1. শলোমন সদাপ্রভুর গৃহ ও রাজবাটী নির্ম্মাণ এবং আপন বাসনামত যে সকল কর্ম্ম করিতে স্থির করিয়াছিলেন, তাহা সমাপ্ত করিলে,
2. সদাপ্রভু যেমন গিবিয়োনে দর্শন দিয়াছিলেন, তদ্রূপ শলোমনকে দ্বিতীয় বার দর্শন দিলেন।
3. সদাপ্রভু তাঁহাকে কহিলেন, তুমি আমার কাছে যে প্রার্থনা ও বিনতি করিয়াছ, তাহা আমি শুনিয়াছি; এই যে গৃহ তুমি নির্ম্মাণ করিয়াছ, ইহার মধ্যে চিরকালের জন্য আমার নাম স্থাপনার্থে আমি ইহা পবিত্র করিলাম, এবং এই স্থানে প্রতিনিয়ত আমার চক্ষু ও আমার চিত্ত থাকিবে।
4. আর তোমার পিতা দায়ূদ যেমন চলিতেন, তেমনি তুমিও যদি চিত্তের সিদ্ধতায় ও সরলভাবে আমার সাক্ষাতে চল, আমি তোমাকে যে সমস্ত আজ্ঞা দিয়াছি, যদি তদনুযায়ী কর্ম্ম কর, এবং আমার বিধি ও শাসন সকল পালন কর,
5. তবে ‘ইস্রায়েলের সিংহাসনে বসিতে তোমার [বংশে] লোকের অভাব হইবে না,’ এই বলিয়া তোমার পিতা দায়ূদের কাছে যে প্রতিজ্ঞা করিয়াছিলাম, তদনুসারে আমি ইস্রায়েলের উপরে তোমার রাজসিংহাসন চিরকালের জন্য স্থির করিব।
6. কিন্তু যদি তোমরা, কি তোমাদের সন্তানগণ, কোন ক্রমে আমার পশ্চাদগমন হইতে ফিরিয়া যাও, ও তোমাদের সম্মুখে স্থাপিত আমার আজ্ঞা ও বিধি সকল পালন না কর, কিন্তু গিয়া অন্য দেবগণের সেবা কর, ও তাহাদের কাছে প্রণিপাত কর,
7. তবে আমি ইস্রায়েলকে যে দেশ দিয়াছি, তাহা হইতে তাহাদিগকে উচ্ছেদ করিব, এবং আপন নামের জন্য এই যে গৃহ পবিত্র করিলাম, ইহা আমার দৃষ্টিপথ হইতে দূর করিব, এবং সমস্ত জাতির মধ্যে ইস্রায়েল প্রবাদের ও উপহাসের আস্পদ হইবে।
8. আর এই গৃহ যদিও এত উচ্চ, তথাপি যে কেহ ইহার নিকট দিয়া গমন করিবে, সে চমকিয়া উঠিবে, শিশ দিবে, ও জিজ্ঞাসা করিবে, এই দেশের ও এই গৃহের প্রতি সদাপ্রভু এমন কেন করিয়াছেন?
9. আর লোকে বলিবে, ইহার কারণ এই, যিনি এই লোকদের পিতৃপুরুষদিগকে মিসর দেশ হইতে বাহির করিয়া আনিয়াছিলেন, উহারা আপনাদের ঈশ্বর সেই সদাপ্রভুকে ত্যাগ করিয়াছে, এবং অন্য দেবগণকে অবলম্বন করিয়া তাহাদের কাছে প্রণিপাত করিয়াছে, ও তাহাদের সেবা করিয়াছে; এই জন্য সদাপ্রভু তাহাদের উপরে এই সকল অমঙ্গল উপস্থিত করিলেন।
10. বিশ বৎসর অতীত হইল; এই সময়ের মধ্যে শলোমন সদাপ্রভুর গৃহ ও রাজবাটী, এই দুই গৃহ নির্ম্মাণ করেন।
11. সোরের রাজা হীরম শলোমনের সমস্ত বাসনানুসারে এরসকাষ্ঠ, দেবদারুকাষ্ঠ ও স্বর্ণ যোগাইয়াছিলেন, তাই তখন শলোমন রাজা হীরমকে গালীল দেশস্থ বিশটী নগর দিলেন।
12. আর হীরম শলোমনের দত্ত সেই সকল নগর দেখিবার জন্য সোর হইতে আসিলেন, কিন্তু সেগুলি তাঁহার দৃষ্টিতে তুষ্টিজনক হইল না।
