পবিত্র বাইবেল

বাইবেল সোসাইটি অফ ইন্ডিয়া (BSI)
রাজাবলি ১

রাজাবলি ১ অধ্যায় 2

1 পরে দায়ূদের মরণকাল সন্নিকট হইল; আর তিনি আপন পুত্র শলোমনকে আদেশ দিয়া কহিলেন, 2 সমস্ত মর্ত্ত্যলোকের যে পথ, আমি সেই পথে গমন করিতেছি; তুমি বলবান হও ও পুরুষত্ব প্রকাশ কর। 3 আর আপন ঈশ্বর সদাপ্রভুর রক্ষণীয় বিধান রক্ষা করিয়া তাঁহার পথে চল, মোশির ব্যবস্থায় লিখিত তাঁহার বিধি, তাঁহার আজ্ঞা, তাঁহার শাসন ও তাঁহার সাক্ষ্য সকল পালন কর; যেন তুমি যে কোন কার্য্য কর, ও যে কোন দিকে ফির, বুদ্ধিপূর্ব্বক চলিতে পার; 4 আর যেন, সদাপ্রভু আমার সম্বন্ধে যে বাক্য বলিয়াছেন, তাহা সংস্থাপন করেন; তিনি বলিয়াছেন, তোমার সন্তানেরা যদি সমস্ত অন্তঃকরণের ও সমস্ত প্রাণের সহিত আমার সম্মুখে সত্য আচরণ করিতে আপনাদের পথে সাবধানে চলে, তবে—তিনি বলেন,—ইস্রায়েলের সিংহাসনে তোমার *বংশে লোকের অভাব হইবে না। 5 আর সরূয়ার পুত্র যোয়াব আমার প্রতি যাহা করিয়াছে, ফলতঃ ইস্রায়েলের দুই সেনাপতির প্রতি, নেরের পুত্র অব্‌নেরের ও যেথরের পুত্র অমাসার প্রতি যাহা করিয়াছে, তাহাও তুমি জ্ঞাত আছ; সে তাহাদিগকে মারিয়া ফেলিয়া শান্তির সময়ে যুদ্ধের রক্তপাত করিয়াছে, এবং যুদ্ধের রক্ত তাহার কটিদেশস্থ পটুকাতে ও পাদস্থিত পাদুকাতে লাগিয়াছে। 6 অতএব তুমি বুদ্ধিসহকারে তাহার প্রতি ব্যবহার করিবে; তাহাকে পক্ব কেশে শান্তিতে পাতালে নামিতে দিও না। 7 কিন্তু গিলিয়দীয় বর্সিল্লয়ের পুত্রগণের প্রতি সদয় ব্যবহার করিও, এবং তোমার মেজে ভোজনকারী লোকদের মধ্যে তাহাদিগকে স্থান দিও; কেননা তোমার ভ্রাতা অবশালোমের সম্মুখ হইতে আমার পলায়নকালে তাহারা তদ্রূপে আমার কাছে আসিয়াছিল। 8 আর দেখ, তোমার কাছে বিন্যামীনীয় গেরার পুত্র বহুরীম-নিবাসী শিমিয়ি আছে; আমার মহনয়িমে যাইবার দিন সেই ব্যক্তি আমাকে নিদারুণ শাপ দিয়াছিল; কিন্তু সে আমার সহিত সাক্ষাৎ করিতে যর্দ্দনে আসিয়াছিল, আর আমি সদাপ্রভুর দিব্য করিয়া তাহাকে বলিয়াছিলাম, আমি তোমাকে খড়্‌গ দ্বারা বধ করিব না। 9 কিন্তু তুমি এখন তাহাকে নিরপরাধ জ্ঞান করিবে না; কেননা তুমি বুদ্ধিমান; তাহার প্রতি তোমার যাহা কর্ত্তব্য, তাহা বুঝিবে; তাহাকে পক্ব কেশে রক্তের সহিত পাতালে নামাইবে। 10 পরে দায়ূদ আপন পিতৃলোকদের সহিত নিদ্রাগত এবং দায়ূদ-নগরে কবরপ্রাপ্ত হইলেন। 