।
4. হে মনুষ্য-সন্তান, তুমি কি তাহাদের বিচার করিবে? তুমি কি তাহাদের বিচার করিবে? তবে তাহাদের পিতৃপুরুষদের ঘৃণার্হ ক্রিয়া সকল তাহাদিগকে জ্ঞাত কর;
5. আর তাহাদিগকে বল, প্রভু সদাপ্রভু এই কথা কহেন, আমি যে দিন ইস্রায়েলকে মনোনীত করিয়াছিলাম, যাকোবের কুলজাত বংশের পক্ষে হস্ত উত্তোলন করিয়াছিলাম, মিসর দেশে তাহাদের কাছে আপনার পরিচয় দিয়াছিলাম, যখন তাহাদের পক্ষে হস্ত উত্তোলন করিয়া বলিয়াছিলাম, আমিই তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু;
6. সেই দিন তাহাদের পক্ষে হস্ত উত্তোলন করিয়া [বলিয়াছিলাম] যে, আমি তাহাদিগকে মিসর দেশ হইতে বাহির করিব, এবং তাহাদের জন্য যে দেশ অনুসন্ধান করিয়াছি, সর্ব্ব দেশের ভূষণস্বরূপ সেই দুগ্ধমধুপ্রবাহী দেশে লইয়া যাইব;
7. আর আমি তাহাদিগকে বলিয়াছিলাম, তোমরা প্রত্যেক জন আপন আপন নয়নরঞ্জন ঘৃণার্হ বস্তু সকল দূর কর, এবং মিসরের পুত্তলিগণ দ্বারা আপনাদিগকে অশুচি করিও না; আমিই তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু।
8. কিন্তু তাহারা আমার বিরুদ্ধাচারী হইল, আমার কথা শুনিতে অসম্মত হইল, আপন আপন নয়নরঞ্জন ঘৃণার্হ বস্তু সকল দূর করিল না, এবং মিসরের পুত্তলিগণকেও ছাড়িল না; তাহাতে আমি বলিলাম, আমি তাহাদের উপরে আমার কোপ ঢালিব, মিসর দেশের মধ্যে তাহাদিগেতে আমার ক্রোধ সাধন করিব।
9. কিন্তু আমি আপন নামের অনুরোধে কার্য্য করিলাম; যেন আমার নাম সেই জাতিগণের সাক্ষাতে অপবিত্রীকৃত না হয়, যাহাদের মধ্যে তাহারা বাস করিতেছিল, ও যাহাদের সাক্ষাতে আমি তাহাদিগকে মিসর দেশ হইতে বাহির করিয়া আনাতে আপনার পরিচয় দিয়া ছিলাম।
10. পরে আমি তাহাদিগকে মিসর দেশ হইতে বাহির করিয়া প্রান্তরে আনিলাম।
11. আর আমি তাহাদিগকে আমার বিধিকলাপ দিলাম, ও আমার শাসনকলাপ জ্ঞাত করিলাম, যাহা পালন করিলে তদ্দ্বারা মনুষ্য বাঁচে।
12. আর আমিই যে তাহাদের পবিত্রকারী সদাপ্রভু, ইহা জানাইবার জন্য আমার ও তাহাদের মধ্যে চিহ্নস্বরূপে আমার বিশ্রামদিন সকলও তাহাদিগকে দিলাম।
13. কিন্তু ইস্রায়েল-কুল সেই প্রান্তরে আমার বিরুদ্ধাচারী হইল; আমার বিধিপথে চলিল না, এবং আমার শাসনকলাপ অগ্রাহ্য করিল, যাহা পালন করিলে তদ্দ্বারা মনুষ্য বাঁচে; আর আমার বিশ্রামদিন সকল অতিশয় অপবিত্র করিল; তখন আমি কহিলাম, আমি তাহাদিগকে সংহার করিবার জন্য প্রান্তরে তাহাদের উপরে আমার কোপ ঢালিব।
14. কিন্তু আমি আপন নামের অনুরোধে কার্য্য করিলাম, যেন সেই জাতিগণের সাক্ষাতে আমার নাম অপবিত্রীকৃত না হয়, যাহাদের সাক্ষাতে তাহাদিগকে বাহির করিয়া আনিয়াছিলাম।
15. অধিকন্তু আমি প্রান্তরে তাহাদের বিপক্ষে হস্ত উত্তোলন করিলাম, বলিলাম, আমি সর্ব্ব দেশের ভূষণ যে দুগ্ধমধুপ্রবাহী দেশ তাহাদিগকে প্রদান করিয়াছি, সেই দেশে তাহাদিগকে লইয়া যাইব না;
16. কারণ তাহারা আমার শাসনকলাপ অগ্রাহ্য করিত, আমার বিধিপথে চলিত না, ও আমার বিশ্রামদিন অপবিত্র করিত, কেননা তাহাদের অন্তঃকরণ তাহাদের পুত্তলিগণের অনুগামী ছিল।
