বংশাবলি ২ অধ্যায় 25
1. অমৎসিয় পঁচিশ বৎসর বয়সে রাজত্ব করিতে আরম্ভ করেন, এবং যিরূশালেমে ঊনত্রিশ বৎসর কাল রাজত্ব করেন; তাঁহার মাতার নাম যিহোয়দ্দন, তিনি যিরূশালেম-নিবাসিনী।
2. অমৎসিয় সদাপ্রভুর সাক্ষাতে যাহা নায্য তাহা করিতেন বটে, কিন্তু একাগ্রচিত্তে করিতেন না।
3. পরে রাজ্য তাঁহার হস্তে স্থির হইলে তাঁহার যে দাসেরা তাঁহার পিতা রাজাকে বধ করিয়াছিল, তাহাদিগকে তিনি বধ করিলেন।
4. কিন্তু তিনি তাহাদের সন্তানদিগকে বধ করিলেন না, ব্যবস্থা-গ্রন্থে, মোশির পুস্তকে সদাপ্রভুর যে আজ্ঞা লিখিত আছে, তদনুসারে কার্য্য করিলেন, যথা, সন্তানের জন্য পিতা, কিম্বা পিতার জন্য সন্তান মারা যাইবে না; প্রতিজন আপন আপন পাপ প্রযুক্ত মরিবে।
5. পরে অমৎসিয় যিহূদাকে একত্র করিয়া, সমস্ত যিহূদা ও সমস্ত বিন্যামীন-সম্বন্ধীয় পিতৃকুলানুসারে সহস্রপতি ও শতপতিগণের অধীনে লোকদিগকে দাঁড় করাইলেন, এবং বিংশতি বৎসর ও ততোধিক বয়স্ক লোকদিগকে গণনা করিয়া দেখিলেন, যুদ্ধে গমনযোগ্য তিন লক্ষ মনোনীত লোক, তাহারা বড়শা ও ঢাল ধরিতে সক্ষম।
6. আর তিনি এক শত তালন্ত রৌপ্য বেতন দিয়া ইস্রায়েল হইতে এক লক্ষ বলবান বীর লইলেন।
7. কিন্তু ঈশ্বরের এক জন লোক তাঁহার নিকটে আসিয়া কহিলেন, হে রাজন্, ইস্রায়েলের সৈন্য আপনার সঙ্গে না যাউক; কারণ ইস্রায়েলের সঙ্গে, অর্থাৎ সমস্ত ইফ্রয়িম-সন্তানের সঙ্গে সদাপ্রভু থাকেন না।
8. তুমিই গিয়া কার্য্য কর, যুদ্ধার্থে বলবান হও; ঈশ্বর শত্রুর সম্মুখে তোমাকে নিপাত করিবেন, যেহেতু যাহায্য করিতে ও নিপাত করিতে ঈশ্বরের ক্ষমতা আছে।
9. তাহাতে অমৎসিয় ঈশ্বরের লোককে কহিলেন, ভাল, কিন্তু সেই ইস্রায়েলীয় সৈন্যদলকে যে এক শত তালন্ত রৌপ্য দিয়াছি, তাহার জন্য কি করা যায়? ঈশ্বরের লোক কহিলেন, সদাপ্রভু আপনাকে ইহা অপেক্ষা আরও প্রচুর দিতে পারেন।
10. তাহাতে অমৎসিয় তাহাদিগকে অর্থাৎ ইফ্রয়িম হইতে তাঁহার নিকটে আগত সেই সৈন্যদিগকে গৃহে পাঠাইবার জন্য পৃথক্ করিলেন; অতএব যিহূদার বিরুদ্ধে তাহাদের ক্রোধ অত্যন্ত প্রজ্বলিত হইল, তাহারা মহা ক্রোধে স্ব স্ব স্থানে ফিরিয়া গেল।
11. পরে অমৎসিয় আপনাকে বলবান করিলেন, এবং আপন লোকদিগকে বাহির করিয়া লবণোপত্যকায় গিয়া সেয়ীর-সন্তানদের দশ সহস্র লোককে বধ করিলেন।
12. আর যিহূদার সন্তানগণ তাহাদের দশ সহস্র জীবিত লোককে বন্দি করিয়া লইয়া গেল, এবং তাহাদিগকে শৈলশিখরে উপস্থিত করিয়া শৈলশিখর হইতে নীচে ফেলিয়া দিল, তাহাতে তাহারা সকলে চুর্ণ হইয়া গেল।
13. কিন্তু অমৎসিয় আপনার সঙ্গে যুদ্ধযাত্রা করিতে না দিয়া যে সৈন্যদল ফিরিয়া পাঠাইয়াছিলেন, সেই দলের লোকেরা শমরিয়া অবধি বৈৎহোরোণ পর্য্যন্ত যিহূদার নগর সকল আক্রমণ করিয়া তাহাদের তিন সহস্র লোককে আঘাত করিল, এবং প্রচুর লুটদ্রব্য গ্রহণ করিল।
14. ইদোমীয়দিগকে সংহার করিয়া ফিরিয়া আসিবার পর অমৎসিয় সেয়ীর-সন্তানগণের দেবগণকে সঙ্গে করিয়া আনিলেন, আপনার দেবতা বলিয়া তাহাদিগকে স্থাপন করিলেন, এবং তাহাদের কাছে প্রণিপাত করিতে ও তাহাদের উদ্দেশে ধূপ জ্বালাইতে লাগিলেন।
15. তাহাতে অমৎসিয়ের প্রতি সদাপ্রভুর ক্রোধ প্রজ্বলিত হইল, তিনি তাঁহার নিকটে এক জন ভাববাদীকে পাঠাইলেন; ভাববাদী তাঁহাকে কহিলেন, ঐ লোকদের যে দেবগণ আপনার হস্ত হইতে আপন প্রজাদিগকে উদ্ধার করে নাই, আপনি তাহাদের অন্বেষণ কেন করিয়াছেন?
