রোমীয় অধ্যায় 11
1. তবে আমি বলি, ঈশ্বর কি আপন প্রজাবৃন্দকে ঠেলিয়া ফেলিয়া দিয়াছেন? তাহা দূরে থাকুক; আমিও ত এক জন ইস্রায়েলীয়, অব্রাহামের বংশজাত, বিন্যামীনের গোত্রজ।
2. ঈশ্বর আপনার যে প্রজাবৃন্দকে পূর্ব্বে জ্ঞাত ছিলেন, তাহাদিগকে ঠেলিয়া ফেলেন নাই। অথবা তোমরা কি জান না, এলিয়ের ইতিহাসে শাস্ত্র কি বলে? তিনি ইস্রায়েলের বিপক্ষে ঈশ্বরের নিকটে এইরূপে অনুরোধ করেন,
3. “প্রভু, তাহারা তোমার ভাববাদিগণকে বধ করিয়াছে, তোমার যজ্ঞবেদি সকল উৎপাটন করিয়াছে, আর আমি একাই অবশিষ্ট রহিলাম, আর তাহারা আমার প্রাণ লইতে চেষ্টা করিতেছে।”
4. কিন্তু ঈশ্বরীয় বাণী তাঁহার প্রতি কি বলে? “বালের সম্মুখে যাহারা হাঁটু পাতে নাই, এমন সাত সহস্র লোককে আমি আপনার নিমিত্ত অবশিষ্ট রাখিয়াছি।”
5. তদ্রূপ এই বর্ত্তমান কালেও অনুগ্রহের নির্ব্বাচন অনুসারে অবশিষ্ট এক অংশ রহিয়াছে।
6. তাহা যখন অনুগ্রহে হইয়া থাকে, তখন আর কার্য্যহেতু হয় নাই; নতুবা অনুগ্রহ আর অনুগ্রহই রহিল না।
7. তবে কি? ইস্রায়েল যাহার অন্বেষণ করে, তাহা পায় নাই, কিন্তু নির্ব্বাচিতেরা তাহা পাইয়াছে;
8. অন্য সকলে কঠিনীভূত হইয়াছে, যেমন লিখিত আছে, “ঈশ্বর তাহাদিগকে জড়তার আত্মা দিয়াছেন; এমন চক্ষু দিয়াছেন, যাহা দেখিতে পায় না; এমন কর্ণ দিয়াছেন, যাহা শুনিতে পায় না, অদ্য পর্য্যন্ত;”
9. —আর দায়ূদ বলেন, “তাহাদের মেজ তাহাদের জন্য ফাঁদ ও পাশস্বরূপ হউক, তাহা বিঘ্ন ও প্রতিফলস্বরূপ হউক।
10. তাহাদের চক্ষু অন্ধ হউক, যেন তাহারা দেখিতে না পায়; তুমি তাহাদের পৃষ্ঠ সর্ব্বদা কুব্জ করিয়া রাখ।”
11. তবে আমি বলি, তাহারা কি পতনের নিমিত্ত উছোট খাইয়াছে? তাহা দূরে থাকুক; বরং তাহাদের পতনে পরজাতীয়দের কাছে পরিত্রাণ উপস্থিত, যেন তাহাদের অন্তর্জ্বালা জন্মে।
12. ভাল, তাহাদের পতনে যখন জগতের ধনাগম হইল, এবং তাহাদের ক্ষতিতে যখন পরজাতীয়দের ধনাগম হইল, তখন তাহাদের পূর্ণতায় আরও কত অধিক না হইবে,
13. কিন্তু, হে পরজাতীয়েরা, তোমাদিগকে বলিতেছি; পরজাতীয়দের জন্য প্রেরিত বলিয়া আমি নিজ পরিচর্য্যা-পদের গৌরব করিতেছি;
14. যদি কোন প্রকারে আমার স্বজাতীয়দের অন্তর্জ্বালা জন্মাইয়া তাহাদের মধ্যে কতকগুলিন লোকের পরিত্রাণ করিতে পারি।
15. কারণ তাহাদের দূরীকরণে যখন জগতের সম্মিলন হইল, তখন তাহাদিগকে গ্রহণ করণে মৃতদের মধ্য হইতে জীবনলাভ বই আর কি হইবে?
