2. তোমাদের মহতী শান্তি হউক। পরাৎপর ঈশ্বর আমার পক্ষে যে সকল চিহ্ন-কার্য্য ও আশ্চর্য্য কার্য্য সাধন করিয়াছেন, তাহা আমি প্রচার করা বিহিত বুঝিলাম।
|
3. আহা! তাঁহার চিহ্ন সকল কেমন মহৎ! তাঁহার আশ্চর্য্য কার্য্য সকল কেমন পরাক্রমশালী! তাঁহার রাজ্য অনন্তকালীন রাজ্য, ও তাঁহার কর্ত্তৃত্ব পুরুষানুক্রমে স্থায়ী।
|
5. আমি এক স্বপ্ন দেখিলাম, তাহা আমার ত্রাসজনক হইল, এবং শয্যার উপরে নানা চিন্তা ও মনের দর্শন আমাকে বিহ্বল করিল।
|
6. অতএব সেই স্বপ্নের তাৎপর্য্য আমাকে জানাইবার জন্য আমি বাবিলের সমস্ত বিদ্বান্ লোককে আমার নিকটে আনিতে আজ্ঞা করিলাম।
|
7. পরে মন্ত্রবেত্তা, গণক, কল্দীয় ও জ্যোতির্ব্বেত্তারা আমার কাছে আসিলে আমি তাহাদের কাছে সেই স্বপ্ন বলিলাম; কিন্তু তাহারা আমাকে তাহার তাৎপর্য্য বলিতে পারিল না।
|
8. অবশেষে দানিয়েল, যাঁহার নাম আমার দেবের নামানুসারে বেল্টশৎসর, যাঁহার অন্তরে পবিত্র দেবগণের আত্মা আছেন, তিনি আমার সম্মুখে আসিলেন, আর আমি তাঁহার কাছে সেই স্বপ্ন বলিলাম; যথা—
|
9. হে মন্ত্রবেত্তাগণের অধ্যক্ষ বেল্টশৎসর, আমি জানি, পবিত্র দেবগণের আত্মা তোমার অন্তরে আছেন, এবং কোন নিগূঢ় বাক্য তোমার পক্ষে কষ্টকর নহে; আমি স্বপ্নে যে যে দর্শন পাইয়াছি, তাহা ও তাহার তাৎপর্য্য আমাকে জ্ঞাত কর।
|
10. শয্যার উপরে আমার মনের দর্শন এই; আমি দৃষ্টিপাত করিলাম, আর দেখ পৃথিবীর মধ্যস্থলে এক বৃক্ষ রহিয়াছে, তাহা উচ্চে বৃহৎ।
|
11. সেই বৃক্ষ বৃদ্ধি পাইয়া বলবান ও উচ্চতায় গগনস্পর্শী হইল, সমস্ত পৃথিবীর প্রান্ত পর্য্যন্ত দৃশ্যমান হইল।
|
12. তাহার সুন্দর সুন্দর পত্র ও বিস্তর ফল ছিল; তাহার মধ্যে সকলের জন্য খাদ্য ছিল; তাহার তলে মাঠের পশুগণ ছায়া প্রাপ্ত হইত, তাহার শাখায় আকাশের পক্ষিগণ বাস করিত, এবং সমস্ত প্রাণী তাহা হইতে খাদ্য পাইত।
|
13. পরে আমি আমার শয্যার উপরে মনের দর্শনে দৃষ্টিপাত করিলাম, আর দেখ, এক জন প্রহরী, এক পবিত্র ব্যক্তি, স্বর্গ হইতে নামিয়া আসিলেন।
|
14. তিনি উচ্চৈঃস্বরে এই কথা কহিলেন, বৃক্ষটী ছেদন কর, উহার শাখা কাটিয়া ফেল, উহার পত্র ঝাড়িয়া ফেল, এবং উহার ফল ছড়াইয়া দেও; উহার তল হইতে পশুগণ ও উহার শাখা হইতে পক্ষিগণ চলিয়া যাউক।
|
15. কিন্তু ভূমিতে উহার মূলের কাণ্ডকে লৌহ ও পিত্তলের শৃঙ্খলে বদ্ধ করিয়া ক্ষেত্রের কোমল তৃণমধ্যে রাখ; আর সে আকাশের শিশিরে ভিজুক, এবং পশুদের সহিত পৃথিবীর তৃণে তাহার অংশ হউক;
|
16. তাহার হৃদয় মানুষের না থাকিয়া পরিবর্ত্তিত হউক, ও তাহাকে পশুর হৃদয় দত্ত হউক; এবং তাহার উপরে সাত কাল ঘুরুক।
|
17. এই বার্ত্তা প্রহরীবর্গের আদেশে, ও এই বিষয়টী পবিত্রগণের কথায় দত্ত হইল; অভিপ্রায় এই, যেন জীবিত লোকেরা জানিতে পারে যে, মনুষ্যদের রাজ্যে পরাৎপর কর্ত্তৃত্ব করেন, যাহাকে তাহা দিতে ইচ্ছা করেন, তাহাকে তাহা দেন, ও মনুষ্যদের মধ্যে অতি নীচ ব্যক্তিকে তাহার উপরে নিযুক্ত করেন।
