পবিত্র বাইবেল

গডস গ্রেইস গিফট
সামসঙ্গীত
1. হে আমার স্বজাতি, আমার উপদেশ শ্রবণ কর, আমার মুখের বাক্যে কর্ণপাত কর।
2. আমি দৃষ্টান্তকথায় আপন মুখ খুলিব, আমি পুরাকালের গূঢ় বাক্য সকল ব্যক্ত করিব;
3. সেই সকল আমরা শুনিয়াছি, জ্ঞাত হইয়াছি, আমাদের পিতৃপুরুষেরা আমাদিগকে বলিয়াছেন,
4. আমরা সে সকল তাঁহাদের সন্তানগণের কাছে গুপ্ত রাখিব না, উত্তরকালীন বংশের কাছে সদাপ্রভুর প্রশংসা বর্ণনা করিব, তাঁহার পরাক্রম ও তাঁহার কৃত আশ্চর্য্য ক্রিয়া সকল বর্ণনা করিব।
5. তিনি যাকোবের মধ্যে সাক্ষ্য দাঁড় করাইয়াছেন, ইস্রায়েলের মধ্যে ব্যবস্থা স্থাপন করিয়াছেন; যাহা তিনি আমাদের পিতৃপুরুষদিগকে আজ্ঞা দিয়াছিলেন, যেন তাঁহারা আপন আপন সন্তানগণকে তাহা জানান;
6. যেন উত্তরকালীন বংশ, [অর্থাৎ] যে সন্তানগণ জন্মিবে, তাহারা তাহা জানিতে পারে, এবং উঠিয়া আপন আপন সন্তানগণের কাছে তাহার বর্ণনা করিতে পারে।
7. যেন তাহারা ঈশ্বরে প্রত্যাশা রাখে, এবং ঈশ্বরের কার্য্য সকল ভুলিয়া না যায়, কিন্তু তাঁহার আজ্ঞা সকল পালন করে;
8. যেন আপন পিতৃপুরুষদের ন্যায় না হয়, যাহারা অবাধ্য ও বিদ্রোহী বংশ ছিল; সেই বংশ আপনাদের চিত্ত স্থির করে নাই, তাহাদের আত্মা ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বস্ত ছিল না।
9. ইফ্রয়িমের সন্তানগণ সসজ্জ ও ধনুর্দ্ধর ছিল, সংগ্রামের দিনে তাহারা হটিয়া গেল।
10. তাহারা ঈশ্বরের নিয়ম পালন করিল না, তাঁহার ব্যবস্থাপথে চলিতে অস্বীকার করিল।
11. তাহারা তাঁহার কার্য্য সকল ভুলিয়া গেল, সেই সকল আশ্চর্য্য-কার্য্য, যাহা তিনি তাহাদিগকে দেখাইয়াছিলেন।
12. তিনি তাহাদের পিতৃপুরুষদের সাক্ষাতে নানা আশ্চর্য্য কার্য্য করিয়াছিলেন। মিসর দেশে, সোয়নের মাঠে করিয়াছিলেন।
13. তিনি সমুদ্রকে দ্বিধা করিয়া তাহাদিগকে পার করিয়াছিলেন, জলকে স্তূপাকারে দাঁড় করাইয়াছিলেন।
14. তিনি তাহাদিগকে পথ দেখাইতেন, দিবসে মেঘ দ্বারা, এবং সমস্ত রাত্রি অগ্নির আলোক দ্বারা।
15. তিনি প্রান্তরমধ্যে শৈল বিদীর্ণ করিলেন, তাহাদিগকে যেন জলধি হইতে প্রচুর জল পান করাইলেন।
16. তিনি শৈল হইতে স্রোত বাহির করিলেন, নদীর ন্যায় জল বহাইলেন।
17. তখনও তাহারা পুনঃ পুনঃ তাঁহার বিরুদ্ধে পাপ করিল, মরুভূমিতে পরাৎপরের বিদ্রোহী হইল;
18. তাহারা মনে মনে ঈশ্বরের পরীক্ষা করিল, আপনাদের অভিলাষ পূরণার্থে ভক্ষ্য চাহিল।
19. আর তাহারা ঈশ্বরের বিরুদ্ধে কথা কহিল, বলিল, ঈশ্বর কি প্রান্তরে মেজ সাজাইয়া দিতে পারেন?
