1 ইফিষের মণ্ডলীর প্রাচীনদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আমরা সমুদ্র পথে সোজা কো দ্বীপে এলাম৷ পরদিন আমরা রোদঃ দ্বীপে গেলাম৷ রোদঃ থেকে পাতারায় চলে গেলাম৷2 পাতারায় এমন একটি জাহাজ পেলাম যা পার হয়ে ফৈনীকিয়া অঞ্চলে যাবে৷ আমরা সেই জাহাজে চড়ে যাত্রা করলাম৷3 পরে আমরা যাবার পথে কুপ্র দ্বীপের কাছে এলাম৷ আমাদের উত্তরদিকে দ্বীপটিকে দেখতে পাচ্ছিলাম; কিন্তু সেখানে আমরা জাহাজ ভেড়ালাম না৷4 আমর সুরিয়ার দিকে এগিয়ে গেলাম, সোর শহরে জাহাজ থামানো হল, কারণ সেখানে জাহাজ থেকে কিছু মাল নামানোর ছিল৷ আমরা সেখানে কিছু খ্রীষ্টানুসারীর দেখা পেয়ে তাঁদের সঙ্গে সাতদিন কাটালাম৷ পবিত্র আত্মার মাধ্যমে তাঁরা পৌলকে জেরুশালেম য়েতে নিষেধ করলেন৷5 কিন্তু সেখানে থাকার সময় শেষ হলে আমরা রওনা দিলাম এবং যাত্রাপথে এগিয়ে চললাম৷ সেখানকার খ্রীষ্টানুসারীরা সকলে নিজেদের পরিবার ও ছেলে-মেয়েদের সাথে করে নিয়ে এসে আমাদের বিদায় জানাতে শহরের বাইরে এলেন৷ সেখানে সমুদ্রতীরে আমরা হাঁটু গেড়ে বসে প্রার্থনা করে পরস্পরের কাছ থেকে বিদায় নিলাম৷6 এরপর আমরা জাহাজে উঠলাম আর তাঁরা বাড়ি ফিরে গেলেন৷7 সোর থেকে যাত্রা করে আমরা তলিমাযিতে পৌঁছালাম৷ আর সেখানকার খ্রীষ্ট বিশ্বাসী ভাইদের শুভেচ্ছা জানিয়ে তাদের সঙ্গে একদিন থাকলাম৷8 পরের দিন আমরা তলিমাযি থেকে রওনা হয়ে কৈসরিয়ায় এলাম৷ সেখানে সুসমাচার প্রচারক ফিলিপের বাড়িতে উঠলাম৷ ইনি সেই সাতজন মনোনীত লোকদের মধ্যে একজন৷ আমরা সেখানে তাঁর সঙ্গে থাকলাম৷9 এই ফিলিপের চারটি কুমারী কন্যা ছিলেন, এরা ভাববাণী বলতে পারতেন৷10 সেখানে বেশ কিছুদিন থাকার পর যিহূদিয়া থেকে আগাব নামে একজন ভাববাদী এসে আমাদের সঙ্গে দেখা করলেন৷11 তিনি আমাদের কাছে এসে পৌলের কোমর বন্ধনীটি নিয়ে নিজের হাত পা বেঁধে বললেন, ‘পবিত্র আত্মা এই কথা বলছেন, ‘এই কোমর বন্ধনীটি যার তাকে জেরুশালেমের ইহুদীরা এইভাবে বেঁধে অইহুদীদের হাতে তুলে দেবে৷’12 সেই কথা শুনে আমরা ও যীশুর অন্য অনুগামীরা পৌলকে অনুরোধ করলাম য়েন তিনি জেরুশালেমে না যান৷13 পৌল এর জবাবে বললেন, ‘তোমরা এ কি করছ? তোমরা এভাবে কান্নাকাটি করে আমার হৃদয় কি ভেঙে দিচ্ছ না? খ্রীষ্টের নামের জন্য আমি জেরুশালেমে কেবল শৃঙ্খলাবদ্ধ হবার জন্য যাব তাই নয়, আমি এমন কি মরতেও প্রস্তুত!’14 তাঁকে যখন আমরা জেরুশালেমে যাওয়া থেকে বিরত করতে পারলাম না, তখন আর অনুরোধ না করে চুপ করে গেলাম আর বললাম, ‘প্রভুর ইচ্ছাই পূর্ণ হোক্৷’15 এরপর আমরা প্রস্তুত হয়ে জেরুশালেমে রওনা হলাম৷16 কৈসরিয়া থেকে কয়েকজন অনুগামী (খ্রীষ্টানুসারী) আমাদের সঙ্গে চললেন৷ তারা ম্লাসোন নামে একজন লোকের বাড়িতে আমাদের তুললেন৷ ইনি ছিলেন কুপ্রের লোক, গোড়ায় যাঁরা খ্রীষ্টানুসারী হয়েছিলেন, ইনি তাদের অন্যতম৷ তাঁর বাড়ীতে আমাদের নিয়ে যাওয়া হল, য়েন আমরা সেখানে থাকতে পারি৷17 জেরুশালেমের বিশ্বাসীরা আমাদের দেখে বড়ই খুশী হলেন৷18 পরদিন পৌল আমাদের নিয়ে যাকোবের সঙ্গে সাক্ষাত্ করতে গেলেন৷ মণ্ডলীর প্রাচীনেরা সেখানে ছিলেন৷19 সেখানে পরস্পর শুভেচ্ছা বিনিময়ের পর পৌল তাঁর কাজের মাধ্যমে অইহুদীদের মধ্যে ঈশ্বর য়েসব কাজ করেছেন, তা বিস্তারিতভাবে জানালেন৷20 এই কথা শুনে তাঁরা ঈশ্বরের প্রশংসা করতে লাগলেন৷ তাঁরা পৌলকে বললেন, ‘ভাই, আপনি তো জানেন, হাজার হাজার ইহুদী আজ খ্রীষ্টবিশ্বাসী হয়েছে৷ কিন্তু তারা তাদের মোশির বিধি-ব্যবস্থা পালন করতে বড়ই উত্সাহী৷21 তারা আপনার বিষয়ে এই কথা শুনেছে য়ে অইহুদীদের মধ্যে বাসকারী প্রবাসী ইহুদীদের আপনি নাকি মোশির বিধি-ব্যবস্থা অনুসারে চলতে বারণ করেন৷ আপনি তাদের ছেলেদের সুন্নত করা বা ইহুদী রীতিনীতি মেনে চলা নাকি নিষেধ করেন!22 আমরা কি করব? তারা নিশ্চয় শুনবে য়ে আপনি এখানে আছেন৷23 তাই আমরা যা বলি আপনি তাই করুন৷ আমাদের মধ্যে চারজন লোকের একটা মানত আছে৷24 আপনি তাদের সঙ্গে নিয়ে শুচিকরণের অনুষ্ঠানে য়োগ দিন, এজন্য তাদের যা খরচ পড়ে আপনি তা দিয়ে দিন৷ আর তারা য়েন তাদের মাথা নেড়া করে৷ তাহলে সকলে জানবে য়ে আপনার বিষয়ে য়ে সব কথা ওরা শুনেছে সে সব সত্য নয়, বরং আপনি নিজে মোশির বিধি-ব্যবস্থা যথারীতি পালন করেন৷25 অইহুদীদের মধ্য থেকে যাঁরা খ্রীষ্টবিশ্বাসী হয়েছে, তাদের উদ্দেশ্যে আমরা লিখেছি য়ে: ‘তারা য়েন প্রতিমার প্রসাদ, রক্ত, গলাটিপে মারা প্রাণীর মাংস না খায় ও য়ৌন পাপ থেকে দুরে থাকে৷”26 তখন পৌল সেই কয়েকজনকে নিয়ে তাদের সঙ্গে নিজেকে শুচি করলেন৷ তারপর মন্দিরে গিয়ে শুচিকরণ অনুষ্ঠান কত দিনে সম্পূর্ণ হবে ও তাদের প্রত্যেকের জন্য কবে নৈবেদ্য উত্সর্গ করা হবে তাও জানালেন৷27 সাতদিন প্রায় শেষ হয়ে এসেছে, এমন সময় এশিয়া দেশের কয়েকজন ইহুদী মন্দিরের মধ্যে পৌলকে দেখতে পেয়ে তাঁর বিরুদ্ধে নানা কথা বলে লোকদের উত্তেজিত করে তুলল, আর পৌলকে ধরে চিত্কার করে বলতে