পবিত্র বাইবেল

গডস গ্রেইস গিফট
রাজাবলি ১
1. পরে তিন বৎসর পর্য্যন্ত উভয় পক্ষ ক্ষান্ত রহিল; অরামের ও ইস্রায়েলের মধ্যে যুদ্ধ হইল না।
2. তৃতীয় বৎসরে যিহূদা-রাজ যিহোশাফট ইস্রায়েলের রাজার নিকটে আসিলেন।
3. আর ইস্রায়েলের রাজা আপন দাসদিগকে কহিলেন, রামোৎ-গিলিয়দ যে আমাদের, ইহা কি তোমরা জান না? কিন্তু আমরা অরামের রাজার হস্ত হইতে তাহা না লইয়া চুপ করিয়া আছি।
4. আর তিনি যিহোশাফটকে কহিলেন, আপনি কি যুদ্ধার্থে রামোৎ-গিলিয়দে আমার সঙ্গে যাইবেন? যিহোশাফট ইস্রায়েলের রাজাকে কহিলেন, আমি ও আপনি, আমার লোক ও আপনার লোক, এবং আমার অশ্ব ও আপনার অশ্ব, সকলই এক।
5. পরে যিহোশাফট ইস্রায়েলের রাজাকে কহিলেন, বিনয় করি, অদ্য সদাপ্রভুর বাক্যের অন্বেষণ করুন।
6. তাহাতে ইস্রায়েলের রাজা ভাববাদিগণকে, অনুমান চারি শত জনকে একত্র করিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, আমি রামোৎ-গিলিয়দের বিরুদ্ধে যুদ্ধযাত্রা করিব, না ক্ষান্ত হইব? তখন তাহারা কহিল, যাত্রা করুন; প্রভু তাহা মহারাজের হস্তে সমর্পণ করিবেন।
7. কিন্তু যিহোশাফট কহিলেন, আবার সদাপ্রভুর এমন কোন ভাববাদী কি এস্থানে নাই যে, আমরা তাঁহারই কাছে অন্বেষণ করিতে পারি?
8. ইস্রায়েলের রাজা যিহোশাফটকে কহিলেন, আমরা যাহার দ্বারা সদাপ্রভুর কাছে অন্বেষণ করিতে পারি, এমন আর এক জন আছে, সে যিম্লের পুত্র মীখায়, কিন্তু আমি তাহাকে ঘৃণা করি, কেননা আমার উদ্দেশে সে মঙ্গলের নয়, কেবল অমঙ্গলের ভাবোক্তি প্রচার করে। যিহোশাফট কহিলেন, মহারাজ এমন কথা কহিবেন না।
9. তখন ইস্রায়েলের রাজা আপনার এক জন কর্ম্মচারীকে ডাকিয়া আজ্ঞা দিলেন, যিম্লের পুত্র মীখায়কে শীঘ্র লইয়া আইস।
10. সেই সময়ে ইস্রায়েলের রাজা ও যিহূদা-রাজ যিহোশাফট আপন আপন রাজবস্ত্র পরিধান করিয়া শমরিয়ার দ্বার-প্রবেশস্থানের কাছে খোলা জায়গায় আপন আপন সিংহাসনে বসিয়াছিলেন, এবং তাঁহাদের সম্মুখে ভাববাদীরা সকলে ভাবোক্তি প্রচার করিতেছিল।
11. আর কনানার পুত্র সিদিকিয় লৌহময় শৃঙ্গযুগল নির্ম্মাণ করিয়া কহিল, সদাপ্রভু এই কথা কহেন, ইহার দ্বারা আপনি অরামের বিনাশ সাধন পর্য্যন্ত গুঁতাইবেন।
12. আর ভাববাদীরা সকলেই তদ্রূপ ভাবোক্তি প্রচার করিল, কহিল, আপনি রামোৎ-গিলিয়দে যাত্রা করুন, কৃতকার্য্য হউন; কেননা সদাপ্রভু তাহা মহারাজের হস্তে সমর্পণ করিবেন।
13. আর যে দূত মীখায়কে ডাকিতে গিয়াছিল, সে তাঁহাকে কহিল, দেখুন, ভাববাদিগণের বাক্য সকল এক মুখে রাজার পক্ষে মঙ্গল সূচনা করে; বিনয় করি, আপনার বাক্য উহাদের কোন এক জনের বাক্যের সমানার্থক হউক; আপনি মঙ্গলসূচক কথা বলুন।
14. মীখায় কহিলেন, জীবন্ত সদাপ্রভুর দিব্য, সদাপ্রভু আমাকে যাহা বলেন, আমি তাহাই বলিব।
15. পরে তিনি রাজার নিকটে আসিলে রাজা তাঁহাকে জিজ্ঞাসা করিলেন, মীখায়, আমরা রামোৎ-গিলিয়দে যুদ্ধ করিতে যাইব, না ক্ষান্ত হইব? তিনি তাঁহাকে কহিলেন, যাত্রা করুন, কৃতকার্য্য হউন; সদাপ্রভু তাহা মহারাজের হস্তে সমর্পণ করিবেন।
16. রাজা তাঁহাকে কহিলেন, তুমি সদাপ্রভুর নামে আমাকে সত্য ব্যতিরেকে আর কিছুই কহিবে না, আমি কত বার তোমাকে এই শপথ করাইব?