17. কিন্তু তাহাদিগকে বিনাশ সাধনে আমার চক্ষুলজ্জা হইল, এই জন্য আমি সেই প্রান্তরে তাহাদিগকে সংহার করিলাম না।
18. আর সেই প্রান্তরে আমি তাহাদের সন্তানগণকে কহিলাম, তোমরা আপনাদের পিতৃগণের বিধিপথে চলিও না, তাহাদের শাসনকলাপ মানিও না, ও তাহাদের পুত্তলিগণ দ্বারা আপনাদিগকে অশুচি করিও না;
19. আমিই তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু; আমারই বিধিপথে চল, ও আমারই শাসনকলাপ রক্ষা কর, পালন কর;
20. আর আমার বিশ্রামদিন পবিত্র কর, তাহাই আমার ও তোমাদের মধ্যে চিহ্নস্বরূপ হইবে, যেন তোমরা জানিতে পার যে, আমিই তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু।
21. তথাপি সেই সন্তানগণ আমার বিরুদ্ধাচারী হইল; তাহারা আমার বিধিপথে চলিল না, এবং আমার শাসনকলাপ পালনার্থে রক্ষা করিল না, যাহা পালন করিলে তদ্দ্বারা মনুষ্য বাঁচে; তাহারা আমার বিশ্রামদিনও অপবিত্র করিল; তখন আমি কহিলাম, আমি তাহাদের উপরে আপন কোপ ঢালিব, প্রান্তরে তাহাদিগেতে আপন ক্রোধ সাধন করিব।
22. তথাপি আমি হস্ত আকর্ষণ করিলাম, আপন নামের অনুরোধে কার্য্য করিলাম, যেন সেই জাতিগণের সাক্ষাতে আমার নাম অপবিত্রীকৃত না হয়, যাহাদের সাক্ষাতে তাহাদিগকে বাহির করিয়া আনিয়াছিলাম।
23. অধিকন্তু আমি প্রান্তরে তাহাদের বিপক্ষে হস্ত উত্তোলন করিলাম, বলিলাম, তাহাদিগকে জাতিগণের মধ্যে ছিন্নভিন্ন করিব, নানা দেশে বিকীর্ণ করিব;
24. কারণ তাহারা আমার শাসনকলাপ পালন করিল না, আমার বিধিকলাপ অগ্রাহ্য করিল, আমার বিশ্রামদিন অপবিত্র করিল, ও তাহাদের পিতাদের পুত্তলিগণে তাহাদের চক্ষু আসক্ত থাকিল।
25. অধিকন্তু যাহা মঙ্গলজনক নয়, এমন বিধিকলাপ, এবং যদ্দ্বারা কেহ বাঁচিতে পারে না, এমন শাসনকলাপ, তাহাদিগকে দিলাম।
26. তাহারা গর্ভ উন্মোচক সমস্ত সন্তানকে [অগ্নির মধ্য দিয়া] গমন করাইত, তাই আমি তাহাদিগকে আপন আপন উপহারে অশুচি হইতে দিলাম, যেন আমি তাহাদিগকে ধ্বংস করি, যেন তাহারা জানিতে পারে যে, আমিই সদাপ্রভু।
27. অতএব, হে মনুষ্য-সন্তান, তুমি ইস্রায়েল-কুলের সহিত আলাপ করিয়া তাহাদিগকে বল, প্রভু সদাপ্রভু এই কথা কহেন, তোমাদের পিতৃপুরুষেরা আমার বিরুদ্ধে সত্যলঙ্ঘন করিয়াছে, ইহাতেই আমার নিন্দা করিয়াছে।
28. কারণ আমি তাহাদিগকে যে দেশ দিব বলিয়া হস্ত উত্তোলন করিয়াছিলাম, যখন সেই দেশে আনিলাম, তখন তাহারা যে কোন স্থানে কোন উচ্চ পর্ব্বত কিম্বা কোন ঝোপাল বৃক্ষ দেখিতে পাইত, সেই স্থানে বলিদান করিত, সেই স্থানে [আমার] অসন্তোষজনক নৈবেদ্য উৎসর্গ করিত, সেই স্থানে আপনাদের সৌরভার্থক দ্রব্যও রাখিত, এবং সেই স্থানে আপনাদের পেয় নৈবেদ্য ঢালিত।
29. তাহাতে আমি তাহাদিগকে কহিলাম, তোমরা যে উচ্চস্থলীতে উঠিয়া যাও, উহা কি? এইরূপে অদ্য পর্য্যন্ত তাহার নাম বামা [উচ্চস্থলী] হইয়া রহিয়াছে।
30. অতএব তুমি ইস্রায়েল-কুলকে বল, প্রভু সদাপ্রভু এই কথা কহেন, তোমরা কি আপন আপন পিতৃপুরুষদের রীতিতে আপনাদিগকে অশুচি করিতেছ? তাহাদের ঘৃণার্হ বস্তু সকলের অনুগমনে ব্যভিচার করিতেছ?
