পবিত্র বাইবেল

গডস গ্রেইস গিফট
पশিষ্যচরিত
1. ভ্রাতারা ও পিতারা, আমি এক্ষণে আপনাদের কাছে আত্মপক্ষ সমর্থন করিতেছি, শ্রবণ করুন।
2. তখন তিনি ইব্রীয় ভাষায় তাহাদের কাছে কথা কহিতেছেন শুনিয়া তাহারা আরও শান্ত হইল। পরে তিনি কহিলেন,
3. আমি যিহূদী, কিলিকিয়ার তার্ষ নগরে আমার জন্ম; কিন্তু এই নগরে গমলীয়েলের চরণে মানুষ হইয়াছি, পৈতৃক ব্যবস্থার সূক্ষ্ম নিয়মানুসারে শিক্ষিত হইয়াছি; আর আপনারা সকলে অদ্যাপি যেমন আছেন, তেমনি আমিও ঈশ্বরের পক্ষে উদ্যোগী ছিলাম।
4. আমি প্রাণনাশ পর্য্যন্ত এই পথের প্রতি উপদ্রব করিতাম, পুরুষ ও স্ত্রীলোকদিগকে বাঁধিয়া কারাগারে সমর্পণ করিতাম।
5. এ বিষয়ে মহাযাজক ও সমস্ত প্রাচীনবর্গও আমার সাক্ষী; তাঁহাদের নিকট হইতে আমি ভ্রাতৃগণের সমীপে পত্র লইয়া, দম্মেশকে যাত্রা করিয়াছিলাম; যাহারা তথায় ছিল, তাহাদিগকেও বাঁধিয়া যিরূশালেমে আনিবার জন্য গিয়াছিলাম, যেন তাহাদের দণ্ড হয়।
6. আর যাইতে যাইতে দম্মেশকের নিকটে উপস্থিত হইলে বেলা দুই প্রহরের সময়ে হঠাৎ আকাশ হইতে মহা আলো আমার চারিদিকে চমকিয়া উঠিল।
7. তাহাকে আমি ভূমিতে পড়িয়া গেলাম, ও শুনিলাম, এক বাণী আমাকে বলিতেছে, শৌল, শৌল, কেন আমাকে তাড়না করিতেছ?
8. আমি উত্তর করিলাম, প্রভু, আপনি কে? তিনি আমাকে কহিলেন, আমি নাসরতীয় যীশু, যাঁহাকে তুমি তাড়না করিতেছ।
9. আর যাহারা আমার সঙ্গে ছিল, তাহারা সেই আলো দেখিতে পাইল বটে, কিন্তু যিনি আমার সহিত কথা কহিতেছিলেন, তাঁহার বাণী শুনিতে পাইল না।
10. পরে আমি বলিলাম, প্রভু, আমি কি করিব? প্রভু আমাকে কহিলেন, উঠিয়া দম্মেশকে যাও, তোমাকে যাহা যাহা করিতে হইবে বলিয়া নিরূপিত আছে, সে সমস্ত সেখানেই তোমাকে বলা যাইবে।
11. পরে আমি সেই আলোর তেজে দৃষ্টিহীন হওয়াতে আমার সঙ্গীরা হাত ধরিয়া আমাকে লইয়া চলিল, আর আমি দম্মেশকে উপস্থিত হইলাম।
12. পরে অননিয় নামে এক ব্যক্তি, যিনি ব্যবস্থা অনুসারে ভক্ত, এবং তত্রনিবাসী সমুদয় যিহূদীর কাছে সুখ্যাতিপন্ন ছিলেন,
13. তিনি আমার নিকটে আসিয়া পার্শ্বে দাঁড়াইয়া কহিলেন, ভ্রাতঃ শৌল, দৃষ্টিপ্রাপ্ত হও; তাহাতে আমি সেই দণ্ডেই তাঁহার প্রতি দৃষ্টিপাত করিলাম।
14. পরে তিনি কহিলেন, আমাদের পিতৃপুরুষদের ঈশ্বর তোমাকে নিযুক্ত করিয়াছেন, যেন তুমি তাঁহার ইচ্ছা জ্ঞাত হও, এবং সেই ধর্ম্মময়কে দেখিতে ও তাঁহার মুখের বাণী শুনিতে পাও;
15. কারণ তুমি যাহা যাহা দেখিয়াছ ও শুনিয়াছ, সেই বিষয়ে সকল মনুষ্যের নিকটে তাঁহার সাক্ষী হইবে।
