1. তিনি পর্ব্বত হইতে নামিলে বিস্তর লোক তাঁহার পশ্চাৎ পশ্চাৎ গমন করিল।
2. আর দেখ, এক জন কুষ্ঠী নিকটে আসিয়া তাঁহাকে প্রণাম করিয়া কহিল, হে প্রভু, যদি আপনার ইচ্ছা হয়, আমাকে শুচি করিতে পারেন।
3. তখন তিনি হাত বাড়াইয়া তাহাকে স্পর্শ করিলেন, কহিলেন, আমার ইচ্ছা, তুমি শুচীকৃত হও; আর তখনই সে কুষ্ঠ হইতে শুচীকৃত হইল।
4. পরে যীশু তাহাকে কহিলেন, দেখিও, এই কথা কাহাকেও বলিও না; কিন্তু যাজকের নিকটে গিয়া আপনাকে দেখাও, এবং মোশির আজ্ঞানুসারে নৈবেদ্য উৎসর্গ কর, তাহাদের কাছে সাক্ষ্য দিবার জন্য।
5. আর তিনি কফরনাহূমে প্রবেশ করিলে এক জন শতপতি তাঁহার নিকটে আসিয়া বিনতিপূর্ব্বক কহিলেন,
6. হে প্রভু, আমার দাস গৃহে পক্ষাঘাতে পড়িয়া আছে, ভয়ানক যাতনা পাইতেছে।
7. তিনি তাঁহাকে কহিলেন, আমি গিয়া তাহাকে সুস্থ করিব।
8. শতপতি উত্তর করিলেন, হে প্রভু, আমি এমন যোগ্য নই যে, আপনি আমার ছাদের নীচে আইসেন; কেবল বাক্যে বলুন, তাহাতেই আমার দাস সুস্থ হইবে।
9. কারণ আমিও কর্ত্তৃত্বের অধীন লোক, আবার সেনাগণ আমার অধীন; আমি তাহাদের এক জনকে ‘যাও’ বলিলে সে যায়, এবং অন্যকে ‘আইস’ বলিলে সে আইসে, আর আমার দাসকে ‘এই কর্ম্ম কর’ বলিলে সে তাহা করে।
10. এই কথা শুনিয়া যীশু আশ্চর্য্য জ্ঞান করিলেন, এবং যাহারা পশ্চাৎ পশ্চাৎ আসিতেছিল, তাহাদিগকে কহিলেন, আমি তোমাদিগকে সত্য বলিতেছি, ইস্রায়েলের মধ্যে কাহারও এত বড় বিশ্বাস দেখিতে পাই নাই।
11. আর আমি তোমাদিগকে বলিতেছি, অনেকে পূর্ব্ব ও পশ্চিম হইতে আসিবে, এবং অব্রাহাম, ইস্হাক ও যাকোবের সহিত স্বর্গ-রাজ্যে একত্র বসিবে;
12. কিন্তু রাজ্যের সন্তানদিগকে বাহিরের অন্ধকারে ফেলিয়া দেওয়া যাইবে; সেই স্থানে রোদন ও দন্তঘর্ষণ হইবে।
13. পরে যীশু সেই শতপতিকে কহিলেন, চলিয়া যাও, যেমন বিশ্বাস করিলে, তেমনি তোমার প্রতি হউক। আর সেই দণ্ডেই তাহার দাস সুস্থ হইল।
14. আর যীশু পিতরের গৃহে আসিয়া দেখিলেন, তাঁহার শাশুড়ী শয্যাগত, তাঁহার জ্বর হইয়াছে।
15. পরে তিনি তাঁহার হস্ত স্পর্শ করিলেন, আর জ্বর ছাড়িয়া গেল; তখন তিনি উঠিয়া যীশুর পরিচর্য্যা করিতে লাগিলেন।
16. আর সন্ধ্যা হইলে লোকেরা অনেক ভূতগ্রস্থকে তাঁহার নিকটে আনিল, তাহাতে তিনি বাক্য দ্বারাই সেই আত্মাগণকে ছাড়াইলেন, এবং সকল পীড়িত লোককে সুস্থ করিলেন;
17. যেন যিশাইয় ভাববাদী দ্বারা কথিত এই বচন পূর্ণ হয়, “তিনি আপনি আমাদের দুর্ব্বলতা সকল গ্রহণ করিলেন ও ব্যাধি সকল বহন করিলেন।”
