দ্বিতীয় বিবরণ অধ্যায় 1
1. যর্দ্দনের পূর্ব্বপারস্থিত প্রান্তরে, সূফের সম্মুখস্থিত অরাবা তলভূমিতে, পারণ, তোফল, লাবন, হৎসেরোৎ ও দীষাহবের মধ্যস্থানে মোশি সমস্ত ইস্রায়েলকে এই সকল কথা কহিলেন।
2. সেয়ীর পর্ব্বত দিয়া হোরেব অবধি কাদেশ-বর্ণেয় পর্য্যন্ত যাইতে এগার দিন লাগে।
3. সদাপ্রভু যে যে কথা ইস্রায়েল-সন্তানগণকে বলিতে মোশিকে আজ্ঞা দিয়াছিলেন, তদনুসারে মোশি চল্লিশ বৎসরের একাদশ মাসে, মাসের প্রথম দিনে তাহাদিগকে কহিতে লাগিলেন।
4. হিষ্বোন-নিবাসী ইমোরীয়দের রাজা সীহোনকে, এবং ইদ্রিয়ীতে অষ্টারোৎ-নিবাসী বাশনের রাজা ওগকে আঘাত করিলে পর,
5. যর্দ্দনের পূর্ব্বপারে মোয়াব দেশে মোশি এই ব্যবস্থা ব্যাখ্যা করিতে লাগিলেন; তিনি বলিলেন,
6. আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু হোরেবে আমাদিগকে বলিয়াছিলেন, তোমরা এই পর্ব্বতে অনেক দিন অবস্থিতি করিয়াছ;
7. এখন ফির, তোমরা যাত্রা কর, ইমোরীয়দের পর্ব্বতময় দেশ এবং তন্নিকটবর্ত্তী সকল স্থান, অরাবা তলভূমি, পাহাড় অঞ্চল, নিম্নভূমি, দক্ষিণ প্রদেশ ও সমুদ্রতীর, মহানদী ফরাৎ নদী পর্য্যন্ত কনানীয়দের দেশে ও লিবানোনে প্রবেশ কর।
8. দেখ, আমি সেই দেশ তোমাদের সম্মুখে দিয়াছি; তোমাদের পিতৃপুরুষ অব্রাহাম, ইস্হাক ও যাকোবকে এবং তাহাদের পরে তাহাদের বংশকে যে দেশ দিতে সদাপ্রভু দিব্য করিয়াছিলেন, তোমরা সেই দেশে প্রবেশ করিয়া তাহা অধিকার কর।
9. তৎকালে আমি তোমাদিগকে এই কথা বলিয়াছিলাম, তোমাদের ভার বহন করা একা আমার অসাধ্য।
10. তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমাদের বৃদ্ধি করিয়াছেন, আর দেখ, তোমরা অদ্য আকাশের তারার ন্যায় বহুসংখ্যক হইয়াছ;
11. তোমরা যেরূপ আছ, তোমাদের পিতৃগণের ঈশ্বর সদাপ্রভু তাহা হইতে তোমাদের আরও সহস্র গুণ বৃদ্ধি করুন, আর তোমাদিগকে যেরূপ বলিয়াছেন, তদ্রূপ আশীর্ব্বাদ করুন।
12. আমি কেমন করিয়া একা তোমাদের বোঝা, তোমাদের ভার ও তোমাদের বিবাদ সহ্য করিতে পারি?
