পবিত্র বাইবেল

গডস গ্রেইস গিফট
ইসাইয়া
1. হে উপকূল সকল, আমার বাক্য শুন; হে দূরস্থ জাতিগণ, কর্ণপাত কর। সদাপ্রভু গর্ভাবধি আমাকে ডাকিয়াছেন, মাতার উদর হইতে আমার নাম উল্লেখ করিয়াছেন।
2. তিনি আমার মুখ তীক্ষ্ণ খড়্‌গস্বরূপ করিয়াছেন, আপন হস্তের ছায়াতে আমাকে লুক্কায়িত করিয়াছেন, এবং আমাকে শাণিত বাণস্বরূপ করিয়াছেন, আপন তূণের মধ্যে রাখিয়াছেন।
3. আর তিনি আমাকে বলিয়াছেন ‘তুমি আমার দাস, তুমি ইস্রায়েল, তোমাতেই আমি মহিমান্বিত হইব’।
4. কিন্তু আমি কহিলাম, আহা! আমি পণ্ডশ্রম করিয়াছি, শূন্যতার ও অসারতার জন্য আপন শক্তি ব্যয় করিয়াছি; নিশ্চয়ই আমার বিচার সদাপ্রভুর কাছে, ও আমার শ্রমের ফল আমার ঈশ্বরের কাছে রহিয়াছে।
5. আর এখন সদাপ্রভু বলেন; যিনি আমাকে গর্ভাবধি নির্ম্মাণ করিয়াছেন, যেন আমি তাঁহার দাস হইয়া যাকোবকে তাঁহার কাছে পুনরানয়ন করি, যেন ইস্রায়েল তাঁহার কাছে সংগৃহিত হয়; —বাস্তবিক, সদাপ্রভুর দৃষ্টিতে আমি সম্মানিত, এবং আমার ঈশ্বর আমার বল হইয়াছেন;
6. —তিনি বলেন, তুমি যে যাকোবের বংশ সকলকে উঠাইবার জন্য ও ইস্রায়েলের রক্ষিত লোকদিগকে পুনর্ব্বার আনিবার জন্য আমার দাস হও, ইহা লঘু বিষয়; আমি তোমাকে জাতিগণের দীপ্তিস্বরূপ করিব, যেন তুমি পৃথিবীর সীমা পর্য্যন্ত আমার পরিত্রাণস্বরূপ হও।
7. যে ব্যক্তি মনুষ্যের অবজ্ঞাত, প্রজাবৃন্দের ঘৃণাস্পদ ও কর্ত্তৃত্বকারীদের দাস, তাহাকে সদাপ্রভু, ইস্রায়েলের মুক্তিদাতা ও তাহার পবিত্রতম, এই কথা কহেন, তোমাকে দেখিলে রাজারা উঠিয়া দাঁড়াইবে, অধ্যক্ষেরা প্রণিপাত করিবে; সদাপ্রভুর নিমিত্তই করিবে, তিনি ত বিশ্বসনীয়; ইস্রায়েলের পবিত্রতমের নিমিত্ত করিবে, তিনি ত তোমাকে মনোনীত করিয়াছেন।
8. সদাপ্রভু এই কথা কহেন, আমি প্রসন্নতার সময়ে তোমার প্রার্থনার উত্তর দিয়াছি, এবং পরিত্রাণের দিবসে তোমার সাহায্য করিয়াছি; আর আমি তোমাকে রক্ষা করিব, ও প্রজাবৃন্দের সন্ধিরূপে নিযুক্ত করিব; তাহাতে তুমি দেশের উন্নতি সাধন করিবে, ও ধ্বংসিত অধিকার সকল অধিকারে আনিবে;
9. তুমি বন্দিগণকে বলিবে, বাহির হও; যাহারা অন্ধকারে আছে, তাহাদিগকে বলিবে প্রকাশিত হও। তাহারা পথে পথে চরিবে, ও বৃক্ষশূন্য গিরিশ্রেণী তাহাদের চরাণিস্থান হইবে।
10. তাহারা ক্ষুধিত কি পিপাসিত হইবে না; এবং তপ্ত বালুকা কি রৌদ্র দ্বারা আহত হইবে না; কেননা যিনি তাহাদের প্রতি দয়াকারী, তিনি তাহাদিগকে চরাইবেন, জলের উনুইয়ের নিকটে লইয়া যাইবেন।
11. আর আমি আমার সমস্ত পর্ব্বত পথ করিব, আর আমার রাজপথ সকল উচ্চীকৃত হইবে।
12. দেখ, ইহারা দূর হইতে আসিবে; আর দেখ, উহারা উত্তর ও পশ্চিম দিক্‌ হইতে আসিবে; আর ঐ লোকেরা সীনীম দেশ হইতে আসিবে।