17. তখন তিনি কহিলেন, আমি সমস্ত ইস্রায়েলকে অরক্ষক মেষপালের ন্যায় পর্ব্বতগণের উপরে ছিন্নভিন্ন দেখিলাম, এবং সদাপ্রভু কহিলেন, উহাদের স্বামী নাই; উহারা প্রত্যেকে কুশলে আপন আপন বাটীতে ফিরিয়া যাউক।
18. তখন ইস্রায়েলের রাজা যিহোশাফটকে কহিলেন, আমি কি অগ্রেই আপনাকে বলি নাই যে, এই ব্যক্তি আমার উদ্দেশে মঙ্গলের নয়, কেবল অমঙ্গলের ভাবোক্তি প্রচার করে?
19. আর মীখায় কহিলেন, এজন্য আপনি সদাপ্রভুর বাক্য শুনুন; আমি দেখিলাম, সদাপ্রভু তাঁহার সিংহাসনে উপবিষ্ট, আর তাঁহার দক্ষিণে ও বামে তাঁহার নিকটে স্বর্গের সমস্ত বাহিনী দণ্ডায়মান।
20. পরে সদাপ্রভু কহিলেন, আহাব যেন যাত্রা করিয়া রামোৎ-গিলিয়দে পতিত হয়, এই জন্য কে তাহাকে মুগ্ধ করিবে? তাহাতে কেহ এক প্রকারে, কেহ বা অন্য প্রকারে কহিল।
21. শেষে এক আত্মা গিয়া সদাপ্রভুর সম্মুখে দাঁড়াইয়া কহিল, আমি তাহাকে মুগ্ধ করিব। সদাপ্রভু কহিলেন, কিসে?
22. সে কহিল, আমি গিয়া তাহার সমস্ত ভাববাদীর মুখে মিথ্যাবাদী আত্মা হইব। তখন তিনি কহিলেন, তুমি তাহাকে মুগ্ধ করিবে, কৃতকার্য্যও হইবে; যাও, সেইরূপ কর।
23. অতএব দেখুন, সদাপ্রভু আপনার এই সমস্ত ভাববাদীর মুখে মিথ্যাবাদী আত্মা দিয়াছেন; আর সদাপ্রভু আপনার বিষয়ে অমঙ্গলের কথা কহিয়াছেন।
24. তখন কনানার পুত্র সিদিকিয় নিকটে আসিয়া মীখায়ের গালে চড় মারিয়া কহিল, সদাপ্রভুর আত্মা তোর সঙ্গে কথা কহিবার জন্য আমার নিকট হইতে কোন্‌ পথে গিয়াছিলেন?
25. মীখায় কহিলেন, দেখ, যে দিন তুমি লুকাইবার জন্য এক ভিতরের কুঠরীতে যাইবে, সেই দিন তাহা জানিবে।
26. পরে ইস্রায়েলের রাজা বলিলেন, মীখায়কে ধরিয়া পুনরায় নগরাধ্যক্ষ আমোনের ও রাজপুত্র যোয়াশের নিকটে লইয়া যাও;
27. আর বল, রাজা এই কথা কহেন, ইহাকে কারাগারে বদ্ধ করিয়া রাখ, এবং যে পর্য্যন্ত আমি কুশলে ফিরিয়া না আসি, সে পর্য্যন্ত ইহাকে আহারার্থে কষ্টযুক্ত অন্ন ও কষ্টযুক্ত জল দেও।
28. মীখায় কহিলেন, যদি আপনি কোন মতে কুশলে ফিরিয়া আইসেন, তবে সদাপ্রভু আমার দ্বারা কথা কহেন নাই। আর তিনি কহিলেন, হে জাতিগণ, তোমরা সকলে শ্রবণ কর।
29. পরে ইস্রায়েলের রাজা ও যিহূদা-রাজ যিহোশাফট রামোৎ-গিলিয়দে যাত্রা করিলেন।
30. আর ইস্রায়েলের রাজা যিহোশাফটকে কহিলেন, আমি অন্য বেশ ধারণ করিয়া যুদ্ধে প্রবেশ করিব, আপনি রাজবস্ত্র পরিধান করুন। পরে ইস্রায়েলের রাজা অন্য বেশ করিয়া যুদ্ধে প্রবেশ করিলেন।
31. অরামের রাজা আপন রথাধ্যক্ষ বত্রিশ জন সেনাপতিকে এই আজ্ঞা দিয়াছিলেন, তোমরা কেবল ইস্রায়েলের রাজা ব্যতিরেকে ক্ষুদ্র কি মহান্‌ আর কাহারও সহিত যুদ্ধ করিও না।
32. পরে রথাধ্যক্ষগণ যিহোশাফটকে দেখিয়া, উনিই অবশ্য ইস্রায়েলের রাজা, এই বলিয়া তাঁহার সহিত যুদ্ধ করিবার জন্য এক পার্শ্বে গেলেন। তখন যিহোশাফট চেঁচাইয়া উঠিলেন।
33. আর রথাধ্যক্ষগণ যখন দেখিলেন, ইনি ইস্রায়েলের রাজা নহেন, তখন তাঁহার পশ্চাদগমন হইতে ফিরিয়া গেলেন।
34. কিন্তু একটা লোক লক্ষ্য ব্যতিরেকে ধনুক আকর্ষণ করিয়া ইস্রায়েলের রাজার উদর-ত্রাণের ও বুকপাটার সন্ধিস্থানে বাণাঘাত করিল; তাহাতে তিনি আপন সারথিকে কহিলেন, হস্ত ফিরাইয়া সৈন্যদলের মধ্য হইতে আমাকে লইয়া যাও, আমি দারুন আঘাত পাইয়াছি।
35. সেই দিবস তুমুল যুদ্ধ হইল, আর লোকেরা অরামীয়দের সম্মুখে রাজাকে রথে দণ্ডায়মান রাখিল; কিন্তু সায়ংকালে তিনি মরিয়া গেলেন, এবং তাঁহার ক্ষতের রক্ত রথের গর্ভে পড়িল।
36. পরে সূর্য্যাস্তকালে সৈন্যদলের মধ্যে সর্ব্বত্র এই রব হইল, প্রত্যেক জন আপন আপন নগরে, প্রত্যেক জন আপন আপন দেশে চলিয়া যাউক।
37. এইরূপে রাজা মরিয়া গেলেন ও শমরিয়াতে আনীত হইলেন, আর লোকেরা শমরিয়াতে রাজাকে কবর দিল।
38. পরে শমরিয়ার পুষ্করিণীর ধারে তাঁহার রথ ধৌত করিলে সদাপ্রভুর কথিত বাক্যানুসারে কুকুরেরা তাঁহার রক্ত চাটিয়া খাইল; বেশ্যারা তথায় স্নান করিত।
39. আহাবের অবশিষ্ট বৃত্তান্ত ও সমস্ত কর্ম্মের বিবরণ এবং তিনি যে হস্তিদন্তময় গৃহ নির্ম্মাণ করিয়াছিলেন, আর যে সমস্ত নগর নির্ম্মাণ করিলেন, সে সকলের কথা কি ইস্রায়েল রাজগণের ইতিহাস-পুস্তকে লিখিত নাই?
