পবিত্র বাইবেল

গডস গ্রেইস গিফট
সামুয়েল ২
1. পরে বৎসর ফিরিয়া আসিলে রাজবর্গের যুদ্ধে গমন সময়ে দায়ূদ যোয়াবকে, তাঁহার সহিত আপন দাসদিগকে ও সমস্ত ইস্রায়েলকে পাঠাইলেন; তাহারা গিয়া অম্মোন-সন্তানদিগকে সংহার করিয়া রব্বা নগর অবরোধ করিল; কিন্তু দায়ূদ যিরূশালেমে থাকিলেন।
2. একদা বৈকালে দায়ূদ শয্যা হইতে উঠিয়া রাজবাটীর ছাদে বেড়াইতেছিলেন, আর ছাদ হইতে দেখিতে পাইলেন যে, একটী স্ত্রীলোক স্নান করিতেছে; স্ত্রী লোকটী দেখিতে বড়ই সুন্দরী ছিল।
3. দায়ূদ তাহার বিষয় জিজ্ঞাসা করিতে লোক পাঠাইলেন। এক জন কহিল, এ কি ইলিয়ামের কন্যা, হিত্তীয় ঊরিয়ের স্ত্রী বৎশেবা নয়?
4. তখন দায়ূদ দূত পাঠাইয়া তাহাকে আনাইলেন, এবং সে তাঁহার নিকটে আসিলে দায়ূদ তাহার সহিত শয়ন করিলেন; সে স্ত্রী ঋতুস্নান করিয়া শুচি হইয়াছিল। পরে সে আপন ঘরে ফিরিয়া গেল।
5. পরে সে স্ত্রী গর্ভবতী হইল; আর লোক পাঠাইয়া দায়ূদকে এই সমাচার দিল, আমার গর্ভ হইয়াছে।
6. তখন দায়ূদ যোয়াবের নিকটে লোক পাঠাইয়া এই আজ্ঞা করিলেন, হিত্তীয় ঊরিয়কে আমার নিকটে পাঠাইয়া দেও। তাহাতে যোয়াব দায়ূদের নিকটে ঊরিয়কে পাঠাইলেন।
7. ঊরিয় তাঁহার নিকটে উপস্থিত হইলে দায়ূদ তাহাকে যোয়াবের কুশল, লোকদের কুশল ও যুদ্ধের কুশল জিজ্ঞাসা করিলেন।
8. পরে দায়ূদ ঊরিয়কে কহিলেন, তুমি আপন বাটীতে গিয়া পা ধোও। তখন ঊরিয় রাজবাটী হইতে বাহির হইল, আর রাজার নিকট হইতে তাহার পশ্চাতে পশ্চাতে ভেট গেল।
9. কিন্তু ঊরিয় আপন প্রভুর দাসগণের সঙ্গে রাজবাটীর দ্বারে শয়ন করিল, ঘরে গেল না।
10. পরে এই কথা দায়ূদকে বলা হইল যে, ঊরিয় ঘরে যায় নাই। দায়ূদ ঊরিয়কে কহিলেন, তুমি কি পথভ্রমণ করিয়া আইস নাই? তবে কেন বাটীতে গেলে না?