11 দায়ূদ ইস্রায়েলের উপরে চল্লিশ বৎসর রাজত্ব করেন; তিনি হিব্রোণে সাত বৎসর রাজত্ব করেন ও যিরূশালেমে তেত্রিশ বৎসর রাজত্ব করেন। 12 পরে শলোমন আপন পিতা দায়ূদের সিংহাসনে বসিলেন, এবং তাঁহার রাজ্য অতিশয় দৃঢ় হইল। 13 পরে হগীতের পুত্র আদোনিয় শলোমনের মাতা বৎশেবার নিকটে গেল। তিনি জিজ্ঞাসা করিলেন, তুমি শান্তিভাবে আসিয়াছ ত? সে উত্তর করিল, শান্তিভাবে। 14 সে আরও কহিল, আপনার কাছে আমার কিছু বলিবার আছে। বৎশেবা কহিলেন, বল। 15 সে কহিল, আপনি জানেন, রাজ্য আমারই ছিল, এবং আমি রাজা হইব বলিয়া সমস্ত ইস্রায়েল আমার প্রতি উন্মুখ হইয়াছিল; কিন্তু রাজত্ব ঘূরিয়া গেল, আমার ভ্রাতার হইল; কেননা তাহা সদাপ্রভু হইতেই তাহার হইল। 16 এখন আমি আপনার কাছে একটী বিষয় যাচ্ঞা করি, আপনি আমাকে অস্বীকার করিবেন না। 17 তিনি কহিলেন, বল। তখন আদোনিয় কহিল, অনুগ্রহ করিয়া শলোমন রাজাকে বলুন—তিনি ত আপনার কথা অস্বীকার করিবেন না,—তিনি যেন আমার সহিত শূনেমীয়া অবীশগের বিবাহ দেন। 18 বৎশেবা কহিলেন, ভাল, আমি তোমার নিমিত্ত রাজাকে বলিব। 19 পরে বৎশেবা আদোনিয়ের জন্য বলিতে শলোমন রাজার নিকটে গেলেন; আর রাজা তাঁহার সম্মুখে উঠিয়া তাঁহার কাছে প্রণিপাত করিলেন। পরে তিনি আপন সিংহাসনে বসিলেন, এবং রাজমাতার কারণ আসন স্থাপন করাইলে তিনিও তাঁহার দক্ষিণদিকে বসিলেন। 20 আর তিনি কহিলেন, আমি তোমার কাছে একটী ক্ষুদ্র বিষয় যাচ্ঞা করি, আমার কথা অস্বীকার করিও না। রাজা কহিলেন, মাতা, যাচ্ঞা কর, আমি তোমার কথা অস্বীকার করিব না। 21 তখন তিনি কহিলেন, তোমার ভ্রাতা আদোনিয়ের সহিত শূনেমীয়া অবীশগের বিবাহ দিতে হইবে। 22 শলোমন রাজা উত্তর করিয়া মাতাকে কহিলেন, তুমি আদোনিয়ের নিমিত্ত শূনেমীয়া অবীশগকে কেনা যাচ্ঞা কর? তাহার নিমিত্ত রাজ্যও যাচ্ঞা কর, কেননা সে আমার জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা; তাহার ও অবিয়াথর যাজকের ও সরূয়ার পুত্র যোয়াবের নিমিত্ত *রাজ্য যাচ্ঞা কর 23 পরে শলোমন রাজা সদাপ্রভুর দিব্য করিয়া কহিলেন, আদোনিয় যদি নিজ প্রাণের বিরুদ্ধে এই কথা বলিয়া না থাকে, তবে ঈশ্বর আমাকে অমুক ও ততোধিক দণ্ড দিউন। 24 আর এখন যিনি আপন প্রতিজ্ঞানুসারে আমাকে সুস্থির করিয়া আমার পিতা দায়ূদের সিংহাসনে বসাইয়াছেন ও আমার জন্য কুল নির্ম্মাণ করিয়াছেন, সেই জীবন্ত সদাপ্রভুর দিব্য, অদ্যই আদোনিয়ের প্রাণদণ্ড হইবে। 