পবিত্র বাইবেল

গডস গ্রেইস গিফট
আদিপুস্তক
1. আর যোষেফ আপন গৃহাধ্যক্ষকে আজ্ঞা করিলেন, এই লোকদের ছালায় যত শস্য ধরে, ভরিয়া দেও, এবং প্রতিজনের টাকা তাহার ছালার মুখে রাখ।
2. আর কনিষ্ঠের ছালার মুখে তাহার শস্যক্রয়ের টাকার সহিত আমার বাটি অর্থাৎ রৌপ্যের বাটি রাখ। তখন সে যোষেফের উক্ত কথানুসারে কার্য্য করিল।
3. আর প্রভাত হইবামাত্র তাঁহারা গর্দ্দভদিগের সহিত বিদায় পাইলেন।
4. তাঁহারা নগর হইতে বাহির হইয়া বিস্তর দূরে যাইতে না যাইতে যোষেফ আপন গৃহাধ্যক্ষকে কহিলেন, উঠ, ঐ লোকদের পশ্চাৎ দৌড়িয়া গিয়া তাহাদের সঙ্গ ধরিয়া বল, তোমরা উপকারের পরিবর্ত্তে কেন অপকার করিলে?
5. আমার প্রভু যাহাতে পান করেন ও যদ্দ্বারা গণনা করেন, এ কি সেই বাটি নয়? এই কর্ম্ম করায় তোমরা দোষ করিয়াছ।
6. পরে সে তাঁহাদিগের লাগাইল পাইয়া সেই কথা কহিল।
7. তাঁহারা বলিলেন, মহাশয়, কেন এমন কথা বলেন? আপনার দাসেরা যে এমন কর্ম্ম করিবে, তাহা দূরে থাকুক।
8. দেখুন, আমরা আপন আপন ছালার মুখে যে টাকা পাইয়াছিলাম, তাহা কনান দেশ হইতে পুনর্ব্বার আপনার কাছে আনিয়াছি; তবে আমরা কি কোন মতে আপনার প্রভুর গৃহ হইতে রৌপ্য বা স্বর্ণ চুরি করিব?
9. আপনার দাসদের মধ্যে যাহার নিকটে তাহা পাওয়া যায়, সে মরুক, এবং আমরাও প্রভুর দাস হইব।
10. সে কহিল, ভাল, এক্ষণে তোমাদের কথানুসারেই হউক; যাহার কাছে তাহা পাওয়া যাইবে, সে আমার দাস হইবে, কিন্তু আর সকলে নির্দ্দোষ হইবে।
11. তখন তাঁহারা শীঘ্র করিয়া আপনাদের ছালাগুলি ভূমিতে নামাইয়া প্রত্যেকে আপন আপন ছালা খুলিলেন।
12. আর সে জ্যেষ্ঠ অবধি আরম্ভ করিয়া কনিষ্ঠ পর্য্যন্ত খুঁজিল; আর বিন্যামীনের ছালায় সেই বাটি পাওয়া গেল।
13. তখন তাঁহারা আপন আপন বস্ত্র চিরিলেন, ও আপন আপন গর্দ্দভে ছালা চাপাইয়া নগরে ফিরিয়া গেলেন।
14. পরে যিহূদা ও তাঁহার ভ্রাতৃগণ যোষেফের বাটীতে আসিলেন; তিনি তখনও তথায় ছিলেন; আর তাঁহারা তাঁহার অগ্রে ভূতলে পড়িলেন।
15. তখন যোষেফ তাঁহাদিগকে কহিলেন, তোমরা এ কেমন কার্য্য করিলে? আমার মত পুরুষ অবশ্য গণনা করিতে পারে, ইহা কি তোমরা জান না?
16. যিহূদা কহিলেন, আমরা প্রভুর নিকটে কি উত্তর দিব? কি কথা কহিব? কিসেই বা আপনাদিগকে নির্দ্দোষ দেখাইব? ঈশ্বর আপনার দাসদের অপরাধ প্রকাশ করিয়াছেন, দেখুন, আমরা ও যাহার কাছে বাটি পাওয়া গিয়াছে, সকলেই প্রভুর দাস হইলাম।
17. যোষেফ কহিলেন, এমন কর্ম্ম আমা হইতে দূরে থাকুক; যাহার কাছে বাটি পাওয়া গিয়াছে, সেই আমার দাস হইবে, কিন্তু তোমরা কুশলে পিতার নিকটে প্রস্থান কর।