13. তিনি কহিলেন, হে আমার ভ্রাতা, এ সকল কেমন নগর আমাকে দিলে? আর তিনি সেগুলির নাম কাবূল দেশ রাখিলেন; অদ্যাপি সেই নাম রহিয়াছে।
14. আর হীরম এক শত বিশ তালন্ত স্বর্ণ রাজাকে পাঠাইয়া দিয়াছিলেন।
15. আর শলোমন সদাপ্রভুর গৃহ, আপনার বাটী, মিল্লো, যিরূশালেমের প্রাচীর, হাৎসোর, মগিদ্দো ও গেষর গাঁথিবার জন্য আপনার কর্ম্মাধীন দাস সংগ্রহ করিয়াছিলেন, তাহার বৃত্তান্ত এই।
16. মিসর-রাজ ফরৌণ আসিয়া গেষর হস্তগত করিয়া আগুনে পোড়াইয়া দেন, এবং সেই নগরনিবাসী কনানীয়দিগকে বধ করেন, পরে তাহা যৌতুকরূপে আপন কন্যা শলোমনের ভার্য্যাকে দেন।
17. আর শলোমন গেষর ও নিম্নস্থিত বৈৎহোরোণ,
18. এবং বালৎ, আর দেশের প্রান্তরস্থ তামর,
19. এবং শলোমনের সমস্ত ভাণ্ডার-নগর, এবং তাঁহার রথসমূহের ও অশ্বারোহীদের নগর সকল, আর যিরূশালেমে, লিবানোনে ও আপন অধিকার দেশের সর্ব্বত্র যাহা যাহা নির্ম্মাণ করিতে শলোমনের বাসনা ছিল, তিনি সে সমস্ত নির্ম্মাণ করিলেন।
20. ইমোরীয়, হিত্তীয়, পরিষীয়, হিব্বীয়, ও যিবূষীয় যে সকল লোক অবশিষ্ট ছিল,
21. যাহারা ইস্রায়েল-সন্তান নয়, যাহাদিগকে ইস্রায়েল-সন্তানগণ নিঃশেষে বিনষ্ট করিতে পারে নাই, দেশে অবশিষ্ট সেই লোকদের সন্তানদিগকে শলোমন আপনার কর্ম্মাধীন দাস করিয়া সংগ্রহ করিলেন; তাহারা অদ্য পর্য্যন্ত তাহাই করিতেছে।
22. কিন্তু শলোমন ইস্রায়েল-সন্তানগণের মধ্যে কাহাকেও দাস করিলেন না; তাহারা যোদ্ধা, তাঁহার কর্ম্মচারী, জনাধ্যক্ষ, সেনানী, এবং তাঁহার রথসমূহের ও অশ্বারোহীদিগের অধ্যক্ষ হইল।
23. তাহাদের মধ্যে পাঁচ শত পঞ্চাশ জন শলোমনের কর্ম্মে নিযুক্ত প্রধান অধ্যক্ষ ছিল; তাহারা কর্ম্মকারী লোকদের উপরে কর্ত্তৃত্ব করিত।
24. আর ফরৌণের কন্যা দায়ূদ-নগর হইতে তাঁহার জন্য নির্ম্মিত বাটীতে উঠিয়া আসিলেন; তৎকালে শলোমন মিল্লো গাঁথিলেন।
25. আর শলোমন সদাপ্রভুর জন্য যে যজ্ঞবেদি নির্ম্মাণ করিয়াছিলেন, তাহার উপরে বৎসরের মধ্যে তিন বার হোমবলি ও মঙ্গলার্থক বলি উৎসর্গ করিতেন, এবং সে সময়ে সদাপ্রভুর সম্মুখস্থ বেদিতে ধূপদাহ করিতেন। এইরূপে তিনি গৃহনির্ম্মাণ সমাপ্ত করিলেন।
26. আর শলোমন রাজা ইদোম দেশে সূফসাগরের তীরস্থ এলতের নিকটবর্ত্তী ইৎসিয়োন-গেবরে কতকগুলি জাহাজ নির্ম্মাণ করিলেন।
27. পরে হীরম শলোমনের দাসদের সহিত সামুদ্রিক কার্য্যে নিপুন আপন নাবিক দাসদিগকে সেই সকল জাহাজে প্রেরণ করিলেন।
28. তাহারা ওফীরে গিয়া তথা হইতে চারি শত বিশ তালন্ত স্বর্ণ লইয়া শলোমন রাজার নিকটে আনিল।