যোশুয়া অধ্যায় 10
1. যিরূশালেমের রাজা অদোনী-ষেদক যখন শুনিলেন, যিহোশূয় অয় হস্তগত করিয়া নিঃশেষে বিনষ্ট করিয়াছেন, যিরীহো ও তথাকার রাজার প্রতি যেমন করিয়াছিলেন, অয়ের ও তথাকার রাজার প্রতিও তদ্রূপ করিয়াছেন, এবং গিবিয়োন-নিবাসীরা ইস্রায়েলের সহিত সন্ধি করিয়া তাহাদের মধ্যবর্ত্তী হইয়াছে;
2. তখন লোকেরা অতিশয় ভীত হইল, কেননা গিবিয়োন নগর রাজধানীর ন্যায় বৃহৎ এবং অয় অপেক্ষাও বড়, আর তথাকার সমস্ত লোক বলবান ছিল।
3. আর যিরূশালেমের রাজা অদোনী-ষেদক হিব্রোণের রাজা হোহমের, যর্মুতের রাজা পিরামের, লাখীশের রাজা যাফিয়ের ও ইগ্লোনের রাজা দবীরের নিকটে দূত পাঠাইয়া এই কথা কহিলেন;
4. আমার কাছে উঠিয়া আইসুন, আমার সাহায্য করুন, চলুন আমরা গিবিয়োনীয়দিগকে আঘাত করি; কেননা তাহারা যিহোশূয়ের ও ইস্রায়েল-সন্তানগণের সহিত সন্ধি করিয়াছে।
5. অতএব ইমোরীয়দের ঐ পাঁচ রাজা, অর্থাৎ যিরূশালেমের রাজা, হিব্রোণের রাজা, যর্মূতের রাজা, লাখীশের রাজা ও ইগ্লোনের রাজা আপন আপন সমস্ত সৈন্যের সহিত একত্র হইলেন, এবং উঠিয়া গিয়া গিবিয়োনের সম্মুখে শিবির স্থাপন করিয়া তাহার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করিলেন।
6. তাহাতে গিবিয়োনীয়েরা গিল্গলস্থিত শিবিরে যিহোশূয়ের নিকটে লোক পাঠাইয়া কহিল, আপনার এই দাসদের প্রতি হস্ত শিথিল করিবেন না, ত্বরায় আসিয়া আমাদের নিস্তার ও সাহায্য করুন, কেননা পর্ব্বতময় প্রদেশনিবাসী ইমোরীয়দের সমস্ত রাজা আমাদের বিরুদ্ধে একত্র হইয়াছেন।
7. তখন যিহোশূয় সমস্ত যোদ্ধা ও সমস্ত বলবান বীর সঙ্গে লইয়া গিল্গল হইতে যাত্রা করিলেন।
8. তখন সদাপ্রভু যিহোশূয়কে কহিলেন, তুমি তাহাদিগকে ভয় করিও না; কেননা আমি তোমার হস্তে তাহাদিগকে সমর্পণ করিয়াছি, তাহাদের কেহ তোমার সম্মুখে দাঁড়াইতে পারিবে না।
9. পরে যিহোশূয় হঠাৎ তাহাদের নিকটে উপস্থিত হইলেন; তিনি সমস্ত রাত্রি গিল্গল হইতে উপরের দিকে উঠিতেছিলেন।
10. তখন সদাপ্রভু ইস্রায়েলের সাক্ষাতে তাহাদিগকে ক্ষুব্ধ করিলেন, তাহাতে তিনি গিবিয়োনে মহাসংহারে তাহাদিগকে সংহার করিয়া বৈৎহোরোণের আরোহণ-পথ দিয়া তাহাদিগকে তাড়না করিলেন, এবং অসেকা ও মক্কেদা পর্য্যন্ত তাহাদিগকে আঘাত করিলেন।
