1 আমি সেই ব্যক্তি, যে তাঁহার ক্রোধের দণ্ডঘটিত দুঃখ দেখিয়াছে।2 আমাকে তিনি চালাইয়াছেন, আর গমন করাইয়াছেন অন্ধকারে, আলোকে নয়।3 সত্যই আমার বিরুদ্ধে তিনি আপন হস্ত ফিরান; সমস্ত দিন পুনঃ পুনঃ ফিরান।4 তিনি আমার মাংস ও চর্ম্ম জীর্ণ করিয়াছেন; আমার অস্থি সকল ভগ্ন করিয়াছেন।5 তিনি আমাকে অবরোধ করিয়াছেন, এবং বিষ ও শ্রান্তি দ্বারা আমাকে বেষ্টন করিয়াছেন;6 তিনি আমাকে অন্ধকারে বাস করাইয়াছেন, বহুকালের মৃতদের সদৃশ করিয়াছেন।7 তিনি আমার চারিদিকে বেড়া দিয়াছেন, আমি বাহির হইতে পারি না; তিনি আমার শৃঙ্খল ভারী করিয়াছেন।8 আমি যখন ক্রন্দন ও আর্ত্তনাদ করি, তিনি আমার প্রার্থনা অগ্রাহ্য করেন।9 তিনি ক্ষোদিত প্রস্তর দ্বারা আমার পথ সকল রোধ করিয়াছেন, তিনি আমার মার্গ সকল বক্র করিয়াছেন।10 তিনি আমার পক্ষে লুক্কায়িত ভল্লুক বা অন্তরালে গুপ্ত সিংহস্বরূপ।11 তিনি আমার পথ বিপথ করিয়াছেন, আমাকে খণ্ড বিখণ্ড করিয়াছেন, অনাথ করিয়াছেন।12 তিনি আপন ধনুকে চাড়া দিয়া আমাকে বাণের লক্ষ্য করিয়া রাখিয়াছেন।13 তিনি আপন তূণের বাণ আমার মর্ম্মে প্রবেশ করাইয়াছেন।14 আমি হইয়াছি, স্বজাতীয় সকলের উপহাসের বিষয়, সমস্ত দিন তাহাদের গানের বিষয়।15 তিনি আমাকে তিক্ততায় পূর্ণ করিয়াছেন, আমাকে নাগদানায় পূরিত করিয়াছেন।16 তিনি কঙ্কর দ্বারা আমার দন্ত ভাঙ্গিয়াছেন, আমাকে ভস্মে আচ্ছাদন করিয়াছেন।17 তুমি আমার প্রাণ শান্তি হইতে দূর করিয়াছ; আমি মঙ্গল ভুলিয়া গিয়াছি।18 আমি কহিলাম, আমার বল ও সদাপ্রভুতে আমার প্রত্যাশা নষ্ট হইয়াছে।19 স্মরণ কর আমার দুঃখ ও আমার দুর্দ্দশা নাগদানা ও বিষ।20 আমার প্রাণ নিত্য তাহা স্মরণে রাখিতেছে, আমার অন্তরে অবসন্ন হইতেছে।21 আমি পুনর্ব্বার ইহা মনে করি, তাই আমার প্রত্যাশা আছে।22 সদাপ্রভুর বিবিধ দয়ার গুণে আমরা নষ্ট হই নাই; কেননা তাঁহার বিবিধ করুণা শেষ হয় নাই।23 নূতন নূতন করুণা প্রতি প্রভাতে! তোমার বিশ্বস্ততা মহৎ।24 আমার প্রাণ বলে, সদাপ্রভুই আমার অধিকার; এই জন্য আমি তাঁহাতে প্রত্যাশা করিব।25 সদাপ্রভু মঙ্গলস্বরূপ, তাঁহার আকাঙ্ক্ষীদের পক্ষে, তাঁহার অন্বেষী প্রাণের পক্ষে।26 সদাপ্রভুর পরিত্রাণের প্রত্যাশা করা, নীরবে অপেক্ষা করা, ইহাই মঙ্গল।27 যৌবনকালে যোঁয়ালি বহন করা মানুষের মঙ্গল।28 সে একাকী বসুক, নীরব থাকুক, কারণ তিনি তাহার স্কন্ধে *যোঁয়ালি রাখিয়াছেন।29 সে ধূলাতে মুখ দিউক, তবে প্রত্যাশা হইলে হইতে পারে।30 সে আপন প্রহারকের কাছে গাল পাতিয়া দিউক অপমানে পরিপূর্ণ হউক।31 কেননা প্রভু চিরতরে পরিত্যাগ করিবেন না।32 যদ্যপি মনস্তাপ দেন, তথাপি আপন প্রচুর দয়ানুসারে করুণা করিবেন।33 কেননা তিনি অন্তরের সহিত দুঃখ দেন না, মনুষ্য-সন্তানগণকে শোকার্ত্ত করেন না।