40. এইরূপে আহাব আপন পিতৃলোকদের সহিত নিদ্রাগত হইলেন; আর তাঁহার পুত্র অহসিয় তাঁহার পদে রাজা হইলেন।
41. ইস্রায়েল-রাজ আহাবের চতুর্থ বৎসরে আসার পুত্র যিহোশাফট যিহূদায় রাজত্ব করিতে আরম্ভ করেন।
42. যিহোশাফট পঁয়ত্রিশ বৎসর বয়সে রাজত্ব করিতে আরম্ভ করিয়া যিরূশালেমে পঁচিশ বৎসর কাল রাজত্ব করেন; তাঁহার মাতার নাম অসূবা, তিনি শিল্‌হির কন্যা।
43. যিহোশাফট আপন পিতা আসার সমস্ত পথে চলিতেন, সেই পথ হইতে না ফিরিয়া সদাপ্রভুর দৃষ্টিতে যাহা ন্যায্য, তাহাই করিতেন; কিন্তু উচ্চস্থলী সকল উচ্ছিন্ন হয় নাই, লোকেরা তখনও উচ্চস্থলীতে বলিদান করিত ও ধূপ জ্বালাইত।
44. আর যিহোশাফট ইস্রায়েলের রাজার সহিত সন্ধি স্থাপন করেন।
45. যিহোশাফটের অবশিষ্ট বৃত্তান্ত, এবং তিনি যে যে বিক্রমের কার্য্য করিলেন, ও যে সকল যুদ্ধ করিলেন, সে সকল কি যিহূদা-রাজগণের ইতিহাস-পুস্তকে লিখিত নাই?
46. তাঁহার পিতা আসার সময়ে যে পুংগামীরা অবশিষ্ট ছিল, তাহাদিগকে তিনি দেশ হইতে দূর করিয়া দিলেন।
47. সেই সময়ে ইদোমে রাজা ছিল না, এক জন প্রতিনিধি রাজত্ব করিতেন।
48. যিহোশাফট স্বর্ণের জন্য ওফীরে প্রেরণার্থে তর্শীশের কয়েকখানি জাহাজ নির্ম্মাণ করিলেন, কিন্তু সেগুলি গেল না, কেননা সেই জাহাজগুলি ইৎসিয়োন-গেবরে ভগ্ন হইল।
49. তখন আহাবের পুত্র অহসিয় যিহোশাফটকে কহিলেন, আপনার দাসদের সহিত আমার দাসেরা জাহাজে যাউক; কিন্তু যিহোশাফট সম্মত হইলেন না।
50. পরে যিহোশাফট আপন পিতৃলোকদের সহিত নিদ্রাগত হইলেন; এবং আপন পিতৃপুরুষ দায়ূদের নগরে পিতৃলোকদের সহিত কবরপ্রাপ্ত হইলেন; আর তাঁহার পুত্র যিহোরাম তাঁহার পদে রাজা হইলেন।
51. যিহূদা-রাজ যিহোশাফটের সতের বৎসরে আহাবের পুত্র অহসিয় শমরিয়াতে ইস্রায়েলের উপরে রাজত্ব করিতে আরম্ভ করেন, এবং তিনি দুই বৎসর ইস্রায়েলের উপরে রাজত্ব করেন।
52. সদাপ্রভুর দৃষ্টিতে যাহা মন্দ, তাহাই তিনি করিতেন, আপন পিতার পথে ও আপন মাতার পথে, এবং নবাটের পুত্র যে যারবিয়াম ইস্রায়েলকে পাপ করাইয়াছিলেন, তাঁহার পথে চলিতেন।
53. তিনি বালের সেবা করিতেন, তাহার কাছে প্রণিপাত করিতেন, এবং ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভুকে অসন্তুষ্ট করিতেন, তাঁহার পিতা যাহা যাহা করিতেন, তিনিও তাহাই করিতেন।

Notes

No Verse Added

Total 22 Chapters, Current Chapter 22 of Total Chapters 22
রাজাবলি ১ 22
1. পরে তিন বৎসর পর্য্যন্ত উভয় পক্ষ ক্ষান্ত রহিল; অরামের ইস্রায়েলের মধ্যে যুদ্ধ হইল না।
2. তৃতীয় বৎসরে যিহূদা-রাজ যিহোশাফট ইস্রায়েলের রাজার নিকটে আসিলেন।
3. আর ইস্রায়েলের রাজা আপন দাসদিগকে কহিলেন, রামোৎ-গিলিয়দ যে আমাদের, ইহা কি তোমরা জান না? কিন্তু আমরা অরামের রাজার হস্ত হইতে তাহা না লইয়া চুপ করিয়া আছি।