16. আর এখন কেন বিলম্ব করিতেছ? উঠ, তাঁহার নামে ডাকিয়া বাপ্তাইজিত হও, ও তোমার পাপ ধুইয়া ফেল।
17. তাহার পরে আমি যিরূশালেমে ফিরিয়া আসিয়া এক দিন ধর্ম্মধামে প্রার্থনা করিতেছিলাম, এমন সময়ে অভিভূত হইয়া তাঁহাকে দেখিলাম,
18. তিনি আমাকে কহিলেন, ত্বরা কর, শীঘ্র যিরূশালেম হইতে বাহির হও, কেননা এই লোকেরা আমার বিষয়ে তোমার সাক্ষ্য গ্রাহ্য করিবে না।
19. আমি কহিলাম, প্রভু, তাহারা ত জানে যে, যাহারা তোমাতে বিশ্বাস করিত, আমি প্রতি সমাজ-গৃহে তাহাদিগকে কারাবদ্ধ করিতাম ও প্রহার করিতাম;
20. আর যখন তোমার সাক্ষী স্তিফানের রক্তপাত হয়, তখন আমি আপনি নিকটে দাঁড়াইয়া সম্মতি দিতেছিলাম, ও যাহারা তাঁহাকে বধ করিতেছিল, তাহাদের বস্ত্র রক্ষা করিতেছিলাম।
21. তিনি আমাকে কহিলেন, প্রস্থান কর, কেননা আমি তোমাকে দূরে পরজাতিগণের কাছে প্রেরণ করিব।
22. লোকেরা এই পর্য্যন্ত তাঁহার কথা শুনিল, পরে উচ্চৈঃস্বরে কহিল, উহাকে পৃথিবী হইতে দূর করিয়া দেও, উহার বাঁচিয়া থাকা ত উচিত হয় নাই।
23. পরে তাহারা চেঁচাইয়া বস্ত্র ফেলিয়া দিয়া আকাশে ধূলি উড়াইতে লাগিল;
24. তাহাতে সহস্রপতি পৌলকে দুর্গের ভিতরে লইয়া যাইবার আজ্ঞা দিলেন, এবং বলিলেন, কোড়া প্রহার দ্বারা ইহার পরীক্ষা করিতে হইবে, যেন তিনি জানিতে পারেন, লোকে কি দোষ দিয়া তাঁহার বিরুদ্ধে এরূপ চেঁচাইতেছে।
25. পরে যখন তাহারা কশা দিয়া তাঁহাকে বাঁধিল, তখন, যে শতপতি নিকটে দাঁড়াইয়াছিলেন, পৌল তাঁহাকে কহিলেন, যে ব্যক্তি রোমীয়, এবং বিচারে দোষীকৃত হয় নাই, তাহাকে কোড়া প্রহার করা কি আপনাদের পক্ষে বিধেয়?
26. ইহা শুনিয়া সেই শতপতি সহস্রপতির নিকটে গিয়া তাঁহাকে কহিলেন, আপনি কি করিতে উদ্যত হইয়াছেন? এ ব্যক্তি যে রোমীয়।
27. তাহাতে সহস্রপতি নিকটে গিয়া তাঁহাকে কহিলেন, বল দেখি, তুমি কি রোমীয়? তিনি কহিলেন, হাঁ।
28. সহস্রপতি উত্তর করিলেন, এই পৌরাধিকার আমি বহু অর্থ দিয়া ক্রয় করিয়াছি। পৌল কহিলেন, কিন্তু আমি জন্মের দ্বারাই রোমীয়।
29. অতএব যাহারা তাঁহার পরীক্ষা করিতে উদ্যত ছিল, তাহারা তখনই তাঁহার নিকট হইতে চলিয়া গেল; আর তিনি যে রোমীয়, তাহা জানিয়া, ও তাঁহাকে বাঁধিয়াছিলেন বলিয়া, সহস্রপতিও ভীত হইলেন।
30. কিন্তু পরদিন, যিহূদীরা তাঁহার উপর কি জন্য দোষারোপ করিতেছে, তাহা নিশ্চয় করিবার মানসে সহস্রপতি তাঁহাকে মুক্ত করিলেন, ও প্রধান যাজকগণ ও সমস্ত মহাসভাকে একত্র হইতে আজ্ঞা দিলেন, এবং পৌলকে নামাইয়া তাঁহাদের নিকটে উপস্থিত করিলেন।

