পবিত্র বাইবেল

বাইবেল সোসাইটি অফ ইন্ডিয়া (BSI)
নেহেমিয়া

নেহেমিয়া অধ্যায় 9

1 আর ঐ মাসের চতুর্ব্বিংশ দিনে ইস্রায়েল-সন্তানগণ উপবাস, চটপরিধান ও মস্তকে মৃত্তিকা অর্পণ করিয়া একত্র হইল। 2 আর ইস্রায়েল-বংশ সমস্ত বিজাতীয় লোক হইতে আপনাদিগকে পৃথক্‌ করিল, এবং দাঁড়াইয়া আপনাদের পাপ ও আপনাদের পিতৃপুরুষদের অপরাধ স্বীকার করিল। 3 আর তাহারা আপন আপন স্থানে দাঁড়াইল ও দিনের চতুর্থাংশ পর্য্যন্ত আপনাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর ব্যবস্থা-পুস্তক পাঠ করিল, পরে দিনের *আর এক চতুর্থাংশ পর্য্যন্ত আপনাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর কাছে পাপ স্বীকার ও প্রণিপাত করিল। 4 আর যেশূয় ও বানি, কদ্‌মীয়েল, শবনিয়, বুন্নি, শেরেবিয়, বানি, কনানী, ইহারা লেবীয়দের সোপানে দাঁড়াইয়া আপনাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর কাছে উচ্চৈঃস্বরে ক্রন্দন করিল। 5 পরে যেশূয় ও কদ্‌মীয়েল, বানি, হশব্‌নিয়, শেরেবিয়, হোদিয়, শবনিয়, পথাহিয়, এই কয়েক জন লেবীয় এই কথা কহিল, উঠ; তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর ধন্যবাদ কর, যিনি অনাদিকাল হইতে অনন্তকাল পর্য্যন্ত *ধন্য । তোমার প্রতাপান্বিত নামের ধন্যবাদ হউক, যাহা যাবতীয় ধন্যবাদ ও প্রশংসার অতীত। 6 কেবলমাত্র তুমিই সদাপ্রভু; তুমি স্বর্গ ও স্বর্গের স্বর্গ এবং তাহার সমস্ত বাহিনী, পৃথিবী ও তথাকার সমস্ত এবং সমুদ্র ও তন্মধ্যস্থ সমস্ত নির্ম্মাণ করিয়াছ, আর তুমি তাহাদের সকলের স্থিতি করিতেছ, এবং স্বর্গের বাহিনী তোমার কাছে প্রণিপাত করে। 7 তুমিই সদাপ্রভু ঈশ্বর; তুমি অব্রামকে মনোনীত করিয়াছিলে, কল্‌দীয় দেশের ঊর হইতে বাহির করিয়া আনিয়াছিলে, ও তাঁহার নাম অব্রাহাম রাখিয়াছিলে; 8 এবং আপনার সাক্ষাতে তাঁহার অন্তঃকরণ বিশ্বস্ত দেখিয়া কনানীয়, হিত্তীয়, ইমোরীয়, পরিষীয়, যিবূষীয় ও গির্গাশীয়ের দেশ তাঁহার বংশকে দিবার জন্য, তাঁহার সহিত নিয়ম করিয়াছিলে, আর তুমি আপনার বাক্য অটল রাখিয়াছ, কেননা তুমি ধর্ম্মময়। 9 আর তুমি মিসরে আমাদের পিতৃপুরুষদের দুঃখ দেখিয়াছিলে, ও সূফসাগরের তীরে তাহাদের ক্রন্দন শুনিয়াছিলে; 10 এবং ফরৌণে, তাঁহার সমস্ত দাসগণে ও তাঁহার দেশের প্রজা সকলে নানা চিহ্ন ও অদ্ভুত লক্ষণ দেখাইয়াছিলে; কেননা তুমি জানিতে যে, মিস্রীয়েরা তাহাদের বিরুদ্ধে গর্ব্ব করিত; ইহাতে তুমি আপনার নাম প্রতিষ্ঠিত করিলে, যেমন অদ্য রহিয়াছে। 