25 তখন শলোমন রাজা যিহোয়াদার পুত্র বনায়কে প্রেরণ করিলে তিনি তাহাকে আক্রমণ করিয়া বধ করিলেন। 26 পরে রাজা অবিয়াথর যাজককে কহিলেন, তুমি অনাথোতে আপন ক্ষেত্রে যাও, কেননা তুমিও মৃত্যুর পাত্র; তথাপি আমি অদ্য তোমার প্রাণদণ্ড করিব না, কারণ তুমি আমার পিতা দায়ূদের সম্মুখে প্রভু সদাপ্রভুর সিন্দুক বহন করিয়াছিলে, এবং আমার পিতার সমস্ত দুঃখভোগে দুঃখভোগ করিয়াছিলে। 27 এইরূপে শলোমন অবিয়াথরকে সদাপ্রভুর যাজকের পদ হইতে দূর করিয়া দিলেন; ইহাতে সদাপ্রভুর বাক্য, —শীলোতে এলির কুলের বিপক্ষে তিনি যাহা বলিয়াছিলেন, —তাহা সিদ্ধ হইল। 28 পরে সেই ঘটনার বার্ত্তা যোয়াবের কাছে উপস্থিত হইল; যোয়াব যদ্যপি অবশালোমের অনুবর্ত্তী হন নাই, তথাপি আদোনিয়ের অনুবর্ত্তী হইয়াছিলেন। এখন যোয়াব সদাপ্রভুর তাম্বুতে পলায়ন করিয়া যজ্ঞবেদির শৃঙ্গ ধরিলেন। 29 পরে শলোমন রাজার কাছে এই সংবাদ আসিল যে, যোয়াব সদাপ্রভুর তাম্বুতে পলায়ন করিয়াছেন, আর দেখুন, তিনি বেদির পার্শ্বে আছেন। তাহাতে শলোমন যিহোয়াদার পুত্র বনায়কে প্রেরণ করিলেন, কহিলেন, যাও, তাহাকে আক্রমণ কর। 30 তাহাতে বনায় সদাপ্রভুর তাম্বুতে গমন করিয়া তাঁহাকে কহিলেন, রাজা এই কথা বলেন, তুমি বাহিরে আইস। তিনি কহিলেন, তাহা হইবে না, আমি এই স্থানে মরিব। তখন বনায় রাজাকে সংবাদ জানাইয়া কহিলেন, যোয়াব অমুক কথা বলিয়াছেন, এবং আমাকে অমুক উত্তর দিয়াছেন। 31 তখন রাজা কহিলেন, সে যাহা বলিয়াছে, সেই মত কর, তাহাকে আক্রমণ কর, আর তাহার কবর দেও; তাহা হইলে, যোয়াব অকারণে যে রক্তপাত করিয়াছে, তাহার অপরাধ তুমি আমার পক্ষ হইতে ও আমার পিতৃকুল হইতে দূর করিবে। 32 আর সদাপ্রভু তাহার রক্তপাতের অপরাধ তাহারই মস্তকে বর্ত্তাইবেন; কেননা সে আমার পিতা দায়ূদের অজ্ঞাতসারে আপনা হইতে ধার্ম্মিক ও সৎ দুই ব্যক্তিকে, ইস্রায়েলের সেনাপতি নেরের পুত্র অব্‌নেরকে, ও যিহূদার সেনাপতি যেথরের পুত্র অমাসাকে আক্রমণ করিয়া খড়্‌গ দ্বারা বধ করিয়াছিল। 33 তাহাদের রক্তপাতের অপরাধ যোয়াবের মস্তকে ও যুগে যুগে তাহার বংশের মস্তকে বর্ত্তিবে; কিন্তু দায়ূদের, তাঁহার বংশের, তাঁহার কুলের ও তাঁহার সিংহাসনের প্রতি সদাপ্রভু হইতে যুগে যুগে শান্তি বর্ত্তিবে। 34 তখন যিহোয়াদার পুত্র বনায় উঠিয়া গিয়া তাঁহাকে আক্রমণ করিয়া বধ করিলেন; পরে প্রান্তরে তাঁহার বাটীতে তাঁহাকে কবর দেওয়া হইল। 