4. আর তিনি যিহোশাফটকে কহিলেন, আপনি কি যুদ্ধার্থে রামোৎ-গিলিয়দে আমার সঙ্গে যাইবেন? যিহোশাফট ইস্রায়েলের রাজাকে কহিলেন, আমি আপনি, আমার লোক আপনার লোক, এবং আমার অশ্ব আপনার অশ্ব, সকলই এক।
5. পরে যিহোশাফট ইস্রায়েলের রাজাকে কহিলেন, বিনয় করি, অদ্য সদাপ্রভুর বাক্যের অন্বেষণ করুন।
6. তাহাতে ইস্রায়েলের রাজা ভাববাদিগণকে, অনুমান চারি শত জনকে একত্র করিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, আমি রামোৎ-গিলিয়দের বিরুদ্ধে যুদ্ধযাত্রা করিব, না ক্ষান্ত হইব? তখন তাহারা কহিল, যাত্রা করুন; প্রভু তাহা মহারাজের হস্তে সমর্পণ করিবেন।
7. কিন্তু যিহোশাফট কহিলেন, আবার সদাপ্রভুর এমন কোন ভাববাদী কি এস্থানে নাই যে, আমরা তাঁহারই কাছে অন্বেষণ করিতে পারি?
8. ইস্রায়েলের রাজা যিহোশাফটকে কহিলেন, আমরা যাহার দ্বারা সদাপ্রভুর কাছে অন্বেষণ করিতে পারি, এমন আর এক জন আছে, সে যিম্লের পুত্র মীখায়, কিন্তু আমি তাহাকে ঘৃণা করি, কেননা আমার উদ্দেশে সে মঙ্গলের নয়, কেবল অমঙ্গলের ভাবোক্তি প্রচার করে। যিহোশাফট কহিলেন, মহারাজ এমন কথা কহিবেন না।
9. তখন ইস্রায়েলের রাজা আপনার এক জন কর্ম্মচারীকে ডাকিয়া আজ্ঞা দিলেন, যিম্লের পুত্র মীখায়কে শীঘ্র লইয়া আইস।
10. সেই সময়ে ইস্রায়েলের রাজা যিহূদা-রাজ যিহোশাফট আপন আপন রাজবস্ত্র পরিধান করিয়া শমরিয়ার দ্বার-প্রবেশস্থানের কাছে খোলা জায়গায় আপন আপন সিংহাসনে বসিয়াছিলেন, এবং তাঁহাদের সম্মুখে ভাববাদীরা সকলে ভাবোক্তি প্রচার করিতেছিল।
11. আর কনানার পুত্র সিদিকিয় লৌহময় শৃঙ্গযুগল নির্ম্মাণ করিয়া কহিল, সদাপ্রভু এই কথা কহেন, ইহার দ্বারা আপনি অরামের বিনাশ সাধন পর্য্যন্ত গুঁতাইবেন।
12. আর ভাববাদীরা সকলেই তদ্রূপ ভাবোক্তি প্রচার করিল, কহিল, আপনি রামোৎ-গিলিয়দে যাত্রা করুন, কৃতকার্য্য হউন; কেননা সদাপ্রভু তাহা মহারাজের হস্তে সমর্পণ করিবেন।
13. আর যে দূত মীখায়কে ডাকিতে গিয়াছিল, সে তাঁহাকে কহিল, দেখুন, ভাববাদিগণের বাক্য সকল এক মুখে রাজার পক্ষে মঙ্গল সূচনা করে; বিনয় করি, আপনার বাক্য উহাদের কোন এক জনের বাক্যের সমানার্থক হউক; আপনি মঙ্গলসূচক কথা বলুন।
14. মীখায় কহিলেন, জীবন্ত সদাপ্রভুর দিব্য, সদাপ্রভু আমাকে যাহা বলেন, আমি তাহাই বলিব।
15. পরে তিনি রাজার নিকটে আসিলে রাজা তাঁহাকে জিজ্ঞাসা করিলেন, মীখায়, আমরা রামোৎ-গিলিয়দে যুদ্ধ করিতে যাইব, না ক্ষান্ত হইব? তিনি তাঁহাকে কহিলেন, যাত্রা করুন, কৃতকার্য্য হউন; সদাপ্রভু তাহা মহারাজের হস্তে সমর্পণ করিবেন।
16. রাজা তাঁহাকে কহিলেন, তুমি সদাপ্রভুর নামে আমাকে সত্য ব্যতিরেকে আর কিছুই কহিবে না, আমি কত বার তোমাকে এই শপথ করাইব?