31. তোমরা যখন আপনাদের উপহার দেও, যখন আপন আপন সন্তানদিগকে অগ্নির মধ্য দিয়া গমন করাও, তখন অদ্য পর্য্যন্ত আপনাদের সমস্ত পুত্তলির দ্বারা কি আপনাদিগকে অশুচি করিতেছ? তবে, হে ইস্রায়েল-কুল, আমি কি তোমাদিগকে আমার কাছে অন্বেষণ করিতে দিব? প্রভু সদাপ্রভু কহেন, আমার জীবনের দিব্য, আমি তোমাদিগকে আমার কাছে অন্বেষণ করিতে দিব না।
32. আর তোমরা যাহা মনে করিয়া থাক, তাহা কোন ক্রমে হইবে না; তোমরা ত বলিতেছ, আমরা জাতিদের তুল্য হইব, ভিন্ন ভিন্ন দেশের গোষ্ঠীদের তুল্য হইব, কাষ্ঠ ও প্রস্তরের পরিচর্য্যা করিব।
33. প্রভু সদাপ্রভু এই কথা কহেন, আমার জীবনের দিব্য, আমি বলবান হস্ত, বিস্তারিত বাহু ও কোপের বর্ষণ দ্বারা তোমাদের উপরে রাজত্ব করিব।
34. আমি বলবান হস্ত, বিস্তারিত বাহু ও কোপের বর্ষণ দ্বারা জাতিগণের মধ্য হইতে তোমাদিগকে বাহির করিব, এবং যে সকল দেশে তোমরা ছিন্নভিন্ন হইয়া রহিয়াছ, সেই সকল দেশ হইতে তোমাদিগকে একত্র করিব।
35. আমি জাতিসমূহের প্রান্তরে আনিয়া সম্মুখাসম্মুখি হইয়া সেই স্থানে তোমাদের সহিত বিচার করিব।
36. আমি মিসর দেশের প্রান্তরে যেমন তোমাদের পিতৃপুরুষদের সহিত বিচার করিয়াছিলাম, তোমাদের সহিত তেমনি বিচার করিব, ইহা প্রভু সদাপ্রভু কহেন।
37. আর আমি তোমাদিগকে পাঁচনীর নীচে দিয়া গমন করাইব, ও নিয়মরূপ বন্ধনে আবদ্ধ করিব।
38. পরে বিদ্রোহী ও আমার বিরুদ্ধে অধর্ম্মাচারী সকলকে ঝাড়িয়া তোমাদের মধ্য হইতে দূর করিব; তাহারা যে দেশে প্রবাস করে, তথা হইতে তাহাদিগকে বাহির করিয়া আনিব বটে, কিন্তু তাহারা ইস্রায়েল-দেশে প্রবেশ করিবে না; তাহাতে তোমরা জানিবে যে, আমিই সদাপ্রভু।
39. পরন্তু হে ইস্রায়েল-কুল, প্রভু সদাপ্রভু তোমাদের বিষয়ে এই কথা বলেন, তোমরা যাও, প্রত্যেকে আপন আপন পুত্তলিগণের সেবা কর; কিন্তু উত্তরকালে তোমরা আমার কথায় অবধান করিবেই করিবে; তখন আপন আপন উপহার ও পুত্তলিগণ দ্বারা আমার পবিত্র নাম আর অপবিত্র করিবে না।