35 আর রাজা তাঁহার পদে যিহোয়াদার পুত্র বনায়কে সেনাপতি করিলেন, এবং অবিয়াথরের পদ রাজা সাদোক যাজককে দিলেন। 36 আর রাজা লোক পাঠাইয়া শিমিয়িকে ডাকাইয়া কহিলেন, তুমি যিরূশালেমে আপনার জন্য এক গৃহ নির্ম্মাণ করিয়া এই স্থানে বাস কর, এখান হইতে বাহির হইয়া অন্য কোন স্থানে যাইও না। 37 তুমি যে দিন বাহির হইয়া কিদ্রোণ স্রোত পার হইবে, সেই দিন অবশ্য হত হইবে; এই নিশ্চয় জ্ঞাত হও; তোমার রক্তপাতের অপরাধ তোমারই মস্তকে বর্ত্তিবে। 38 তাহাতে শিমিয়ি রাজাকে কহিল, এ কথা ভাল; আমার প্রভু মহারাজ যেমন কহিলেন, আপনার এই দাস সেইরূপই করিবে। পরে শিমিয়ি অনেক দিন পর্য্যন্ত যিরূশালেমে বাস করিল। 39 কিন্তু তিন বৎসর পরে শিমিয়ির দুই দাস পলায়ন করিয়া মাখার পুত্র আখীশ নামে গাতীয় রাজার নিকটে গেল। তাহাতে কেহ শিমিয়িকে বলিল, দেখ, তোমার দাসেরা গাতে রহিয়াছে। 40 তখন শিমিয়ি উঠিয়া গর্দ্দভ সাজাইয়া আপন দাসদের অন্বেষণে গাতে আখীশের নিকটে গেল, গিয়া শিমিয়ি গাৎ হইতে আপন দাসদিগকে আনিল। 41 পরে শলোমনকে কেহ সংবাদ দিল, শিমিয়ি যিরূশালেম হইতে গাতে গিয়াছিল, এখন ফিরিয়া আসিয়াছে। 42 রাজা লোক পাঠাইয়া শিমিয়িকে ডাকাইয়া কহিলেন, আমি কি তোমাকে সদাপ্রভুর দিব্য করাইয়া তোমার বিপক্ষে এই সাক্ষ্য দিই নাই যে, নিশ্চয় জ্ঞাত হও, তুমি যে দিন বাহিরে যাইবে, স্থানান্তরে ভ্রমণ করিবে, সেই দিন মরিবেই মরিবে? আর তুমি আমাকে বলিয়াছিলে, আমি যে কথা শুনিলাম, সে ভাল কথা। 43 তবে তুমি সদাপ্রভুর দিব্য ও তোমাকে দত্ত আমার আজ্ঞা কেন পালন কর নাই? 44 রাজা শিমিয়িকে আরও কহিলেন, আমার পিতা দায়ূদের প্রতি তোমার কৃত যে সমস্ত দুষ্টতার বিষয়ে তোমার মন সাক্ষ্য দেয়, তাহা তুমি জান; অতএব সদাপ্রভু তোমার দুষ্টতার ফল তোমার মস্তকে বর্ত্তাইবেন। 45 কিন্তু শলোমন রাজা আশীর্ব্বাদপ্রাপ্ত হইবে, ও সদাপ্রভুর সম্মুখে দায়ূদের সিংহাসন যুগে যুগে স্থির থাকিবে। 46 পরে রাজা যিহোয়াদার পুত্র বনায়কে আজ্ঞা করিলে তিনি গিয়া তাহাকে আক্রমণ করিয়া বধ করিলেন। আর শলোমনের হস্তে রাজ্য সুস্থির হইল।
1. পরে দায়ূদের মরণকাল সন্নিকট হইল; আর তিনি আপন পুত্র শলোমনকে আদেশ দিয়া কহিলেন, 2. সমস্ত মর্ত্ত্যলোকের যে পথ, আমি সেই পথে গমন করিতেছি; তুমি বলবান হও ও পুরুষত্ব প্রকাশ কর। 