13. আকাশমণ্ডল, আনন্দ-রব কর, পৃথিবী, উল্লাসিত হও; পর্ব্বতগণ, উচ্চৈঃস্বরে আনন্দগান কর; কেননা সদাপ্রভু আপন প্রজাগণকে সান্ত্বনা করিয়াছেন, আর আপন দুঃখীদের প্রতি করুণা করিবেন।
14. কিন্তু সিয়োন কহিল, সদাপ্রভু আমাকে ত্যাগ করিয়াছেন, প্রভু আমাকে ভুলিয়া গিয়াছেন।
15. স্ত্রীলোক কি আপন স্তন্যপায়ী শিশুকে ভুলিয়া যাইতে পারে? আপন গর্ভজাত বালকের প্রতি কি স্নেহ করিবে না? বরং তাহারা ভুলিয়া যাইতে পারে, তথাপি আমি তোমাকে ভুলিয়া যাইব না।
16. দেখ, আমি আপন হস্তের তালুতে তোমার আকৃতি লিখিয়াছি, তোমার প্রাচীর সর্ব্বদা আমার সম্মুখে আছে।
17. তোমার পুত্রেরা ত্বরা করিতেছে, তোমার উৎপাটনকারীরা ও উৎসন্নকারীরা তোমার মধ্য হইতে নির্গত হইবে।
18. তুমি চারিদিকে চক্ষু তুলিয়া দেখ, এই সকলে একত্র হইয়া তোমার কাছে আসিতেছে। সদাপ্রভু কহেন, আমার জীবনের দিব্য, তুমি ভূষণের ন্যায় এই সকলকে পরিধান করিবে, কন্যার মেখলার ন্যায় এই সকলকে ধারণ করিবে।
19. কারণ তোমার উৎসন্ন ও ধ্বংসিত স্থান সকলের এবং তোমার নষ্ট দেশের বিষয় [বলিতেছি]; এক্ষণে তুমি নিবাসীদের পক্ষে সঙ্কীর্ণ হইবে, এবং যাহারা তোমাকে গ্রাস করিয়াছিল, তাহারা দূরে থাকিবে।
20. তোমার বিরহের সন্তানগণ ইহার পরে তোমার কর্ণগোচরে বলিবে, আমার পক্ষে এই স্থান সঙ্কীর্ণ; সরিয়া যাও, আমাকে বাস করিতে দেও।
21. তখন তুমি মনে মনে বলিবে, আমার এই সকলকে কে জন্ম দিয়াছে? আমি ত সন্তান-বিরহিতা ও বন্ধ্যা, নির্ব্বাসিতা ও পরিভ্রান্তা ছিলাম; ইহাদিগকে কে প্রতিপালন করিয়াছে? দেখ, আমি একাকিনী অবশিষ্টা ছিলাম, ইহারা কোথায় ছিল?
22. প্রভু সদাপ্রভু এই কথা কহেন, দেখ, আমি জাতিগণের প্রতি আমার হস্ত তুলিব, লোকবৃন্দের প্রতি আমার পতাকা উঠাইব, তাহাতে তাহারা তোমার পুত্রগণকে কোলে করিয়া, ও তোমার কন্যাদিগকে কাঁধে করিয়া আনিয়া দিবে।
23. আর রাজগণ তোমার রক্ষণাবেক্ষণকারী পালক ও তাহাদের রাণীরা তোমার ধাত্রী হইবে; তাহারা ভূমিতে মুখ দিয়া তোমার কাছে প্রণিপাত করিবে, ও তোমার চরণের ধূলি চাটিবে; আর তুমি জানিতে পারিবে, আমিই সদাপ্রভু; যাহারা আমার অপেক্ষা করে, তাহারা লজ্জিত হইবে না।
24. বীর হইতে কি যুদ্ধে ধৃত প্রাণী হরণ করা যায়? কিম্বা ন্যায়বানের বন্দিগণকে কি মুক্ত করা যায়?
25. সদাপ্রভু এই কথা কহেন, অবশ্য বীরের বন্দিগণকে হরণ করা যাইবে, ও ভীমবিক্রান্তের ধৃত প্রাণীকে মুক্ত করা যাইবে; কারণ তোমার প্রতিবাদীর সহিত আমিই বিবাদ করিব, আর তোমার সন্তানদিগকে আমিই ত্রাণ করিব।
26. আর আমি তোমার উপদ্রবকারিগণকে তাহাদেরই মাংস ভোজন করাইব; তাহারা নূতন দ্রাক্ষারসের ন্যায় আপন আপন রক্তে মত্ত হইবে; আর মর্ত্ত্যমাত্র জানিতে পারিবে যে, আমিই সদাপ্রভু তোমার ত্রাণকর্ত্তা, তোমার মুক্তিদাতা, যাকোবের এক বীর।

