1. যোশিয় আট বৎসর বয়সে রাজত্ব করিতে আরম্ভ করেন; এবং একত্রিশ বৎসরকাল যিরূশালেমে রাজত্ব করেন।
2. সদাপ্রভুর সাক্ষাতে যাহা নায্য, তিনি তাহাই করিতেন, ও আপন পিতৃপুরুষ দায়ূদের পথে চলিতেন, তাহার দক্ষিণে কি বামে ফিরিতেন না।
3. ফলতঃ তাঁহার রাজত্বের অষ্টম বৎসরে তিনি অল্পবয়স্ক হইলেও আপন পিতৃপুরুষ দায়ূদের ঈশ্বরের অন্বেষণ করিতে আরম্ভ করিলেন, এবং দ্বাদশ বৎসরে উচ্চস্থলী ও আশেরা-মূর্ত্তি, ক্ষোদিত প্রতিমা ও ছাঁচে ঢালা প্রতিমা হইতে যিহূদা ও যিরূশালেমকে শুচি করিতে লাগিলেন।
4. তাঁহার সাক্ষাতে লোকেরা বাল দেবগণের যজ্ঞবেদি সকল ভাঙ্গিয়া ফেলিল, এবং তিনি তদুপরি স্থাপিত সূর্য্যপ্রতিমা ছেদন করিলেন, আর আশেরা-মূর্ত্তি, ক্ষোদিত প্রতিমা ও ছাঁচে ঢালা প্রতিমা সকল ভাঙ্গিয়া ধূলিসাৎ করিয়া, যাহারা তাহাদের উদ্দেশে যজ্ঞ করিয়াছিল, তাহাদের কবরের উপরে সেই ধূলা ছড়াইয়া দিলেন।
5. আর তাহাদের যজ্ঞবেদির উপরে যাজকদের অস্থি পোড়াইলেন, এবং যিহূদা ও যিরূশালেমকে শুচি করিলেন।
6. আর মনঃশির, ইফ্রয়িমের ও শিমিয়োনের নগরে নগরে এবং নপ্তালি পর্য্যন্ত সর্ব্বত্র কাঁথড়ার মধ্যে এইরূপ করিলেন।
7. আর তিনি যজ্ঞবেদি সকল ভাঙ্গিয়া ফেলিলেন, এবং আশেরা-মূর্ত্তি সকল ও ক্ষোদিত প্রতিমা সকল চূর্ণ করিলেন, ইস্রায়েল দেশের সর্ব্বত্র সমস্ত সূর্য্যপ্রতিমা কাটিয়া ফেলিলেন, পরে যিরূশালেমে ফিরিয়া আসিলেন।
8. তাঁহার রাজত্বের অষ্টাদশ বৎসরে দেশ ও গৃহ শুচি করিবার পর তিনি আপন ঈশ্বর সদাপ্রভুর গৃহ মেরামৎ করিবার জন্য অৎসলিয়ের পুত্র শাফনকে, মাসেয় নগরাধ্যক্ষকে ও যোয়াহসের পুত্র যোয়াহ ইতিহাসকর্ত্তাকে পাঠাইলেন।
9. আর তাঁহারা হিল্কিয় মহাযাজকের নিকটে উপস্থিত হইলেন, এবং ঈশ্বরের গৃহে আনীত সমস্ত রৌপ্য, যাহা দ্বারপাল লেবীয়েরা মনঃশি, ইফ্রয়িম ও ইস্রায়েলের সমস্ত অবশিষ্টাংশের নিকট হইতে, এবং সমস্ত যিহূদা ও বিন্যামীনের নিকট হইতে, আর যিরূশালেম-নিবাসীদের নিকট হইতে সংগ্রহ করিয়াছিল, সেই সকল রৌপ্য সমর্পণ করিলেন।
10. তাঁহারা সদাপ্রভুর গৃহের তত্ত্বাবধায়ক কার্য্যকারীদের হস্তে তাহা সমর্পণ করিলেন, পরে যে কার্য্যকারীরা সদাপ্রভুর গৃহে কর্ম্ম করিত, তাহারা সেই গৃহ সারিবার ও মেরামৎ করিবার জন্য তাহা দিল,
11. অর্থাৎ যিহূদার রাজগণ যে সকল গৃহ বিনষ্ট করিয়াছিলেন, সেই সকলের জন্য ক্ষোদিত প্রস্তর, ও যোড়ের কাষ্ঠ ক্রয় করিতে ও কড়িকাষ্ঠ প্রস্তুত করিতে তাহারা সূত্রধরদিগকে ও গাঁথকদিগকে তাহা দিল।