17. তখন তিনি কহিলেন, আমি সমস্ত ইস্রায়েলকে অরক্ষক মেষপালের ন্যায় পর্ব্বতগণের উপরে ছিন্নভিন্ন দেখিলাম, এবং সদাপ্রভু কহিলেন, উহাদের স্বামী নাই; উহারা প্রত্যেকে কুশলে আপন আপন বাটীতে ফিরিয়া যাউক।
18. তখন ইস্রায়েলের রাজা যিহোশাফটকে কহিলেন, আমি কি অগ্রেই আপনাকে বলি নাই যে, এই ব্যক্তি আমার উদ্দেশে মঙ্গলের নয়, কেবল অমঙ্গলের ভাবোক্তি প্রচার করে?
19. আর মীখায় কহিলেন, এজন্য আপনি সদাপ্রভুর বাক্য শুনুন; আমি দেখিলাম, সদাপ্রভু তাঁহার সিংহাসনে উপবিষ্ট, আর তাঁহার দক্ষিণে বামে তাঁহার নিকটে স্বর্গের সমস্ত বাহিনী দণ্ডায়মান।
20. পরে সদাপ্রভু কহিলেন, আহাব যেন যাত্রা করিয়া রামোৎ-গিলিয়দে পতিত হয়, এই জন্য কে তাহাকে মুগ্ধ করিবে? তাহাতে কেহ এক প্রকারে, কেহ বা অন্য প্রকারে কহিল।
21. শেষে এক আত্মা গিয়া সদাপ্রভুর সম্মুখে দাঁড়াইয়া কহিল, আমি তাহাকে মুগ্ধ করিব। সদাপ্রভু কহিলেন, কিসে?
22. সে কহিল, আমি গিয়া তাহার সমস্ত ভাববাদীর মুখে মিথ্যাবাদী আত্মা হইব। তখন তিনি কহিলেন, তুমি তাহাকে মুগ্ধ করিবে, কৃতকার্য্যও হইবে; যাও, সেইরূপ কর।
23. অতএব দেখুন, সদাপ্রভু আপনার এই সমস্ত ভাববাদীর মুখে মিথ্যাবাদী আত্মা দিয়াছেন; আর সদাপ্রভু আপনার বিষয়ে অমঙ্গলের কথা কহিয়াছেন।
24. তখন কনানার পুত্র সিদিকিয় নিকটে আসিয়া মীখায়ের গালে চড় মারিয়া কহিল, সদাপ্রভুর আত্মা তোর সঙ্গে কথা কহিবার জন্য আমার নিকট হইতে কোন্‌ পথে গিয়াছিলেন?