11. ঊরিয় দায়ূদকে কহিল, সিন্দুক, ইস্রায়েল ও যিহূদা কুটীরে বাস করিতেছে, এবং আমার প্রভু যোয়াব ও আমার প্রভুর দাসগণ খোলা মাঠে ছাউনী করিয়া আছেন; তবে আমি কি ভোজন পান করিতে ও স্ত্রীর সহিত শয়ন করিতে আপন গৃহে যাইতে পারি? আপনার জীবনের ও আপনার জীবিত প্রাণের দিব্য, আমি এমন কর্ম্ম করিব না।
12. তখন দায়ূদ ঊরিয়কে কহিলেন, অদ্যও তুমি এই স্থানে থাক, কল্য তোমাকে বিদায় করিব। তাহাতে ঊরিয় সে দিবস ও পরদিবস যিরূশালেমে রহিল।
13. আর দায়ূদ তাহাকে নিমন্ত্রণ করিলে সে তাঁহার সাক্ষাতে ভোজন পান করিল; আর তিনি তাহাকে মত্ত করিলেন; কিন্তু সে সন্ধ্যাকালে আপন প্রভুর দাসগণের সঙ্গে আপন শয্যায় শয়ন করিবার জন্য বাহিরে গেল, ঘরে গেল না।
14. প্রাতঃকালে দায়ূদ যোয়াবের নিকটে এক পত্র লিখিয়া ঊরিয়ের হাতে দিয়া পাঠাইলেন।
15. পত্রখানিতে তিনি লিখিয়াছিলেন, তোমরা এই ঊরিয়কে তুমুল যুদ্ধের সম্মুখে নিযুক্ত কর, পরে ইহার পশ্চাৎ হইতে সরিয়া যাও, যেন এ আহত হইয়া মারা পড়ে।
16. পরে কোন্ স্থানে বিক্রমশালী লোক আছে, তাহা জানাতে যোয়াব নগর অবরোধ-কালে সেই স্থানে ঊরিয়কে নিযুক্ত করিলেন।
17. পরে নগরস্থ লোকেরা বাহির হইয়া যোয়াবের সহিত যুদ্ধ করিলে কয়েক জন লোক, দায়ূদের দাসদের মধ্যে কয়কে জন, পতিত হইল, বিশেষতঃ হিত্তীয় ঊরিয়ও মারা পড়িল।
18. পরে যোয়াব লোক পাঠাইয়া যুদ্ধের সমস্ত বৃত্তান্ত দায়ূদকে জানাইলেন,
19. আর দূতকে আদেশ করিলেন, তুমি রাজার সাক্ষাতে যুদ্ধের সমস্ত বৃত্তান্ত সমাপ্ত করিলে,
20. যদি রাজার ক্রোধ জন্মে, আর যদি তিনি বলেন, তোমরা যুদ্ধ করিতে নগরের এত নিকটে কেন গিয়াছিলে? তাহারা প্রাচীর হইতে বাণ মারিবে, ইহা কি জানিতে না?
21. যিরূব্বেশতের পুত্র অবীমেলককে কে আঘাত করিয়াছিল? তেবেষে একটা স্ত্রীলোক যাঁতার একখানা উপরের পাট প্রাচীর হইতে তাহার উপরে ফেলিয়া দিলে সে কি তাহাতেই মরে নাই? তোমরা কেন প্রাচীরের এত নিকটে গিয়াছিলে? তাহা হইলে তুমি বলিবে, আপনার দাস হিত্তীয় ঊরিয়ও মারা পড়িয়াছে।
22. পরে সেই দূত প্রস্থান করিয়া যোয়াবের প্রেরিত সমস্ত কথা দায়ূদকে জ্ঞাত করিল।
23. দূত দায়ূদকে কহিল, সেই লোকেরা আমাদের বিপক্ষে প্রবল হইয়া মাঠে আমাদের নিকটে বাহিরে আসিয়াছিল; তখন আমরা দ্বারের প্রবেশ-স্থান পর্য্যন্ত তাহাদের পশ্চাতে পশ্চাতে তাড়া করিয়াছিলাম।
24. তখন ধনুর্দ্ধরেরা প্রাচীর হইতে আপনার দাসদের উপরে বাণ নিক্ষেপ করিল; তাই মহারাজের কতক দাস মারা পড়িয়াছে; আর আপনার দাস হিত্তীয় ঊরিয়ও মরিয়াছে।
25. তখন দায়ূদ দূতকে কহিলেন, যোয়াবকে এই কথা বলিও, তুমি ইহাতে অসন্তুষ্ট হইও না, কেননা খড়্‌গ যেমন এক জনকে তেমনি আর এক জনকেও গ্রাস করে; তুমি নগরের বিরুদ্ধে আরও সপরাক্রমে যুদ্ধ কর, নগর উচ্ছিন্ন কর; এইরূপে তাহাকে আশ্বাস দিবে।
