1. লেবির সন্তান কহাৎ, তাঁহার সন্তান যিষ্হর, সেই যিষ্হরের সন্তান যে কোরহ, সে এবং রূবেণ-সন্তানগণের মধ্যে ইলীয়াবের পুত্র দাথন ও অবীরাম, এবং পেলতের পুত্র ওন দল বাঁধিল;
2. আর ইস্রায়েল-সন্তানদের দুই শত পঞ্চাশ জনের সহিত মোশির সম্মুখে উঠিল; ইহারা মণ্ডলীর অধ্যক্ষ, সমাজে সমাহূত ও প্রসিদ্ধ লোক ছিল।
3. তাহারা মোশি ও হারোণের বিরুদ্ধে একত্র হইয়া তাঁহাদিগকে কহিল, তোমরা বড়ই অভিমানী; কেননা সমস্ত মণ্ডলীর প্রত্যেক জনই পবিত্র, এবং সদাপ্রভু তাহাদের মধ্যবর্ত্তী; তবে তোমরা কেন সদাপ্রভুর সমাজের উপরে আপনাদিগকে উন্নত করিতেছ?
4. তখন মোশি তাহা শুনিয়া উবুড় হইয়া পড়িলেন।
5. আর তিনি কোরহকে ও তাহার দলস্থ সকলকে কহিলেন, কে সদাপ্রভুর লোক, ও কে পবিত্র, কাহাকে তিনি আপনার নিকটবর্ত্তী করেন, তাহা সদাপ্রভু প্রাতঃকালে জানাইবেন; তিনি যাহাকে মনোনীত করিবেন, তাহাকেই আপনার নিকটবর্ত্তী করিবেন।
6. হে কোরহ ও কোরহের দলস্থ সকলে, এক কর্ম্ম কর;
7. তোমরা অঙ্গারধানী লও, এবং তাহাতে অগ্নি দিয়া কল্য সদাপ্রভুর সম্মুখে তাহার উপরে ধূপ দেও, তাহাতে সদাপ্রভু যাহাকে মনোনীত করিবেন, সেই ব্যক্তি পবিত্র হইবে; হে লেবির সন্তানগণ, তোমরা বড়ই অভিমানী।
8. পরে মোশি কোরহকে কহিলেন, হে লেবির সন্তানগণ, বিনয় করি, আমার কথা শুন।
9. ইহা কি তোমাদের কাছে ক্ষুদ্র বিষয় যে, ইস্রায়েলের ঈশ্বর তোমাদিগকে ইস্রায়েল-মণ্ডলী হইতে পৃথক্ করিয়া সদাপ্রভুর আবাসের সেবাকর্ম্ম করণার্থে ও মণ্ডলীর সম্মুখে দাঁড়াইয়া তাহার পরিচর্য্যা করণার্থে আপনার নিকটবর্ত্তী করিয়াছেন;
10. আর তোমাকে ও তোমার সহিত তোমার সমস্ত ভ্রাতাকে অর্থাৎ লেবির সন্তানগণকে আপনার নিকটবর্ত্তী করিয়াছেন? আর তোমরা কি যাজকত্বেরও চেষ্টা করিতেছ?
11. অতএব তুমি ও তোমার সমস্ত দল সদাপ্রভুরই প্রতিকূলে একত্র হইয়াছ; আর হারোণ কে যে তোমরা তাঁহার প্রতিকূলে বচসা কর?
12. পরে মোশি ইলীয়াবের পুত্র দাথন ও অবীরামকে ডাকিতে লোক পাঠাইলেন, কিন্তু তাহারা কহিল, আমরা যাইব না;
13. ইহা কি ক্ষুদ্র বিষয় যে, তুমি আমাদিগকে প্রান্তরে মারিবার জন্য দুগ্ধমধুপ্রবাহী দেশ হইতে আনিয়াছ? তুমি কি আমাদের উপরে সর্ব্বতোভাবে কর্ত্তৃত্বও করিবে?