40. কারণ, প্রভু সদাপ্রভু এই কথা কহেন, আমার পবিত্র পর্ব্বতে, ইস্রায়েলের উচ্চতার পর্ব্বতে, ইস্রায়েলের সমস্ত কুল, তাহারা সকলেই, দেশমধ্যে আমার সেবা করিবে; সেই স্থানে আমি তাহাদিগকে গ্রাহ্য করিব, সেই স্থানে তোমাদের সমস্ত পবিত্র বস্তুর সহিত তোমাদের উপহার ও তোমাদের নৈবেদ্যের অগ্রিমাংশ চাহিব।
41. যখন জাতিগণের মধ্য হইতে তোমাদিগকে আনিব, এবং যে সকল দেশে তোমরা ছিন্নভিন্ন হইয়া রহিয়াছ, সেই সকল দেশ হইতে তোমাদিগকে একত্র করিব, তখন আমি সৌরভার্থক দ্রব্যের ন্যায় তোমাদিগকে গ্রাহ্য করিব; আর তোমাদের দ্বারা জাতিগণের সাক্ষাতে পবিত্র বলিয়া মান্য হইব।
42. আর আমি তোমাদের পিতৃপুরুষদিগকে যে দেশ দিব বলিয়া হস্ত উত্তোলন করিয়াছিলাম, সেই ইস্রায়েল-দেশে যখন তোমাদিগকে আনিব, তখন তোমরা জানিবে যে, আমিই সদাপ্রভু।
43. আর সেখানে তোমরা সেই আচার ব্যবহার ও সমস্ত ক্রিয়াকাণ্ড স্মরণ করিবে, যদ্দ্বারা আপনাদিগকে অশুচি করিয়াছ; আর তোমাদের কৃত সমস্ত কুক্রিয়া প্রযুক্ত তোমরা আপনাদের দৃষ্টিতে আপনাদিগকে ঘৃণা করিবে।
44. হে ইস্রায়েল-কুল, প্রভু সদাপ্রভু বলেন, আমি যখন তোমাদের মন্দ আচার ব্যবহার অনুসারে নয় ও তোমাদের দুষ্ট ক্রিয়াকাণ্ড অনুসারে নয়, কিন্তু আপন নামের অনুরোধে তোমাদের সহিত ব্যবহার করিব, তখন তোমরা জানিবে যে, আমিই সদাপ্রভু।
45. আর সদাপ্রভুর এই বাক্য আমার নিকটে উপস্থিত হইল,
46. হে মনুষ্য-সন্তান, তুমি দক্ষিণদিকে আপন মুখ রাখ, দক্ষিণ দেশের দিকে বাক্য বর্ষণ কর, ও দক্ষিণ প্রান্তরস্থ অরণ্যের বিপরীতে ভাববাণী বল।
47. আর দক্ষিণের অরণ্যকে বল, তুমি সদাপ্রভুর বাক্য শুন; প্রভু সদাপ্রভু এই কথা কহেন, দেখ আমি তোমার মধ্যে অগ্নি জ্বালাইব, তাহা তোমার মধ্যে সমস্ত সতেজ বৃক্ষ ও সমস্ত শুষ্ক বৃক্ষ গ্রাস করিবে; সেই জলন্ত অগ্নি নির্ব্বাণ হইবে না; দক্ষিণ অবধি উত্তর পর্য্যন্ত সমুদয় মুখ তদ্দ্বারা দগ্ধ হইবে।
48. তাহাতে সমস্ত প্রাণী দেখিবে যে, আমি সদাপ্রভু তাহা প্রজ্বলিত করিয়াছি; তাহা নির্ব্বাণ হইবে না।
49. তখন আমি কহিলাম, হাঁ প্রভু সদাপ্রভু, তাহারা আমার বিষয়ে বলে, ঐ ব্যক্তি কি উপমাবাদী নয়?