11. আর ইস্রায়েলের সম্মুখ হইতে পলায়নকালে যখন তাহারা বৈৎহোরোণের অবরোহণ পথে ছিল, তখন সদাপ্রভু অসেকা পর্য্যন্ত আকাশ হইতে তাহাদের উপরে মহাশিলা বর্ষাইলেন, তাহাতে তাহারা মারা পড়িল; ইস্রায়েল-সন্তানগণ যাহাদিগকে খড়গ দ্বারা বধ করিল, তদপেক্ষা অধিক লোক শিলাপাতে মরিল।
12. তৎকালে যে দিন সদাপ্রভু ইস্রায়েল-সন্তানগণের সম্মুখে ইমোরীয়দিগকে সমর্পণ করেন, সেই দিন যিহোশূয় সদাপ্রভুর কাছে নিবেদন করিলেন; আর তিনি ইস্রায়েলের সাক্ষাতে কহিলেন, সূর্য্য, তুমি স্থগিত হও গিবিয়োনে, আর চন্দ্র, তুমি অয়ালোন তলভূমিতে।
13. তখন সূর্য্য স্থগিত হইল, ও চন্দ্র স্থির থাকিল, যাবৎ সেই জাতি শত্রুদিগের প্রতিশোধ না লইল। এই কথা কি যাশের গ্রন্থে লিখিত নাই? আর আকাশের মধ্যস্থানে সূর্য্য স্থির থাকিল, অস্তগমন করিতে প্রায় সম্পূর্ণ এক দিবস ত্বরা করিল না।
14. তাহার পূর্ব্বে কি পরে সদাপ্রভু যে মনুষ্যের রবে এইরূপ কর্ণপাত করিলেন, এমন আর কোন দিন হয় নাই; কেননা সদাপ্রভু ইস্রায়েলের পক্ষে যুদ্ধ করিতেছিলেন।
15. পরে যিহোশূয় সমস্ত ইস্রায়েলকে সঙ্গে লইয়া গিল্গলস্থ শিবিরে ফিরিয়া আসিলেন।
16. আর ঐ পাঁচ রাজা পলায়ন করিয়া মক্কেদার গুহাতে লুকাইয়াছিলেন।
17. পরে সেই পাঁচ রাজাকে মক্কেদার গুহাতে লুক্কায়িত পাওয়া গিয়াছে, এই সংবাদ যিহোশূয়কে দেওয়া হইল।
18. যিহোশূয় কহিলেন, তোমরা সেই গুহার মুখে কয়েকখানা বড় বড় পাথর গড়াইয়া দিয়া সেগুলি রক্ষা করিবার জন্য তথায় লোক নিযুক্ত কর,
19. কিন্তু আপনারা বিলম্ব করিও না, শত্রগণের পশ্চাতে ধাবমান হও, ও তাহাদের সৈন্যের পশ্চাদ্ভাগে আঘাত কর, তাহাদিগকে আপন আপন নগরে প্রবেশ করিতে দিও না; কেননা তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু তাহাদিগকে তোমাদের হস্তে সমর্পণ করিয়াছেন।
20. পরে যিহোশূয় ও ইস্রায়েল-সন্তানগণ তাহাদের সর্ব্বনাশ পর্য্যন্ত মহাসংহারে তাহাদিগকে সংহার করিলেন, উহাদের কতিপয় মাত্র অবশিষ্ট লোক পলাইয়া প্রাচীর-বেষ্টিত কোন কোন নগরে প্রবেশ করিল।
21. পরে সমস্ত লোক মক্কেদায় যিহোশূয়ের নিকটে শিবিরে কুশলে ফিরিয়া আসিল; ইস্রায়েল-সন্তানগণের মধ্যে কাহারো বিরুদ্ধে কেহ জিহ্বা দোলাইল না।
22. পরে যিহোশূয় বলিলেন, তোমরা ঐ গুহার মুখ খুল, এবং তথা হইতে সেই পাঁচ জন রাজাকে বাহির করিয়া আমার নিকটে আন।
