পবিত্র বাইবেল

গডস গ্রেইস গিফট
লুক
1. পরে তিনি চক্ষু তুলিয়া দেখিলেন, ধনবানেরা ভাণ্ডারে আপন আপন দান রাখিতেছে।
2. আর তিনি দেখিলেন, একটী দীনহীনা বিধবা সেই স্থানে দুইটী সিকি পয়সা রাখিতেছে;
3. তখন তিনি কহিলেন, আমি তোমাদিগকে সত্য বলিতেছি, এই দরিদ্রা বিধবা সকলের অপেক্ষা অধিক রাখিল;
4. কেননা ইহারা সকলে আপন আপন অতিরিক্ত ধন হইতে কিছু কিছু দানের মধ্যে রাখিল, কিন্তু এ নিজ অনাটন সত্ত্বেও ইহার যাহা কিছু ছিল, সমুদয় জীবনোপায় রাখিল।
5. আর যখন কেহ কেহ ধর্ম্মধামের বিষয় বলিতেছিল, উহা কেমন সুন্দর সুন্দর প্রস্তরে ও নিবেদিত দ্রব্যে সুশোভিত,
6. তিনি কহিলেন, তোমরা এই যে সকল দেখিতেছ, এমন সময় আসিতেছে, যখন ইহার একখানি পাথর অন্য পাথরের উপরে থাকিবে না, সমস্তই ভূমিসাৎ হইবে।
7. তাঁহারা তাঁহাকে জিজ্ঞাসা করিলেন, হে গুরু, তবে এ সকল ঘটনা কখন হইবে? আর যখন এ সকল সফল হইবার সময় হইবে, তখন তাহার চিহ্নই বা কি?
8. তিনি কহিলেন, দেখিও, ভ্রান্ত হইও না; কেননা অনেকে আমার নাম ধরিয়া আসিবে, বলিবে, ‘আমিই তিনি’ ও সময় সন্নিকট; তোমরা তাহাদের পশ্চাৎ যাইও না।
9. আর যখন তোমরা যুদ্ধের ও গণ্ডগোলের কথা শুনিবে, ত্রাসযুক্ত হইও না, কেননা প্রথমে এই সকল ঘটিবেই ঘটিবে, কিন্তু তখনই শেষ নয়।
10. পরে তিনি তাঁহাদিগকে কহিলেন, জাতির বিপক্ষে জাতি ও রাজ্যের বিপক্ষে রাজ্য উঠিবে।
11. মহৎ মহৎ ভূমিকম্প এবং স্থানে স্থানে দুর্ভিক্ষ ও মহামারী হইবে, আর আকাশে ভয়ঙ্কর ভয়ঙ্কর লক্ষণ ও মহৎ মহৎ চিহ্ন হইবে;
12. কিন্তু এই সকল ঘটনার পূর্ব্বে লোকেরা তোমাদের উপরে হস্তক্ষেপ করিবে, তোমাদিগকে তাড়না করিবে, সমাজ-গৃহে ও কারাগারে সমর্পণ করিবে; আমার নামের নিমিত্ত তোমরা রাজাদের ও শাসনকর্ত্তাদের সম্মুখে নীত হইবে।
13. সাক্ষ্যের জন্য এই সকল তোমাদের প্রতি ঘটিবে।
14. অতএব মনে মনে স্থির করিও যে, কি উত্তর দিতে হইবে, তাহার নিমিত্ত অগ্রে চিন্তা করিবে না।
15. কেননা আমি তোমাদিগকে এমন মুখ ও বিজ্ঞতা দিব যে, তোমাদের বিপক্ষেরা কেহ প্রতিরোধ করিতে কি উত্তর দিতে পারিবে না।
16. আর তোমরা পিতা-মাতা, ভ্রাতৃগণ, জ্ঞাতি ও বন্ধুগণ কর্ত্তৃকও সমর্পিত হইবে, এবং তোমাদের কাহাকেও কাহাকেও তাহারা বধ করাইবে।
17. আর আমার নাম প্রযুক্ত তোমরা সকলের ঘৃণিত হইবে।
18. কিন্তু তোমাদের মস্তকের একগাছি কেশও নষ্ট হইবে না।
19. তোমরা নিজ নিজ ধৈর্য্যে আপন আপন প্রাণ লাভ করিবে।
20. আর যখন তোমরা যিরূশালেমকে সৈন্যসামন্ত দ্বারা বেষ্টিত দেখিবে, তখন জানিবে যে, তাহার ধ্বংস সন্নিকট।