34 লোকে যে পৃথিবীর বন্দি সকলকে পদতলে দলিত করে,35 পরাৎপরের সম্মুখে মনুষ্যের প্রতি অন্যায় করে,36 কাহারও বিবাদের অন্যায় নিষ্পত্তি করে, তাহা প্রভু দেখিতে পারেন না।37 প্রভু আজ্ঞা না করিলে কাহার বাক্য সিদ্ধ হইতে পারে?38 পরাৎপরের মুখ হইতে কি বিপদ ও সম্পদ দুই বাহির হয় না?39 জীবিত মনুষ্য কেন আক্ষেপ করে, প্রত্যেক ব্যক্তি আপন পাপের দণ্ডের জন্য?40 আইস, আমরা আপন আপন পথের সন্ধান ও পরীক্ষা করি, এবং সদাপ্রভুর কাছে ফিরিয়া আসি;41 আইস, হস্তযুগলের সহিত হৃদয়কেও স্বর্গনিবাসী ঈশ্বরের দিকে উত্তোলন করি।42 আমরা অধর্ম্ম ও বিদ্রোহাচরণ করিয়াছি; তুমি ক্ষমা কর নাই।43 তুমি ক্রোধে আচ্ছাদন করিয়া আমাদিগকে তাড়না করিয়াছ, বধ করিয়াছ, দয়া কর নাই।44 তুমি মেঘে আপনাকে আচ্ছাদন করিয়াছ, প্রার্থনা তাহা ভেদ করিতে পারে না।45 তুমি জাতিগণের মধ্যে আমাদিগকে জঞ্জাল ও আবর্জ্জনার ন্যায় করিয়াছ।46 আমাদের সমস্ত শত্রু আমাদের বিরুদ্ধে মুখ খুলিয়া হা করিয়াছে।47 ত্রাস ও খাত, উৎসন্নতা ও ভঙ্গ, আমাদের প্রতি উপস্থিত।48 আমার জাতিরূপ কন্যার ভঙ্গ প্রযুক্ত আমার চক্ষু হইতে জলধারা বহিতেছে।49 আমার চক্ষু অবিশ্রান্ত অশ্রুতে ভাসিতেছে, বিরাম পায় না,50 যে পর্য্যন্ত সদাপ্রভু স্বর্গ হইতে হেঁট হইয়া দৃষ্টিপাত না করেন।51 আমার নগরীর সমস্ত কন্যার নিমিত্ত আমার চক্ষু আমার প্রাণকে আর্দ্র করে।52 অকারণে যাহারা আমার শত্রু, তাহারা আমাকে পক্ষীর ন্যায় শিকার করিয়াছে।53 তাহারা আমার জীবন কূপে সংহার করিয়াছে, এবং আমার উপরে প্রস্তর নিক্ষেপ করিয়াছে।54 আমার মস্তকের উপর দিয়া জল বহিল; আমি কহিলাম, আমি উচ্ছিন্ন হইয়াছি।55 হে সদাপ্রভু, আমি অধোলোকস্থ কূপের মধ্য হইতে তোমার নাম ডাকিয়াছি।56 তুমি আমার রব শুনিয়াছ; আমার নিঃশ্বাস, আমার আর্ত্তনাদ হইতে কর্ণ লুকাইও না।57 যে দিন আমি তোমাকে ডাকিয়াছি, সেই দিন তুমি নিকটে আসিয়াছ, বলিয়াছ, ভয় করিও না।58 হে প্রভু, তুমি আমার প্রাণের বিবাদ সকল নিষ্পত্তি করিয়াছ; আমার জীবন মুক্ত করিয়াছ।59 হে সদাপ্রভু, তুমি আমার প্রতি কৃত উপদ্রব দেখিয়াছ, আমার বিচার নিষ্পত্তি কর।60 উহাদের সমস্ত প্রতিশোধ ও আমার বিরুদ্ধে কৃত সমস্ত সঙ্কল্প তুমি দেখিয়াছ।61 হে সদাপ্রভু, তুমি উহাদের টিটকারি ও আমার বিরুদ্ধে কৃত উহাদের সমস্ত সঙ্কল্প শুনিয়াছ;62 আমার প্রতিরোধীদের মুখের বচন ও আমার বিরুদ্ধে সমস্ত দিন তাহাদের ভণভণানি শুনিয়াছ।63 তাহাদের উপবেশন ও উত্থান নিরীক্ষণ কর, আমি তাহাদের গীতস্বরূপ।64 হে সদাপ্রভু, তুমি তাহাদের হস্তকৃত কর্ম্মানুযায়ী প্রতিফল তাহাদিগকে দিবে।65 তুমি তাহাদিগকে চিত্তের জড়তা দিবে, তোমার অভিশাপ তাহাদের প্রতি বর্ত্তিবে।66 তুমি তাহাদিগকে ক্রোধে তাড়না করিবে, ও সদাপ্রভুর স্বর্গের নীচে হইতে উচ্ছিন্ন করিবে।