11 আর তুমি তাহাদের সম্মুখে সমুদ্রকে দ্বিভাগ করিলে, তাহাতে তাহারা সমুদ্রের মধ্যস্থলে শুষ্ক পথ দিয়া অগ্রসর হইল; কিন্তু প্রবল জলে যেমন প্রস্তর, তেমনি তুমি তাহাদের পশ্চাদ্ধাবনকারী লোকদিগকে অগাধ জলে নিক্ষেপ করিলে। 12 আর তুমি দিবসে মেঘস্তম্ভ দ্বারা, ও রাত্রিতে তাহাদের গন্তব্য পথে দীপ্তি দিবার জন্য অগ্নিস্তম্ভ দ্বারা তাহাদিগকে গমন করাইতে। 13 তুমি সীনয় পর্ব্বতের উপরে নামিয়া আসিলে, স্বর্গ হইতে তাহাদের সহিত কথা বলিলে, আর যথার্থ শাসন, সত্য ব্যবস্থা, উত্তম বিধি ও আজ্ঞা তাহাদিগকে দিলে; 14 এবং আপনার পবিত্র বিশ্রামবার তাহাদিগকে জ্ঞাত করিলে, এবং আপন দাস মোশি দ্বারা তাহাদিগকে আজ্ঞা, বিধি ও ব্যবস্থা দিলে; 15 আর তাহাদের ক্ষুধা নিবারণার্থে স্বর্গ হইতে তাহাদিগকে ভক্ষ্য দিলে, ও তাহাদের পিপাসা নিবারণার্থে শৈল হইতে জল বাহির করিলে; আর তুমি তাহাদিগকে যে দেশ দিবার জন্য হস্ত উত্তোলন করিয়াছিলে, তাহা অধিকার করণার্থে তথায় প্রবেশ করিতে আজ্ঞা দিলে। 16 তথাপি তাহারা ও আমাদের পিতৃপুরুষেরা গর্ব্ব করিল, আপন আপন গ্রীবা শক্ত করিল, এবং তোমার আজ্ঞায় কর্ণপাত করিল না; 17 আর তাহারা কথা শুনিতে অস্বীকার করিল, এবং তুমি তাহাদের মধ্যে যে সকল অদ্ভুত কার্য্য করিয়াছিলে, তাহা স্মরণে রাখিল না, কিন্তু আপন আপন গ্রীবা শক্ত করিল, দাসত্বে ফিরিয়া যাইবার নিমিত্তে বিদ্রোহভাবে এক সেনাপতিকে নিযুক্ত করিল; কিন্তু তুমি ক্ষমাবান্‌ ঈশ্বর, কৃপাময় ও স্নেহশীল, ক্রোধে ধীর ও দয়াতে মহান্‌, তাই তাহাদিগকে ত্যাগ করিলে না। 18 এমন কি, তাহারা যখন আপনাদের জন্য ছাঁচে ঢালা এক গোবৎস নির্ম্মাণ করিল, এবং বলিল, এই তোমার দেবতা, যিনি মিসর হইতে তোমাকে বাহির করিয়া আনিয়াছেন, এইরূপে যখন মহা অসন্তোষকর কার্য্য করিল, 19 তখনও তুমি আপন প্রচুর করুণা প্রযুক্ত প্রান্তরে তাহাদিগকে ত্যাগ করিলে না; দিবসে তাহাদের পথ দেখাইবার জন্য মেঘস্তম্ভ, এবং রাত্রিতে গন্তব্য পথে দীপ্তি দিবার জন্য অগ্নিস্তম্ভ তাহাদের উপর হইতে সরিয়া গেল না। 20 আর তুমি শিক্ষা দিবার জন্য আপন মঙ্গলময় আত্মা তাহাদিগকে দান করিলে, এবং তাহাদের মুখ হইতে তোমার মান্না নিবৃত্ত করিলে না, ও তাহাদিগকে পিপাসা নিবারণার্থে জল দিলে। 21 আর চল্লিশ বৎসর পর্য্যন্ত প্রান্তরে তাহাদিগকে প্রতিপালন করিলে, তাহাদের অভাব হইল না; তাহাদের বস্ত্র জীর্ণ হইল না, ও তাহাদের পা ফুলিল না। 