1. আমি মনে মনে বলিলাম, ‘আইস, আমি এক বার আমোদের দ্বারা তোমার পরীক্ষা করি, তুমি সুখভোগ কর,’ আর দেখ, তাহাও অসার।
2. আমি হাস্যের বিষয়ে কহিলাম, উহা ক্ষিপ্ত; এবং আমোদের বিষয়ে কহিলাম, উহা কি করিবে?
3. আমি মনে মনে আন্দোলন করিলাম, কিরূপে মদ্যপানে শরীরকে তুষ্ট করিব,—তখনও আমার মন প্রজ্ঞাসহকারে আমাকে পথ প্রদর্শন করিতেছিল—আর কিরূপে অজ্ঞানতা অবলম্বন করিব, শেষে দেখিতে পারিব, আকাশের নীচে মনুষ্য-সন্তানদের সমস্ত জীবনকালে কি কি করা ভাল।
4. আমি আপনার জন্য মহৎ মহৎ কার্য্য করিলাম, আপনার জন্য নানা স্থানে বাটী নির্ম্মাণ করিলাম, আপনার জন্য দ্রাক্ষাক্ষেত্রসমূহ প্রস্তুত করিলাম;
5. আমি আপনার জন্য অনেক উদ্যান ও উপবন করিয়া তাহার মধ্যে সর্ব্বপ্রকার ফলবৃক্ষ রোপন করিলাম;
6. সেই বৃক্ষোৎপাদক বনে জল সেচনার্থে আমি স্থানে স্থানে পুষ্করিণী খনন করিলাম।
7. আমি অনেক দাস দাসী ক্রয় করিলাম, এবং আমার গৃহেও দাসগণ জন্মিল; আর আমার পূর্ব্বে যিরূশালেমে যাঁহারা ছিলেন, সেই সকল হইতে আমার গোমেষাদি পশুধন অধিক ছিল।
8. আমি রৌপ্য ও সুবর্ণ এবং নানা রাজার ও নানা প্রদেশের বিশেষ বিশেষ ধন সঞ্চয় করিলাম; আমি অনেক গায়ক গায়িকা ও মনুষ্য-সন্তানদের সন্তোষকারিণী কত উপপত্নী পাইলাম।
9. বাস্তবিক আমি মহান্ ছিলাম, আমার পূর্ব্বে যাঁহারা যিরূশালেমে ছিলেন, সেই সকল অপেক্ষা সমৃদ্ধিশালী হইলাম, এবং আমার প্রজ্ঞাও আমার সহবর্ত্তিনী ছিল।
10. আর আমার চক্ষু দুটী যাহা ইচ্ছা করিত, তাহা আমি তাহাদের অগোচর রাখিতাম না; আমার হৃদয়কে কোন আনন্দভোগ করিতে বারণ করিতাম না; বাস্তবিক আমার সমস্ত পরিশ্রমে আমার হৃদয় আনন্দ করিত; সমস্ত পরিশ্রমে ইহাই আমার অংশ হইল।
11. পরে আমার হস্ত যে সকল কার্য্য করিত, যে পরিশ্রমে আমি পরিশ্রান্ত হইতাম, সে সমস্তের প্রতি দৃষ্টিপাত করিলাম, আর দেখ, সে সকলই অসার ও বায়ুভক্ষণ মাত্র; সূর্য্যের নীচে কিছুই লাভ নাই।
12. পরে আমি প্রজ্ঞা, এবং ক্ষিপ্ততা ও অজ্ঞানতা দেখিতে প্রবৃত্ত হইলাম; কারণ যে ব্যক্তি রাজার পশ্চাতে আসিবে, সে কি করিবে? পূর্ব্বে যাহা করা গিয়াছিল, তাহাই মাত্র।
13. তখন আমি দেখিলাম, যেমন অন্ধকার অপেক্ষা দীপ্তি উত্তম, তেমনি অজ্ঞানতা অপেক্ষা প্রজ্ঞা উত্তম।