16. আর অগ্রিমাংশ যদি পবিত্র হয়, তবে সূজীর তালও পবিত্র; এবং মূল যদি পবিত্র হয়, তবে শাখা সকলও পবিত্র।
17. আর কতকগুলি শাখা যদি ভাঙ্গিয়া ফেলা হইল, এবং তুমি বন্য জিতবৃক্ষের চারা হইলেও যদি তাহাদের মধ্যে তোমাকে কলমরূপে লাগান গেল, আর তুমি জিতবৃক্ষের রসের মূলের অংশী হইলে,
18. তবে সেই শাখা সকলের বিরুদ্ধে শ্লাঘা করিও না; কিন্তু যদি শ্লাঘা কর, তুমি মূলকে ধারণ করিতেছ না, কিন্তু মূলই তোমাকে ধারণ করিতেছে।
19. ইহাতে তুমি বলিবে, আমাকে কলমরূপে লাগাইবার জন্যই কতকগুলি শাখা ভাঙ্গিয়া ফেলা হইয়াছে।
20. বেশ কথা, অবিশ্বাস হেতুই উহাদিগকে ভাঙ্গিয়া ফেলা হইয়াছে, এবং বিশ্বাস হেতুই তুমি দাঁড়াইয়া আছ।
21. উচ্চ উচ্চ বিষয় ভাবিও না, বরং ভয় কর; কেননা ঈশ্বর যখন সেই প্রকৃত শাখাগুলির প্রতি মমতা করেন নাই, তখন তোমার প্রতিও মমতা করিবেন না।
22. অতএব ঈশ্বরের মধুর ভাব ও কঠোর ভাব দেখ; যাহারা পতিত হইল, তাহাদের প্রতি কঠোর ভাব, এবং তোমার প্রতি ঈশ্বরের মধুর ভাব, যদি তুমি সেই মধুর ভাবের শরণাপন্ন থাক; নতুবা তুমিও ছিন্ন হইবে।
23. আবার উহারা যদি আপনাদের অবিশ্বাসে না থাকে, তবে উহাদিগকেও লাগান যাইবে, কারণ ঈশ্বর উহাদিগকে আবার লাগাইতে সমর্থ আছেন।
24. বস্তুতঃ যেটী স্বভাবতঃ বন্য জিতবৃক্ষ, তোমাকে তাহা হইতে কাটিয়া লইয়া যখন স্বভাবের বিপরীতে উত্তম জিতবৃক্ষে লাগান গিয়াছে, তখন প্রকৃত শাখা যে উহারা উহাদিগকে নিজ জিতবৃক্ষে লাগান যাইবে, ইহা কত অধিক নিশ্চয়।
25. কারণ, ভ্রাতৃগণ, তোমরা যেন আপনাদের জ্ঞানে বুদ্ধিমান্ না হও, এজন্য আমি ইচ্ছা করি না যে, তোমরা এই নিগূঢ়তত্ত্ব অজ্ঞাত থাক যে, কতক পরিমাণে ইস্রায়েলের কঠিনতা ঘটিয়াছে, যে পর্য্যন্ত পরজাতীয়দের পূর্ণ সংখ্যা প্রবেশ না করে;
26. আর এই প্রকারে সমস্ত ইস্রায়েল পরিত্রাণ পাইবে; যেমন লিখিত আছে, “সিয়োন হইতে মুক্তিদাতা আসিবেন; তিনি যাকোব হইতে ভক্তিহীনতা দূর করিবেন;
27. আর ইহাই তাহাদের পক্ষে আমার নিয়ম, যখন আমি তাহাদের পাপ সকল হরণ করিব।”
28. উহারা সুসমাচারের সম্বন্ধে তোমাদের নিমিত্ত শত্রু, কিন্তু নির্ব্বাচনের সম্বন্ধে পিতৃপুরুষগণের নিমিত্ত প্রিয়পাত্র।
29. কেননা ঈশ্বরের অনুগ্রহদান সকল ও তাঁহার আহ্বান অনুশোচনা-রহিত।
30. ফলতঃ তোমরা যেমন পূর্ব্বে ঈশ্বরের অবাধ্য ছিলে, কিন্তু এখন উহাদের অবাধ্যতা প্রযুক্ত দয়া পাইয়াছ,
31. তেমনি ইহারাও এখন অবাধ্য হইয়াছে, যেন তোমাদের দয়াপ্রাপ্তিতে তাহারাও এখন দয়া পায়।
32. কেননা ঈশ্বর সকলকেই অবাধ্যতার কাছে রুদ্ধ করিয়াছেন, যেন তিনি সকলেরই প্রতি দয়া করিতে পারেন।
33. আহা! ঈশ্বরের ধনাঢ্যতা ও প্রজ্ঞা ও জ্ঞান কেমন অগাধ! তাঁহার বিচার সকল কেমন বোধাতীত! তাঁহার পথ সকল কেমন অননুসন্ধেয়!
34. কেননা প্রভুর মন কে জানিয়াছে? “তাঁহার মন্ত্রীই বা কে হইয়াছে?”
35. অথবা কে অগ্রে তাঁহাকে কিছু দান করিয়াছে যে, এজন্য তাহার প্রত্যুপকার করিতে হইবে?
36. যেহেতুক সকলই তাঁহা হইতে ও তাঁহার দ্বারা ও তাঁহার নিমিত্ত। যুগে যুগে তাঁহারই গৌরব হউক। আমেন।