12. আর সেই লোকেরা বিশ্বস্তরূপে কার্য্য করিল, এবং মরারি-সন্তানদের মধ্যে দুই জন লেবীয়, অর্থাৎ যহৎ ও ওবদিয়, তাহাদের তত্ত্বাবধায়ক ছিল, এবং কহাৎ-সন্তানদের মধ্যে সখরিয় ও মশুল্লম, এবং অন্য লেবীয়দের মধ্যে বাদ্য বাদনে নিপুন লোকেরা কর্ম্ম চালাইবার জন্য নিযুক্ত ছিল।
13. আর তাহারা ভারবাহকদের অধ্যক্ষ, আর কর্ম্ম চালাইবার জন্য সর্ব্বপ্রকার সেবাকর্ম্মকারীদের উপরে নিযুক্ত ছিল, এবং লেবীয়দের মধ্যে কেহ কেহ লেখক, কর্ম্মচারী ও দ্বারপাল ছিল।
14. তাহারা যখন সদাপ্রভুর গৃহে আনীত সকল রৌপ্য বাহির করিল, তখন হিল্কিয় যাজক মোশি দ্বারা দত্ত সদাপ্রভুর ব্যবস্থা পুস্তকখানি পাইলেন।
15. পরে হিল্কিয় শাফন লেখককে কহিলেন, আমি সদাপ্রভুর গৃহে ব্যবস্থা-পুস্তকখানি পাইয়াছি; পরে হিল্কিয় শাফনকে সেই পুস্তক দিলেন।
16. আর শাফন সেই পুস্তক রাজার কাছে লইয়া গিয়া রাজার কাছে এই নিবেদন করিলেন, আপনার দাসদের প্রতি আদিষ্ট সমস্ত কর্ম্ম করা যাইতেছে;
17. তাঁহারা সদাপ্রভুর গৃহে প্রাপ্ত সমস্ত টাকা একত্র করিয়া তত্ত্বাবধায়কদের ও কর্ম্মকারীদের হস্তে দিয়াছেন।
18. পরে শাফন লেখক রাজাকে এই কথা জ্ঞাত করিলেন, হিল্কিয় যাজক আমাকে একখানি পুস্তক দিয়াছেন; আর শাফন রাজার সাক্ষাতে তাহা পাঠ করিতে লাগিলেন।
19. তখন রাজা ব্যবস্থার বাক্য সকল শুনিয়া আপনার বস্ত্র ছিঁড়িলেন।
20. আর রাজা হিল্কিয়কে, শাফনের পুত্র অহীকামকে, মীখায়ের পুত্র অব্দোনকে, শাফন লেখককে ও রাজভৃত্য অসায়কে এই আজ্ঞা করিলেন,
21. তোমরা যাও, যে পুস্তকখানি পাওয়া গিয়াছে, সেই পুস্তকের বাক্য সকলের বিষয়ে আমার নিমিত্ত এবং ইস্রায়েলের ও যিহূদার মধ্যে অবশিষ্ট লোকদের নিমিত্ত সদাপ্রভুকে জিজ্ঞাসা কর; কেননা ঐ পুস্তকে লিখিত সকল কথানুযায়ী কর্ম্ম করিবার জন্য আমাদের পিতৃপুরুষেরা সদাপ্রভুর বাক্য পালন করেন নাই, এই জন্য আমাদের উপরে সদাপ্রভুর ক্রোধাগ্নি বর্ষিত হইয়াছে।
22. তখন হিল্কিয় ও রাজার [নিযুক্ত] ঐ লোকেরা বস্ত্রাগারের অধ্যক্ষ হস্রহের পৌত্র, তোখতের পুত্র শল্লুমের স্ত্রী হুল্দা ভাববাদিনীর নিকটে গেলেন; তিনি যিরূশালেমে, দ্বিতীয় বিভাগে, বাস করিতেছিলেন। পরে তাঁহারা ঐ ভাবের কথা তাঁহাকে কহিলেন।
23. তিনি তাঁহাদিগকে কহিলেন, ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভু এই কথা কহেন, যে ব্যক্তি তোমাদিগকে আমার কাছে পাঠাইয়াছে,
24. তাহাকে বল, সদাপ্রভু এই কথা কহেন, দেখ, আমি এই স্থানের ও এখানকার নিবাসীদের উপরে অমঙ্গল আনিব, যিহূদা-রাজের সাক্ষাতে যে পুস্তক উহারা পাঠ করিয়াছে, তাহাতে লিখিত সমস্ত অভিশাপ বর্ত্তাইব।