20. দেখ, তিনি শৈলকে আঘাত করিলে জলধারা বহিল, স্রোতোধারা প্রবাহিত হইল; তিনি কি অন্নও দিতে পারেন? আপন প্রজাদের জন্য কি মাংস যোগাইবেন?
21. অতএব সদাপ্রভু তাহা শুনিয়া ক্রোধান্বিত হইলেন; যাকোবের বিরুদ্ধে অগ্নি প্রজ্বলিত হইল, ইস্রায়েলের বিরুদ্ধে কোপ উঠিল;
22. কেননা তাহারা ঈশ্বরে বিশ্বাস করিত না, তাঁহার পরিত্রাণে নির্ভর করিত না।
23. তবু তিনি উপরিস্থ মেঘমালাকে আজ্ঞা দিলেন, আকাশমণ্ডলের দ্বার সকল খুলিয়া দিলেন।
24. তিনি ভক্ষ্যের জন্য তাহাদের উপরে মান্না বর্ষণ করিলেন, তাহাদিগকে স্বর্গের শস্য দিলেন।
25. মনুষ্য পরাক্রমীদের খাদ্য ভোজন করিল; তিনি তাহাদের তৃপ্তি পর্য্যন্ত ভক্ষ্য পাঠাইলেন।
26. তিনি আকাশে পূর্ব্ব বায়ু বহাইলেন, নিজ পরাক্রমে দক্ষিণ বায়ু চালাইলেন।
27. তিনি তাহাদের উপরে মাংসকে ধূলির ন্যায়, পক্ষধারী বিহঙ্গকে সমুদ্রের বালির ন্যায় বর্ষণ করিলেন।
28. তিনি তাহা তাহাদের শিবিরের মধ্যে, তাহাদের আবাসসমূহের চারিপার্শ্বে, পড়িতে দিলেন।
29. তখন তাহারা ভোজন করিয়া পরিতৃপ্ত হইল; তিনি তাহাদের অভীষ্ট বস্তু তাহাদিগকে দিলেন;
30. তাহারা আপনাদের অভীষ্ট দ্রব্য ছাড়ে নাই, তাহাদের খাদ্য তাহাদের মুখেই ছিল,
31. তখন তাহাদের বিরুদ্ধে ঈশ্বরের কোপ উঠিল, তাহা তাহাদের হৃষ্টপুষ্টগণকে সংহার করিল, ইস্রায়েলের যুবকগণকে পাড়িয়া ফেলিল।
32. এ সমস্ত হইলেও তাহারা পুনর্ব্বার পাপ করিল, ও তাঁহার আশ্চর্য্য ক্রিয়াতে বিশ্বাস করিল না।
33. অতএব তিনি তাহাদের আয়ু অসারতায়, তাহাদের বৎসর সকল বিহ্বলতায়, শেষ করিলেন।
34. তিনি লোকদিগকে বধ করিলে তাহারা তাঁহার অনুসন্ধান করিল, ফিরিয়া সযত্নে ঈশ্বরের অন্বেষণ করিল;
35. তাহাদের স্মরণ হইল, ঈশ্বর তাহাদের শৈল, পরাৎপর ঈশ্বর তাহাদের মুক্তিদাতা।
36. কিন্তু তাহারা মুখে তাঁহার চাটুবাদ করিল, জিহ্বাতে তাঁহার নিকটে মিথ্যা কহিল;
37. কারণ তাহাদের হৃদয় তাঁহার প্রতি স্থির ছিল না, তাহারা তাঁহার নিয়মেও বিশ্বস্ত ছিল না।
38. কিন্তু তিনি স্নেহময়, তাই অপরাধ ক্ষমা করিলেন, ধ্বংস করিলেন না, অনেকবার আপন ক্রোধ সম্বরণ করিলেন, আপনার সমস্ত কোপ উদ্দীপিত করিলেন না।
39. তিনি স্মরণ করিলেন যে, তাহারা মাংস মাত্র, বায়ুস্বরূপ, যাহা বহিয়া গেলে আর ফিরিয়া আইসে না।
40. তাহারা প্রান্তরে কতবার তাঁহার বিরুদ্ধে দ্রোহ করিল, মরুভূমিতে কতবার তাঁহাকে মনঃপীড়া দিল।
41. তাহারা ফিরিয়া ঈশ্বরের পরীক্ষা করিল, ইস্রায়েলের পবিত্রতমকে অসন্তুষ্ট করিল।