21. তখন যাহারা যিহূদিয়ায় থাকে, তাহারা পাহাড় অঞ্চলে পলায়ন করুক, এবং যাহারা নগরের মধ্যে থাকে, তাহারা বাহিরে যাউক; আর যাহারা পল্লীগ্রামে থাকে, তাহারা নগরে প্রবেশ না করুক।
22. কেননা তখন প্রতিশোধের সময়, যে সমস্ত কথা লিখিত আছে, সেই সমস্ত পূর্ণ হইবার সময়।
23. হায়, সেই সময়ে গর্ভবতী ও স্তন্যদাত্রী স্ত্রীদিগের সন্তাপ! কেননা দেশে বিষম দুর্গতি এবং এই জাতির প্রতি ক্রোধ বর্ত্তিবে।
24. লোকেরা খড়্গধারে পতিত হইবে; এবং বন্দি হইয়া সকল জাতির মধ্যে নীত হইবে; আর জাতিগণের সময় সম্পূর্ণ না হওয়া পর্য্যন্ত যিরূশালেম জাতিগণের পদ দলিত হইবে।
25. আর সূর্য্যে, চন্দ্রে ও নক্ষত্রগণে নানা চিহ্ন প্রকাশ পাইবে, এবং পৃথিবীতে জাতিগণের ক্লেশ হইবে, তাহারা সমুদ্রের ও তরঙ্গের গর্জ্জনে উদ্বিগ্ন হইবে।
26. ভয়ে, এবং ভূমণ্ডলে যাহা যাহা ঘটিবে তাহার আশঙ্কায়, মানুষের প্রাণ উড়িয়া যাইবে; কেননা আকাশ-মণ্ডলের পরাক্রম সকল বিচলিত হইবে।
27. আর তৎকালে তাহারা মনুষ্যপুত্রকে পরাক্রম ও মহাপ্রতাপ সহকারে মেঘযোগে আসিতে দেখিবে।
28. কিন্তু এ সকল ঘটনা আরম্ভ হইলে তোমরা ঊর্দ্ধদৃষ্টি করিও, মাথা তুলিও, কেননা তোমাদের মুক্তি সন্নিকট।
29. আর তিনি তাহাদিগকে একটী দৃষ্টান্ত কহিলেন, ডুমুর গাছ ও আর সকল গাছ দেখ;
30. যখন সেগুলি পল্লবিত হয়, তখন তাহা দেখিয়া তোমরা আপনারাই বুঝিতে পার যে, এখন গ্রীষ্মকাল সন্নিকট।
31. সেইরূপ তোমরাও যখন এই সকল ঘটিতেছে দেখিবে, তখন জানিবে, ঈশ্বরের রাজ্য সন্নিকট।
32. আমি তোমাদিগকে সত্য বলিতেছি, যে পর্য্যন্ত সমস্ত সিদ্ধ না হইবে, সেই পর্য্যন্ত এই কালের লোকদের লোপ হইবে না।
33. আকাশের ও পৃথিবীর লোপ হইবে, কিন্তু আমার বাক্যের লোপ কখনও হইবে না।
34. কিন্তু আপনাদের বিষয়ে সাবধান থাকিও, পাছে ভোগপীড়ায় ও মত্ততায় এবং জীবিকার চিন্তায় তোমাদের হৃদয় ভারগ্রস্ত হয়, আর সেই দিন হঠাৎ ফাঁদের ন্যায় তোমাদের উপরে আসিয়া পড়ে;
35. কেননা সেই দিন সমস্ত ভূতল-নিবাসী সকলের উপরে উপস্থিত হইবে।
36. কিন্তু তোমরা সর্ব্বসময়ে জাগিয়া থাকিও এবং প্রার্থনা করিও, যেন এই যে সকল ঘটনা হইবে, তাহা এড়াইতে, এবং মনুষ্যপুত্রের সম্মুখে দাঁড়াইতে, শক্তিমান্‌ হও।
37. আর তিনি প্রতিদিন ধর্ম্মধামে উপদেশ দিতেন, এবং প্রতিরাত্রে বাহিরে গিয়া জৈতুন নামক পর্ব্বতে অবস্থিতি করিতেন।
38. আর সমস্ত লোক তাঁহার কথা শুনিবার জন্য প্রত্যূষে ধর্ম্মধামে তাঁহার নিকটে আসিত।
Total 24 অধ্যায়গুলির, Selected অধ্যায় 21 / 24