14. আর, তুমি ত আমাদিগকে দুগ্ধমধুপ্রবাহী দেশে আন নাই, শস্যক্ষেত্রের ও দ্রাক্ষাক্ষেত্রের অধিকারও দেও নাই। তুমি কি এই লোকদের চক্ষু উৎপাটন করিবে? আমরা যাইব না।
15. তখন মোশি অতিশয় ক্রুদ্ধ হইয়া সদাপ্রভুকে কহিলেন, উহাদের নৈবেদ্য গ্রাহ্য করিও না; আমি উহাদের হইতে একটী গর্দ্দভও লই নাই, আর উহাদের এক জনেরও হিংসা করি নাই।
16. পরে মোশি কোরহকে কহিলেন, তুমি ও তোমার দলস্থ সকলে, তোমরা কল্য হারোণের সহিত সদাপ্রভুর সম্মুখে উপস্থিত হইবে;
17. প্রত্যেক জন অঙ্গারধানী লইয়া তাহার উপরে ধূপ দিয়া সদাপ্রভুর সম্মুখে আপন আপন অঙ্গারধানী উপস্থিত করিবে; দুই শত পঞ্চাশটী অঙ্গারধানী উপস্থিত করিবে; এবং তুমি ও হারোণ আপন আপন অঙ্গারধানী লইবে।
18. পরে তাহারা প্রত্যেকে আপন আপন অঙ্গারধানী লইয়া তাহার মধ্যে অগ্নি রাখিয়া ধূপ দিয়া মোশি ও হারোণের সহিত সমাগম-তাম্বুর দ্বারে দাঁড়াইল।
19. আর কোরহ সমাগম-তাম্বুর দ্বারসমীপে তাঁহাদের প্রতিকূলে সমস্ত মণ্ডলীকে সমবেত করিল। তখন সদাপ্রভুর প্রতাপ সমস্ত মণ্ডলীর প্রত্যক্ষ হইল।
20. পরে সদাপ্রভু মোশি ও হারোণকে কহিলেন, তোমরা এই মণ্ডলীর মধ্য হইতে পৃথক্ হও;
21. আমি এক নিমিষে ইহাদিগকে সংহার করি।
22. তাঁহারা উবুড় হইয়া পড়িলেন, ও কহিলেন, হে ঈশ্বর, হে যাবতীয় শরীরস্থ আত্মার ঈশ্বর, এক জন পাপ করিলে তুমি কি সমস্ত মণ্ডলীর উপরে কোপাবিষ্ট হইবে?
23. তখন সদাপ্রভু মোশিকে কহিলেন,
24. তুমি মণ্ডলীকে বল, তোমরা কোরহের, দাথনের ও অবীরামের আবাসের চতুর্দ্দিক্ হইতে উঠিয়া যাও।
25. আর মোশি উঠিয়া দাথনের ও অবীরামের নিকটে গেলেন, এবং ইস্রায়েলের প্রাচীনবর্গ তাঁহার পশ্চাৎ গেলেন।
26. পরে তিনি মণ্ডলীকে কহিলেন, বিনয় করি, তোমরা এই দুষ্ট লোকদের তাম্বুর নিকট হইতে উঠিয়া যাও, ইহাদের কিছুই স্পর্শ করিও না, পাছে ইহাদের সমস্ত পাপে বিনষ্ট হও।
27. তাহাতে তাহারা কোরহের, দাথনের ও অবীরামের আবাসের চারিদিক্ হইতে উঠিয়া গেল, আর দাথন ও অবীরাম বাহির হইয়া আপন আপন স্ত্রী, পুত্র ও শিশুগণের সহিত আপন আপন তাম্বুদ্বারে দাঁড়াইয়া রহিল।
28. পরে মোশি কহিলেন, সদাপ্রভু আমাকে এই সমস্ত কার্য্য করিতে পাঠাইয়াছেন, আমি স্বেচ্ছানুসারে করি নাই, তাহা তোমরা ইহাতেই জানিতে পারিবে।
29. সাধারণ লোকদের মরণের ন্যায় যদি এই মনুষ্যেরা মরে, কিম্বা সাধারণ লোকের শাস্তির ন্যায় যদি ইহাদের শাস্তি হয়, তবে সদাপ্রভু আমাকে পাঠান নাই।
30. কিন্তু সদাপ্রভু যদি অঘটন ঘটান এবং ভূমি আপন মুখ বিস্তার করিয়া ইহাদিগকে ও ইহাদের সর্ব্বস্ব গ্রাস করে, আর ইহারা জীবদ্দশায় পাতালে নামে, তবে ইহারা যে সদাপ্রভুকে অবজ্ঞা করিয়াছে, তাহা তোমরা জানিতে পারিবে।
31. পরে মোশির এই সমস্ত কথা সমাপ্ত হইবামাত্র তাহাদের অধঃস্থিত ভূমি বিদীর্ণ হইল,
32. আর পৃথিবী আপন মুখ বিস্তার করিয়া তাহাদিগকে, তাহাদের পরিজনগণকে ও কোরহের সপক্ষ সমস্ত লোককে এবং তাহাদের সকল সম্পত্তি গ্রাস করিল।