42. তাহারা তাঁহার হস্ত স্মরণ করিল না, সেই দিনকে স্মরণ করিল না, যে দিনে তিনি তাহাদিগকে বিপক্ষের হস্ত হইতে মুক্ত করিলেন।
43. তিনি মিসরে আপন চিহ্ন সকল, সোয়নের মাঠে আপন অদ্ভুত লক্ষণ সকল, স্থাপন করিলেন।
44. তিনি রক্তে পরিণত করিলেন তাহাদের নদী সকল, তাহাদের প্রবাহ সকল, তাই তাহারা জল পান করিতে পারিল না।
45. তিনি তাহাদের মধ্যে গ্রাসকারী দংশক, ও বিনাশকারী ভেক প্রেরণ করিলেন।
46. তিনি গুটিপোকাকে তাহাদের ভূমির দ্রব্য, পঙ্গপালকে তাহাদের শ্রমফল দিলেন।
47. তিনি শিলা দ্বারা তাহাদের দ্রাক্ষালতা, করকাপাতে তাহাদের ডুমুর গাছ মারিয়া ফেলিলেন।
48. তিনি তাহাদের পশুগণকে শিলাতে, পাল সকলকে বজ্রাঘাতে সমর্পণ করিলেন।
49. তিনি তাহাদের বিরুদ্ধে পাঠাইলেন আপন প্রচণ্ড ক্রোধ, কোপ, ও রোষ, ও সঙ্কট, অমঙ্গলের এই দূতদল।
50. তিনি নিজ ক্রোধের জন্য পথ করিলেন, মৃত্যু হইতে তাহাদের প্রাণ রক্ষা করেন নাই; কিন্তু তাহাদের জীবন মহামারীর হস্তে দিলেন।
51. তিনি আঘাত করিলেন মিসরে সমস্ত প্রথমজাতকে, হামের তাম্বুসমূহে তাহাদের শক্তির প্রথম ফলকে;
52. কিন্তু আপন প্রজাদিগকে মেষবৎ চালাইলেন, পালের মত প্রান্তর দিয়া লইয়া আসিলেন।
53. তিনি তাহাদিগকে নিরাপদে লইয়া আসিলেন, তাহারা উদ্বিগ্ন হইল না, কিন্তু সমুদ্র তাহাদের শত্রুগণকে আচ্ছাদন করিল।
54. আর তিনি তাহাদিগকে আনিলেন, আপন পবিত্র সীমায়, আপন দক্ষিণ হস্ত দ্বারা লব্ধ এই পর্ব্বতে।
55. তিনি তাহাদের সম্মুখ হইতে জাতিগণকে দূর করিলেন, মানরজ্জু দ্বারা অধিকার বিভাগ করিয়া তাহাদিগকে দিলেন, ইস্রায়েলের বংশদিগকে উহাদের তাম্বুতে বাস করাইলেন।
56. তথাপি তাহারা পরাৎপর ঈশ্বরের পরীক্ষা করিল, তাঁহার বিদ্রোহী হইল, তাঁহার সাক্ষ্য সকল পালন করিল না।
57. তাহারা সরিয়া গেল, তাহাদের পিতৃপুরুষদের ন্যায় বিশ্বাসঘাতকতা করিল; তাহারা বঞ্চক ধনুকের ন্যায় পার্শ্বে ফিরিল।
58. কারণ তাহারা আপনাদের উচ্চস্থলীসমূহের দ্বারা তাঁহাকে অসন্তুষ্ট করিল, আপনাদের ক্ষোদিত প্রতিমাগণ দ্বারা তাঁহার অন্তর্জ্বালা জন্মাইল।
59. ঈশ্বর তাহা শুনিয়া ক্রোধান্বিত হইলেন, ইস্রায়েলকে অতিমাত্র ঘৃণা করিলেন।
60. তিনি শীলোস্থিত আবাস ত্যাগ করিলেন, সেই তাম্বু, যাহা তিনি মনুষ্যদের মধ্যে স্থাপন করিয়াছিলেন।
61. তিনি আপন বল বন্দিদশায়, আপন শোভা বিপক্ষের হস্তে দিলেন।
62. তিনি আপন প্রজাদিগকে খড়্‌গের হস্তগত করিলেন, আপন অধিকারের প্রতি ক্রুদ্ধ হইলেন।