13. তোমরা আপন আপন বংশের মধ্যে জ্ঞানবান্, বুদ্ধিমান্ ও পরিচিত লোকদিগকে মনোনীত কর, আমি তাহাদিগকে তোমাদের অধ্যক্ষরূপে নিযুক্ত করিব।
14. তোমরা আমাকে উত্তর করিলে, বলিলে, তুমি যাহা বলিতেছ, তাহাই করা ভাল।
15. তাই আমি তোমাদের বংশসমূহের প্রধান, জ্ঞানবান্ ও পরিচিত লোকদিগকে গ্রহণ করিয়া তোমাদের উপরে প্রধান, তোমাদের বংশানুসারে সহস্রপতি, শতপতি পঞ্চাশৎপতি, দশপতি ও কর্ম্মচারী করিয়া নিযুক্ত করিলাম।
16. আর তৎকালে তোমাদের বিচারকর্ত্তাদিগকে এই আজ্ঞা করিলাম, তোমরা তোমাদের ভ্রাতাদের কথা শুনিয়া বাদীর ও তাহার ভ্রাতার কি সহবাসী বিদেশীর মধ্যে ন্যায্য বিচার করিও।
17. তোমরা বিচারে কাহারও মুখাপেক্ষা করিবে না; সমভাবে ক্ষুদ্র ও মহান্ উভয়ের কথা শুনিবে; মনুষ্যের মুখ দেখিয়া ভয় করিবে না, কেননা বিচার ঈশ্বরের; এবং যে কথা তোমাদের পক্ষে কঠিন, তাহা আমার কাছে আনিবে, আমি তাহা শুনিব।
18. সেই সময়ে তোমাদের সমস্ত কর্ত্তব্য কর্ম্মের বিষয়ে আমি আজ্ঞা করিয়াছিলাম।
19. পরে আমরা আপনাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর আজ্ঞানুসারে হোরেব হইতে প্রস্থান করিলাম, এবং ইমোরীয়দের পর্ব্বতময় দেশে যাইবার পথে তোমরা সেই যে বৃহৎ ও ভয়ঙ্কর প্রান্তর দেখিয়াছ, তাহার মধ্য দিয়া যাত্রা করিয়া কাদেশবর্ণেয়ে পৌঁছিলাম।
20. পরে আমি তোমাদিগকে কহিলাম, আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু আমাদিগকে যে দেশ দিতেছেন, ইমোরীয়দের সেই পর্ব্বতময় দেশে তোমরা উপস্থিত হইলে।
21. দেখ, তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু সেই দেশ তোমার সম্মুখে দিয়াছেন; তুমি আপন পিতৃপুরুষগণের ঈশ্বর সদাপ্রভুর আজ্ঞানুসারে উঠিয়া উহা অধিকার কর; ভীত ও নিরাশ হইও না।
22. তখন তোমরা সকলে আমার নিকটে আসিয়া কহিলে, অগ্রে আমরা সে স্থানে লোক পাঠাই; তাহারা আমাদের জন্য দেশ অনুসন্ধান করুক, এবং আমাদিগকে কোন্ পথ দিয়া উঠিয়া যাইতে হইবে, ও কোন্ কোন্ নগরে উপস্থিত হইতে হইবে, তাহার সংবাদ লইয়া আইসুক।
23. তখন আমি সে কথায় সন্তুষ্ট হইয়া তোমাদের প্রত্যেক বংশ হইতে এক এক জন করিয়া বারো জনকে গ্রহণ করিলাম।
24. পরে তাহারা যাত্রা করিয়া পর্ব্বতে উঠিল, এবং ইষ্কোল উপত্যকায় উপস্থিত হইয়া দেশ অনুসন্ধান করিল।
25. আর সেই দেশের কতকগুলি ফল হস্তে লইয়া আমাদের নিকটে আসিয়া সংবাদ দিল, কহিল, আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু আমাদিগকে যে দেশ দিতেছেন, সে উত্তম দেশ।
26. তথাপি তোমরা সেই স্থানে যাইতে অসম্মত হইলে; ও তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর আজ্ঞার বিরুদ্ধাচারী হইলে;
27. আর আপন আপন তাম্বুতে বচসা করিয়া কহিলে, সদাপ্রভু আমাদিগকে ঘৃণা করিলেন বলিয়া আমরা যেন বিনষ্ট হই, তাই ইমোরীয়দের হস্তে সমর্পণ করিবার নিমিত্ত আমাদিগকে মিসর দেশ হইতে বাহির করিয়া আনিলেন।
28. আমরা কোথায় যাইতেছি? আমাদের ভ্রাতৃগণ আমাদের মনোভঙ্গ করিল, বলিল, আমাদের অপেক্ষা সেই জাতি মহৎ ও দীর্ঘকায়, এবং নগরগুলি অতি বৃহৎ ও গগনস্পর্শী প্রাচীরে বেষ্টিত; আরও সে স্থানে আমরা অনাকীয়দের সন্তানদিগকেও দেখিয়াছি।