22 পরে তুমি তাহাদিগকে নানা রাজ্য ও নানা জাতি প্রদান করিয়া সর্ব্বদিকে তাহাদের অংশ নিরূপণ করিলে; তাহাতে তাহারা সীহোনের দেশ, অর্থাৎ হিষ্‌বোণের রাজার দেশ ও বাশন-রাজ ওগের দেশ অধিকার করিল। 23 আর তুমি তাহাদের সন্তানদিগকে আকাশের তারার ন্যায় বহুসংখ্যক করিলে, এবং সেই দেশে তাহাদিগকে আনিলে, যে দেশের বিষয়ে তুমি তাহাদের পিতৃপুরুষদের কাছে বলিয়াছিলে যে, তাহারা তাহা অধিকার করিবার জন্য তথায় প্রবেশ করিবে। 24 পরে সেই সন্তানগণ সেই দেশে প্রবেশ করিয়া তাহা অধিকার করিল, এবং তুমি সেই দেশনিবাসী কনানীয়দিগকে তাহাদের সম্মুখে নত করিলে, এবং উহাদিগকে ও উহাদের রাজগণকে ও দেশস্থ সকল জাতিকে তাহাদের হস্তে সমর্পণ করিলে, উহাদের প্রতি যাহা ইচ্ছা তাহা করিতে দিলে। 25 তাহাতে তাহারা প্রাচীরবেষ্টিত অনেক নগর ও উর্ব্বরা ভূমি লইল, এবং সমুদয় উত্তম দ্রব্যে পরিপূর্ণ গৃহ, খনিত কূপ, দ্রাক্ষাক্ষেত্র, জিতক্ষেত্র ও প্রচুর ফলবৃক্ষ অধিকার করিল, এবং ভোজন করিয়া তৃপ্ত ও পুষ্ট হইল, এবং তোমার কৃত মহা মঙ্গলে আপ্যায়িত হইল। 26 তথাপি তাহারা অবাধ্য হইয়া তোমার বিরুদ্ধে বিদ্রোহাচরণ করিল, তোমার ব্যবস্থা পশ্চাৎ দিকে ফেলিল, এবং তোমার যে ভাববাদিগণ তোমার প্রতি তাহাদিগকে ফিরাইবার জন্য তাহাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতেন, তাঁহাদিগকে বধ করিল, ও মহা অসন্তোষকর কার্য্য করিল। 27 পরে তুমি তাহাদিগকে বিপক্ষদের হস্তে সমর্পণ করিলে তাহারা তাহাদিগকে কষ্ট দিল; কিন্তু কষ্টের সময়ে যখন তাহারা তোমার কাছে কাঁদিত, তখন তুমি স্বর্গ হইতে তাহা শুনিতে, এবং তোমার প্রচুর করুণা প্রযুক্ত তাহাদিগকে নিস্তারকর্ত্তৃগণ দিতে, যাঁহারা বিপক্ষদের হস্ত হইতে তাহাদিগকে নিস্তার করিতেন। 28 তথাপি বিশ্রাম পাইলে পর তাহারা আবার তোমার সাক্ষাতে কদাচারণ করিত, তাহাতে তুমি তাহাদিগকে শত্রুহস্তে সমর্পণ করিতে, এবং সেই শত্রুগণ তাহাদের উপরে কর্ত্তৃত্ব করিত; কিন্তু তাহারা ফিরিলে ও তোমার কাছে ক্রন্দন করিলে তুমি স্বর্গ হইতে তাহা শুনিতে; এবং আপন করুণানুসারে অনেক বার তাহাদিগকে উদ্ধার করিতে; 29 আর আপন ব্যবস্থা-পথে তাহাদিগকে ফিরাইয়া আনিবার নিমিত্তে তাহাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতে; তথাপি তাহারা গর্ব্ব করিল, ও তোমার আজ্ঞায় কর্ণপাত করিত না, কিন্তু যাহা পালন করিলে মনুষ্য বাঁচে, তোমার সেই সকল শাসনের প্রতিকূলে পাপ করিত, ও স্কন্ধ সরাইত, গ্রীবা শক্ত করিত, কথা শুনিত না। 