1 পরে তিনি চক্ষু তুলিয়া দেখিলেন, ধনবানেরা ভাণ্ডারে আপন আপন দান রাখিতেছে। 2 আর তিনি দেখিলেন, একটী দীনহীনা বিধবা সেই স্থানে দুইটী সিকি পয়সা রাখিতেছে; 3 তখন তিনি কহিলেন, আমি তোমাদিগকে সত্য বলিতেছি, এই দরিদ্রা বিধবা সকলের অপেক্ষা অধিক রাখিল; 4 কেননা ইহারা সকলে আপন আপন অতিরিক্ত ধন হইতে কিছু কিছু দানের মধ্যে রাখিল, কিন্তু এ নিজ অনাটন সত্ত্বেও ইহার যাহা কিছু ছিল, সমুদয় জীবনোপায় রাখিল। 5 আর যখন কেহ কেহ ধর্ম্মধামের বিষয় বলিতেছিল, উহা কেমন সুন্দর সুন্দর প্রস্তরে ও নিবেদিত দ্রব্যে সুশোভিত, 6 তিনি কহিলেন, তোমরা এই যে সকল দেখিতেছ, এমন সময় আসিতেছে, যখন ইহার একখানি পাথর অন্য পাথরের উপরে থাকিবে না, সমস্তই ভূমিসাৎ হইবে। 7 তাঁহারা তাঁহাকে জিজ্ঞাসা করিলেন, হে গুরু, তবে এ সকল ঘটনা কখন হইবে? আর যখন এ সকল সফল হইবার সময় হইবে, তখন তাহার চিহ্নই বা কি? 8 তিনি কহিলেন, দেখিও, ভ্রান্ত হইও না; কেননা অনেকে আমার নাম ধরিয়া আসিবে, বলিবে, ‘আমিই তিনি’ ও সময় সন্নিকট; তোমরা তাহাদের পশ্চাৎ যাইও না। 9 আর যখন তোমরা যুদ্ধের ও গণ্ডগোলের কথা শুনিবে, ত্রাসযুক্ত হইও না, কেননা প্রথমে এই সকল ঘটিবেই ঘটিবে, কিন্তু তখনই শেষ নয়। 10 পরে তিনি তাঁহাদিগকে কহিলেন, জাতির বিপক্ষে জাতি ও রাজ্যের বিপক্ষে রাজ্য উঠিবে। 11 মহৎ মহৎ ভূমিকম্প এবং স্থানে স্থানে দুর্ভিক্ষ ও মহামারী হইবে, আর আকাশে ভয়ঙ্কর ভয়ঙ্কর লক্ষণ ও মহৎ মহৎ চিহ্ন হইবে; 12 কিন্তু এই সকল ঘটনার পূর্ব্বে লোকেরা তোমাদের উপরে হস্তক্ষেপ করিবে, তোমাদিগকে তাড়না করিবে, সমাজ-গৃহে ও কারাগারে সমর্পণ করিবে; আমার নামের নিমিত্ত তোমরা রাজাদের ও শাসনকর্ত্তাদের সম্মুখে নীত হইবে। 13 সাক্ষ্যের জন্য এই সকল তোমাদের প্রতি ঘটিবে। 14 অতএব মনে মনে স্থির করিও যে, কি উত্তর দিতে হইবে, তাহার নিমিত্ত অগ্রে চিন্তা করিবে না। 15 কেননা আমি তোমাদিগকে এমন মুখ ও বিজ্ঞতা দিব যে, তোমাদের বিপক্ষেরা কেহ প্রতিরোধ করিতে কি উত্তর দিতে পারিবে না। 16 আর তোমরা পিতা-মাতা, ভ্রাতৃগণ, জ্ঞাতি ও বন্ধুগণ কর্ত্তৃকও সমর্পিত হইবে, এবং তোমাদের কাহাকেও কাহাকেও তাহারা বধ করাইবে। 17 আর আমার নাম প্রযুক্ত তোমরা সকলের ঘৃণিত হইবে। 18 কিন্তু তোমাদের মস্তকের একগাছি কেশও নষ্ট হইবে না। 19 তোমরা নিজ নিজ ধৈর্য্যে আপন আপন প্রাণ লাভ করিবে। 20 আর যখন তোমরা যিরূশালেমকে সৈন্যসামন্ত দ্বারা বেষ্টিত দেখিবে, তখন জানিবে যে, তাহার ধ্বংস সন্নিকট। 