Notes

No Verse Added

Total 28 Chapters, Current Chapter 22 of Total Chapters 28
पশিষ্যচরিত 22
1. ভ্রাতারা পিতারা, আমি এক্ষণে আপনাদের কাছে আত্মপক্ষ সমর্থন করিতেছি, শ্রবণ করুন।
2. তখন তিনি ইব্রীয় ভাষায় তাহাদের কাছে কথা কহিতেছেন শুনিয়া তাহারা আরও শান্ত হইল। পরে তিনি কহিলেন,
3. আমি যিহূদী, কিলিকিয়ার তার্ষ নগরে আমার জন্ম; কিন্তু এই নগরে গমলীয়েলের চরণে মানুষ হইয়াছি, পৈতৃক ব্যবস্থার সূক্ষ্ম নিয়মানুসারে শিক্ষিত হইয়াছি; আর আপনারা সকলে অদ্যাপি যেমন আছেন, তেমনি আমিও ঈশ্বরের পক্ষে উদ্যোগী ছিলাম।
4. আমি প্রাণনাশ পর্য্যন্ত এই পথের প্রতি উপদ্রব করিতাম, পুরুষ স্ত্রীলোকদিগকে বাঁধিয়া কারাগারে সমর্পণ করিতাম।
5. বিষয়ে মহাযাজক সমস্ত প্রাচীনবর্গও আমার সাক্ষী; তাঁহাদের নিকট হইতে আমি ভ্রাতৃগণের সমীপে পত্র লইয়া, দম্মেশকে যাত্রা করিয়াছিলাম; যাহারা তথায় ছিল, তাহাদিগকেও বাঁধিয়া যিরূশালেমে আনিবার জন্য গিয়াছিলাম, যেন তাহাদের দণ্ড হয়।
6. আর যাইতে যাইতে দম্মেশকের নিকটে উপস্থিত হইলে বেলা দুই প্রহরের সময়ে হঠাৎ আকাশ হইতে মহা আলো আমার চারিদিকে চমকিয়া উঠিল।
7. তাহাকে আমি ভূমিতে পড়িয়া গেলাম, শুনিলাম, এক বাণী আমাকে বলিতেছে, শৌল, শৌল, কেন আমাকে তাড়না করিতেছ?
8. আমি উত্তর করিলাম, প্রভু, আপনি কে? তিনি আমাকে কহিলেন, আমি নাসরতীয় যীশু, যাঁহাকে তুমি তাড়না করিতেছ।
9. আর যাহারা আমার সঙ্গে ছিল, তাহারা সেই আলো দেখিতে পাইল বটে, কিন্তু যিনি আমার সহিত কথা কহিতেছিলেন, তাঁহার বাণী শুনিতে পাইল না।
10. পরে আমি বলিলাম, প্রভু, আমি কি করিব? প্রভু আমাকে কহিলেন, উঠিয়া দম্মেশকে যাও, তোমাকে যাহা যাহা করিতে হইবে বলিয়া নিরূপিত আছে, সে সমস্ত সেখানেই তোমাকে বলা যাইবে।
11. পরে আমি সেই আলোর তেজে দৃষ্টিহীন হওয়াতে আমার সঙ্গীরা হাত ধরিয়া আমাকে লইয়া চলিল, আর আমি দম্মেশকে উপস্থিত হইলাম।
12. পরে অননিয় নামে এক ব্যক্তি, যিনি ব্যবস্থা অনুসারে ভক্ত, এবং তত্রনিবাসী সমুদয় যিহূদীর কাছে সুখ্যাতিপন্ন ছিলেন,
13. তিনি আমার নিকটে আসিয়া পার্শ্বে দাঁড়াইয়া কহিলেন, ভ্রাতঃ শৌল, দৃষ্টিপ্রাপ্ত হও; তাহাতে আমি সেই দণ্ডেই তাঁহার প্রতি দৃষ্টিপাত করিলাম।
14. পরে তিনি কহিলেন, আমাদের পিতৃপুরুষদের ঈশ্বর তোমাকে নিযুক্ত করিয়াছেন, যেন তুমি তাঁহার ইচ্ছা জ্ঞাত হও, এবং সেই ধর্ম্মময়কে দেখিতে তাঁহার মুখের বাণী শুনিতে পাও;
15. কারণ তুমি যাহা যাহা দেখিয়াছ শুনিয়াছ, সেই বিষয়ে সকল মনুষ্যের নিকটে তাঁহার সাক্ষী হইবে।