30 তথাপি তুমি বহু বৎসর তাহাদের ব্যবহার সহ্য করিলে ও তোমার ভাববাদিগণের দ্বারা তোমার আত্মাকর্ত্তৃক তাহাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিলে; কিন্তু তাহারা কর্ণপাত করিল না, তজ্জন্য তুমি তাহাদিগকে নানাদেশীয় জাতিগণের হস্তে সমর্পণ করিলে। 31 তথাপি তোমার প্রচুর করুণা প্রযুক্ত তাহাদিগকে নিঃশেষ কর নাই ও ত্যাগ কর নাই, কারণ তুমি কৃপাময় ও স্নেহশীল ঈশ্বর। 32 অতএব, হে আমাদের ঈশ্বর, মহান্‌, বিক্রান্ত ও ভয়ঙ্কর ঈশ্বর, তুমি নিয়ম ও দয়া পালন করিয়া থাক; অশূর-রাজগণের সময়াবধি অদ্য পর্য্যন্ত আমাদের উপরে, আমাদের রাজাদের, অধ্যক্ষদের, যাজকদের ভাববাদীদের, পিতৃপুরুষদের ও তোমার সকল প্রজার উপরে যে সমস্ত ক্লেশ ঘটিতেছে, সে সকল তোমার দৃষ্টিতে ক্ষুদ্র বোধ না হউক। 33 আমাদের প্রতি এই সকল ঘটিলেও তুমি ধর্ম্মময়; কেননা তুমি সত্য ব্যবহার করিয়াছ, কিন্তু আমরা দুষ্কর্ম্ম করিয়াছি। 34 আর আমাদের রাজগণ, অধ্যক্ষগণ, যাজকগণ ও পিতৃপুরুষেরা তোমার ব্যবস্থা পালন করেন নাই, এবং তোমার আজ্ঞায় ও যদ্দ্বারা তুমি তাহাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতে, তোমার সেই সাক্ষ্যকথায় কর্ণপাত করেন নাই। 35 আর তাহাদের রাজত্বকালে, তোমার প্রদত্ত প্রচুর মঙ্গল সত্ত্বেও তোমাকর্ত্তৃক তাঁহাদের হস্তে সমর্পিত প্রশস্ত ও উর্ব্বর দেশে তাহারা তোমার সেবা করে নাই, এবং আপন আপন দুষ্ক্রিয়া সকল হইতে নিবৃত্ত হয় নাই। 36 দেখ, অদ্য আমরা দাস, ফলে তুমি আমাদের পিতৃপুরুষদিগকে যে দেশ দিয়া তদুৎপন্ন ফলের ও উত্তম দ্রব্যের অধিকারী করিয়াছিলে, দেখ, আমরা এই দেশমধ্যে দাস হইয়া রহিয়াছি। 37 আর তুমি আমাদের পাপ প্রযুক্ত আমাদের উপরে যে রাজগণকে নিযুক্ত করিয়াছ, দেশোৎপন্ন দ্রব্যবাহুল্য তাঁহাদেরই স্বত্ব; আর তাঁহারা আমাদের শরীরের উপরে ও আমাদের পশুগণের উপরে স্বেচ্ছামত প্রভুত্ব করিতেছেন, আর আমরা মহা সঙ্কটের মধ্যে আছি। 38 এই সকল ঘটিলেও আমরা নিশ্চিত নিয়ম করিয়া লিখিতেছি; এবং আমাদের অধ্যক্ষগণ, আমাদের লেবীয়েরা ও আমাদের যাজকগণ তাহাতে মুদ্রাঙ্ক দিতেছে।