21 তখন যাহারা যিহূদিয়ায় থাকে, তাহারা পাহাড় অঞ্চলে পলায়ন করুক, এবং যাহারা নগরের মধ্যে থাকে, তাহারা বাহিরে যাউক; আর যাহারা পল্লীগ্রামে থাকে, তাহারা নগরে প্রবেশ না করুক। 22 কেননা তখন প্রতিশোধের সময়, যে সমস্ত কথা লিখিত আছে, সেই সমস্ত পূর্ণ হইবার সময়। 23 হায়, সেই সময়ে গর্ভবতী ও স্তন্যদাত্রী স্ত্রীদিগের সন্তাপ! কেননা দেশে বিষম দুর্গতি এবং এই জাতির প্রতি ক্রোধ বর্ত্তিবে। 24 লোকেরা খড়্গধারে পতিত হইবে; এবং বন্দি হইয়া সকল জাতির মধ্যে নীত হইবে; আর জাতিগণের সময় সম্পূর্ণ না হওয়া পর্য্যন্ত যিরূশালেম জাতিগণের পদ দলিত হইবে। 25 আর সূর্য্যে, চন্দ্রে ও নক্ষত্রগণে নানা চিহ্ন প্রকাশ পাইবে, এবং পৃথিবীতে জাতিগণের ক্লেশ হইবে, তাহারা সমুদ্রের ও তরঙ্গের গর্জ্জনে উদ্বিগ্ন হইবে। 26 ভয়ে, এবং ভূমণ্ডলে যাহা যাহা ঘটিবে তাহার আশঙ্কায়, মানুষের প্রাণ উড়িয়া যাইবে; কেননা আকাশ-মণ্ডলের পরাক্রম সকল বিচলিত হইবে। 27 আর তৎকালে তাহারা মনুষ্যপুত্রকে পরাক্রম ও মহাপ্রতাপ সহকারে মেঘযোগে আসিতে দেখিবে। 28 কিন্তু এ সকল ঘটনা আরম্ভ হইলে তোমরা ঊর্দ্ধদৃষ্টি করিও, মাথা তুলিও, কেননা তোমাদের মুক্তি সন্নিকট। 29 আর তিনি তাহাদিগকে একটী দৃষ্টান্ত কহিলেন, ডুমুর গাছ ও আর সকল গাছ দেখ; 30 যখন সেগুলি পল্লবিত হয়, তখন তাহা দেখিয়া তোমরা আপনারাই বুঝিতে পার যে, এখন গ্রীষ্মকাল সন্নিকট। 31 সেইরূপ তোমরাও যখন এই সকল ঘটিতেছে দেখিবে, তখন জানিবে, ঈশ্বরের রাজ্য সন্নিকট। 32 আমি তোমাদিগকে সত্য বলিতেছি, যে পর্য্যন্ত সমস্ত সিদ্ধ না হইবে, সেই পর্য্যন্ত এই কালের লোকদের লোপ হইবে না। 33 আকাশের ও পৃথিবীর লোপ হইবে, কিন্তু আমার বাক্যের লোপ কখনও হইবে না। 34 কিন্তু আপনাদের বিষয়ে সাবধান থাকিও, পাছে ভোগপীড়ায় ও মত্ততায় এবং জীবিকার চিন্তায় তোমাদের হৃদয় ভারগ্রস্ত হয়, আর সেই দিন হঠাৎ ফাঁদের ন্যায় তোমাদের উপরে আসিয়া পড়ে; 35 কেননা সেই দিন সমস্ত ভূতল-নিবাসী সকলের উপরে উপস্থিত হইবে। 36 কিন্তু তোমরা সর্ব্বসময়ে জাগিয়া থাকিও এবং প্রার্থনা করিও, যেন এই যে সকল ঘটনা হইবে, তাহা এড়াইতে, এবং মনুষ্যপুত্রের সম্মুখে দাঁড়াইতে, শক্তিমান্‌ হও। 37 আর তিনি প্রতিদিন ধর্ম্মধামে উপদেশ দিতেন, এবং প্রতিরাত্রে বাহিরে গিয়া জৈতুন নামক পর্ব্বতে অবস্থিতি করিতেন। 38 আর সমস্ত লোক তাঁহার কথা শুনিবার জন্য প্রত্যূষে ধর্ম্মধামে তাঁহার নিকটে আসিত।
Total 24 অধ্যায়গুলির, Selected অধ্যায় 21 / 24
×

Alert

×

Bengali Letters Keypad References