প্রবচন অধ্যায় 6
1. বৎস, তুমি যদি বন্ধুর জামিন হইয়া থাক, যদি অপরের সহিত হস্তে তালী দিয়া থাক,
2. তবে আপন মুখের কথায় ফাঁদে পতিত হইয়াছ, আপন মুখের কথায় ধৃত হইয়াছ।
3. এখন, বৎস, তুমি এই কার্য্য কর; আপনাকে উদ্ধার কর; যখন তুমি আপন বন্ধুর হস্তগত হইয়াছ, তখন যাও, বিনত হও, বন্ধুর সাধ্যসাধনা কর;
4. তোমার চক্ষুকে নিদ্রা যাইতে দিও না, চক্ষুর পাতাকে মুদ্রিত হইতে দিও না;
5. আপনাকে হরিণের ন্যায় [ব্যাধের] হস্ত হইতে, পক্ষীর ন্যায় জালিকের হস্ত হইতে উদ্ধার কর।
6. হে অলস, তুমি পিপীলিকার কাছে যাও, তাহার ক্রিয়া সকল দেখিয়া জ্ঞানবান হও।
7. তাহার বিচারকর্ত্তা কেহ নাই, শাসনকর্ত্তা কি অধ্যক্ষ কেহ নাই,
8. তবু সে গ্রীষ্মকালে আপন খাদ্য প্রস্তুত করে, শস্য কাটিবার সময়ে ভক্ষ্য সঞ্চয় করে।
9. হে অলস, তুমি কত কাল শুইয়া থাকিবে? কখন্ নিদ্রা হইতে উঠিবে?
10. ‘আর একটু নিদ্রা, আর একটু তন্দ্রা, আর একটু শুইয়া হস্ত জড়সড় করিব’;
11. তাই তোমার দরিদ্রতা দস্যুর ন্যায় আসিবে, তোমার দৈন্যদশা ঢালীর ন্যায় আসিবে।
12. যে ব্যক্তি পাষণ্ড, যে লোক অপরাধী, সে মুখের কুটিলতায় চলে,
13. সে চক্ষু দ্বারা ইঙ্গিত করে, পদ দ্বারা কথা বলে, সে অঙ্গুলি দ্বারা সঙ্কেত করে,
14. তাহার হৃদয়ে কুটিলতা থাকে, সে সতত কুকল্পনা করে, সে বিবাদ খুলিয়া দেয়।
15. সেই জন্য অকস্মাৎ তাহার বিপদ আসিবে, হঠাৎ সে ভগ্ন হইবে; আর প্রতীকার হইবে না।
16. এই ছয় বস্তু সদাপ্রভুর ঘৃণিত, এমন কি, সপ্ত বস্তু তাঁহার প্রাণের ঘৃণাস্পদ;
17. উদ্ধত দৃষ্টি, মিথ্যাবাদী জিহ্বা, নির্দ্দোষের রক্তপাতকারী হস্ত,
18. দুষ্ট সঙ্কল্পকারী হৃদয়, দুষ্কর্ম্ম করিতে দ্রুতগামী চরণ,
19. যে মিথ্যাসাক্ষী অসত্য কথা কহে, ও যে ভ্রাতৃগণের মধ্যে বিবাদ খুলিয়া দেয়।
20. বৎস, তুমি আপন পিতার আজ্ঞা পালন কর, আপন মাতার ব্যবস্থা ত্যাগ করিও না।
21. উহা সর্ব্বদা তোমার হৃদয়ে গাথিয়া রাখ, তোমার কণ্ঠদেশে বাঁধিয়া রাখ।
22. গমনকালে সে তোমাকে পথ দেখাইবে, শয়নকালে তোমার প্রহরী হইবে, জাগরণকালে তোমার সহিত আলাপ করিবে।
23. কেননা আজ্ঞা প্রদীপ ও ব্যবস্থা আলোক, এবং শিক্ষাজনক অনুযোগ জীবনের পথ;
24. সে তোমাকে রক্ষা করিবে, দুষ্টা স্ত্রী হইতে, বিজাতীয়ার জিহ্বার চাটুবাদ হইতে।
25. তুমি হৃদয়ে উহার সৌন্দর্য্যে লুব্ধ হইও না, উহার অপাঙ্গ-ভঙ্গিতে ধৃত হইও না।
26. কেননা বারাঙ্গনা দ্বারা অন্নাভাব ঘটে, পরস্ত্রী [মনুষ্যের] মহামূল্য প্রাণ মৃগয়া করে।
27. কেহ যদি বক্ষঃস্থলে অগ্নি রাখে, তবে তাহার বস্ত্র কি পুড়িয়া যাইবে না?
28. কেহ যদি জ্বলন্ত অঙ্গারের উপর দিয়া চলে, তবে তাহার পদতল কি পুড়িয়া যাইবে না?
29. তদ্রূপ যে প্রতিবাসীর স্ত্রীর কাছে গমন করে; যে তাহাকে স্পর্শ করে, সে অদণ্ডিত থাকিবে না।
30. যে ক্ষুধিত হইয়া প্রাণের তৃপ্তির জন্য চুরি করে, লোকে সেই চোরকে উপেক্ষা করে না;
31. কিন্তু ধরা পড়িলে তাহাকে সপ্তগুণ ফিরাইয়া দিতে হইবে, তাহার গৃহের সর্ব্বস্বও সমর্পণ করিতে হইবে।
32. পরদারগামী পুরুষ বুদ্ধিবিহীন, সে তাহা করিয়া আপনার প্রাণ আপনি নষ্ট করে।
33. সে আঘাত ও অবমাননা পাইবে; তাহার দুর্নাম কখনও ঘুচিবে না।
34. যেহেতু অন্তর্জ্বালা স্বামীর চণ্ডতা, প্রতিশোধের দিনে সে ক্ষমা করিবে না;
35. সে কোন প্রকার প্রায়শ্চিত্ত গ্রাহ্য করিবে না, অনেক উৎকোচ দিলেও সম্মত হইবে না।