63. অগ্নি তাহাদের যুবকগণকে গ্রাস করিল, তাহাদের কন্যাগণের পরিণয়-সঙ্গীত হইল না।
64. তাহাদের যাজকগণ খড়্‌গে পতিত হইল, তাহাদের বিধবারা রোদন করিল না।
65. তখন প্রভু জাগিলেন, সুপ্তোত্থিতের ন্যায়, দ্রাক্ষারসে হর্ষনাদকারী বীরের ন্যায়।
66. তিনি আপন বিপক্ষ লোকদিগকে মারিয়া ফিরাইয়া দিলেন, তাহাদিগকে চিরকালীন তিরস্কারের পাত্র করিলেন।
67. আর তিনি যোষেফের তাম্বু অগ্রাহ্য করিলেন, ইফ্রয়িমের বংশকে মনোনীত করিলেন না;
68. কিন্তু মনোনীত করিলেন যিহূদার বংশকে, ও আপনার প্রিয় সিয়োন পর্ব্বতকে।
69. তিনি আপন ধর্ম্মধাম নির্ম্মাণ করিলেন, উচ্চ শিখরের ন্যায়, পৃথিবীর ন্যায়, যাহা তিনি চিরতরে স্থাপন করিয়াছেন।
70. তিনি আপন দাস দায়ূদকে মনোনীত করিলেন, তাঁহাকে মেষের খোঁয়াড় হইতে গ্রহণ করিলেন;
71. তিনি স্তন্যদাত্রী মেষীদের পশ্চাৎ হইতে তাঁহাকে আনিলেন, আপন প্রজা যাকোবকে ও আপন অধিকার ইস্রায়েলকে চরাইতে দিলেন।
72. আর উনি হৃদয়ের সিদ্ধতানুসারে তাহাদিগকে চরাইলেন, আপন হস্তের দক্ষতায় তাহাদিগকে চালাইলেন।

Notes

No Verse Added

Total 150 Chapters, Current Chapter 78 of Total Chapters 150
সামসঙ্গীত 78:5
1. হে আমার স্বজাতি, আমার উপদেশ শ্রবণ কর, আমার মুখের বাক্যে কর্ণপাত কর।
2. আমি দৃষ্টান্তকথায় আপন মুখ খুলিব, আমি পুরাকালের গূঢ় বাক্য সকল ব্যক্ত করিব;
3. সেই সকল আমরা শুনিয়াছি, জ্ঞাত হইয়াছি, আমাদের পিতৃপুরুষেরা আমাদিগকে বলিয়াছেন,
4. আমরা সে সকল তাঁহাদের সন্তানগণের কাছে গুপ্ত রাখিব না, উত্তরকালীন বংশের কাছে সদাপ্রভুর প্রশংসা বর্ণনা করিব, তাঁহার পরাক্রম তাঁহার কৃত আশ্চর্য্য ক্রিয়া সকল বর্ণনা করিব।
5. তিনি যাকোবের মধ্যে সাক্ষ্য দাঁড় করাইয়াছেন, ইস্রায়েলের মধ্যে ব্যবস্থা স্থাপন করিয়াছেন; যাহা তিনি আমাদের পিতৃপুরুষদিগকে আজ্ঞা দিয়াছিলেন, যেন তাঁহারা আপন আপন সন্তানগণকে তাহা জানান;
6. যেন উত্তরকালীন বংশ, অর্থাৎ যে সন্তানগণ জন্মিবে, তাহারা তাহা জানিতে পারে, এবং উঠিয়া আপন আপন সন্তানগণের কাছে তাহার বর্ণনা করিতে পারে।
7. যেন তাহারা ঈশ্বরে প্রত্যাশা রাখে, এবং ঈশ্বরের কার্য্য সকল ভুলিয়া না যায়, কিন্তু তাঁহার আজ্ঞা সকল পালন করে;
8. যেন আপন পিতৃপুরুষদের ন্যায় না হয়, যাহারা অবাধ্য বিদ্রোহী বংশ ছিল; সেই বংশ আপনাদের চিত্ত স্থির করে নাই, তাহাদের আত্মা ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বস্ত ছিল না।