Notes

No Verse Added

Total 48 Chapters, Current Chapter 20 of Total Chapters 48
এজেকিয়েল 20
1. সপ্তম বৎসরের পঞ্চম মাসে, মাসের দশম দিনে ইস্রায়েলের প্রাচীনবর্গের মধ্যে কয়েক জন পুরুষ সদাপ্রভুর কাছে অন্বেষণ করিবার জন্য আসিয়া আমার সম্মুখে বসিল।
2. তখন সদাপ্রভুর এই বাক্য আমার নিকটে উপস্থিত হইল,
3. হে মনুষ্য-সন্তান, তুমি ইস্রায়েলের প্রাচীনবর্গের সহিত আলাপ করিয়া তাহাদিগকে বল, প্রভু সদাপ্রভু এই কথা কহেন, তোমরা কি আমার কাছে অন্বেষণ করিতে আসিয়াছ? প্রভু সদাপ্রভু কহেন, আমার জীবনের দিব্য, আমি তোমাদিগকে আমার কাছে অন্বেষণ করিতে দিব না।
4. হে মনুষ্য-সন্তান, তুমি কি তাহাদের বিচার করিবে? তুমি কি তাহাদের বিচার করিবে? তবে তাহাদের পিতৃপুরুষদের ঘৃণার্হ ক্রিয়া সকল তাহাদিগকে জ্ঞাত কর;
5. আর তাহাদিগকে বল, প্রভু সদাপ্রভু এই কথা কহেন, আমি যে দিন ইস্রায়েলকে মনোনীত করিয়াছিলাম, যাকোবের কুলজাত বংশের পক্ষে হস্ত উত্তোলন করিয়াছিলাম, মিসর দেশে তাহাদের কাছে আপনার পরিচয় দিয়াছিলাম, যখন তাহাদের পক্ষে হস্ত উত্তোলন করিয়া বলিয়াছিলাম, আমিই তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু;
6. সেই দিন তাহাদের পক্ষে হস্ত উত্তোলন করিয়া বলিয়াছিলাম যে, আমি তাহাদিগকে মিসর দেশ হইতে বাহির করিব, এবং তাহাদের জন্য যে দেশ অনুসন্ধান করিয়াছি, সর্ব্ব দেশের ভূষণস্বরূপ সেই দুগ্ধমধুপ্রবাহী দেশে লইয়া যাইব;
7. আর আমি তাহাদিগকে বলিয়াছিলাম, তোমরা প্রত্যেক জন আপন আপন নয়নরঞ্জন ঘৃণার্হ বস্তু সকল দূর কর, এবং মিসরের পুত্তলিগণ দ্বারা আপনাদিগকে অশুচি করিও না; আমিই তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু।
8. কিন্তু তাহারা আমার বিরুদ্ধাচারী হইল, আমার কথা শুনিতে অসম্মত হইল, আপন আপন নয়নরঞ্জন ঘৃণার্হ বস্তু সকল দূর করিল না, এবং মিসরের পুত্তলিগণকেও ছাড়িল না; তাহাতে আমি বলিলাম, আমি তাহাদের উপরে আমার কোপ ঢালিব, মিসর দেশের মধ্যে তাহাদিগেতে আমার ক্রোধ সাধন করিব।
9. কিন্তু আমি আপন নামের অনুরোধে কার্য্য করিলাম; যেন আমার নাম সেই জাতিগণের সাক্ষাতে অপবিত্রীকৃত না হয়, যাহাদের মধ্যে তাহারা বাস করিতেছিল, যাহাদের সাক্ষাতে আমি তাহাদিগকে মিসর দেশ হইতে বাহির করিয়া আনাতে আপনার পরিচয় দিয়া ছিলাম।
10. পরে আমি তাহাদিগকে মিসর দেশ হইতে বাহির করিয়া প্রান্তরে আনিলাম।
11. আর আমি তাহাদিগকে আমার বিধিকলাপ দিলাম, আমার শাসনকলাপ জ্ঞাত করিলাম, যাহা পালন করিলে তদ্দ্বারা মনুষ্য বাঁচে।
12. আর আমিই যে তাহাদের পবিত্রকারী সদাপ্রভু, ইহা জানাইবার জন্য আমার তাহাদের মধ্যে চিহ্নস্বরূপে আমার বিশ্রামদিন সকলও তাহাদিগকে দিলাম।