23. তাহারা সেইরূপ করিল, ফলতঃ যিরূশালেমের রাজা, হিব্রোণের রাজা, যর্মূতের রাজা, লাখীশের রাজা ও ইগ্লোনের রাজা, এই পাঁচ জন রাজাকে সেই গুহা হইতে বাহির করিয়া তাঁহার নিকটে আনিল।
24. এইরূপে তাহারা ঐ রাজগণকে যিহোশূয়ের নিকটে আনিলে পর যিহোশূয় ইস্রায়েলের সমস্ত পুরুষকে ডাকিলেন, এবং যাহারা তাঁহার সঙ্গে যুদ্ধে গিয়াছিল, তাহাদের অধ্যক্ষদিগকে বলিলেন, তোমরা কাছে আইস, এই রাজগণের ঘাড়ে পা দেও; তাহাতে তাহারা নিকটে আসিয়া তাহাদের ঘাড়ে পা দিল।
25. আর যিহোশূয় তাহাদিগকে কহিলেন, ভীত ও নিরাশ হইও না, বলবান হও, ও সাহস কর; কেননা তোমরা যে শত্রুগণের সহিত যুদ্ধ করিবে, তাহাদের সকলের প্রতি সদাপ্রভু এইরূপ করিবেন।
26. তৎপরে যিহোশূয় আঘাত করিয়া সেই পাঁচ জন রাজাকে বধ করিলেন, ও পাঁচটা গাছে টাঙ্গাইয়া দিলেন; তাহাতে তাঁহারা সন্ধ্যাকাল পর্য্যন্ত গাছে টাঙ্গান রহিলেন।
27. পরে সূর্য্যাস্ত সময়ে লোকেরা যিহোশূয়ের আজ্ঞাতে তাঁহাদিগকে গাছ হইতে নামাইয়া, যে গুহাতে তাঁহারা লুকাইয়াছিলেন, সেই গুহায় নিক্ষেপ করিল, ও গুহার মুখে কয়েকখানা বড় বড় পাথর দিয়া রাখিল; তাহা অদ্যাপি রহিয়াছে।
28. আর সেই দিবসে যিহোশূয় মক্কেদা হস্তগত করিলেন, এবং মক্কেদা ও তথাকার রাজাকে খড়গধারে আঘাত করিলেন; তথাকার সমস্ত প্রাণীকে নিঃশেষে বিনষ্ট করিলেন, কাহাকেও অবশিষ্ট রাখিলেন না; যেমন যিরীহোর রাজার প্রতি করিয়াছিলেন, মক্কেদার রাজার প্রতিও তদ্রূপ করিলেন।
29. পরে যিহোশূয় সমস্ত ইস্রায়েলকে সঙ্গে করিয়া মক্কেদা হইতে লিব্নাতে গিয়া লিব্নার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করিলেন।
30. তাহাতে সদাপ্রভু লিব্না ও তথাকার রাজাকে ইস্রায়েলের হস্তে সমর্পণ করিলেন; তাহারা লিব্না ও তথাকার সমস্ত প্রাণীকে খড়গধারে আঘাত করিল, তাহার মধ্যে কাহাকেও অবশিষ্ট রাখিল না; যেমন যিরীহোর রাজার প্রতি করিয়াছিল, তথাকার রাজার প্রতিও তদ্রূপ করিল।
31. পরে যিহোশূয় সমস্ত ইস্রায়েলকে সঙ্গে লইয়া লিব্না হইতে লাখীশে গিয়া তাহার বিরুদ্ধে শিবির স্থাপন করিয়া যুদ্ধ করিলেন।
32. আর সদাপ্রভু লাখীশকে ইস্রায়েলের হস্তে সমর্পণ করিলেন, ও তাহারা দ্বিতীয় দিবসে তাহা হস্তগত করিয়া যেমন লিব্নার প্রতি করিয়াছিল, তদ্রূপ লাখীশ ও তথাকার সমস্ত প্রাণীকে খড়গধারে আঘাত করিল।