9. ইফ্রয়িমের সন্তানগণ সসজ্জ ধনুর্দ্ধর ছিল, সংগ্রামের দিনে তাহারা হটিয়া গেল।
10. তাহারা ঈশ্বরের নিয়ম পালন করিল না, তাঁহার ব্যবস্থাপথে চলিতে অস্বীকার করিল।
11. তাহারা তাঁহার কার্য্য সকল ভুলিয়া গেল, সেই সকল আশ্চর্য্য-কার্য্য, যাহা তিনি তাহাদিগকে দেখাইয়াছিলেন।
12. তিনি তাহাদের পিতৃপুরুষদের সাক্ষাতে নানা আশ্চর্য্য কার্য্য করিয়াছিলেন। মিসর দেশে, সোয়নের মাঠে করিয়াছিলেন।
13. তিনি সমুদ্রকে দ্বিধা করিয়া তাহাদিগকে পার করিয়াছিলেন, জলকে স্তূপাকারে দাঁড় করাইয়াছিলেন।
14. তিনি তাহাদিগকে পথ দেখাইতেন, দিবসে মেঘ দ্বারা, এবং সমস্ত রাত্রি অগ্নির আলোক দ্বারা।
15. তিনি প্রান্তরমধ্যে শৈল বিদীর্ণ করিলেন, তাহাদিগকে যেন জলধি হইতে প্রচুর জল পান করাইলেন।
16. তিনি শৈল হইতে স্রোত বাহির করিলেন, নদীর ন্যায় জল বহাইলেন।
17. তখনও তাহারা পুনঃ পুনঃ তাঁহার বিরুদ্ধে পাপ করিল, মরুভূমিতে পরাৎপরের বিদ্রোহী হইল;
18. তাহারা মনে মনে ঈশ্বরের পরীক্ষা করিল, আপনাদের অভিলাষ পূরণার্থে ভক্ষ্য চাহিল।
19. আর তাহারা ঈশ্বরের বিরুদ্ধে কথা কহিল, বলিল, ঈশ্বর কি প্রান্তরে মেজ সাজাইয়া দিতে পারেন?
20. দেখ, তিনি শৈলকে আঘাত করিলে জলধারা বহিল, স্রোতোধারা প্রবাহিত হইল; তিনি কি অন্নও দিতে পারেন? আপন প্রজাদের জন্য কি মাংস যোগাইবেন?
21. অতএব সদাপ্রভু তাহা শুনিয়া ক্রোধান্বিত হইলেন; যাকোবের বিরুদ্ধে অগ্নি প্রজ্বলিত হইল, ইস্রায়েলের বিরুদ্ধে কোপ উঠিল;
22. কেননা তাহারা ঈশ্বরে বিশ্বাস করিত না, তাঁহার পরিত্রাণে নির্ভর করিত না।
23. তবু তিনি উপরিস্থ মেঘমালাকে আজ্ঞা দিলেন, আকাশমণ্ডলের দ্বার সকল খুলিয়া দিলেন।
24. তিনি ভক্ষ্যের জন্য তাহাদের উপরে মান্না বর্ষণ করিলেন, তাহাদিগকে স্বর্গের শস্য দিলেন।
25. মনুষ্য পরাক্রমীদের খাদ্য ভোজন করিল; তিনি তাহাদের তৃপ্তি পর্য্যন্ত ভক্ষ্য পাঠাইলেন।
26. তিনি আকাশে পূর্ব্ব বায়ু বহাইলেন, নিজ পরাক্রমে দক্ষিণ বায়ু চালাইলেন।
27. তিনি তাহাদের উপরে মাংসকে ধূলির ন্যায়, পক্ষধারী বিহঙ্গকে সমুদ্রের বালির ন্যায় বর্ষণ করিলেন।
28. তিনি তাহা তাহাদের শিবিরের মধ্যে, তাহাদের আবাসসমূহের চারিপার্শ্বে, পড়িতে দিলেন।
29. তখন তাহারা ভোজন করিয়া পরিতৃপ্ত হইল; তিনি তাহাদের অভীষ্ট বস্তু তাহাদিগকে দিলেন;
30. তাহারা আপনাদের অভীষ্ট দ্রব্য ছাড়ে নাই, তাহাদের খাদ্য তাহাদের মুখেই ছিল,