18. তখন যিহূদা নিকটে গিয়া কহিলেন, হে প্রভো, বিনয় করি, আপনার দাসকে প্রভুর কর্ণগোচরে একটি কথা বলিতে অনুমতি দিউন; এই দাসের প্রতি আপনার ক্রোধ প্রজ্বলিত না হউক,
19. কারণ আপনি ফরৌণের তুল্য। প্রভু এই দাসদিগকে জিজ্ঞাসা করিয়াছিলেন, তোমাদের পিতা কি ভ্রাতা আছে?
20. আমরা প্রভুকে উত্তর করিয়াছিলাম, আমাদের বৃদ্ধ পিতা আছেন, এবং তাঁহার বৃদ্ধাবস্থার এক কনিষ্ঠ পুত্র আছে; তাহার সহোদর মরিয়াছে; সেইমাত্র তাহার মাতার অবশিষ্ট পুত্র; এবং তাহার পিতা তাহাকে স্নেহ করেন।
21. পরে আপনি এই দাসদিগকে বলিয়াছিলেন, তোমরা আমার কাছে তাহাকে আন, আমি তাহাকে স্বচক্ষে দেখিব।
22. তখন আমরা প্রভুকে বলিয়াছিলাম, সেই যুবক পিতাকে ছাড়িয়া আসিতে পারিবে না, সে পিতাকে ছাড়িয়া আসিলে পিতা মরিয়া যাইবেন।
23. তাহাতে আপনি এই দাসদিগকে বলিয়াছিলেন, সেই ছোট ভাইটী তোমাদের সঙ্গে না আসিলে তোমরা আমার মুখ আর দেখিতে পাইবে না।
24. আমরা আপনার দাস যে আমার পিতা, তাঁহার নিকটে গিয়া তাঁহাকে প্রভুর সেই সকল কথা কহিলাম।
25. পরে আমাদের পিতা কহিলেন, তোমরা আবার যাও, আমাদের জন্য কিছু ভক্ষ্য কিনিয়া আন।
26. আমরা কহিলাম, যাইতে পারিব না; যদি ছোট ভাই আমাদের সঙ্গে থাকে, তবে যাই; কেননা ছোট ভাইটী সঙ্গে না থাকিলে আমরা সেই ব্যক্তির মুখ দেখিতে পাইব না।
27. তাহাতে আপনার দাস আমার পিতা কহিলেন, তোমরা জান, আমার সেই স্ত্রী হইতে দুইটী মাত্র সন্তান জন্মে।
28. তাহাদের মধ্যে এক জন আমার নিকট হইতে প্রস্থান করিল, আর আমি কহিলাম, সে নিশ্চয় খণ্ড খণ্ড হইয়াছে, এবং সেই অবধি আমি তাহাকে আর দেখিতে পাই নাই।
29. এখন আমার নিকট হইতে ইহাকেও লইয়া গেলে যদি ইহার কোন বিপদ ঘটে, তবে তোমরা শোকে এই পাকা চুলে আমাকে পাতালে নামাইয়া দিবে।
30. অতএব আপনার দাস যে আমার পিতা, আমি তাঁহার কাছে উপস্থিত হইলে আমাদের সঙ্গে যদি এই যুবক না থাকে,
31. তবে এই যুবকের প্রাণে তাঁহার প্রাণ বাঁধা আছে বলিয়া, যুবকটী নাই দেখিলে তিনি মারা পড়িবেন; এইরূপে আপনার এই দাসেরা শোকে পাকা চুলে আপনার দাস আমাদের পিতাকে পাতালে নামাইয়া দিবে।
32. আবার আপনার দাস আমি পিতার নিকটে এই যুবকটীর জামিন হইয়া বলিয়াছিলাম, আমি যদি তাহাকে তোমার নিকটে না আনি, তবে যাবজ্জীবন পিতার কাছে অপরাধী থাকিব।
33. অতএব বিনয় করি, প্রভুর নিকটে এই যুবকটীর পরিবর্ত্তে আপনার দাস আমি প্রভুর দাস হইয়া থাকি, কিন্তু এই যুবককে আপনি তাহার ভাইদের সঙ্গে যাইতে দিউন।
34. কেননা এই যুবকটী আমার সহিত না থাকিলে আমি কি প্রকারে পিতার নিকটে যাইতে পারি? পাছে পিতার যে আপদ ঘটিবে, তাহাই আমাকে দেখিতে হয়।