33. তৎকালে গেষরের রাজা হোরম লাখীশের সহায়তা করিতে আসিয়াছিলেন; আর যিহোশূয় তাঁহাকে ও তাঁহার লোকদিগকে আঘাত করিলেন; তাঁহার কাহাকেও অবশিষ্ট রাখিলেন না।
34. পরে যিহোশূয় সমস্ত ইস্রায়েলকে সঙ্গে লইয়া লাখীশ হইতে ইগ্লোনে যাত্রা করিলেন, আর তাহারা সেই স্থানের সম্মুখে শিবির স্থাপন করিয়া তাহার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করিল।
35. আর সেই দিন তাহা হস্তগত করিয়া, যেমন লাখীশের প্রতি করিয়াছিল, তদ্রূপ খড়গধারে তাহা আঘাত করিয়া সেই দিন তথাকার সমস্ত প্রাণীকে নিঃশেষে বিনষ্ট করিল।
36. পরে যিহোশূয় সমস্ত ইস্রায়েলকে সঙ্গে লইয়া ইগ্লোন হইতে হিব্রোণে যাত্রা করিলেন, আর তাহারা তাহার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করিল।
37. আর তাহা হস্তগত করিয়া সেই নগর ও তথাকার রাজাকে ও অধীন নগর সকলকে ও সমস্ত প্রাণীকে খড়গধারে আঘাত করিল; যেমন তিনি ইগ্লোনের প্রতি করিয়াছিলেন, সেইরূপ কাহাকেও অবশিষ্ট রাখিলেন না; হিব্রোণ ও তথাকার সমস্ত প্রাণীকে নিঃশেষে বিনষ্ট করিলেন।
38. পরে যিহোশূয় ফিরিয়া সমস্ত ইস্রায়েলকে সঙ্গে লইয়া দবীরে আসিয়া তাহার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করিলেন।
39. আর সেই নগর ও তথাকার রাজাকে ও অধীন নগর সকল হস্তগত করিলেন; এবং তাহারা খড়গধারে আঘাত করিয়া তথাকার সমস্ত প্রাণীকে নিঃশেষে বিনষ্ট করিল; তিনি কাহাকেও অবশিষ্ট রাখিলেন না; যেমন তিনি হিব্রোণের প্রতি এবং লিব্নার ও তথাকার রাজার প্রতি করিয়াছিলেন, দবীরের ও তথাকার রাজার প্রতিও তদ্রূপ করিলেন।
40. এইরূপে যিহোশূয় সমস্ত দেশ, পর্ব্বতময় প্রদেশ, দক্ষিণ অঞ্চল, নিম্নভূমি ও পর্ব্বত-পার্শ্ব, এবং সেই সকল অঞ্চলের সমস্ত রাজাকে আঘাত করিলেন, কাহাকেও অবশিষ্ট রাখিলেন না; তিনি ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভুর আজ্ঞানুসারে শ্বাসবিশিষ্ট সকলকেই নিঃশেষে বিনষ্ট করিলেন।
41. এইরূপে যিহোশূয় কাদেশবর্ণেয় হইতে ঘসা পর্য্যন্ত তাহাদিগকে এবং গিবিয়োন পর্য্যন্ত গোশনের সমস্ত দেশকে আঘাত করিলেন।
42. যিহোশূয় এই সমস্ত দেশ ও রাজগণকে এক কালেই হস্তগত করিলেন, কারণ ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভু ইস্রায়েলের পক্ষে যুদ্ধ করিতেছিলেন।
43. পরে যিহোশূয় সমস্ত ইস্রায়েলকে সঙ্গে লইয়া গিল্গলস্থিত শিবিরে ফিরিয়া আসিলেন।