|
18. আমি রাজা নবূখদ্নিৎসর এই স্বপ্ন দেখিয়াছি; এখন হে বেল্টশৎসর, তুমি তাৎপর্য্য বল, কেননা আমার রাজ্যস্থ কোন বিদ্বান্ আমাকে তাৎপর্য্য বলিতে পারে না, কিন্তু তুমি বলিতে পার, কেননা তোমার অন্তরে পবিত্র দেবগণের আত্মা আছেন।
|
19. তখন দানিয়েল, যাঁহার নাম বেল্টশৎসর, কিয়ৎকাল স্তম্ভিত হইয়া রহিলেন, ভাবনাতে বিহ্বল হইলেন। রাজা কহিলেন, হে বেল্টশৎসর, সেই স্বপ্ন ও তাহার তাৎপর্য্য তোমাকে বিহ্বল না করুক। বেল্টশৎসর উত্তর করিলেন, হে আমার প্রভু, এই স্বপ্ন আপনার শত্রুগণের প্রতি ঘটুক, ও ইহার তাৎপর্য্য আপনার বিপক্ষ লোকদের প্রতি ঘটুক।
|
20. আপনি যে বৃক্ষটী দেখিয়াছেন, যাহা বৃদ্ধি পাইল, বলবান হইয়া উঠিল, যাহার উচ্চতা আকাশ পর্য্যন্ত পৌঁছিল, ও যাহা সমস্ত পৃথিবীতে দৃশ্যমান হইল,
|
21. যাহার পত্র সুন্দর ও ফল বিস্তর ছিল, যাহাতে সকলের জন্য খাদ্য ছিল, যাহার তলে মাঠের পশুগণ বাস করিত, এবং যাহার শাখাতে আকাশের পক্ষিগণ বসতি করিত; হে রাজন, সেই বৃক্ষ আপনি।
|
22. আপনি বৃদ্ধি পাইয়াছেন, বলবান হইয়া উঠিয়াছেন, আপনার মহিমা বৃদ্ধি পাইয়াছে, আকাশ পর্য্যন্ত পৌঁছিয়াছে, এবং আপনার কর্ত্তৃত্ব পৃথিবীর প্রান্ত পর্য্যন্ত ব্যাপিয়াছে।
|
23. আর মহারাজ দেখিয়াছেন, এক জন প্রহরী, এক পবিত্র ব্যক্তি, স্বর্গ হইতে নামিয়া আসিতেছেন, আর বলিতেছেন, ‘বৃক্ষটা ছেদন কর ও বিনষ্ট কর, কিন্তু ভূমিতে উহার মূলের কাণ্ডকে লৌহ ও পিত্তলের শৃঙ্খলে বদ্ধ করিয়া ক্ষেত্রের কোমল তৃণমধ্যে রাখ; সে আকাশের শিশিরে ভিজুক, মাঠের পশুদের সহিত তাহার অংশ হউক, যে পর্য্যন্ত না তাহার উপরে সাত কাল ঘূরে।’
|
25. আপনি মানব-সমাজ হইতে দূরীকৃত হইবেন, মাঠের পশুদের সহিত আপনার বসতি হইবে, বলদের ন্যায় আপনাকে তৃণ ভোজন করিতে দেওয়া যাইবে, আপনি আকাশের শিশিরে ভিজিবেন, এবং আপনার উপরে সাত কাল ঘূরিবে; যে পর্য্যন্ত না আপনি জানিবেন যে, মনুষ্যদের রাজ্যে পরাৎপর কর্ত্তৃত্ব করেন, ও যাহাকে তাহা দিতে ইচ্ছা করেন, তাহাকে তাহা দেন।
|
26. আর বৃক্ষমূলের কাণ্ড রাখিবার আজ্ঞা প্রদত্ত হইয়াছিল; সুতরাং আপনি যখন জানিতে পাইবেন যে, স্বর্গই কর্ত্তৃত্ব করে, তখন আপনার হস্তে আপনার রাজত্ব স্থির হইবে।
|
27. অতএব, হে রাজন্, আপনি আমার পরামর্শ গ্রাহ্য করুন; আপনি ধার্ম্মিকতা দ্বারা আপন পাপ সকল, ও দুঃখীদের প্রতি কৃপা প্রদর্শন দ্বারা আপন অপরাধ সকল মুছিয়া ফেলুন; হয় ত আপনার শান্তিকাল বৃদ্ধি পাইবে।
|
30. রাজা এই কথা কহিলেন, এ কি সেই মহতী বাবিল নয়, যাহা আমি আপন বলের প্রভাবে ও আপন প্রতাপের মহিমার্থে রাজধানী করিবার জন্য নির্ম্মাণ করিয়াছি?