1. আর ঐ মাসের চতুর্ব্বিংশ দিনে ইস্রায়েল-সন্তানগণ উপবাস, চটপরিধান ও মস্তকে মৃত্তিকা অর্পণ করিয়া একত্র হইল। 2. আর ইস্রায়েল-বংশ সমস্ত বিজাতীয় লোক হইতে আপনাদিগকে পৃথক্‌ করিল, এবং দাঁড়াইয়া আপনাদের পাপ ও আপনাদের পিতৃপুরুষদের অপরাধ স্বীকার করিল। 3. আর তাহারা আপন আপন স্থানে দাঁড়াইল ও দিনের চতুর্থাংশ পর্য্যন্ত আপনাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর ব্যবস্থা-পুস্তক পাঠ করিল, পরে দিনের [আর এক] চতুর্থাংশ পর্য্যন্ত আপনাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর কাছে পাপ স্বীকার ও প্রণিপাত করিল। 4. আর যেশূয় ও বানি, কদ্‌মীয়েল, শবনিয়, বুন্নি, শেরেবিয়, বানি, কনানী, ইহারা লেবীয়দের সোপানে দাঁড়াইয়া আপনাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর কাছে উচ্চৈঃস্বরে ক্রন্দন করিল। 5. পরে যেশূয় ও কদ্‌মীয়েল, বানি, হশব্‌নিয়, শেরেবিয়, হোদিয়, শবনিয়, পথাহিয়, এই কয়েক জন লেবীয় এই কথা কহিল, উঠ; তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর ধন্যবাদ কর, যিনি অনাদিকাল হইতে অনন্তকাল পর্য্যন্ত [ধন্য]। তোমার প্রতাপান্বিত নামের ধন্যবাদ হউক, যাহা যাবতীয় ধন্যবাদ ও প্রশংসার অতীত। 6. কেবলমাত্র তুমিই সদাপ্রভু; তুমি স্বর্গ ও স্বর্গের স্বর্গ এবং তাহার সমস্ত বাহিনী, পৃথিবী ও তথাকার সমস্ত এবং সমুদ্র ও তন্মধ্যস্থ সমস্ত নির্ম্মাণ করিয়াছ, আর তুমি তাহাদের সকলের স্থিতি করিতেছ, এবং স্বর্গের বাহিনী তোমার কাছে প্রণিপাত করে। 7. তুমিই সদাপ্রভু ঈশ্বর; তুমি অব্রামকে মনোনীত করিয়াছিলে, কল্‌দীয় দেশের ঊর হইতে বাহির করিয়া আনিয়াছিলে, ও তাঁহার নাম অব্রাহাম রাখিয়াছিলে; 8. এবং আপনার সাক্ষাতে তাঁহার অন্তঃকরণ বিশ্বস্ত দেখিয়া কনানীয়, হিত্তীয়, ইমোরীয়, পরিষীয়, যিবূষীয় ও গির্গাশীয়ের দেশ তাঁহার বংশকে দিবার জন্য, তাঁহার সহিত নিয়ম করিয়াছিলে, আর তুমি আপনার বাক্য অটল রাখিয়াছ, কেননা তুমি ধর্ম্মময়। 9. আর তুমি মিসরে আমাদের পিতৃপুরুষদের দুঃখ দেখিয়াছিলে, ও সূফসাগরের তীরে তাহাদের ক্রন্দন শুনিয়াছিলে; 10. এবং ফরৌণে, তাঁহার সমস্ত দাসগণে ও তাঁহার দেশের প্রজা সকলে নানা চিহ্ন ও অদ্ভুত লক্ষণ দেখাইয়াছিলে; কেননা তুমি জানিতে যে, মিস্রীয়েরা তাহাদের বিরুদ্ধে গর্ব্ব করিত; ইহাতে তুমি আপনার নাম প্রতিষ্ঠিত করিলে, যেমন অদ্য রহিয়াছে। 11. আর তুমি তাহাদের সম্মুখে সমুদ্রকে দ্বিভাগ করিলে, তাহাতে তাহারা সমুদ্রের মধ্যস্থলে শুষ্ক পথ দিয়া অগ্রসর হইল; কিন্তু প্রবল জলে যেমন প্রস্তর, তেমনি তুমি তাহাদের পশ্চাদ্ধাবনকারী লোকদিগকে অগাধ জলে নিক্ষেপ করিলে। 