25. কারণ তাহারা আমাকে ত্যাগ করিয়াছে, এবং অন্য দেবগণের উদ্দেশে ধূপ জ্বালাইয়াছে, এইরূপে স্ব স্ব হস্তের সমস্ত কার্য্যদ্বারা আমাকে অসন্তুষ্ট করিয়াছে; তজ্জন্য এই স্থানের উপরে আমার ক্রোধাগ্নি বর্ষিত হইল, নির্ব্বাণ হইবে না।
26. কিন্তু যিহূদার রাজা, যিনি সদাপ্রভুর কাছে জিজ্ঞাসা করিতে তোমাদিগকে পাঠাইয়াছেন, তাঁহাকে এই কথা বল, ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভু এই কথা কহেন, তুমি যে সকল বাক্য শ্রবণ করিয়াছ, তাহার বিষয়ে কথা এই,—
27. এই স্থানের ও এখানকার নিবাসীদের বিরুদ্ধে আমি যে সকল বাক্য কহিয়াছি, তাহা শ্রবণমাত্র তোমার অন্তঃকরণ কোমল হইয়াছে, তুমি ঈশ্বরের সাক্ষাতে আপনাকে অবনত করিয়াছ; তুমি আমার সাক্ষাতে আপনাকে অবনত করিয়াছ, এবং আপন বস্ত্র ছিঁড়িঁয়া আমার সম্মুখে রোদন করিয়াছ, এই জন্য সদাপ্রভু কহেন, আমিও তোমার কথা শুনিলাম।
28. দেখ, আমি তোমার পিতৃলোকদের কাছে তোমাকে সংগ্রহ করিব; তুমি শান্তিতে আপন কবরে সংগৃহীত হইবে; এবং এই স্থানের ও এখানকার নিবাসীদের উপরে আমি যে সকল অমঙ্গল আনিব, তোমার চক্ষু সে সমস্ত দেখিবে না। পরে তাহারা আবার রাজাকে এই কথায় সমাচার দিলেন।
29. আর রাজা লোক পাঠাইয়া যিহূদার ও যিরূশালেমের সমস্ত প্রাচীনবর্গকে একত্র করিলেন।
30. পরে রাজা সদাপ্রভুর গৃহে গেলেন, এবং যিহূদার সমস্ত লোক, যিরূশালেম-নিবাসীরা, যাজকেরা ও লেবীয়েরা, মহান্ ও ক্ষুদ্র সমস্ত প্রজা গমন করিল; এবং তিনি সদাপ্রভুর গৃহে প্রাপ্ত নিয়ম-পুস্তকের সমস্ত কথা তাহাদের কর্ণগোচরে পাঠ করিলেন।
31. পরে রাজা আপনার স্থানে দাঁড়াইয়া সদাপ্রভুর অনুগামী হইবার, এবং সমস্ত অন্তঃকরণের ও সমস্ত প্রাণের সহিত তাঁহার আজ্ঞা, সাক্ষ্যকথা ও বিধি পালন করিবার জন্য, এই পুস্তকে লিখিত নিয়মের কথানুসারে কার্য্য করিবার জন্য সদাপ্রভুর সাক্ষাতে নিয়ম স্থির করিলেন।
32. আর যিরূশালেমের ও বিন্যামীনের যত লোক উপস্থিত ছিল, সেই সকলকে তিনি অঙ্গীকার করাইলেন। তাহাতে যিরূশালেম-নিবাসীরা ঈশ্বরের, আপনাদের পিতৃপুরুষদের ঈশ্বরের, নিয়মানুসারে কার্য্য করিতে লাগিল।
33. আর যোশিয় ইস্রায়েল-সন্তানগণের অধিকৃত সকল দেশ হইতে সমস্ত ঘৃণার্হ বস্তু দূর করিলেন, এবং ইস্রায়েলের মধ্যে যত লোক উপস্থিত ছিল, সকলকে সেবা, তাহাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর সেবা, করাইলেন। তিনি যত দিন ছিলেন, তত দিন তাহারা আপনাদের পিতৃপুরুষদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর অনুগমনে নিবৃত্ত হইল না।