Notes

No Verse Added

Total 66 Chapters, Current Chapter 49 of Total Chapters 66
ইসাইয়া 49:31
1. হে উপকূল সকল, আমার বাক্য শুন; হে দূরস্থ জাতিগণ, কর্ণপাত কর। সদাপ্রভু গর্ভাবধি আমাকে ডাকিয়াছেন, মাতার উদর হইতে আমার নাম উল্লেখ করিয়াছেন।
2. তিনি আমার মুখ তীক্ষ্ণ খড়্‌গস্বরূপ করিয়াছেন, আপন হস্তের ছায়াতে আমাকে লুক্কায়িত করিয়াছেন, এবং আমাকে শাণিত বাণস্বরূপ করিয়াছেন, আপন তূণের মধ্যে রাখিয়াছেন।
3. আর তিনি আমাকে বলিয়াছেন ‘তুমি আমার দাস, তুমি ইস্রায়েল, তোমাতেই আমি মহিমান্বিত হইব’।
4. কিন্তু আমি কহিলাম, আহা! আমি পণ্ডশ্রম করিয়াছি, শূন্যতার অসারতার জন্য আপন শক্তি ব্যয় করিয়াছি; নিশ্চয়ই আমার বিচার সদাপ্রভুর কাছে, আমার শ্রমের ফল আমার ঈশ্বরের কাছে রহিয়াছে।
5. আর এখন সদাপ্রভু বলেন; যিনি আমাকে গর্ভাবধি নির্ম্মাণ করিয়াছেন, যেন আমি তাঁহার দাস হইয়া যাকোবকে তাঁহার কাছে পুনরানয়ন করি, যেন ইস্রায়েল তাঁহার কাছে সংগৃহিত হয়; —বাস্তবিক, সদাপ্রভুর দৃষ্টিতে আমি সম্মানিত, এবং আমার ঈশ্বর আমার বল হইয়াছেন;
6. —তিনি বলেন, তুমি যে যাকোবের বংশ সকলকে উঠাইবার জন্য ইস্রায়েলের রক্ষিত লোকদিগকে পুনর্ব্বার আনিবার জন্য আমার দাস হও, ইহা লঘু বিষয়; আমি তোমাকে জাতিগণের দীপ্তিস্বরূপ করিব, যেন তুমি পৃথিবীর সীমা পর্য্যন্ত আমার পরিত্রাণস্বরূপ হও।
7. যে ব্যক্তি মনুষ্যের অবজ্ঞাত, প্রজাবৃন্দের ঘৃণাস্পদ কর্ত্তৃত্বকারীদের দাস, তাহাকে সদাপ্রভু, ইস্রায়েলের মুক্তিদাতা তাহার পবিত্রতম, এই কথা কহেন, তোমাকে দেখিলে রাজারা উঠিয়া দাঁড়াইবে, অধ্যক্ষেরা প্রণিপাত করিবে; সদাপ্রভুর নিমিত্তই করিবে, তিনি বিশ্বসনীয়; ইস্রায়েলের পবিত্রতমের নিমিত্ত করিবে, তিনি তোমাকে মনোনীত করিয়াছেন।
8. সদাপ্রভু এই কথা কহেন, আমি প্রসন্নতার সময়ে তোমার প্রার্থনার উত্তর দিয়াছি, এবং পরিত্রাণের দিবসে তোমার সাহায্য করিয়াছি; আর আমি তোমাকে রক্ষা করিব, প্রজাবৃন্দের সন্ধিরূপে নিযুক্ত করিব; তাহাতে তুমি দেশের উন্নতি সাধন করিবে, ধ্বংসিত অধিকার সকল অধিকারে আনিবে;
9. তুমি বন্দিগণকে বলিবে, বাহির হও; যাহারা অন্ধকারে আছে, তাহাদিগকে বলিবে প্রকাশিত হও। তাহারা পথে পথে চরিবে, বৃক্ষশূন্য গিরিশ্রেণী তাহাদের চরাণিস্থান হইবে।
10. তাহারা ক্ষুধিত কি পিপাসিত হইবে না; এবং তপ্ত বালুকা কি রৌদ্র দ্বারা আহত হইবে না; কেননা যিনি তাহাদের প্রতি দয়াকারী, তিনি তাহাদিগকে চরাইবেন, জলের উনুইয়ের নিকটে লইয়া যাইবেন।
11. আর আমি আমার সমস্ত পর্ব্বত পথ করিব, আর আমার রাজপথ সকল উচ্চীকৃত হইবে।
12. দেখ, ইহারা দূর হইতে আসিবে; আর দেখ, উহারা উত্তর পশ্চিম দিক্‌ হইতে আসিবে; আর লোকেরা সীনীম দেশ হইতে আসিবে।