13. কিন্তু ইস্রায়েল-কুল সেই প্রান্তরে আমার বিরুদ্ধাচারী হইল; আমার বিধিপথে চলিল না, এবং আমার শাসনকলাপ অগ্রাহ্য করিল, যাহা পালন করিলে তদ্দ্বারা মনুষ্য বাঁচে; আর আমার বিশ্রামদিন সকল অতিশয় অপবিত্র করিল; তখন আমি কহিলাম, আমি তাহাদিগকে সংহার করিবার জন্য প্রান্তরে তাহাদের উপরে আমার কোপ ঢালিব।
14. কিন্তু আমি আপন নামের অনুরোধে কার্য্য করিলাম, যেন সেই জাতিগণের সাক্ষাতে আমার নাম অপবিত্রীকৃত না হয়, যাহাদের সাক্ষাতে তাহাদিগকে বাহির করিয়া আনিয়াছিলাম।
15. অধিকন্তু আমি প্রান্তরে তাহাদের বিপক্ষে হস্ত উত্তোলন করিলাম, বলিলাম, আমি সর্ব্ব দেশের ভূষণ যে দুগ্ধমধুপ্রবাহী দেশ তাহাদিগকে প্রদান করিয়াছি, সেই দেশে তাহাদিগকে লইয়া যাইব না;
16. কারণ তাহারা আমার শাসনকলাপ অগ্রাহ্য করিত, আমার বিধিপথে চলিত না, আমার বিশ্রামদিন অপবিত্র করিত, কেননা তাহাদের অন্তঃকরণ তাহাদের পুত্তলিগণের অনুগামী ছিল।
17. কিন্তু তাহাদিগকে বিনাশ সাধনে আমার চক্ষুলজ্জা হইল, এই জন্য আমি সেই প্রান্তরে তাহাদিগকে সংহার করিলাম না।
18. আর সেই প্রান্তরে আমি তাহাদের সন্তানগণকে কহিলাম, তোমরা আপনাদের পিতৃগণের বিধিপথে চলিও না, তাহাদের শাসনকলাপ মানিও না, তাহাদের পুত্তলিগণ দ্বারা আপনাদিগকে অশুচি করিও না;
19. আমিই তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু; আমারই বিধিপথে চল, আমারই শাসনকলাপ রক্ষা কর, পালন কর;
20. আর আমার বিশ্রামদিন পবিত্র কর, তাহাই আমার তোমাদের মধ্যে চিহ্নস্বরূপ হইবে, যেন তোমরা জানিতে পার যে, আমিই তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু।
21. তথাপি সেই সন্তানগণ আমার বিরুদ্ধাচারী হইল; তাহারা আমার বিধিপথে চলিল না, এবং আমার শাসনকলাপ পালনার্থে রক্ষা করিল না, যাহা পালন করিলে তদ্দ্বারা মনুষ্য বাঁচে; তাহারা আমার বিশ্রামদিনও অপবিত্র করিল; তখন আমি কহিলাম, আমি তাহাদের উপরে আপন কোপ ঢালিব, প্রান্তরে তাহাদিগেতে আপন ক্রোধ সাধন করিব।
22. তথাপি আমি হস্ত আকর্ষণ করিলাম, আপন নামের অনুরোধে কার্য্য করিলাম, যেন সেই জাতিগণের সাক্ষাতে আমার নাম অপবিত্রীকৃত না হয়, যাহাদের সাক্ষাতে তাহাদিগকে বাহির করিয়া আনিয়াছিলাম।
23. অধিকন্তু আমি প্রান্তরে তাহাদের বিপক্ষে হস্ত উত্তোলন করিলাম, বলিলাম, তাহাদিগকে জাতিগণের মধ্যে ছিন্নভিন্ন করিব, নানা দেশে বিকীর্ণ করিব;
24. কারণ তাহারা আমার শাসনকলাপ পালন করিল না, আমার বিধিকলাপ অগ্রাহ্য করিল, আমার বিশ্রামদিন অপবিত্র করিল, তাহাদের পিতাদের পুত্তলিগণে তাহাদের চক্ষু আসক্ত থাকিল।
25. অধিকন্তু যাহা মঙ্গলজনক নয়, এমন বিধিকলাপ, এবং যদ্দ্বারা কেহ বাঁচিতে পারে না, এমন শাসনকলাপ, তাহাদিগকে দিলাম।