25. মীখায় কহিলেন, দেখ, যে দিন তুমি লুকাইবার জন্য এক ভিতরের কুঠরীতে যাইবে, সেই দিন তাহা জানিবে।
26. পরে ইস্রায়েলের রাজা বলিলেন, মীখায়কে ধরিয়া পুনরায় নগরাধ্যক্ষ আমোনের রাজপুত্র যোয়াশের নিকটে লইয়া যাও;
27. আর বল, রাজা এই কথা কহেন, ইহাকে কারাগারে বদ্ধ করিয়া রাখ, এবং যে পর্য্যন্ত আমি কুশলে ফিরিয়া না আসি, সে পর্য্যন্ত ইহাকে আহারার্থে কষ্টযুক্ত অন্ন কষ্টযুক্ত জল দেও।
28. মীখায় কহিলেন, যদি আপনি কোন মতে কুশলে ফিরিয়া আইসেন, তবে সদাপ্রভু আমার দ্বারা কথা কহেন নাই। আর তিনি কহিলেন, হে জাতিগণ, তোমরা সকলে শ্রবণ কর।
29. পরে ইস্রায়েলের রাজা যিহূদা-রাজ যিহোশাফট রামোৎ-গিলিয়দে যাত্রা করিলেন।
30. আর ইস্রায়েলের রাজা যিহোশাফটকে কহিলেন, আমি অন্য বেশ ধারণ করিয়া যুদ্ধে প্রবেশ করিব, আপনি রাজবস্ত্র পরিধান করুন। পরে ইস্রায়েলের রাজা অন্য বেশ করিয়া যুদ্ধে প্রবেশ করিলেন।
31. অরামের রাজা আপন রথাধ্যক্ষ বত্রিশ জন সেনাপতিকে এই আজ্ঞা দিয়াছিলেন, তোমরা কেবল ইস্রায়েলের রাজা ব্যতিরেকে ক্ষুদ্র কি মহান্‌ আর কাহারও সহিত যুদ্ধ করিও না।
32. পরে রথাধ্যক্ষগণ যিহোশাফটকে দেখিয়া, উনিই অবশ্য ইস্রায়েলের রাজা, এই বলিয়া তাঁহার সহিত যুদ্ধ করিবার জন্য এক পার্শ্বে গেলেন। তখন যিহোশাফট চেঁচাইয়া উঠিলেন।
33. আর রথাধ্যক্ষগণ যখন দেখিলেন, ইনি ইস্রায়েলের রাজা নহেন, তখন তাঁহার পশ্চাদগমন হইতে ফিরিয়া গেলেন।
34. কিন্তু একটা লোক লক্ষ্য ব্যতিরেকে ধনুক আকর্ষণ করিয়া ইস্রায়েলের রাজার উদর-ত্রাণের বুকপাটার সন্ধিস্থানে বাণাঘাত করিল; তাহাতে তিনি আপন সারথিকে কহিলেন, হস্ত ফিরাইয়া সৈন্যদলের মধ্য হইতে আমাকে লইয়া যাও, আমি দারুন আঘাত পাইয়াছি।
35. সেই দিবস তুমুল যুদ্ধ হইল, আর লোকেরা অরামীয়দের সম্মুখে রাজাকে রথে দণ্ডায়মান রাখিল; কিন্তু সায়ংকালে তিনি মরিয়া গেলেন, এবং তাঁহার ক্ষতের রক্ত রথের গর্ভে পড়িল।
36. পরে সূর্য্যাস্তকালে সৈন্যদলের মধ্যে সর্ব্বত্র এই রব হইল, প্রত্যেক জন আপন আপন নগরে, প্রত্যেক জন আপন আপন দেশে চলিয়া যাউক।
37. এইরূপে রাজা মরিয়া গেলেন শমরিয়াতে আনীত হইলেন, আর লোকেরা শমরিয়াতে রাজাকে কবর দিল।
38. পরে শমরিয়ার পুষ্করিণীর ধারে তাঁহার রথ ধৌত করিলে সদাপ্রভুর কথিত বাক্যানুসারে কুকুরেরা তাঁহার রক্ত চাটিয়া খাইল; বেশ্যারা তথায় স্নান করিত।
39. আহাবের অবশিষ্ট বৃত্তান্ত সমস্ত কর্ম্মের বিবরণ এবং তিনি যে হস্তিদন্তময় গৃহ নির্ম্মাণ করিয়াছিলেন, আর যে সমস্ত নগর নির্ম্মাণ করিলেন, সে সকলের কথা কি ইস্রায়েল রাজগণের ইতিহাস-পুস্তকে লিখিত নাই?