3. আর আপন ঈশ্বর সদাপ্রভুর রক্ষণীয় বিধান রক্ষা করিয়া তাঁহার পথে চল, মোশির ব্যবস্থায় লিখিত তাঁহার বিধি, তাঁহার আজ্ঞা, তাঁহার শাসন ও তাঁহার সাক্ষ্য সকল পালন কর; যেন তুমি যে কোন কার্য্য কর, ও যে কোন দিকে ফির, বুদ্ধিপূর্ব্বক চলিতে পার; 4. আর যেন, সদাপ্রভু আমার সম্বন্ধে যে বাক্য বলিয়াছেন, তাহা সংস্থাপন করেন; তিনি বলিয়াছেন, তোমার সন্তানেরা যদি সমস্ত অন্তঃকরণের ও সমস্ত প্রাণের সহিত আমার সম্মুখে সত্য আচরণ করিতে আপনাদের পথে সাবধানে চলে, তবে—তিনি বলেন,—ইস্রায়েলের সিংহাসনে তোমার [বংশে] লোকের অভাব হইবে না। 5. আর সরূয়ার পুত্র যোয়াব আমার প্রতি যাহা করিয়াছে, ফলতঃ ইস্রায়েলের দুই সেনাপতির প্রতি, নেরের পুত্র অব্‌নেরের ও যেথরের পুত্র অমাসার প্রতি যাহা করিয়াছে, তাহাও তুমি জ্ঞাত আছ; সে তাহাদিগকে মারিয়া ফেলিয়া শান্তির সময়ে যুদ্ধের রক্তপাত করিয়াছে, এবং যুদ্ধের রক্ত তাহার কটিদেশস্থ পটুকাতে ও পাদস্থিত পাদুকাতে লাগিয়াছে। 6. অতএব তুমি বুদ্ধিসহকারে তাহার প্রতি ব্যবহার করিবে; তাহাকে পক্ব কেশে শান্তিতে পাতালে নামিতে দিও না। 7. কিন্তু গিলিয়দীয় বর্সিল্লয়ের পুত্রগণের প্রতি সদয় ব্যবহার করিও, এবং তোমার মেজে ভোজনকারী লোকদের মধ্যে তাহাদিগকে স্থান দিও; কেননা তোমার ভ্রাতা অবশালোমের সম্মুখ হইতে আমার পলায়নকালে তাহারা তদ্রূপে আমার কাছে আসিয়াছিল। 8. আর দেখ, তোমার কাছে বিন্যামীনীয় গেরার পুত্র বহুরীম-নিবাসী শিমিয়ি আছে; আমার মহনয়িমে যাইবার দিন সেই ব্যক্তি আমাকে নিদারুণ শাপ দিয়াছিল; কিন্তু সে আমার সহিত সাক্ষাৎ করিতে যর্দ্দনে আসিয়াছিল, আর আমি সদাপ্রভুর দিব্য করিয়া তাহাকে বলিয়াছিলাম, আমি তোমাকে খড়্‌গ দ্বারা বধ করিব না। 9. কিন্তু তুমি এখন তাহাকে নিরপরাধ জ্ঞান করিবে না; কেননা তুমি বুদ্ধিমান; তাহার প্রতি তোমার যাহা কর্ত্তব্য, তাহা বুঝিবে; তাহাকে পক্ব কেশে রক্তের সহিত পাতালে নামাইবে। 10. পরে দায়ূদ আপন পিতৃলোকদের সহিত নিদ্রাগত এবং দায়ূদ-নগরে কবরপ্রাপ্ত হইলেন। 11. দায়ূদ ইস্রায়েলের উপরে চল্লিশ বৎসর রাজত্ব করেন; তিনি হিব্রোণে সাত বৎসর রাজত্ব করেন ও যিরূশালেমে তেত্রিশ বৎসর রাজত্ব করেন। 12. পরে শলোমন আপন পিতা দায়ূদের সিংহাসনে বসিলেন, এবং তাঁহার রাজ্য অতিশয় দৃঢ় হইল। 13. পরে হগীতের পুত্র আদোনিয় শলোমনের মাতা বৎশেবার নিকটে গেল। তিনি জিজ্ঞাসা করিলেন, তুমি শান্তিভাবে আসিয়াছ ত? সে উত্তর করিল, শান্তিভাবে। 14. সে আরও কহিল, আপনার কাছে আমার কিছু বলিবার আছে। বৎশেবা কহিলেন, বল। 