33. তাহাতে তাহারা ও তাহাদের সমস্ত পরিজন জীবদ্দশায় পাতালে নামিল, এবং পৃথিবী তাহাদের উপরে চাপিয়া পড়িল; এইরূপে তাহারা সমাজের মধ্য হইতে লুপ্ত হইল।
34. আর তাহাদের রবে চারিদিকের সমস্ত ইস্রায়েল পলায়ন করিল, কেননা তাহারা বলিল, পাছে পৃথিবী আমাদিগকে গ্রাস করে।
35. আর সদাপ্রভু হইতে অগ্নি নির্গত হইয়া যাহারা ধূপ নিবেদন করিয়াছিল, সেই দুই শত পঞ্চাশ জন লোককে গ্রাস করিল।
36. পরে সদাপ্রভু মোশিকে কহিলেন,
37. তুমি হারোণ যাজকের পুত্র ইলীয়াসরকে বল, সে দাহস্থান হইতে ঐ সকল অঙ্গারধানী উঠাইয়া লউক, এবং তাহার অগ্নি দূরে ঝাড়িয়া ফেলুক, কেননা সেই সকল অঙ্গারধানী পবিত্র।
38. আর ঐ যে পাপীরা আপন আপন প্রাণের প্রতিকূলে পাপ করিয়াছিল, তাহাদের অঙ্গারধানী সকল পিটাইয়া যজ্ঞবেদির আচ্ছাদনার্থ পাত প্রস্তুত করা হউক, কেননা তাহারা সদাপ্রভুর সম্মুখে সে সকল নিবেদন করিয়াছিল; অতএব সে সকল পবিত্র; আর সে সকল ইস্রায়েল-সন্তানগণের পক্ষে চিহ্ন হইবে।
39. তাহাতে যাহারা পুড়িয়া মরিল, তাহারা পিত্তলের যে যে অঙ্গারধানী নিবেদন করিয়াছিল, ইলীয়াসর যাজক সে সকল গ্রহণ করিলেন; এবং তাহা পিটাইয়া যজ্ঞবেদির আচ্ছাদনার্থ পাত প্রস্তুত করা গেল;
40. উহা ইস্রায়েল-সন্তানগণের স্মরণার্থে হইল, যেন হারোণ বংশজাত ভিন্ন অন্য গোষ্ঠীভূক্ত কোন মনুষ্য সদাপ্রভুর সম্মুখে ধূপ উৎসর্গ করিতে নিকটে না যায়, এবং কোরহের ও তাহার দলের মত না হয়; সদাপ্রভু মোশির দ্বারা তাহাকে এইরূপ আজ্ঞা দিয়াছিলেন।
41. তথাপি পর দিনে ইস্রায়েল-সন্তানগণের সমস্ত মণ্ডলী মোশির ও হারোণের প্রতিকূলে বচসা করিয়া কহিল, তোমরাই সদাপ্রভুর প্রজাদিগকে বধ করিলে।
42. আর মণ্ডলী মোশির ও হারোণের প্রতিকূলে একত্র হইলে তাহারা সমাগম-তাম্বুর দিকে মুখ ফিরাইল, আর দেখ, মেঘ তাহা আচ্ছাদন করিয়াছে, এবং সদাপ্রভুর প্রতাপ প্রত্যক্ষ হইয়াছে।
43. তখন মোশি ও হারোণ সমাগম-তাম্বুর সম্মুখে উপস্থিত হইলেন।
44. আর সদাপ্রভু মোশিকে কহিলেন,
45. তোমরা এই মণ্ডলীর মধ্য হইতে উঠিয়া যাও, আমি এক নিমিষে ইহাদিগকে সংহার করিব।
46. তখন তাঁহারা উবুড় হইয়া পড়িলেন। আর মোশি হারোণকে কহিলেন, তোমার অঙ্গারধানী লও, ও যজ্ঞবেদির উপর হইতে অগ্নি লইয়া তাহার মধ্যে দেও, এবং তাহাতে ধূপ দিয়া শীঘ্র মণ্ডলীর নিকটে গিয়া তাহাদের নিমিত্তে প্রায়শ্চিত্ত কর; কেননা সদাপ্রভুর সম্মুখ হইতে ক্রোধ নির্গত হইল, মহামারী আরম্ভ হইল।
47. আর মোশি যেমন বলিলেন, অমনি হারোণ [অঙ্গারধানী] লইয়া সমাজের মধ্যে দৌড়িয়া গেলেন; আর দেখ, লোকদের মধ্যে মহামারী আরম্ভ হইয়াছিল, কিন্তু তিনি ধূপ দিয়া লোকদের নিমিত্তে প্রায়শ্চিত্ত করিলেন।
48. তিনি মৃত ও জীবিত লোকদের মধ্যে দাঁড়াইলেন; তাহাতে মহামারী নিবৃত্ত হইল।
49. যাহারা কোরহের ব্যাপারে মারা পড়ে, তাহারা ছাড়া আর চৌদ্দ সহস্র সাত শত লোক ঐ মহামারীতে মারা পড়িল।
50. পরে হারোণ সমাগম-তাম্বুর দ্বারে মোশির নিকটে ফিরিয়া আসিলেন। এইরূপে মহামারী নিবৃত্ত হইল।