1. একদা শিষ্য-ভাববাদিগণ ইলীশায়কে কহিল, দেখুন, আমরা আপনার সাক্ষাতে যে স্থানে বাস করিতেছি, ইহা আমাদের পক্ষে সঙ্কীর্ণ।
2. অনুমতি করুন, আমরা যর্দ্দনে গিয়া প্রত্যেক জন তথা হইতে এক একখানি কড়িকাষ্ঠ লইয়া আমাদের জন্য সেখানে বাসস্থান প্রস্তুত করি। তিনি কহিলেন, যাও।
3. আর এক জন কহিল, আপনি অনুগ্রহ করিয়া আপনার দাসদের সহিত চলুন।
4. তিনি কহিলেন, যাইব। অতএব তিনি তাহাদের সহিত গেলেন; পরে যর্দ্দনের নিকটে উপস্থিত হইয়া তাহারা কাষ্ঠ ছেদন করিতে লাগিল।
5. কিন্তু এক জন কড়িকাষ্ঠ ছেদন করিতেছিল, এমন সময়ে কুড়ালির ফলা জলে পড়িয়া গেল; তাহাতে সে কাঁদিয়া কহিল, হায় হায়! প্রভু, আমি ত উহা ধার করিয়া আনিয়াছিলাম।
6. তখন ঈশ্বরের লোক জিজ্ঞাসা করিলেন, তাহা কোথায় পড়িয়াছে? সে তাঁহাকে সেই স্থান দেখাইল। তখন ইলীশায় একখানি কাষ্ঠ কাটিয়া সেই স্থানে ফেলিয়া লৌহখানি ভাসাইয়া উঠাইলেন।
7. আর তিনি কহিলেন, উহা তুলিয়া লও। তাহাতে সে হাত বাড়াইয়া তাহা লইল।
8. এক সময়ে অরামের রাজা ইস্রায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করিতেছিলেন; আর যখন তিনি আপন দাসদের সহিত মন্ত্রণা করিয়া কহিতেন, অমুক অমুক স্থানে আমার শিবির স্থাপন করা হইবে,
9. তখন ঈশ্বরের লোক ইস্রায়েলের রাজার কাছে বলিয়া পাঠাইতেন, সাবধান, অমুক স্থান উপেক্ষা করিবেন না, কেননা সেখানে অরামীয়েরা নামিয়া আসিতেছে।
10. তাহাতে ঈশ্বরের লোক যে স্থানের বিষয় বলিয়া তাঁহাকে সাবধান করিয়া দিতেন, সেই স্থানে ইস্রায়েলের রাজা সৈন্য পাঠাইয়া আপনাকে রক্ষা করিতেন; কেবল দুই এক বার নয়।
11. এই বিষয়ের জন্য অরামের রাজার হৃদয় উদ্বিগ্ন হইল, তিনি আপন দাসগণকে ডাকিয়া কহিলেন, আমাদের মধ্যে কে ইস্রায়েলের রাজার পক্ষীয়, তাহা কি তোমরা আমাকে বলিবে না?
12. তখন তাঁহার দাসদের মধ্যে এক জন কহিল, হে আমার প্রভু মহারাজ, কেহ নয়; কিন্তু আপনি আপন শয়নাগারে যে সকল কথা বলেন, সে সকল ইস্রায়েলস্থ ভাববাদী ইলীশায় ইস্রায়েলের রাজাকে জ্ঞাত করেন।
13. তখন তিনি কহিলেন, তোমরা গিয়া দেখ, সে কোথায়; আমি লোক পাঠাইয়া তাহাকে আনাইব। পরে কেহ তাঁহাকে এই সংবাদ দিল, দেখুন, তিনি দোথনে আছেন।
14. তাহাতে তিনি অনেক অশ্ব, রথ ও এক বৃহৎ সৈন্যদল সেখানে পাঠাইলেন। তাহারা রাত্রিতে আসিয়া সেই নগর বেষ্টন করিল।
15. আর ঈশ্বরের লোকের পরিচারক প্রত্যূষে উঠিয়া যখন বাহিরে গেল, তখন দেখ, অনেক অশ্ব ও রথসহ এক সৈন্যদল নগর বেষ্টন করিয়া আছে। পরে তাঁহার চাকর তাঁহাকে কহিল হায় হায়, হে প্রভু! আমরা কি করিব?