16. আর এখন কেন বিলম্ব করিতেছ? উঠ, তাঁহার নামে ডাকিয়া বাপ্তাইজিত হও, তোমার পাপ ধুইয়া ফেল।
17. তাহার পরে আমি যিরূশালেমে ফিরিয়া আসিয়া এক দিন ধর্ম্মধামে প্রার্থনা করিতেছিলাম, এমন সময়ে অভিভূত হইয়া তাঁহাকে দেখিলাম,
18. তিনি আমাকে কহিলেন, ত্বরা কর, শীঘ্র যিরূশালেম হইতে বাহির হও, কেননা এই লোকেরা আমার বিষয়ে তোমার সাক্ষ্য গ্রাহ্য করিবে না।
19. আমি কহিলাম, প্রভু, তাহারা জানে যে, যাহারা তোমাতে বিশ্বাস করিত, আমি প্রতি সমাজ-গৃহে তাহাদিগকে কারাবদ্ধ করিতাম প্রহার করিতাম;
20. আর যখন তোমার সাক্ষী স্তিফানের রক্তপাত হয়, তখন আমি আপনি নিকটে দাঁড়াইয়া সম্মতি দিতেছিলাম, যাহারা তাঁহাকে বধ করিতেছিল, তাহাদের বস্ত্র রক্ষা করিতেছিলাম।
21. তিনি আমাকে কহিলেন, প্রস্থান কর, কেননা আমি তোমাকে দূরে পরজাতিগণের কাছে প্রেরণ করিব।
22. লোকেরা এই পর্য্যন্ত তাঁহার কথা শুনিল, পরে উচ্চৈঃস্বরে কহিল, উহাকে পৃথিবী হইতে দূর করিয়া দেও, উহার বাঁচিয়া থাকা উচিত হয় নাই।
23. পরে তাহারা চেঁচাইয়া বস্ত্র ফেলিয়া দিয়া আকাশে ধূলি উড়াইতে লাগিল;
24. তাহাতে সহস্রপতি পৌলকে দুর্গের ভিতরে লইয়া যাইবার আজ্ঞা দিলেন, এবং বলিলেন, কোড়া প্রহার দ্বারা ইহার পরীক্ষা করিতে হইবে, যেন তিনি জানিতে পারেন, লোকে কি দোষ দিয়া তাঁহার বিরুদ্ধে এরূপ চেঁচাইতেছে।
25. পরে যখন তাহারা কশা দিয়া তাঁহাকে বাঁধিল, তখন, যে শতপতি নিকটে দাঁড়াইয়াছিলেন, পৌল তাঁহাকে কহিলেন, যে ব্যক্তি রোমীয়, এবং বিচারে দোষীকৃত হয় নাই, তাহাকে কোড়া প্রহার করা কি আপনাদের পক্ষে বিধেয়?
26. ইহা শুনিয়া সেই শতপতি সহস্রপতির নিকটে গিয়া তাঁহাকে কহিলেন, আপনি কি করিতে উদ্যত হইয়াছেন? ব্যক্তি যে রোমীয়।
27. তাহাতে সহস্রপতি নিকটে গিয়া তাঁহাকে কহিলেন, বল দেখি, তুমি কি রোমীয়? তিনি কহিলেন, হাঁ।
28. সহস্রপতি উত্তর করিলেন, এই পৌরাধিকার আমি বহু অর্থ দিয়া ক্রয় করিয়াছি। পৌল কহিলেন, কিন্তু আমি জন্মের দ্বারাই রোমীয়।
29. অতএব যাহারা তাঁহার পরীক্ষা করিতে উদ্যত ছিল, তাহারা তখনই তাঁহার নিকট হইতে চলিয়া গেল; আর তিনি যে রোমীয়, তাহা জানিয়া, তাঁহাকে বাঁধিয়াছিলেন বলিয়া, সহস্রপতিও ভীত হইলেন।
30. কিন্তু পরদিন, যিহূদীরা তাঁহার উপর কি জন্য দোষারোপ করিতেছে, তাহা নিশ্চয় করিবার মানসে সহস্রপতি তাঁহাকে মুক্ত করিলেন, প্রধান যাজকগণ সমস্ত মহাসভাকে একত্র হইতে আজ্ঞা দিলেন, এবং পৌলকে নামাইয়া তাঁহাদের নিকটে উপস্থিত করিলেন।
Total 28 Chapters, Current Chapter 22 of Total Chapters 28
×

Alert

×

bengali Letters Keypad References