লাগল,28 ‘হে ইস্রায়েলীয়রা, এদিকে এগিয়ে এসে সাহায্য কর! এ সেই লোক, এই লোকই আমাদের জাতির বিরুদ্ধে বলে বেড়াচ্ছে, আমাদের বিধি-ব্যবস্থার বিপরীত শিক্ষা দিচ্ছে আর এই মন্দিরের বিরুদ্ধেও কথা বলছে৷ এই হল সেই লোক য়ে সর্বত্র এই শিক্ষা দিয়ে বেড়াচ্ছে৷ দেখ মন্দিরের চত্বরে সে গ্রীকদের ঢুকিয়ে এই মন্দির অপবিত্র করেছে!’29 কারণ তারা এর আগে পৌলের সঙ্গে ইফিষের ত্রফিমকে শহরের মধ্যে দেখেছিল, মনে করেছিল পৌল তাঁকে মন্দিরের মধ্যে এনেছেন৷ ত্রফিম ছিলেন জাতিতে গ্রীক এবং ইফিমের লোক৷30 সমগ্র জেরুশালেমে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ছিল আর লোকেরা একসঙ্গে ছুটল৷ তারা পৌলকে ধরে টানতে টানতে মন্দির থেকে বের করে দিল৷ সঙ্গে সঙ্গে মন্দিরের দরজা বন্ধ হয়ে গেল৷31 লোকেরা পৌলকে হত্যা করার চেষ্টা করছিল৷ রোমান সেনাপতির কাছে খবর পৌঁছলো য়ে সারা জেরুশালেম শহরে প্রচণ্ড গোলমাল শুরু হয়েছে৷32 তিনি তখনই সৈন্যদের ও তাদের কর্মকর্তাদের নিয়ে সেখানে ছুটে এলেন৷ ইহুদীরা যখন সেনাপতিকে ও তার সঙ্গে সৈন্যদের দেখল, তখন পৌলকে প্রহার করা বন্ধ করল৷33 তখন সেনাপতি কাছে এসে পৌলকে গ্রেপ্তার করে ও তাঁকে দুটো শেকলে বাঁধতে হুকুম করলেন৷ এরপর সেনাপতি জিজ্ঞেস করলেন, ‘এ কে, এ কি দোষ করেছে?’34 তখন সেই ভীড়ের মধ্যে কেউ কেউ একরকম কথা বলল, আবার কেউ কেউ অন্য রকম কথা বলল৷ এই চেঁচামেচিতে তিনি কিছুই ঠিক করতে না পেরে পৌলকে দুর্গের মধ্যে দিয়ে যাবার হুকুম করলেন৷35 সমস্ত লোকেরা তাদের অনুসরণ করছিল৷ পৌল যখন সিঁড়ির কাছে এসেছেন, তখন জনতা এতই হিংস্র হয়ে উঠল য়ে সেনারা পৌলকে কাঁধে করে বয়ে নিয়ে য়েতে লাগল৷36 কারণ জনতা চিত্কার করে বলছিল, ‘ওকে শেষ করে ফেলো!’37 তারা পৌলকে দুর্গের ভেতর দিয়ে নিয়ে য়েতে চাইলে পৌল সেনাপতিকে বললেন, ‘আমি আপনাকে কি কিছু বলতে পারি?’ সেনাপতি বললেন, ‘তুমি দেখছি গ্রীক বলতে পার?38 তাহলে তুমি সেই মিশরীয় নও য়ে কিছু সময় পূর্বে বিদ্রোহী হয়েছিল ও চার হাজার সন্ত্রাসবাদীকে নিয়ে মরুপ্রান্তরে পালিয়েছিল?’39 তখন পৌল বললেন, ‘না, আমি একজন ইহুদী, কিলিকিয়ার তার্ষ নামে এক প্রসিদ্ধ শহরের বাসিন্দা৷ আমি আপনাকে অনুরোধ করছি, এই লোকদের কাছে আমায় কিছু বলতে দিন৷’40 সেনাপতি অনুমতি দিলে পৌল সিঁড়ির ওপর দাঁড়িয়ে লোকদের শান্ত হবার জন্য হাত নেড়ে ইঙ্গিত করলেন৷ সবাই যখন চুপ করল তখন তিনি ইব্রীয় ভাষায় বলতে শুরু করলেন৷