12. আর তুমি দিবসে মেঘস্তম্ভ দ্বারা, ও রাত্রিতে তাহাদের গন্তব্য পথে দীপ্তি দিবার জন্য অগ্নিস্তম্ভ দ্বারা তাহাদিগকে গমন করাইতে। 13. তুমি সীনয় পর্ব্বতের উপরে নামিয়া আসিলে, স্বর্গ হইতে তাহাদের সহিত কথা বলিলে, আর যথার্থ শাসন, সত্য ব্যবস্থা, উত্তম বিধি ও আজ্ঞা তাহাদিগকে দিলে; 14. এবং আপনার পবিত্র বিশ্রামবার তাহাদিগকে জ্ঞাত করিলে, এবং আপন দাস মোশি দ্বারা তাহাদিগকে আজ্ঞা, বিধি ও ব্যবস্থা দিলে; 15. আর তাহাদের ক্ষুধা নিবারণার্থে স্বর্গ হইতে তাহাদিগকে ভক্ষ্য দিলে, ও তাহাদের পিপাসা নিবারণার্থে শৈল হইতে জল বাহির করিলে; আর তুমি তাহাদিগকে যে দেশ দিবার জন্য হস্ত উত্তোলন করিয়াছিলে, তাহা অধিকার করণার্থে তথায় প্রবেশ করিতে আজ্ঞা দিলে। 16. তথাপি তাহারা ও আমাদের পিতৃপুরুষেরা গর্ব্ব করিল, আপন আপন গ্রীবা শক্ত করিল, এবং তোমার আজ্ঞায় কর্ণপাত করিল না; 17. আর তাহারা কথা শুনিতে অস্বীকার করিল, এবং তুমি তাহাদের মধ্যে যে সকল অদ্ভুত কার্য্য করিয়াছিলে, তাহা স্মরণে রাখিল না, কিন্তু আপন আপন গ্রীবা শক্ত করিল, দাসত্বে ফিরিয়া যাইবার নিমিত্তে বিদ্রোহভাবে এক সেনাপতিকে নিযুক্ত করিল; কিন্তু তুমি ক্ষমাবান্‌ ঈশ্বর, কৃপাময় ও স্নেহশীল, ক্রোধে ধীর ও দয়াতে মহান্‌, তাই তাহাদিগকে ত্যাগ করিলে না। 18. এমন কি, তাহারা যখন আপনাদের জন্য ছাঁচে ঢালা এক গোবৎস নির্ম্মাণ করিল, এবং বলিল, এই তোমার দেবতা, যিনি মিসর হইতে তোমাকে বাহির করিয়া আনিয়াছেন, এইরূপে যখন মহা অসন্তোষকর কার্য্য করিল, 19. তখনও তুমি আপন প্রচুর করুণা প্রযুক্ত প্রান্তরে তাহাদিগকে ত্যাগ করিলে না; দিবসে তাহাদের পথ দেখাইবার জন্য মেঘস্তম্ভ, এবং রাত্রিতে গন্তব্য পথে দীপ্তি দিবার জন্য অগ্নিস্তম্ভ তাহাদের উপর হইতে সরিয়া গেল না। 20. আর তুমি শিক্ষা দিবার জন্য আপন মঙ্গলময় আত্মা তাহাদিগকে দান করিলে, এবং তাহাদের মুখ হইতে তোমার মান্না নিবৃত্ত করিলে না, ও তাহাদিগকে পিপাসা নিবারণার্থে জল দিলে। 21. আর চল্লিশ বৎসর পর্য্যন্ত প্রান্তরে তাহাদিগকে প্রতিপালন করিলে, তাহাদের অভাব হইল না; তাহাদের বস্ত্র জীর্ণ হইল না, ও তাহাদের পা ফুলিল না। 22. পরে তুমি তাহাদিগকে নানা রাজ্য ও নানা জাতি প্রদান করিয়া সর্ব্বদিকে তাহাদের অংশ নিরূপণ করিলে; তাহাতে তাহারা সীহোনের দেশ, অর্থাৎ হিষ্‌বোণের রাজার দেশ ও বাশন-রাজ ওগের দেশ অধিকার করিল। 