15. সে কহিল, আপনি জানেন, রাজ্য আমারই ছিল, এবং আমি রাজা হইব বলিয়া সমস্ত ইস্রায়েল আমার প্রতি উন্মুখ হইয়াছিল; কিন্তু রাজত্ব ঘূরিয়া গেল, আমার ভ্রাতার হইল; কেননা তাহা সদাপ্রভু হইতেই তাহার হইল। 16. এখন আমি আপনার কাছে একটী বিষয় যাচ্ঞা করি, আপনি আমাকে অস্বীকার করিবেন না। 17. তিনি কহিলেন, বল। তখন আদোনিয় কহিল, অনুগ্রহ করিয়া শলোমন রাজাকে বলুন—তিনি ত আপনার কথা অস্বীকার করিবেন না,—তিনি যেন আমার সহিত শূনেমীয়া অবীশগের বিবাহ দেন। 18. বৎশেবা কহিলেন, ভাল, আমি তোমার নিমিত্ত রাজাকে বলিব। 19. পরে বৎশেবা আদোনিয়ের জন্য বলিতে শলোমন রাজার নিকটে গেলেন; আর রাজা তাঁহার সম্মুখে উঠিয়া তাঁহার কাছে প্রণিপাত করিলেন। পরে তিনি আপন সিংহাসনে বসিলেন, এবং রাজমাতার কারণ আসন স্থাপন করাইলে তিনিও তাঁহার দক্ষিণদিকে বসিলেন। 20. আর তিনি কহিলেন, আমি তোমার কাছে একটী ক্ষুদ্র বিষয় যাচ্ঞা করি, আমার কথা অস্বীকার করিও না। রাজা কহিলেন, মাতা, যাচ্ঞা কর, আমি তোমার কথা অস্বীকার করিব না। 21. তখন তিনি কহিলেন, তোমার ভ্রাতা আদোনিয়ের সহিত শূনেমীয়া অবীশগের বিবাহ দিতে হইবে। 22. শলোমন রাজা উত্তর করিয়া মাতাকে কহিলেন, তুমি আদোনিয়ের নিমিত্ত শূনেমীয়া অবীশগকে কেনা যাচ্ঞা কর? তাহার নিমিত্ত রাজ্যও যাচ্ঞা কর, কেননা সে আমার জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা; তাহার ও অবিয়াথর যাজকের ও সরূয়ার পুত্র যোয়াবের নিমিত্ত [রাজ্য যাচ্ঞা কর]। 23. পরে শলোমন রাজা সদাপ্রভুর দিব্য করিয়া কহিলেন, আদোনিয় যদি নিজ প্রাণের বিরুদ্ধে এই কথা বলিয়া না থাকে, তবে ঈশ্বর আমাকে অমুক ও ততোধিক দণ্ড দিউন। 24. আর এখন যিনি আপন প্রতিজ্ঞানুসারে আমাকে সুস্থির করিয়া আমার পিতা দায়ূদের সিংহাসনে বসাইয়াছেন ও আমার জন্য কুল নির্ম্মাণ করিয়াছেন, সেই জীবন্ত সদাপ্রভুর দিব্য, অদ্যই আদোনিয়ের প্রাণদণ্ড হইবে। 25. তখন শলোমন রাজা যিহোয়াদার পুত্র বনায়কে প্রেরণ করিলে তিনি তাহাকে আক্রমণ করিয়া বধ করিলেন। 26. পরে রাজা অবিয়াথর যাজককে কহিলেন, তুমি অনাথোতে আপন ক্ষেত্রে যাও, কেননা তুমিও মৃত্যুর পাত্র; তথাপি আমি অদ্য তোমার প্রাণদণ্ড করিব না, কারণ তুমি আমার পিতা দায়ূদের সম্মুখে প্রভু সদাপ্রভুর সিন্দুক বহন করিয়াছিলে, এবং আমার পিতার সমস্ত দুঃখভোগে দুঃখভোগ করিয়াছিলে। 