14. জ্ঞানবানের মস্তকেই চক্ষু থাকে; কিন্তু হীনবুদ্ধি অন্ধকারে ভ্রমণ করে; তথাপি আমি জানিলাম যে, সকলেরই এক দশা ঘটে।
15. তখন আমি মনে মনে বলিলাম, হীনবুদ্ধির প্রতি যাহা ঘটে, তাহাই ত আমার প্রতি ঘটে, তবে আমি কি নিমিত্ত অধিক জ্ঞানবান হইলাম? পরে আমি মনে মনে বলিলাম, ইহাও অসার।
16. কেননা হীনবুদ্ধির ন্যায় জ্ঞানবানের বিষয়ও লোকে চিরকাল মনে রাখিবে না, ভবিষ্যৎকালে কিছুই স্মরণে থাকিবে না; আহা! হীনবুদ্ধি যেমন মরে, তেমনি জ্ঞানবানও মরে।
17. সুতরাং আমি জীবনে বিরক্ত হইলাম; কেননা সূর্য্যের নীচে কৃত কার্য্য আমার ক্লেশদায়ক বোধ হইল; কারণ সকলই অসার ও বায়ুভক্ষণ মাত্র।
18. সূর্য্যের নীচে আমি যে পরিশ্রমে পরিশ্রান্ত হইতাম, আমার সেই সমস্ত পরিশ্রমে বিরক্ত হইলাম; কেননা আমার পরবর্ত্তী ব্যক্তির জন্য তাহা রাখিয়া যাইতে হইবে।
19. আর সে জ্ঞানবান হইবে, কি হীনবুদ্ধি হইবে, তাহা কে জানে? কিন্তু আমি সূর্য্যের নীচে যে শ্রমে পরিশ্রম করিয়া জ্ঞান দেখাইতাম, সেই সকল পরিশ্রমের ফলাধিকারী সে হইবে; ইহাও অসার।
20. অতএব সূর্য্যের নীচে আমি যে পরিশ্রমে পরিশ্রান্ত হইতাম, ফিরিয়া আমার সেই সমস্ত পরিশ্রমের বিষয়ে আপন হৃদয়কে নিরাশ হইতে দিলাম।
21. কেননা এক ব্যক্তির পরিশ্রম প্রজ্ঞা, বিদ্যা ও কৌশল সহযুক্ত; তথাপি যে ব্যক্তি সে বিষয়ে পরিশ্রম করে নাই, তাহাকে তাহার অধিকার বলিয়া তাহা দিয়া যাইতে হয়।
22. ইহাও অসার ও বড় মন্দ। তবে সূর্য্যের নীচে মনুষ্য যে সকল পরিশ্রমে ও হৃদয়ের উদ্বেগে পরিশ্রান্ত হয়, তাহাতে তাহার কি ফল দর্শে?
23. কেননা তাহার সমস্ত দিন ব্যথাযুক্ত, এবং তাহার কষ্ট মনস্তাপজনক, রাত্রিতেও তাহার হৃদয় বিশ্রাম পায় না। ইহাও অসার।
24. ভোজন পান করা এবং নিজ পরিশ্রমের মধ্যে প্রাণকে সুখভোগ করান ব্যতীত আর মঙ্গল মানুষের হয় না; ইহাও আমি দেখিলাম যে, তাহা ঈশ্বরের হস্ত হইতে হয়।
25. আর আমা হইতে কে অধিক ভোজন করিতে কিম্বা অধিক সুখভোগ করিতে পারে?
26. বস্তুতঃ যে ব্যক্তি [ঈশ্বরের] প্রীতিজনক, তাহাকে তিনি প্রজ্ঞা, বিদ্যা ও আনন্দ দেন; কিন্তু পাপীকে কষ্ট দেন, যেন সে ঈশ্বরের প্রীতিজনক ব্যক্তিকে দিবার জন্য ধন সংগ্রহ ও সঞ্চয় করে। ইহাও অসার ও বায়ুভক্ষণ মাত্র।