16. তিনি এই কথা কহিলে রাজা তাঁহাকে কহিলেন, আমরা কি তোমাকে রাজমন্ত্রিপদে নিযুক্ত করিয়াছি? ক্ষান্ত হও, কেন মার খাইবে? তখন সেই ভাববাদী ক্ষান্ত হইলেন, তথাপি কহিলেন, আমি জানি, ঈশ্বর আপনাকে বিনষ্ট করিবার সঙ্কল্প করিয়াছেন, কেননা আপনি এই কার্য্য করিয়াছেন, আর আমার পরামর্শে কাণ দেন নাই।
17. পরে যিহূদার অমৎসিয় রাজা মন্ত্রণা গ্রহণ করিয়া যেহূর পৌত্র যিহোয়াহসের পুত্র ইস্রায়েল-রাজ যোয়াশের নিকটে বলিয়া পাঠাইলেন, আইস, আমরা পরস্পর মুখ দেখাদেখি করি।
18. তখন ইস্রায়েল-রাজ যোয়াশ যিহূদা-রাজ অমৎসিয়ের নিকটে লোক পাঠাইয়া কহিলেন, লিবানোনস্থ শিয়ালকাঁটা লিবানোনস্থ এরস বৃক্ষের নিকটে বলিয়া পাঠাইল, আমার পুত্রের সহিত তোমার কন্যার বিবাহ দেও; ইতিমধ্যে লিবানোনস্থ এক বন্য পশু চলিতে চলিতে সেই শিয়ালকাঁটা দলাইয়া ফেলিল।
19. তুমি কহিতেছ, দেখ, আমি ইদোমকে আঘাত করিয়াছি; এই জন্য দর্প করিতে তোমার চিত্ত গর্ব্বিত হইয়াছে; তুমি এখন ঘরে বসিয়া থাক, অমঙ্গলের সহিত বিরোধ করিতে কেন প্রবৃত্ত হইবে? এবং তুমি ও যিহূদা, উভয়ে কেন পতিত হইবে?
20. কিন্তু অমৎসিয় কথা শুনিলেন না, কারণ লোকেরা ইদোমীয় দেবগণের অন্বেষণ করিয়াছিল বলিয়া তাহারা যেন শত্রুহস্তগত হয়, তজ্জন্য ঈশ্বর হইতে এই ঘটনা হইল।
21. পরে ইস্রায়েল-রাজ যোয়াশ যুদ্ধযাত্রা করিলেন, এবং যিহূদার অধিকারস্থ বৈৎ-শেমশে তিনি ও যিহূদার অমৎসিয় রাজা পরস্পর মুখ দেখাদেখি করিলেন।
22. তখন ইস্রায়েলের সম্মুখে যিহূদা পরাজিত হইল, আর প্রত্যেক জন আপন আপন তাম্বুতে পলায়ন করিল।
23. আর ইস্রায়েল-রাজ যোয়াশ বৈৎ-শেমশে যিহোয়াহসের পৌত্র যোয়াশের পুত্র যিহূদা-রাজ অমৎসিয়কে ধরিয়া লইয়া যিরূশালেমে আনিলেন, এবং ইফ্রয়িমের দ্বার হইতে কোণের দ্বার পর্য্যন্ত যিরূশালেমের চারি শত হস্ত প্রাচীর ভাঙ্গিয়া ফেলিলেন।
24. আর ঈশ্বরের গৃহে ওবেদ-ইদোমের অধীনে যে সকল স্বর্ণ, রৌপ্য ও পাত্র পাওয়া গিয়াছিল, সে সমস্ত এবং রাজবাটীর ধন সম্পত্তি ও বন্ধকরূপে কতকগুলি মনুষ্যকে লইয়া শমরিয়াতে ফিরিয়া গেলেন।
25. ইস্রায়েল-রাজ যিহোয়াহসের পুত্র যোয়াশের মৃত্যুর পরে যিহূদা-রাজ যোয়াশের পুত্র অমৎসিয় আর পনের বৎসর জীবিত থাকিলেন।
26. অমৎসিয়ের অবশিষ্ট কর্ম্মের বৃত্তান্ত আদ্যোপান্ত, দেখ, যিহূদার ও ইস্রায়েলের রাজগণের ইতিহাস-পুস্তকে কি লিখিত নাই?
27. অমৎসিয় সদাপ্রভুর অনুগমন হইতে বিমুখ হইলে পর লোকেরা যিরূশালেমে তাঁহার বিরুদ্ধে চক্রান্ত করিল, তাহাতে তিনি লাখীশে পলায়ন করিলেন; কিন্তু তাহারা তাঁহার পশ্চাতে পশ্চাতে লাখীশে লোক পাঠাইয়া সেখানে তাঁহাকে বধ করাইল।
28. পরে অশ্বপৃষ্ঠে করিয়া তাঁহাকে আনিয়া যিহূদার নগরে তাঁহার পিতৃলোকদের সহিত তাঁহার কবর দিল।