27. এইরূপে শলোমন অবিয়াথরকে সদাপ্রভুর যাজকের পদ হইতে দূর করিয়া দিলেন; ইহাতে সদাপ্রভুর বাক্য, —শীলোতে এলির কুলের বিপক্ষে তিনি যাহা বলিয়াছিলেন, —তাহা সিদ্ধ হইল। 28. পরে সেই ঘটনার বার্ত্তা যোয়াবের কাছে উপস্থিত হইল; যোয়াব যদ্যপি অবশালোমের অনুবর্ত্তী হন নাই, তথাপি আদোনিয়ের অনুবর্ত্তী হইয়াছিলেন। এখন যোয়াব সদাপ্রভুর তাম্বুতে পলায়ন করিয়া যজ্ঞবেদির শৃঙ্গ ধরিলেন। 29. পরে শলোমন রাজার কাছে এই সংবাদ আসিল যে, যোয়াব সদাপ্রভুর তাম্বুতে পলায়ন করিয়াছেন, আর দেখুন, তিনি বেদির পার্শ্বে আছেন। তাহাতে শলোমন যিহোয়াদার পুত্র বনায়কে প্রেরণ করিলেন, কহিলেন, যাও, তাহাকে আক্রমণ কর। 30. তাহাতে বনায় সদাপ্রভুর তাম্বুতে গমন করিয়া তাঁহাকে কহিলেন, রাজা এই কথা বলেন, তুমি বাহিরে আইস। তিনি কহিলেন, তাহা হইবে না, আমি এই স্থানে মরিব। তখন বনায় রাজাকে সংবাদ জানাইয়া কহিলেন, যোয়াব অমুক কথা বলিয়াছেন, এবং আমাকে অমুক উত্তর দিয়াছেন। 31. তখন রাজা কহিলেন, সে যাহা বলিয়াছে, সেই মত কর, তাহাকে আক্রমণ কর, আর তাহার কবর দেও; তাহা হইলে, যোয়াব অকারণে যে রক্তপাত করিয়াছে, তাহার অপরাধ তুমি আমার পক্ষ হইতে ও আমার পিতৃকুল হইতে দূর করিবে। 32. আর সদাপ্রভু তাহার রক্তপাতের অপরাধ তাহারই মস্তকে বর্ত্তাইবেন; কেননা সে আমার পিতা দায়ূদের অজ্ঞাতসারে আপনা হইতে ধার্ম্মিক ও সৎ দুই ব্যক্তিকে, ইস্রায়েলের সেনাপতি নেরের পুত্র অব্‌নেরকে, ও যিহূদার সেনাপতি যেথরের পুত্র অমাসাকে আক্রমণ করিয়া খড়্‌গ দ্বারা বধ করিয়াছিল। 33. তাহাদের রক্তপাতের অপরাধ যোয়াবের মস্তকে ও যুগে যুগে তাহার বংশের মস্তকে বর্ত্তিবে; কিন্তু দায়ূদের, তাঁহার বংশের, তাঁহার কুলের ও তাঁহার সিংহাসনের প্রতি সদাপ্রভু হইতে যুগে যুগে শান্তি বর্ত্তিবে। 34. তখন যিহোয়াদার পুত্র বনায় উঠিয়া গিয়া তাঁহাকে আক্রমণ করিয়া বধ করিলেন; পরে প্রান্তরে তাঁহার বাটীতে তাঁহাকে কবর দেওয়া হইল। 35. আর রাজা তাঁহার পদে যিহোয়াদার পুত্র বনায়কে সেনাপতি করিলেন, এবং অবিয়াথরের পদ রাজা সাদোক যাজককে দিলেন। 36. আর রাজা লোক পাঠাইয়া শিমিয়িকে ডাকাইয়া কহিলেন, তুমি যিরূশালেমে আপনার জন্য এক গৃহ নির্ম্মাণ করিয়া এই স্থানে বাস কর, এখান হইতে বাহির হইয়া অন্য কোন স্থানে যাইও না। 37. তুমি যে দিন বাহির হইয়া কিদ্রোণ স্রোত পার হইবে, সেই দিন অবশ্য হত হইবে; এই নিশ্চয় জ্ঞাত হও; তোমার রক্তপাতের অপরাধ তোমারই মস্তকে বর্ত্তিবে। 