26. তাহারা গর্ভ উন্মোচক সমস্ত সন্তানকে অগ্নির মধ্য দিয়া গমন করাইত, তাই আমি তাহাদিগকে আপন আপন উপহারে অশুচি হইতে দিলাম, যেন আমি তাহাদিগকে ধ্বংস করি, যেন তাহারা জানিতে পারে যে, আমিই সদাপ্রভু।
27. অতএব, হে মনুষ্য-সন্তান, তুমি ইস্রায়েল-কুলের সহিত আলাপ করিয়া তাহাদিগকে বল, প্রভু সদাপ্রভু এই কথা কহেন, তোমাদের পিতৃপুরুষেরা আমার বিরুদ্ধে সত্যলঙ্ঘন করিয়াছে, ইহাতেই আমার নিন্দা করিয়াছে।
28. কারণ আমি তাহাদিগকে যে দেশ দিব বলিয়া হস্ত উত্তোলন করিয়াছিলাম, যখন সেই দেশে আনিলাম, তখন তাহারা যে কোন স্থানে কোন উচ্চ পর্ব্বত কিম্বা কোন ঝোপাল বৃক্ষ দেখিতে পাইত, সেই স্থানে বলিদান করিত, সেই স্থানে আমার অসন্তোষজনক নৈবেদ্য উৎসর্গ করিত, সেই স্থানে আপনাদের সৌরভার্থক দ্রব্যও রাখিত, এবং সেই স্থানে আপনাদের পেয় নৈবেদ্য ঢালিত।
29. তাহাতে আমি তাহাদিগকে কহিলাম, তোমরা যে উচ্চস্থলীতে উঠিয়া যাও, উহা কি? এইরূপে অদ্য পর্য্যন্ত তাহার নাম বামা উচ্চস্থলী হইয়া রহিয়াছে।
30. অতএব তুমি ইস্রায়েল-কুলকে বল, প্রভু সদাপ্রভু এই কথা কহেন, তোমরা কি আপন আপন পিতৃপুরুষদের রীতিতে আপনাদিগকে অশুচি করিতেছ? তাহাদের ঘৃণার্হ বস্তু সকলের অনুগমনে ব্যভিচার করিতেছ?
31. তোমরা যখন আপনাদের উপহার দেও, যখন আপন আপন সন্তানদিগকে অগ্নির মধ্য দিয়া গমন করাও, তখন অদ্য পর্য্যন্ত আপনাদের সমস্ত পুত্তলির দ্বারা কি আপনাদিগকে অশুচি করিতেছ? তবে, হে ইস্রায়েল-কুল, আমি কি তোমাদিগকে আমার কাছে অন্বেষণ করিতে দিব? প্রভু সদাপ্রভু কহেন, আমার জীবনের দিব্য, আমি তোমাদিগকে আমার কাছে অন্বেষণ করিতে দিব না।
32. আর তোমরা যাহা মনে করিয়া থাক, তাহা কোন ক্রমে হইবে না; তোমরা বলিতেছ, আমরা জাতিদের তুল্য হইব, ভিন্ন ভিন্ন দেশের গোষ্ঠীদের তুল্য হইব, কাষ্ঠ প্রস্তরের পরিচর্য্যা করিব।
33. প্রভু সদাপ্রভু এই কথা কহেন, আমার জীবনের দিব্য, আমি বলবান হস্ত, বিস্তারিত বাহু কোপের বর্ষণ দ্বারা তোমাদের উপরে রাজত্ব করিব।
34. আমি বলবান হস্ত, বিস্তারিত বাহু কোপের বর্ষণ দ্বারা জাতিগণের মধ্য হইতে তোমাদিগকে বাহির করিব, এবং যে সকল দেশে তোমরা ছিন্নভিন্ন হইয়া রহিয়াছ, সেই সকল দেশ হইতে তোমাদিগকে একত্র করিব।
35. আমি জাতিসমূহের প্রান্তরে আনিয়া সম্মুখাসম্মুখি হইয়া সেই স্থানে তোমাদের সহিত বিচার করিব।
36. আমি মিসর দেশের প্রান্তরে যেমন তোমাদের পিতৃপুরুষদের সহিত বিচার করিয়াছিলাম, তোমাদের সহিত তেমনি বিচার করিব, ইহা প্রভু সদাপ্রভু কহেন।
37. আর আমি তোমাদিগকে পাঁচনীর নীচে দিয়া গমন করাইব, নিয়মরূপ বন্ধনে আবদ্ধ করিব।
38. পরে বিদ্রোহী আমার বিরুদ্ধে অধর্ম্মাচারী সকলকে ঝাড়িয়া তোমাদের মধ্য হইতে দূর করিব; তাহারা যে দেশে প্রবাস করে, তথা হইতে তাহাদিগকে বাহির করিয়া আনিব বটে, কিন্তু তাহারা ইস্রায়েল-দেশে প্রবেশ করিবে না; তাহাতে তোমরা জানিবে যে, আমিই সদাপ্রভু।