13. আকাশমণ্ডল, আনন্দ-রব কর, পৃথিবী, উল্লাসিত হও; পর্ব্বতগণ, উচ্চৈঃস্বরে আনন্দগান কর; কেননা সদাপ্রভু আপন প্রজাগণকে সান্ত্বনা করিয়াছেন, আর আপন দুঃখীদের প্রতি করুণা করিবেন।
14. কিন্তু সিয়োন কহিল, সদাপ্রভু আমাকে ত্যাগ করিয়াছেন, প্রভু আমাকে ভুলিয়া গিয়াছেন।
15. স্ত্রীলোক কি আপন স্তন্যপায়ী শিশুকে ভুলিয়া যাইতে পারে? আপন গর্ভজাত বালকের প্রতি কি স্নেহ করিবে না? বরং তাহারা ভুলিয়া যাইতে পারে, তথাপি আমি তোমাকে ভুলিয়া যাইব না।
16. দেখ, আমি আপন হস্তের তালুতে তোমার আকৃতি লিখিয়াছি, তোমার প্রাচীর সর্ব্বদা আমার সম্মুখে আছে।
17. তোমার পুত্রেরা ত্বরা করিতেছে, তোমার উৎপাটনকারীরা উৎসন্নকারীরা তোমার মধ্য হইতে নির্গত হইবে।
18. তুমি চারিদিকে চক্ষু তুলিয়া দেখ, এই সকলে একত্র হইয়া তোমার কাছে আসিতেছে। সদাপ্রভু কহেন, আমার জীবনের দিব্য, তুমি ভূষণের ন্যায় এই সকলকে পরিধান করিবে, কন্যার মেখলার ন্যায় এই সকলকে ধারণ করিবে।
19. কারণ তোমার উৎসন্ন ধ্বংসিত স্থান সকলের এবং তোমার নষ্ট দেশের বিষয় বলিতেছি; এক্ষণে তুমি নিবাসীদের পক্ষে সঙ্কীর্ণ হইবে, এবং যাহারা তোমাকে গ্রাস করিয়াছিল, তাহারা দূরে থাকিবে।
20. তোমার বিরহের সন্তানগণ ইহার পরে তোমার কর্ণগোচরে বলিবে, আমার পক্ষে এই স্থান সঙ্কীর্ণ; সরিয়া যাও, আমাকে বাস করিতে দেও।
21. তখন তুমি মনে মনে বলিবে, আমার এই সকলকে কে জন্ম দিয়াছে? আমি সন্তান-বিরহিতা বন্ধ্যা, নির্ব্বাসিতা পরিভ্রান্তা ছিলাম; ইহাদিগকে কে প্রতিপালন করিয়াছে? দেখ, আমি একাকিনী অবশিষ্টা ছিলাম, ইহারা কোথায় ছিল?
22. প্রভু সদাপ্রভু এই কথা কহেন, দেখ, আমি জাতিগণের প্রতি আমার হস্ত তুলিব, লোকবৃন্দের প্রতি আমার পতাকা উঠাইব, তাহাতে তাহারা তোমার পুত্রগণকে কোলে করিয়া, তোমার কন্যাদিগকে কাঁধে করিয়া আনিয়া দিবে।
23. আর রাজগণ তোমার রক্ষণাবেক্ষণকারী পালক তাহাদের রাণীরা তোমার ধাত্রী হইবে; তাহারা ভূমিতে মুখ দিয়া তোমার কাছে প্রণিপাত করিবে, তোমার চরণের ধূলি চাটিবে; আর তুমি জানিতে পারিবে, আমিই সদাপ্রভু; যাহারা আমার অপেক্ষা করে, তাহারা লজ্জিত হইবে না।
24. বীর হইতে কি যুদ্ধে ধৃত প্রাণী হরণ করা যায়? কিম্বা ন্যায়বানের বন্দিগণকে কি মুক্ত করা যায়?
25. সদাপ্রভু এই কথা কহেন, অবশ্য বীরের বন্দিগণকে হরণ করা যাইবে, ভীমবিক্রান্তের ধৃত প্রাণীকে মুক্ত করা যাইবে; কারণ তোমার প্রতিবাদীর সহিত আমিই বিবাদ করিব, আর তোমার সন্তানদিগকে আমিই ত্রাণ করিব।
26. আর আমি তোমার উপদ্রবকারিগণকে তাহাদেরই মাংস ভোজন করাইব; তাহারা নূতন দ্রাক্ষারসের ন্যায় আপন আপন রক্তে মত্ত হইবে; আর মর্ত্ত্যমাত্র জানিতে পারিবে যে, আমিই সদাপ্রভু তোমার ত্রাণকর্ত্তা, তোমার মুক্তিদাতা, যাকোবের এক বীর।
Total 66 Chapters, Current Chapter 49 of Total Chapters 66
×

Alert

×

bengali Letters Keypad References