38. তাহাতে শিমিয়ি রাজাকে কহিল, এ কথা ভাল; আমার প্রভু মহারাজ যেমন কহিলেন, আপনার এই দাস সেইরূপই করিবে। পরে শিমিয়ি অনেক দিন পর্য্যন্ত যিরূশালেমে বাস করিল। 39. কিন্তু তিন বৎসর পরে শিমিয়ির দুই দাস পলায়ন করিয়া মাখার পুত্র আখীশ নামে গাতীয় রাজার নিকটে গেল। তাহাতে কেহ শিমিয়িকে বলিল, দেখ, তোমার দাসেরা গাতে রহিয়াছে। 40. তখন শিমিয়ি উঠিয়া গর্দ্দভ সাজাইয়া আপন দাসদের অন্বেষণে গাতে আখীশের নিকটে গেল, গিয়া শিমিয়ি গাৎ হইতে আপন দাসদিগকে আনিল। 41. পরে শলোমনকে কেহ সংবাদ দিল, শিমিয়ি যিরূশালেম হইতে গাতে গিয়াছিল, এখন ফিরিয়া আসিয়াছে। 42. রাজা লোক পাঠাইয়া শিমিয়িকে ডাকাইয়া কহিলেন, আমি কি তোমাকে সদাপ্রভুর দিব্য করাইয়া তোমার বিপক্ষে এই সাক্ষ্য দিই নাই যে, নিশ্চয় জ্ঞাত হও, তুমি যে দিন বাহিরে যাইবে, স্থানান্তরে ভ্রমণ করিবে, সেই দিন মরিবেই মরিবে? আর তুমি আমাকে বলিয়াছিলে, আমি যে কথা শুনিলাম, সে ভাল কথা। 43. তবে তুমি সদাপ্রভুর দিব্য ও তোমাকে দত্ত আমার আজ্ঞা কেন পালন কর নাই? 44. রাজা শিমিয়িকে আরও কহিলেন, আমার পিতা দায়ূদের প্রতি তোমার কৃত যে সমস্ত দুষ্টতার বিষয়ে তোমার মন সাক্ষ্য দেয়, তাহা তুমি জান; অতএব সদাপ্রভু তোমার দুষ্টতার ফল তোমার মস্তকে বর্ত্তাইবেন। 45. কিন্তু শলোমন রাজা আশীর্ব্বাদপ্রাপ্ত হইবে, ও সদাপ্রভুর সম্মুখে দায়ূদের সিংহাসন যুগে যুগে স্থির থাকিবে। 46. পরে রাজা যিহোয়াদার পুত্র বনায়কে আজ্ঞা করিলে তিনি গিয়া তাহাকে আক্রমণ করিয়া বধ করিলেন। আর শলোমনের হস্তে রাজ্য সুস্থির হইল।
  • রাজাবলি ১ অধ্যায় 1  
  • রাজাবলি ১ অধ্যায় 2  
  • রাজাবলি ১ অধ্যায় 3  
  • রাজাবলি ১ অধ্যায় 4  
  • রাজাবলি ১ অধ্যায় 5  
  • রাজাবলি ১ অধ্যায় 6  
  • রাজাবলি ১ অধ্যায় 7  
  • রাজাবলি ১ অধ্যায় 8  
  • রাজাবলি ১ অধ্যায় 9  
  • রাজাবলি ১ অধ্যায় 10  
  • রাজাবলি ১ অধ্যায় 11  
  • রাজাবলি ১ অধ্যায় 12  
  • রাজাবলি ১ অধ্যায় 13  
  • রাজাবলি ১ অধ্যায় 14  
  • রাজাবলি ১ অধ্যায় 15  
  • রাজাবলি ১ অধ্যায় 16  
  • রাজাবলি ১ অধ্যায় 17  
  • রাজাবলি ১ অধ্যায় 18  
  • রাজাবলি ১ অধ্যায় 19  
  • রাজাবলি ১ অধ্যায় 20  
  • রাজাবলি ১ অধ্যায় 21  
  • রাজাবলি ১ অধ্যায় 22  
×

Alert

×

Bengali Letters Keypad References