23. আর তুমি তাহাদের সন্তানদিগকে আকাশের তারার ন্যায় বহুসংখ্যক করিলে, এবং সেই দেশে তাহাদিগকে আনিলে, যে দেশের বিষয়ে তুমি তাহাদের পিতৃপুরুষদের কাছে বলিয়াছিলে যে, তাহারা তাহা অধিকার করিবার জন্য তথায় প্রবেশ করিবে। 24. পরে সেই সন্তানগণ সেই দেশে প্রবেশ করিয়া তাহা অধিকার করিল, এবং তুমি সেই দেশনিবাসী কনানীয়দিগকে তাহাদের সম্মুখে নত করিলে, এবং উহাদিগকে ও উহাদের রাজগণকে ও দেশস্থ সকল জাতিকে তাহাদের হস্তে সমর্পণ করিলে, উহাদের প্রতি যাহা ইচ্ছা তাহা করিতে দিলে। 25. তাহাতে তাহারা প্রাচীরবেষ্টিত অনেক নগর ও উর্ব্বরা ভূমি লইল, এবং সমুদয় উত্তম দ্রব্যে পরিপূর্ণ গৃহ, খনিত কূপ, দ্রাক্ষাক্ষেত্র, জিতক্ষেত্র ও প্রচুর ফলবৃক্ষ অধিকার করিল, এবং ভোজন করিয়া তৃপ্ত ও পুষ্ট হইল, এবং তোমার কৃত মহা মঙ্গলে আপ্যায়িত হইল। 26. তথাপি তাহারা অবাধ্য হইয়া তোমার বিরুদ্ধে বিদ্রোহাচরণ করিল, তোমার ব্যবস্থা পশ্চাৎ দিকে ফেলিল, এবং তোমার যে ভাববাদিগণ তোমার প্রতি তাহাদিগকে ফিরাইবার জন্য তাহাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতেন, তাঁহাদিগকে বধ করিল, ও মহা অসন্তোষকর কার্য্য করিল। 27. পরে তুমি তাহাদিগকে বিপক্ষদের হস্তে সমর্পণ করিলে তাহারা তাহাদিগকে কষ্ট দিল; কিন্তু কষ্টের সময়ে যখন তাহারা তোমার কাছে কাঁদিত, তখন তুমি স্বর্গ হইতে তাহা শুনিতে, এবং তোমার প্রচুর করুণা প্রযুক্ত তাহাদিগকে নিস্তারকর্ত্তৃগণ দিতে, যাঁহারা বিপক্ষদের হস্ত হইতে তাহাদিগকে নিস্তার করিতেন। 28. তথাপি বিশ্রাম পাইলে পর তাহারা আবার তোমার সাক্ষাতে কদাচারণ করিত, তাহাতে তুমি তাহাদিগকে শত্রুহস্তে সমর্পণ করিতে, এবং সেই শত্রুগণ তাহাদের উপরে কর্ত্তৃত্ব করিত; কিন্তু তাহারা ফিরিলে ও তোমার কাছে ক্রন্দন করিলে তুমি স্বর্গ হইতে তাহা শুনিতে; এবং আপন করুণানুসারে অনেক বার তাহাদিগকে উদ্ধার করিতে; 29. আর আপন ব্যবস্থা-পথে তাহাদিগকে ফিরাইয়া আনিবার নিমিত্তে তাহাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতে; তথাপি তাহারা গর্ব্ব করিল, ও তোমার আজ্ঞায় কর্ণপাত করিত না, কিন্তু যাহা পালন করিলে মনুষ্য বাঁচে, তোমার সেই সকল শাসনের প্রতিকূলে পাপ করিত, ও স্কন্ধ সরাইত, গ্রীবা শক্ত করিত, কথা শুনিত না। 30. তথাপি তুমি বহু বৎসর তাহাদের ব্যবহার সহ্য করিলে ও তোমার ভাববাদিগণের দ্বারা তোমার আত্মাকর্ত্তৃক তাহাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিলে; কিন্তু তাহারা কর্ণপাত করিল না, তজ্জন্য তুমি তাহাদিগকে নানাদেশীয় জাতিগণের হস্তে সমর্পণ করিলে। 