Notes

No Verse Added

Total 50 Chapters, Current Chapter 44 of Total Chapters 50
আদিপুস্তক 44
1. আর যোষেফ আপন গৃহাধ্যক্ষকে আজ্ঞা করিলেন, এই লোকদের ছালায় যত শস্য ধরে, ভরিয়া দেও, এবং প্রতিজনের টাকা তাহার ছালার মুখে রাখ।
2. আর কনিষ্ঠের ছালার মুখে তাহার শস্যক্রয়ের টাকার সহিত আমার বাটি অর্থাৎ রৌপ্যের বাটি রাখ। তখন সে যোষেফের উক্ত কথানুসারে কার্য্য করিল।
3. আর প্রভাত হইবামাত্র তাঁহারা গর্দ্দভদিগের সহিত বিদায় পাইলেন।
4. তাঁহারা নগর হইতে বাহির হইয়া বিস্তর দূরে যাইতে না যাইতে যোষেফ আপন গৃহাধ্যক্ষকে কহিলেন, উঠ, লোকদের পশ্চাৎ দৌড়িয়া গিয়া তাহাদের সঙ্গ ধরিয়া বল, তোমরা উপকারের পরিবর্ত্তে কেন অপকার করিলে?
5. আমার প্রভু যাহাতে পান করেন যদ্দ্বারা গণনা করেন, কি সেই বাটি নয়? এই কর্ম্ম করায় তোমরা দোষ করিয়াছ।
6. পরে সে তাঁহাদিগের লাগাইল পাইয়া সেই কথা কহিল।
7. তাঁহারা বলিলেন, মহাশয়, কেন এমন কথা বলেন? আপনার দাসেরা যে এমন কর্ম্ম করিবে, তাহা দূরে থাকুক।
8. দেখুন, আমরা আপন আপন ছালার মুখে যে টাকা পাইয়াছিলাম, তাহা কনান দেশ হইতে পুনর্ব্বার আপনার কাছে আনিয়াছি; তবে আমরা কি কোন মতে আপনার প্রভুর গৃহ হইতে রৌপ্য বা স্বর্ণ চুরি করিব?
9. আপনার দাসদের মধ্যে যাহার নিকটে তাহা পাওয়া যায়, সে মরুক, এবং আমরাও প্রভুর দাস হইব।
10. সে কহিল, ভাল, এক্ষণে তোমাদের কথানুসারেই হউক; যাহার কাছে তাহা পাওয়া যাইবে, সে আমার দাস হইবে, কিন্তু আর সকলে নির্দ্দোষ হইবে।
11. তখন তাঁহারা শীঘ্র করিয়া আপনাদের ছালাগুলি ভূমিতে নামাইয়া প্রত্যেকে আপন আপন ছালা খুলিলেন।
12. আর সে জ্যেষ্ঠ অবধি আরম্ভ করিয়া কনিষ্ঠ পর্য্যন্ত খুঁজিল; আর বিন্যামীনের ছালায় সেই বাটি পাওয়া গেল।
13. তখন তাঁহারা আপন আপন বস্ত্র চিরিলেন, আপন আপন গর্দ্দভে ছালা চাপাইয়া নগরে ফিরিয়া গেলেন।
14. পরে যিহূদা তাঁহার ভ্রাতৃগণ যোষেফের বাটীতে আসিলেন; তিনি তখনও তথায় ছিলেন; আর তাঁহারা তাঁহার অগ্রে ভূতলে পড়িলেন।
15. তখন যোষেফ তাঁহাদিগকে কহিলেন, তোমরা কেমন কার্য্য করিলে? আমার মত পুরুষ অবশ্য গণনা করিতে পারে, ইহা কি তোমরা জান না?
16. যিহূদা কহিলেন, আমরা প্রভুর নিকটে কি উত্তর দিব? কি কথা কহিব? কিসেই বা আপনাদিগকে নির্দ্দোষ দেখাইব? ঈশ্বর আপনার দাসদের অপরাধ প্রকাশ করিয়াছেন, দেখুন, আমরা যাহার কাছে বাটি পাওয়া গিয়াছে, সকলেই প্রভুর দাস হইলাম।
17. যোষেফ কহিলেন, এমন কর্ম্ম আমা হইতে দূরে থাকুক; যাহার কাছে বাটি পাওয়া গিয়াছে, সেই আমার দাস হইবে, কিন্তু তোমরা কুশলে পিতার নিকটে প্রস্থান কর।