29. তখন আমি তোমাদিগকে কহিলাম, উদ্বিগ্ন হইও না, তাহাদের হইতে ভীত হইও না।
30. তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু যিনি তোমাদের অগ্রগামী, তিনি মিসর দেশে তোমাদের চক্ষুর্গোচরে তোমাদের জন্য যে সমস্ত কার্য্য করিয়াছিলেন, তদনুসারে তোমাদের জন্য যুদ্ধ করিবেন।
31. এই প্রান্তরেও তুমি তদ্রূপ দেখিয়াছ; যেহেতুক পিতা যেমন আপন পুত্রকে বহন করে, তেমনি এই স্থানে তোমাদের আগমন পর্য্যন্ত যে পথে তোমরা আসিয়াছ, সেই সমস্ত পথে তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমাকে বহন করিয়াছেন।
32. তথাপি এই কথায় তোমরা আপনাদের ঈশ্বর সেই সদাপ্রভুতে বিশ্বাস করিলে না,
33. যিনি তোমাদের শিবির রাখিবার স্থান অন্বেষণ করণার্থে যাত্রাকালে তোমাদের অগ্রগামী হইয়া রাত্রিতে অগ্নি দ্বারা ও দিবসে মেঘ দ্বারা তোমাদের গন্তব্য পথ প্রদর্শন করিতেন।
34. আর সদাপ্রভু তোমাদের বাক্যের রব শুনিয়া ক্রুদ্ধ হইলেন, ও এই দিব্য করিলেন,
35. আমি তোমাদের পিতৃপুরুষদিগকে যে দেশ দিতে শপথ করিয়াছি, এই দুষ্ট বংশীয় মনুষ্যদের মধ্যে কেহই সেই উত্তম দেশ দেখিতে পাইবে না,
36. কেবল যিফন্নির পুত্র কালেব তাহা দেখিবে; এবং সে যে ভূমিতে পদার্পণ করিয়া আসিয়াছে, সেই ভূমি আমি তাহাকে ও তাহার সন্তানগণকে দিব; কেননা সে সম্পূর্ণরূপে সদাপ্রভুর অনুগমন করিয়াছে।
37. (সদাপ্রভু তোমাদের নিমিত্ত আমার প্রতিও ক্রুদ্ধ হইলেন, তিনি আমাকে এই কথা কহিলেন, তুমিও সে স্থানে প্রবেশ করিবে না।
38. তোমার সম্মুখে দণ্ডায়মান নূনের পুত্র যিহোশূয় সেই দেশে প্রবেশ করিবে; তুমি তাহাকেই আশ্বাস দেও, কেননা সে ইস্রায়েলকে তাহা অধিকার করাইবে।)
39. আর ইহারা লুটিত হইবে, এই কথা তোমরা আপনাদের যে বালকগণের বিষয়ে কহিলে, এবং তোমাদের যে সন্তানগণের ভাল মন্দ জ্ঞান অদ্যাপি হয় নাই, তাহারাই সেই স্থানে প্রবেশ করিবে; তাহাদিগকেই আমি সেই দেশ দিব, এবং তাহারাই তাহা অধিকার করিবে।
40. কিন্তু তোমরা ফির, সূফসাগরের পথ দিয়া প্রান্তরে গমন কর।
41. তখন তোমরা উত্তর করিয়া আমাকে বলিলে, আমরা সদাপ্রভুর বিরুদ্ধে পাপ করিয়াছি; আমরা আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর সমস্ত আজ্ঞানুসারে উঠিয়া গিয়া যুদ্ধ করিব। পরে তোমরা প্রত্যেক জন যুদ্ধাস্ত্রে সসজ্জ হইলে, এবং পর্ব্বতে উঠা লঘু বিষয় মনে করিলে।
42. তখন সদাপ্রভু আমাকে কহিলেন, তুমি তাহাদিগকে বল, তোমরা উঠিও না, যুদ্ধ করিও না, কেননা আমি তোমাদের মধ্যবর্ত্তী নহি; পাছে শত্রুদের সম্মুখে আহত হও।
43. আমি তোমাদিগকে সেই কথা কহিলাম, কিন্তু তোমরা সে কথায় কান দিলে না; বরং সদাপ্রভুর আজ্ঞার বিরুদ্ধাচারী ও দুঃসাহসী হইয়া পর্ব্বতে উঠিতেছিলে।
44. আর সেই পর্ব্বতবাসী ইমোরীয়েরা তোমাদের বিরুদ্ধে বাহির হইয়া, মধুমক্ষিকা যেমন করে, তেমনি তোমাদিগকে তাড়া করিল, এবং সেয়ীরে হর্মা পর্য্যন্ত আঘাত করিল।
45. তখন তোমরা ফিরিয়া আসিলে ও সদাপ্রভুর কাছে রোদন করিলে; কিন্তু সদাপ্রভু তোমাদের রবে কর্ণপাত করিলেন না, তোমাদের কথায় কান দিলেন না।
46. আর তোমরা অবস্থিতি-কালানুসারে কাদেশে অনেক দিন বাস করিলে।