|
31. রাজার মুখ হইতে এই বাক্য নির্গত হইতে না হইতে এই আকাশবাণী হইল, হে রাজন্ নবূখদ্নিৎসর! তোমাকে বলা হইতেছে, তোমার রাজত্ব তোমা হইতে গেল।
|
32. আর তুমি মানব-সমাজ হইতে দূরীকৃত হইবে, মাঠের পশুদের সহিত তোমার বসতি হইবে, বলদের ন্যায় তোমাকে তৃণ ভোজন করান যাইবে, ও তোমার উপরে সাত কাল ঘূরিবে; যে পর্য্যন্ত না তুমি জানিবে যে, মনুষ্যদের রাজ্যে পরাৎপর কর্ত্তৃত্ব করেন, ও যাহাকে তাহা দিতে ইচ্ছা করেন, তাহাকে তাহা দেন।
|
33. সেই দণ্ডে নবূখদ্নিৎসরের সম্বন্ধে সেই বাক্য সিদ্ধ হইল; তিনি মানব-সমাজ হইতে দূরীকৃত হইলেন, বলদের ন্যায় তৃণ ভোজন করিতে লাগিলেন, তাঁহার শরীর আকাশের শিশিরে ভিজিল, ক্রমে তাঁহার কেশ ঈগল পক্ষীর পালখের ন্যায়, ও তাঁহার নখ পক্ষীর নখরের ন্যায় হইয়া উঠিল।
|
34. আর সেই সময়ের শেষে আমি নবূখদ্নিৎসর স্বর্গের দিকে চক্ষু তুলিলাম, ও আমার বুদ্ধি আমাতে ফিরিয়া আসিল; তাহাতে আমি পরাৎপরের ধন্যবাদ করিলাম, এবং অনন্তজীবী ঈশ্বরের প্রশংসা ও সমাদর করিলাম; কারণ তাঁহার কর্ত্তৃত্ব অনন্তকালীন কর্ত্তৃত্ব ও তাঁহার রাজ্য পুরুষানুক্রমে স্থায়ী;
|
35. আর পৃথিবীনিবাসিগণ সকলে অবস্তুবৎ গণ্য; তিনি স্বর্গীয় বাহিনীর ও পৃথিবীনিবাসীদের মধ্যে আপন ইচ্ছানুসারে কার্য্য করেন; এবং এমন কেহ নাই যে, তাঁহার হস্ত থামাইয়া দিবে, কিম্বা তাঁহাকে বলিবে, তুমি কি করিতেছ?
|
36. সেই সময়ে আমার বুদ্ধি আমাতে ফিরিয়া আসিল, এবং আমার রাজ্যের গৌরবার্থে আমার প্রতাপ ও তেজ আমাতে ফিরিয়া আসিল; আর আমার মন্ত্রিগণ ও আমার মহল্লোক সকল আমার অন্বেষণ করিল, এবং আমি আপন রাজ্যে পুনঃস্থাপিত হইলাম, ও আমার মহিমা অতিশয় বৃদ্ধি পাইল।
|
37. এখন আমি নবূখদ্নিৎসর সেই স্বর্গরাজ্যের প্রশংসা, প্রতিষ্ঠা ও সমাদর করিতেছি; কেননা তাঁহার সমস্ত ক্রিয়া সত্য, ও তাঁহার পথ সকল ন্যায্য; আর যাহারা স্বগর্ব্বে চলে, তিনি তাহাদিগকে খর্ব্ব করিতে পারেন।
|