18. তখন যিহূদা নিকটে গিয়া কহিলেন, হে প্রভো, বিনয় করি, আপনার দাসকে প্রভুর কর্ণগোচরে একটি কথা বলিতে অনুমতি দিউন; এই দাসের প্রতি আপনার ক্রোধ প্রজ্বলিত না হউক,
19. কারণ আপনি ফরৌণের তুল্য। প্রভু এই দাসদিগকে জিজ্ঞাসা করিয়াছিলেন, তোমাদের পিতা কি ভ্রাতা আছে?
20. আমরা প্রভুকে উত্তর করিয়াছিলাম, আমাদের বৃদ্ধ পিতা আছেন, এবং তাঁহার বৃদ্ধাবস্থার এক কনিষ্ঠ পুত্র আছে; তাহার সহোদর মরিয়াছে; সেইমাত্র তাহার মাতার অবশিষ্ট পুত্র; এবং তাহার পিতা তাহাকে স্নেহ করেন।
21. পরে আপনি এই দাসদিগকে বলিয়াছিলেন, তোমরা আমার কাছে তাহাকে আন, আমি তাহাকে স্বচক্ষে দেখিব।
22. তখন আমরা প্রভুকে বলিয়াছিলাম, সেই যুবক পিতাকে ছাড়িয়া আসিতে পারিবে না, সে পিতাকে ছাড়িয়া আসিলে পিতা মরিয়া যাইবেন।
23. তাহাতে আপনি এই দাসদিগকে বলিয়াছিলেন, সেই ছোট ভাইটী তোমাদের সঙ্গে না আসিলে তোমরা আমার মুখ আর দেখিতে পাইবে না।
24. আমরা আপনার দাস যে আমার পিতা, তাঁহার নিকটে গিয়া তাঁহাকে প্রভুর সেই সকল কথা কহিলাম।
25. পরে আমাদের পিতা কহিলেন, তোমরা আবার যাও, আমাদের জন্য কিছু ভক্ষ্য কিনিয়া আন।
26. আমরা কহিলাম, যাইতে পারিব না; যদি ছোট ভাই আমাদের সঙ্গে থাকে, তবে যাই; কেননা ছোট ভাইটী সঙ্গে না থাকিলে আমরা সেই ব্যক্তির মুখ দেখিতে পাইব না।
27. তাহাতে আপনার দাস আমার পিতা কহিলেন, তোমরা জান, আমার সেই স্ত্রী হইতে দুইটী মাত্র সন্তান জন্মে।
28. তাহাদের মধ্যে এক জন আমার নিকট হইতে প্রস্থান করিল, আর আমি কহিলাম, সে নিশ্চয় খণ্ড খণ্ড হইয়াছে, এবং সেই অবধি আমি তাহাকে আর দেখিতে পাই নাই।
29. এখন আমার নিকট হইতে ইহাকেও লইয়া গেলে যদি ইহার কোন বিপদ ঘটে, তবে তোমরা শোকে এই পাকা চুলে আমাকে পাতালে নামাইয়া দিবে।
30. অতএব আপনার দাস যে আমার পিতা, আমি তাঁহার কাছে উপস্থিত হইলে আমাদের সঙ্গে যদি এই যুবক না থাকে,
31. তবে এই যুবকের প্রাণে তাঁহার প্রাণ বাঁধা আছে বলিয়া, যুবকটী নাই দেখিলে তিনি মারা পড়িবেন; এইরূপে আপনার এই দাসেরা শোকে পাকা চুলে আপনার দাস আমাদের পিতাকে পাতালে নামাইয়া দিবে।
32. আবার আপনার দাস আমি পিতার নিকটে এই যুবকটীর জামিন হইয়া বলিয়াছিলাম, আমি যদি তাহাকে তোমার নিকটে না আনি, তবে যাবজ্জীবন পিতার কাছে অপরাধী থাকিব।
33. অতএব বিনয় করি, প্রভুর নিকটে এই যুবকটীর পরিবর্ত্তে আপনার দাস আমি প্রভুর দাস হইয়া থাকি, কিন্তু এই যুবককে আপনি তাহার ভাইদের সঙ্গে যাইতে দিউন।
34. কেননা এই যুবকটী আমার সহিত না থাকিলে আমি কি প্রকারে পিতার নিকটে যাইতে পারি? পাছে পিতার যে আপদ ঘটিবে, তাহাই আমাকে দেখিতে হয়।
Total 50 Chapters, Current Chapter 44 of Total Chapters 50
×

Alert

×

bengali Letters Keypad References