18. আর যীশু আপনার চারিদিকে বিস্তর লোক দেখিয়া পরপারে যাইতে আজ্ঞা করিলেন।
19. তখন এক জন অধ্যাপক আসিয়া তাহাকে কহিলেন, হে গুরু, আপনি যে কোন স্থানে যাইবেন, আমি আপনার পশ্চাৎ পশ্চাৎ যাইব।
20. যীশু তাঁহাকে কহিলেন, শৃগালদের গর্ত্ত আছে, এবং আকাশের পক্ষিগণের বাসা আছে; কিন্তু মনুষ্যপুত্রের মস্তক রাখিবার স্থান নাই।
21. শিষ্যদের মধ্যে আর এক জন তাঁহাকে বলিলেন, হে প্রভু, অগ্রে আমার পিতাকে কবর দিয়া আসিতে অনুমতি করুন।
22. কিন্তু যীশু তাঁহাকে কহিলেন, আমার পশ্চাৎ আইস; মৃতেরাই আপন আপন মৃতদের কবর দিউক।
23. আর তিনি নৌকায় উঠিলে তাঁহার শিষ্যগণ তাঁহার পশ্চাৎ গেলেন।
24. আর দেখ, সমুদ্রে ভারী ঝড় আসিল, এমন কি, নৌকা তরঙ্গে আচ্ছন্ন হইতেছিল; কিন্তু তিনি নিদ্রাগত ছিলেন।
25. তখন তাঁহারা তাঁহার নিকটে গিয়া তাঁহাকে জাগাইয়া কহিলেন, হে প্রভু, রক্ষা করুন, আমরা মারা পড়িলাম।
26. তিনি তাঁহাদিগকে কহিলেন, হে অল্পবিশ্বাসীরা, কেন ভীরু হও? তখন তিনি উঠিয়া বায়ু ও সমুদ্রকে ধমক দিলেন; তাহাতে মহাশান্তি হইল।
27. আর সেই ব্যক্তিরা আশ্চর্য্য জ্ঞান করিয়া কহিলেন, আঃ! ইনি কেমন লোক, বায়ু ও সমুদ্রও যে ইঁহার আজ্ঞা মানে!
28. পরে তিনি পরপারে গাদারীয়দের দেশে গেলে দুই জন ভূতগ্রস্থ লোক কবরস্থান হইতে বাহির হইয়া তাঁহার সম্মুখে উপস্থিত হইল; তাহারা এত বড় দুর্দ্দান্ত ছিল যে, ঐ পথ দিয়া কেহই যাইতে পারিত না।
29. আর দেখ, তাহারা চেঁচাইয়া উঠিল, বলিল, হে ঈশ্বরের পুত্র, আপনার সহিত আমাদের সম্পর্ক কি? আপনি কি নিরূপিত সময়ের পূর্ব্বে আমাদিগকে যাতনা দিতে এখানে আসিলেন?
30. তখন তাহাদের হইতে কিছু দূরে বৃহৎ এক শূকর পাল চরিতেছিল।
31. তাহাতে ভূতেরা বিনতি করিয়া তাঁহাকে কহিল, যদি আমাদিগকে ছাড়ান, তবে ঐ শূকর-পালে পাঠাইয়া দিউন।
32. তিনি তাহাদিগকে কহিলেন, চলিয়া যাও। তখন তাহারা বাহির হইয়া সেই শূকর-পালে প্রবেশ করিল; আর দেখ, সমুদয় শূকর মহাবেগে ঢালু পাড় দিয়া দৌড়িয়া গিয়া সমুদ্রে পড়িল, ও জলে ডুবিয়া মরিল।
33. তখন পালকেরা পলায়ন করিল, এবং নগরে গিয়া সমস্ত বিষয়, বিশেষতঃ সেই ভূতগ্রস্তদের বিষয় বর্ণনা করিল।
34. আর দেখ, নগরের সমস্ত লোক যীশুর সহিত সাক্ষাৎ করিবার জন্য বাহির হইয়া আসিল, এবং তাঁহাকে দেখিয়া আপনাদের সীমা হইতে চলিয়া যাইতে বিনতি করিল।