40. এইরূপে আহাব আপন পিতৃলোকদের সহিত নিদ্রাগত হইলেন; আর তাঁহার পুত্র অহসিয় তাঁহার পদে রাজা হইলেন।
41. ইস্রায়েল-রাজ আহাবের চতুর্থ বৎসরে আসার পুত্র যিহোশাফট যিহূদায় রাজত্ব করিতে আরম্ভ করেন।
42. যিহোশাফট পঁয়ত্রিশ বৎসর বয়সে রাজত্ব করিতে আরম্ভ করিয়া যিরূশালেমে পঁচিশ বৎসর কাল রাজত্ব করেন; তাঁহার মাতার নাম অসূবা, তিনি শিল্‌হির কন্যা।
43. যিহোশাফট আপন পিতা আসার সমস্ত পথে চলিতেন, সেই পথ হইতে না ফিরিয়া সদাপ্রভুর দৃষ্টিতে যাহা ন্যায্য, তাহাই করিতেন; কিন্তু উচ্চস্থলী সকল উচ্ছিন্ন হয় নাই, লোকেরা তখনও উচ্চস্থলীতে বলিদান করিত ধূপ জ্বালাইত।
44. আর যিহোশাফট ইস্রায়েলের রাজার সহিত সন্ধি স্থাপন করেন।
45. যিহোশাফটের অবশিষ্ট বৃত্তান্ত, এবং তিনি যে যে বিক্রমের কার্য্য করিলেন, যে সকল যুদ্ধ করিলেন, সে সকল কি যিহূদা-রাজগণের ইতিহাস-পুস্তকে লিখিত নাই?
46. তাঁহার পিতা আসার সময়ে যে পুংগামীরা অবশিষ্ট ছিল, তাহাদিগকে তিনি দেশ হইতে দূর করিয়া দিলেন।
47. সেই সময়ে ইদোমে রাজা ছিল না, এক জন প্রতিনিধি রাজত্ব করিতেন।
48. যিহোশাফট স্বর্ণের জন্য ওফীরে প্রেরণার্থে তর্শীশের কয়েকখানি জাহাজ নির্ম্মাণ করিলেন, কিন্তু সেগুলি গেল না, কেননা সেই জাহাজগুলি ইৎসিয়োন-গেবরে ভগ্ন হইল।
49. তখন আহাবের পুত্র অহসিয় যিহোশাফটকে কহিলেন, আপনার দাসদের সহিত আমার দাসেরা জাহাজে যাউক; কিন্তু যিহোশাফট সম্মত হইলেন না।
50. পরে যিহোশাফট আপন পিতৃলোকদের সহিত নিদ্রাগত হইলেন; এবং আপন পিতৃপুরুষ দায়ূদের নগরে পিতৃলোকদের সহিত কবরপ্রাপ্ত হইলেন; আর তাঁহার পুত্র যিহোরাম তাঁহার পদে রাজা হইলেন।
51. যিহূদা-রাজ যিহোশাফটের সতের বৎসরে আহাবের পুত্র অহসিয় শমরিয়াতে ইস্রায়েলের উপরে রাজত্ব করিতে আরম্ভ করেন, এবং তিনি দুই বৎসর ইস্রায়েলের উপরে রাজত্ব করেন।
52. সদাপ্রভুর দৃষ্টিতে যাহা মন্দ, তাহাই তিনি করিতেন, আপন পিতার পথে আপন মাতার পথে, এবং নবাটের পুত্র যে যারবিয়াম ইস্রায়েলকে পাপ করাইয়াছিলেন, তাঁহার পথে চলিতেন।
53. তিনি বালের সেবা করিতেন, তাহার কাছে প্রণিপাত করিতেন, এবং ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভুকে অসন্তুষ্ট করিতেন, তাঁহার পিতা যাহা যাহা করিতেন, তিনিও তাহাই করিতেন।
Total 22 Chapters, Current Chapter 22 of Total Chapters 22
×

Alert

×

bengali Letters Keypad References