39. পরন্তু হে ইস্রায়েল-কুল, প্রভু সদাপ্রভু তোমাদের বিষয়ে এই কথা বলেন, তোমরা যাও, প্রত্যেকে আপন আপন পুত্তলিগণের সেবা কর; কিন্তু উত্তরকালে তোমরা আমার কথায় অবধান করিবেই করিবে; তখন আপন আপন উপহার পুত্তলিগণ দ্বারা আমার পবিত্র নাম আর অপবিত্র করিবে না।
40. কারণ, প্রভু সদাপ্রভু এই কথা কহেন, আমার পবিত্র পর্ব্বতে, ইস্রায়েলের উচ্চতার পর্ব্বতে, ইস্রায়েলের সমস্ত কুল, তাহারা সকলেই, দেশমধ্যে আমার সেবা করিবে; সেই স্থানে আমি তাহাদিগকে গ্রাহ্য করিব, সেই স্থানে তোমাদের সমস্ত পবিত্র বস্তুর সহিত তোমাদের উপহার তোমাদের নৈবেদ্যের অগ্রিমাংশ চাহিব।
41. যখন জাতিগণের মধ্য হইতে তোমাদিগকে আনিব, এবং যে সকল দেশে তোমরা ছিন্নভিন্ন হইয়া রহিয়াছ, সেই সকল দেশ হইতে তোমাদিগকে একত্র করিব, তখন আমি সৌরভার্থক দ্রব্যের ন্যায় তোমাদিগকে গ্রাহ্য করিব; আর তোমাদের দ্বারা জাতিগণের সাক্ষাতে পবিত্র বলিয়া মান্য হইব।
42. আর আমি তোমাদের পিতৃপুরুষদিগকে যে দেশ দিব বলিয়া হস্ত উত্তোলন করিয়াছিলাম, সেই ইস্রায়েল-দেশে যখন তোমাদিগকে আনিব, তখন তোমরা জানিবে যে, আমিই সদাপ্রভু।
43. আর সেখানে তোমরা সেই আচার ব্যবহার সমস্ত ক্রিয়াকাণ্ড স্মরণ করিবে, যদ্দ্বারা আপনাদিগকে অশুচি করিয়াছ; আর তোমাদের কৃত সমস্ত কুক্রিয়া প্রযুক্ত তোমরা আপনাদের দৃষ্টিতে আপনাদিগকে ঘৃণা করিবে।
44. হে ইস্রায়েল-কুল, প্রভু সদাপ্রভু বলেন, আমি যখন তোমাদের মন্দ আচার ব্যবহার অনুসারে নয় তোমাদের দুষ্ট ক্রিয়াকাণ্ড অনুসারে নয়, কিন্তু আপন নামের অনুরোধে তোমাদের সহিত ব্যবহার করিব, তখন তোমরা জানিবে যে, আমিই সদাপ্রভু।
45. আর সদাপ্রভুর এই বাক্য আমার নিকটে উপস্থিত হইল,
46. হে মনুষ্য-সন্তান, তুমি দক্ষিণদিকে আপন মুখ রাখ, দক্ষিণ দেশের দিকে বাক্য বর্ষণ কর, দক্ষিণ প্রান্তরস্থ অরণ্যের বিপরীতে ভাববাণী বল।
47. আর দক্ষিণের অরণ্যকে বল, তুমি সদাপ্রভুর বাক্য শুন; প্রভু সদাপ্রভু এই কথা কহেন, দেখ আমি তোমার মধ্যে অগ্নি জ্বালাইব, তাহা তোমার মধ্যে সমস্ত সতেজ বৃক্ষ সমস্ত শুষ্ক বৃক্ষ গ্রাস করিবে; সেই জলন্ত অগ্নি নির্ব্বাণ হইবে না; দক্ষিণ অবধি উত্তর পর্য্যন্ত সমুদয় মুখ তদ্দ্বারা দগ্ধ হইবে।
48. তাহাতে সমস্ত প্রাণী দেখিবে যে, আমি সদাপ্রভু তাহা প্রজ্বলিত করিয়াছি; তাহা নির্ব্বাণ হইবে না।
49. তখন আমি কহিলাম, হাঁ প্রভু সদাপ্রভু, তাহারা আমার বিষয়ে বলে, ব্যক্তি কি উপমাবাদী নয়?
Total 48 Chapters, Current Chapter 20 of Total Chapters 48
×

Alert

×

bengali Letters Keypad References