31. তখন তাহাদের বিরুদ্ধে ঈশ্বরের কোপ উঠিল, তাহা তাহাদের হৃষ্টপুষ্টগণকে সংহার করিল, ইস্রায়েলের যুবকগণকে পাড়িয়া ফেলিল।
32. সমস্ত হইলেও তাহারা পুনর্ব্বার পাপ করিল, তাঁহার আশ্চর্য্য ক্রিয়াতে বিশ্বাস করিল না।
33. অতএব তিনি তাহাদের আয়ু অসারতায়, তাহাদের বৎসর সকল বিহ্বলতায়, শেষ করিলেন।
34. তিনি লোকদিগকে বধ করিলে তাহারা তাঁহার অনুসন্ধান করিল, ফিরিয়া সযত্নে ঈশ্বরের অন্বেষণ করিল;
35. তাহাদের স্মরণ হইল, ঈশ্বর তাহাদের শৈল, পরাৎপর ঈশ্বর তাহাদের মুক্তিদাতা।
36. কিন্তু তাহারা মুখে তাঁহার চাটুবাদ করিল, জিহ্বাতে তাঁহার নিকটে মিথ্যা কহিল;
37. কারণ তাহাদের হৃদয় তাঁহার প্রতি স্থির ছিল না, তাহারা তাঁহার নিয়মেও বিশ্বস্ত ছিল না।
38. কিন্তু তিনি স্নেহময়, তাই অপরাধ ক্ষমা করিলেন, ধ্বংস করিলেন না, অনেকবার আপন ক্রোধ সম্বরণ করিলেন, আপনার সমস্ত কোপ উদ্দীপিত করিলেন না।
39. তিনি স্মরণ করিলেন যে, তাহারা মাংস মাত্র, বায়ুস্বরূপ, যাহা বহিয়া গেলে আর ফিরিয়া আইসে না।
40. তাহারা প্রান্তরে কতবার তাঁহার বিরুদ্ধে দ্রোহ করিল, মরুভূমিতে কতবার তাঁহাকে মনঃপীড়া দিল।
41. তাহারা ফিরিয়া ঈশ্বরের পরীক্ষা করিল, ইস্রায়েলের পবিত্রতমকে অসন্তুষ্ট করিল।
42. তাহারা তাঁহার হস্ত স্মরণ করিল না, সেই দিনকে স্মরণ করিল না, যে দিনে তিনি তাহাদিগকে বিপক্ষের হস্ত হইতে মুক্ত করিলেন।
43. তিনি মিসরে আপন চিহ্ন সকল, সোয়নের মাঠে আপন অদ্ভুত লক্ষণ সকল, স্থাপন করিলেন।
44. তিনি রক্তে পরিণত করিলেন তাহাদের নদী সকল, তাহাদের প্রবাহ সকল, তাই তাহারা জল পান করিতে পারিল না।
45. তিনি তাহাদের মধ্যে গ্রাসকারী দংশক, বিনাশকারী ভেক প্রেরণ করিলেন।
46. তিনি গুটিপোকাকে তাহাদের ভূমির দ্রব্য, পঙ্গপালকে তাহাদের শ্রমফল দিলেন।
47. তিনি শিলা দ্বারা তাহাদের দ্রাক্ষালতা, করকাপাতে তাহাদের ডুমুর গাছ মারিয়া ফেলিলেন।
48. তিনি তাহাদের পশুগণকে শিলাতে, পাল সকলকে বজ্রাঘাতে সমর্পণ করিলেন।
49. তিনি তাহাদের বিরুদ্ধে পাঠাইলেন আপন প্রচণ্ড ক্রোধ, কোপ, রোষ, সঙ্কট, অমঙ্গলের এই দূতদল।
50. তিনি নিজ ক্রোধের জন্য পথ করিলেন, মৃত্যু হইতে তাহাদের প্রাণ রক্ষা করেন নাই; কিন্তু তাহাদের জীবন মহামারীর হস্তে দিলেন।
51. তিনি আঘাত করিলেন মিসরে সমস্ত প্রথমজাতকে, হামের তাম্বুসমূহে তাহাদের শক্তির প্রথম ফলকে;
52. কিন্তু আপন প্রজাদিগকে মেষবৎ চালাইলেন, পালের মত প্রান্তর দিয়া লইয়া আসিলেন।