26. আর ঊরিয়ের স্ত্রী আপন স্বামী ঊরিয়ের মৃত্যু-সংবাদ পাইয়া স্বামীর জন্য শোক করিল।
27. পরে শোক অতীত হইলে দায়ূদ লোক পাঠাইয়া তাহাকে আপন বাটীতে আনাইলেন, তাহাতে সে তাঁহার স্ত্রী হইল, ও তাঁহার জন্য পুত্র প্রসব করিল। কিন্তু দায়ূদের কৃত এই কর্ম্ম সদাপ্রভুর দৃষ্টিতে মন্দ হইল।
Total 24 অধ্যায়গুলির, Selected অধ্যায় 11 / 24
1 পরে বৎসর ফিরিয়া আসিলে রাজবর্গের যুদ্ধে গমন সময়ে দায়ূদ যোয়াবকে, তাঁহার সহিত আপন দাসদিগকে ও সমস্ত ইস্রায়েলকে পাঠাইলেন; তাহারা গিয়া অম্মোন-সন্তানদিগকে সংহার করিয়া রব্বা নগর অবরোধ করিল; কিন্তু দায়ূদ যিরূশালেমে থাকিলেন। 2 একদা বৈকালে দায়ূদ শয্যা হইতে উঠিয়া রাজবাটীর ছাদে বেড়াইতেছিলেন, আর ছাদ হইতে দেখিতে পাইলেন যে, একটী স্ত্রীলোক স্নান করিতেছে; স্ত্রী লোকটী দেখিতে বড়ই সুন্দরী ছিল। 3 দায়ূদ তাহার বিষয় জিজ্ঞাসা করিতে লোক পাঠাইলেন। এক জন কহিল, এ কি ইলিয়ামের কন্যা, হিত্তীয় ঊরিয়ের স্ত্রী বৎশেবা নয়? 4 তখন দায়ূদ দূত পাঠাইয়া তাহাকে আনাইলেন, এবং সে তাঁহার নিকটে আসিলে দায়ূদ তাহার সহিত শয়ন করিলেন; সে স্ত্রী ঋতুস্নান করিয়া শুচি হইয়াছিল। পরে সে আপন ঘরে ফিরিয়া গেল। 5 পরে সে স্ত্রী গর্ভবতী হইল; আর লোক পাঠাইয়া দায়ূদকে এই সমাচার দিল, আমার গর্ভ হইয়াছে। 6 তখন দায়ূদ যোয়াবের নিকটে লোক পাঠাইয়া এই আজ্ঞা করিলেন, হিত্তীয় ঊরিয়কে আমার নিকটে পাঠাইয়া দেও। তাহাতে যোয়াব দায়ূদের নিকটে ঊরিয়কে পাঠাইলেন। 7 ঊরিয় তাঁহার নিকটে উপস্থিত হইলে দায়ূদ তাহাকে যোয়াবের কুশল, লোকদের কুশল ও যুদ্ধের কুশল জিজ্ঞাসা করিলেন। 8 পরে দায়ূদ ঊরিয়কে কহিলেন, তুমি আপন বাটীতে গিয়া পা ধোও। তখন ঊরিয় রাজবাটী হইতে বাহির হইল, আর রাজার নিকট হইতে তাহার পশ্চাতে পশ্চাতে ভেট গেল। 9 কিন্তু ঊরিয় আপন প্রভুর দাসগণের সঙ্গে রাজবাটীর দ্বারে শয়ন করিল, ঘরে গেল না। 10 পরে এই কথা দায়ূদকে বলা হইল যে, ঊরিয় ঘরে যায় নাই। দায়ূদ ঊরিয়কে কহিলেন, তুমি কি পথভ্রমণ করিয়া আইস নাই? তবে কেন বাটীতে গেলে না? 11 ঊরিয় দায়ূদকে কহিল, সিন্দুক, ইস্রায়েল ও যিহূদা কুটীরে বাস করিতেছে, এবং আমার প্রভু যোয়াব ও আমার প্রভুর দাসগণ খোলা মাঠে ছাউনী করিয়া আছেন; তবে আমি কি ভোজন পান করিতে ও স্ত্রীর সহিত শয়ন করিতে আপন গৃহে যাইতে পারি? আপনার জীবনের ও আপনার জীবিত প্রাণের দিব্য, আমি এমন কর্ম্ম করিব না। 12 তখন দায়ূদ ঊরিয়কে কহিলেন, অদ্যও তুমি এই স্থানে থাক, কল্য তোমাকে বিদায় করিব। তাহাতে ঊরিয় সে দিবস ও পরদিবস যিরূশালেমে রহিল। 