16. তিনি কহিলেন, ভয় করিও না, উহাদের সঙ্গীদের অপেক্ষা আমাদের সঙ্গী অধিক।
17. তখন ইলীশায় প্রার্থনা করিয়া কহিলেন, হে সদাপ্রভু, বিনয় করি, ইহার চক্ষু খুলিয়া দেও, যেন এ দেখিতে পায়। তখন সদাপ্রভু সেই যুবকটীর চক্ষু খুলিয়া দিলেন, এবং সে দেখিতে পাইল, আর দেখ, ইলীশায়ের চারিদিকে অগ্নিময় অশ্বে ও রথে পর্ব্বত পরিপূর্ণ।
18. পরে ঐ সৈন্যগণ তাঁহার নিকটে আসিলে ইলীশায় সদাপ্রভুর কাছে প্রার্থনা করিয়া বলিলেন, বিনয় করি, এই দলকে অন্ধতায় আহত কর। তাহাতে তিনি ইলীশায়ের বাক্যানুসারে তাহাদিগকে অন্ধতায় আহত করিলেন।
19. পরে ইলীশায় তাহাদিগকে কহিলেন, এ সে পথ নয়, এবং এ সেই নগর নয়; তোমরা আমার পশ্চাতে পশ্চাতে আইস; যে ব্যক্তির অন্বেষণ করিতেছ, তাহার নিকট আমি তোমাদিগকে লইয়া যাইব। আর তিনি তাহাদিগকে শমরিয়ায় লইয়া গেলেন।
20. তাহারা শমরিয়ায় প্রবিষ্ট হইলে পর ইলীশায় কহিলেন, হে সদাপ্রভু, ইহাদের চক্ষু খুলিয়া দেও, যেন ইহারা দেখিতে পায়। তখন সদাপ্রভু তাহাদের চক্ষু খুলিয়া দিলেন, এবং তাহারা দেখিতে পাইল, আর দেখ, তাহারা শমরিয়ার মধ্যে উপস্থিত।
21. আর ইস্রায়েলের রাজা তাহাদিগকে দেখিয়া ইলীশায়কে কহিলেন, হে পিতা, মারিব? মারিব? ইলীশায় কহিলেন, মারিও না।
22. তুমি যাহাদিগকে খড়্গ ও ধনুর দ্বারা বন্দি কর, তাহাদিগকে কি মারিয়া থাক? উহাদের সম্মুখে রুটী ও জল রাখ; উহারা ভোজন পান করিয়া উহাদের প্রভুর কাছে চলিয়া যাউক।
23. তখন তিনি তাহাদের জন্য মহাভোজ প্রস্তুত করিলেন, এবং তাহারা ভোজন পান করিলে তাহাদিগকে বিদায় করিলেন; তাহারা আপন প্রভুর নিকটে গেল। পরে অরামের সৈন্যদল ইস্রায়েল দেশে আর আসিল না।
24. তৎপরে অরাম-রাজ বিন্হদদ আপনার সমস্ত সৈন্য একত্র করিলেন, এবং উঠিয়া গিয়া শমরিয়া অবরোধ করিলেন।
25. তাহাতে শমরিয়ায় অতিশয় দুর্ভিক্ষ হইল; আর দেখ, তাহারা অবরোধ করিয়া রহিলে শেষে একটা গর্দ্দভের মুণ্ডের মূল্য আশী রৌপ্যমুদ্রা, ও কপোতমলের এক কাবের চতুর্থাংশের মূল্য পাঁচ রৌপ্যমুদ্রা হইল।
26. একদা ইস্রায়েলের রাজা প্রাচীরের উপরে বেড়াইতেছেন, এমন সময়ে একটী স্ত্রীলোক তাঁহার কাছে কাঁদিয়া কহিল, হে আমার প্রভু মহারাজ, রক্ষা করুন।
27. রাজা কহিলেন, যদি সদাপ্রভু তোমাকে রক্ষা না করেন, আমি কোথা হইতে তোমাকে রক্ষা করিব? কি খামার হইতে? না দ্রাক্ষাপেষণকুণ্ড হইতে?
28. রাজা আরও কহিলেন, তোমার কি হইয়াছে? সে উত্তর করিল, এই স্ত্রীলোকটী আমাকে বলিয়াছিল, তোমার ছেলেটীকে দেও, আজ আমরা তাহাকে খাই, কাল আমার ছেলেটীকে খাইব।
29. তখন আমরা আমার ছেলেটীকে পাক করিয়া খাইলাম। পরদিন আমি ইহাকে কহিলাম, তোমার ছেলেটীকে দেও, আমরা খাই; কিন্তু এ আপনার ছেলেটীকে লুকাইয়া রাখিয়াছে।
30. স্ত্রীলোকটীর এই কথা শুনিয়া রাজা আপন বস্ত্র ছিঁড়িলেন; তখন তিনি প্রাচীরের উপরে বেড়াইতেছিলেন; তাহাতে লোকেরা চাহিয়া দেখিল, আর দেখ, বস্ত্রের নীচে তাঁহার গাত্রে চট বাঁধা।
31. পরে তিনি কহিলেন, অদ্য যদি শাফটের পুত্র ইলীশায়ের মস্তক তাহার স্কন্ধে থাকে, তবে ঈশ্বর আমাকে অমুক ও ততোধিক দণ্ড দিউন।
32. তখন ইলীশায় আপন গৃহে বসিয়াছিলেন, এবং তাঁহার সহিত প্রাচীনবর্গ বসিয়াছিলেন; ইতিমধ্যে রাজা আপনার সম্মুখ হইতে এক জন লোক পাঠাইলেন। কিন্তু সেই দূতের আসিবার পূর্ব্বে ইলীশায় প্রাচীনবর্গকে কহিলেন, সেই নরঘাতকের পুত্র আমার মস্তক ছেদনার্থে লোক পাঠাইয়াছে, তোমরা কি দেখিতেছ? দেখ, সেই দূত আসিলে দ্বার রুদ্ধ করিও, এবং দ্বারশুদ্ধ তাহাকে ঠেলিয়া দিও; তাহার প্রভুর পদশব্দ কি তাহার পশ্চাতে নাই?
33. তিনি তাহাদের সহিত কথাবার্ত্তা কহিতেছেন, এমন সময়ে দেখ, দূত তাঁহার নিকটে পৌঁছিল, পরে রাজা কহিলেন, দেখ, এই অমঙ্গল সদাপ্রভু হইতে হইল, আমি কেন আর সদাপ্রভুর অপেক্ষাতে থাকিব?