53. তিনি তাহাদিগকে নিরাপদে লইয়া আসিলেন, তাহারা উদ্বিগ্ন হইল না, কিন্তু সমুদ্র তাহাদের শত্রুগণকে আচ্ছাদন করিল।
54. আর তিনি তাহাদিগকে আনিলেন, আপন পবিত্র সীমায়, আপন দক্ষিণ হস্ত দ্বারা লব্ধ এই পর্ব্বতে।
55. তিনি তাহাদের সম্মুখ হইতে জাতিগণকে দূর করিলেন, মানরজ্জু দ্বারা অধিকার বিভাগ করিয়া তাহাদিগকে দিলেন, ইস্রায়েলের বংশদিগকে উহাদের তাম্বুতে বাস করাইলেন।
56. তথাপি তাহারা পরাৎপর ঈশ্বরের পরীক্ষা করিল, তাঁহার বিদ্রোহী হইল, তাঁহার সাক্ষ্য সকল পালন করিল না।
57. তাহারা সরিয়া গেল, তাহাদের পিতৃপুরুষদের ন্যায় বিশ্বাসঘাতকতা করিল; তাহারা বঞ্চক ধনুকের ন্যায় পার্শ্বে ফিরিল।
58. কারণ তাহারা আপনাদের উচ্চস্থলীসমূহের দ্বারা তাঁহাকে অসন্তুষ্ট করিল, আপনাদের ক্ষোদিত প্রতিমাগণ দ্বারা তাঁহার অন্তর্জ্বালা জন্মাইল।
59. ঈশ্বর তাহা শুনিয়া ক্রোধান্বিত হইলেন, ইস্রায়েলকে অতিমাত্র ঘৃণা করিলেন।
60. তিনি শীলোস্থিত আবাস ত্যাগ করিলেন, সেই তাম্বু, যাহা তিনি মনুষ্যদের মধ্যে স্থাপন করিয়াছিলেন।
61. তিনি আপন বল বন্দিদশায়, আপন শোভা বিপক্ষের হস্তে দিলেন।
62. তিনি আপন প্রজাদিগকে খড়্‌গের হস্তগত করিলেন, আপন অধিকারের প্রতি ক্রুদ্ধ হইলেন।
63. অগ্নি তাহাদের যুবকগণকে গ্রাস করিল, তাহাদের কন্যাগণের পরিণয়-সঙ্গীত হইল না।
64. তাহাদের যাজকগণ খড়্‌গে পতিত হইল, তাহাদের বিধবারা রোদন করিল না।
65. তখন প্রভু জাগিলেন, সুপ্তোত্থিতের ন্যায়, দ্রাক্ষারসে হর্ষনাদকারী বীরের ন্যায়।
66. তিনি আপন বিপক্ষ লোকদিগকে মারিয়া ফিরাইয়া দিলেন, তাহাদিগকে চিরকালীন তিরস্কারের পাত্র করিলেন।
67. আর তিনি যোষেফের তাম্বু অগ্রাহ্য করিলেন, ইফ্রয়িমের বংশকে মনোনীত করিলেন না;
68. কিন্তু মনোনীত করিলেন যিহূদার বংশকে, আপনার প্রিয় সিয়োন পর্ব্বতকে।
69. তিনি আপন ধর্ম্মধাম নির্ম্মাণ করিলেন, উচ্চ শিখরের ন্যায়, পৃথিবীর ন্যায়, যাহা তিনি চিরতরে স্থাপন করিয়াছেন।
70. তিনি আপন দাস দায়ূদকে মনোনীত করিলেন, তাঁহাকে মেষের খোঁয়াড় হইতে গ্রহণ করিলেন;
71. তিনি স্তন্যদাত্রী মেষীদের পশ্চাৎ হইতে তাঁহাকে আনিলেন, আপন প্রজা যাকোবকে আপন অধিকার ইস্রায়েলকে চরাইতে দিলেন।
72. আর উনি হৃদয়ের সিদ্ধতানুসারে তাহাদিগকে চরাইলেন, আপন হস্তের দক্ষতায় তাহাদিগকে চালাইলেন।
Total 150 Chapters, Current Chapter 78 of Total Chapters 150
×

Alert

×

bengali Letters Keypad References