13 আর দায়ূদ তাহাকে নিমন্ত্রণ করিলে সে তাঁহার সাক্ষাতে ভোজন পান করিল; আর তিনি তাহাকে মত্ত করিলেন; কিন্তু সে সন্ধ্যাকালে আপন প্রভুর দাসগণের সঙ্গে আপন শয্যায় শয়ন করিবার জন্য বাহিরে গেল, ঘরে গেল না। 14 প্রাতঃকালে দায়ূদ যোয়াবের নিকটে এক পত্র লিখিয়া ঊরিয়ের হাতে দিয়া পাঠাইলেন। 15 পত্রখানিতে তিনি লিখিয়াছিলেন, তোমরা এই ঊরিয়কে তুমুল যুদ্ধের সম্মুখে নিযুক্ত কর, পরে ইহার পশ্চাৎ হইতে সরিয়া যাও, যেন এ আহত হইয়া মারা পড়ে। 16 পরে কোন্ স্থানে বিক্রমশালী লোক আছে, তাহা জানাতে যোয়াব নগর অবরোধ-কালে সেই স্থানে ঊরিয়কে নিযুক্ত করিলেন। 17 পরে নগরস্থ লোকেরা বাহির হইয়া যোয়াবের সহিত যুদ্ধ করিলে কয়েক জন লোক, দায়ূদের দাসদের মধ্যে কয়কে জন, পতিত হইল, বিশেষতঃ হিত্তীয় ঊরিয়ও মারা পড়িল। 18 পরে যোয়াব লোক পাঠাইয়া যুদ্ধের সমস্ত বৃত্তান্ত দায়ূদকে জানাইলেন, 19 আর দূতকে আদেশ করিলেন, তুমি রাজার সাক্ষাতে যুদ্ধের সমস্ত বৃত্তান্ত সমাপ্ত করিলে, 20 যদি রাজার ক্রোধ জন্মে, আর যদি তিনি বলেন, তোমরা যুদ্ধ করিতে নগরের এত নিকটে কেন গিয়াছিলে? তাহারা প্রাচীর হইতে বাণ মারিবে, ইহা কি জানিতে না? 21 যিরূব্বেশতের পুত্র অবীমেলককে কে আঘাত করিয়াছিল? তেবেষে একটা স্ত্রীলোক যাঁতার একখানা উপরের পাট প্রাচীর হইতে তাহার উপরে ফেলিয়া দিলে সে কি তাহাতেই মরে নাই? তোমরা কেন প্রাচীরের এত নিকটে গিয়াছিলে? তাহা হইলে তুমি বলিবে, আপনার দাস হিত্তীয় ঊরিয়ও মারা পড়িয়াছে। 22 পরে সেই দূত প্রস্থান করিয়া যোয়াবের প্রেরিত সমস্ত কথা দায়ূদকে জ্ঞাত করিল। 23 দূত দায়ূদকে কহিল, সেই লোকেরা আমাদের বিপক্ষে প্রবল হইয়া মাঠে আমাদের নিকটে বাহিরে আসিয়াছিল; তখন আমরা দ্বারের প্রবেশ-স্থান পর্য্যন্ত তাহাদের পশ্চাতে পশ্চাতে তাড়া করিয়াছিলাম। 24 তখন ধনুর্দ্ধরেরা প্রাচীর হইতে আপনার দাসদের উপরে বাণ নিক্ষেপ করিল; তাই মহারাজের কতক দাস মারা পড়িয়াছে; আর আপনার দাস হিত্তীয় ঊরিয়ও মরিয়াছে। 25 তখন দায়ূদ দূতকে কহিলেন, যোয়াবকে এই কথা বলিও, তুমি ইহাতে অসন্তুষ্ট হইও না, কেননা খড়্‌গ যেমন এক জনকে তেমনি আর এক জনকেও গ্রাস করে; তুমি নগরের বিরুদ্ধে আরও সপরাক্রমে যুদ্ধ কর, নগর উচ্ছিন্ন কর; এইরূপে তাহাকে আশ্বাস দিবে। 26 আর ঊরিয়ের স্ত্রী আপন স্বামী ঊরিয়ের মৃত্যু-সংবাদ পাইয়া স্বামীর জন্য শোক করিল। 27 পরে শোক অতীত হইলে দায়ূদ লোক পাঠাইয়া তাহাকে আপন বাটীতে আনাইলেন, তাহাতে সে তাঁহার স্ত্রী হইল, ও তাঁহার জন্য পুত্র প্রসব করিল। কিন্তু দায়ূদের কৃত এই কর্ম্ম সদাপ্রভুর দৃষ্টিতে মন্দ হইল।
Total 24 অধ্যায়গুলির, Selected অধ্যায় 11 / 24
×

Alert

×

Bengali Letters Keypad References