31. তথাপি তোমার প্রচুর করুণা প্রযুক্ত তাহাদিগকে নিঃশেষ কর নাই ও ত্যাগ কর নাই, কারণ তুমি কৃপাময় ও স্নেহশীল ঈশ্বর। 32. অতএব, হে আমাদের ঈশ্বর, মহান্‌, বিক্রান্ত ও ভয়ঙ্কর ঈশ্বর, তুমি নিয়ম ও দয়া পালন করিয়া থাক; অশূর-রাজগণের সময়াবধি অদ্য পর্য্যন্ত আমাদের উপরে, আমাদের রাজাদের, অধ্যক্ষদের, যাজকদের ভাববাদীদের, পিতৃপুরুষদের ও তোমার সকল প্রজার উপরে যে সমস্ত ক্লেশ ঘটিতেছে, সে সকল তোমার দৃষ্টিতে ক্ষুদ্র বোধ না হউক। 33. আমাদের প্রতি এই সকল ঘটিলেও তুমি ধর্ম্মময়; কেননা তুমি সত্য ব্যবহার করিয়াছ, কিন্তু আমরা দুষ্কর্ম্ম করিয়াছি। 34. আর আমাদের রাজগণ, অধ্যক্ষগণ, যাজকগণ ও পিতৃপুরুষেরা তোমার ব্যবস্থা পালন করেন নাই, এবং তোমার আজ্ঞায় ও যদ্দ্বারা তুমি তাহাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতে, তোমার সেই সাক্ষ্যকথায় কর্ণপাত করেন নাই। 35. আর তাহাদের রাজত্বকালে, তোমার প্রদত্ত প্রচুর মঙ্গল সত্ত্বেও তোমাকর্ত্তৃক তাঁহাদের হস্তে সমর্পিত প্রশস্ত ও উর্ব্বর দেশে তাহারা তোমার সেবা করে নাই, এবং আপন আপন দুষ্ক্রিয়া সকল হইতে নিবৃত্ত হয় নাই। 36. দেখ, অদ্য আমরা দাস, ফলে তুমি আমাদের পিতৃপুরুষদিগকে যে দেশ দিয়া তদুৎপন্ন ফলের ও উত্তম দ্রব্যের অধিকারী করিয়াছিলে, দেখ, আমরা এই দেশমধ্যে দাস হইয়া রহিয়াছি। 37. আর তুমি আমাদের পাপ প্রযুক্ত আমাদের উপরে যে রাজগণকে নিযুক্ত করিয়াছ, দেশোৎপন্ন দ্রব্যবাহুল্য তাঁহাদেরই স্বত্ব; আর তাঁহারা আমাদের শরীরের উপরে ও আমাদের পশুগণের উপরে স্বেচ্ছামত প্রভুত্ব করিতেছেন, আর আমরা মহা সঙ্কটের মধ্যে আছি। 38. এই সকল ঘটিলেও আমরা নিশ্চিত নিয়ম করিয়া লিখিতেছি; এবং আমাদের অধ্যক্ষগণ, আমাদের লেবীয়েরা ও আমাদের যাজকগণ তাহাতে মুদ্রাঙ্ক দিতেছে।
  • নেহেমিয়া অধ্যায় 1  
  • নেহেমিয়া অধ্যায় 2  
  • নেহেমিয়া অধ্যায় 3  
  • নেহেমিয়া অধ্যায় 4  
  • নেহেমিয়া অধ্যায় 5  
  • নেহেমিয়া অধ্যায় 6  
  • নেহেমিয়া অধ্যায় 7  
  • নেহেমিয়া অধ্যায় 8  
  • নেহেমিয়া অধ্যায় 9  
  • নেহেমিয়া অধ্যায় 10  
  • নেহেমিয়া অধ্যায় 11  
  • নেহেমিয়া অধ্যায় 12  
  • নেহেমিয়া অধ্যায় 13  
×

Alert

×

Bengali Letters Keypad References