পবিত্র বাইবেল

গডস গ্রেইস গিফট
সামুয়েল ১

সামুয়েল ১ অধ্যায় 20

1 পরে দায়ূদ রামাস্থ নায়োৎ হইতে পলাইয়া যোনাথনের নিকটে আসিয়া কহিলেন, আমি কি করিয়াছি? আমার অপরাধ কি? তোমার পিতার কাছে আমার দোষ কি যে, তিনি আমার প্রাণ লইতে চেষ্টা করিতেছেন? 2 যোনাথন তাঁহাকে কহিলেন, এমন না হউক, তুমি মরিবে না; দেখ, আমার পিতা আমার কর্ণগোচর না করিয়া ক্ষুদ্র কি মহৎ কোন কর্ম্ম করেন না; তবে আমার পিতা আমা হইতে এই কথা কেন গোপন করিবেন? এ কথা কিছু নয়। 3 তাহাতে দায়ূদ দিব্য করিয়া পুনর্ব্বার কহিলেন, আমি তোমার দৃষ্টিতে অনুগ্রহ পাইয়াছি, ইহা তোমার পিতা বিলক্ষণ জানেন; এই জন্য কহিলেন, যোনাথন এ বিষয় জ্ঞাত না হউক, পাছে দুঃখিত হয়। কিন্তু জীবন্ত সদাপ্রভুর দিব্য, ও তোমার জীবিত প্রাণের দিব্য, আমার ও মৃত্যুর মধ্যে নিতান্ত এক পাদমাত্র অন্তর। 4 যোনাথন দায়ূদকে কহিলেন, তোমার প্রাণে যাহা বলে, আমি তোমার জন্য তাহাই করিব। 5 তখন দায়ূদ যোনাথনকে কহিলেন, দেখ, কাল অমাবস্যা, আমাকে রাজার সহিত ভোজনে বসিতেই হইবে; কিন্তু তুমি আমাকে যাইতে দেও, আমি তৃতীয় দিবস সায়ংকাল পর্য্যন্ত ক্ষেত্রে লুকাইয়া থাকি। 6 যদি তোমার পিতা আমার তত্ত্ব জিজ্ঞাসা করেন, তবে তুমি বলিবে, দায়ূদ আপন নগর বৈৎলেহমে তাড়াতাড়ি যাইবার জন্য আমার অনুমতি যাচ্ঞা করিল, কেননা সে স্থানে তাহাদের সমস্ত গোষ্ঠীর জন্য বার্ষিক যজ্ঞ হইতেছে। 7 তিনি যদি বলেন, ভাল, তবে তোমার এই দাসের কুশল; নতুবা যদি বাস্তবিক তিনি ক্রুদ্ধ হন, তবে তুমি জানিবে, তিনি অমঙ্গল করিবেন, স্থির করিয়াছেন। 8 অতএব, তুমি তোমার এই দাসের প্রতি সদয় ব্যবহার কর, কেননা তুমি তোমার সহিত তোমার এই দাসকে সদাপ্রভুর এক নিয়মে বদ্ধ করিয়াছ। কিন্তু যদি আমার কোন অপরাধ থাকে, তবে তুমিই আমাকে বধ কর; তুমি কেন তোমার পিতার নিকটে আমাকে লইয়া যাইবে? 9 যোনাথন কহিলেন, তোমার প্রতি এমন না ঘটুক; বরঞ্চ আমার পিতা তোমার প্রতি অমঙ্গল ঘটাইতে স্থির করিয়াছেন, ইহা যদি আমি নিশ্চয় জানিতে পারি, তবে কি তোমাকে বলিয়া দিব না? 10 দায়ূদ যোনাথনকে কহিলেন, তোমার পিতা যদি তোমাকে কর্কশ ভাবে উত্তর দেন, কে আমাকে জানাইবে? 11 যোনাথন দায়ূদকে কহিলেন, চল, আমরা বাহির হইয়া ক্ষেত্রে যাই। তাহাতে তাঁহারা দুই জন বাহির হইয়া ক্ষেত্রে গেলেন। 12 পরে যোনাথন দায়ূদকে কহিলেন, ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভু *সাক্ষী , কল্য বা পরশ্ব অনুমান এই সময়ে পিতার কাছে কথা পাড়িয়া দেখিব; দেখ, দায়ূদের পক্ষে ভাল বুঝিলে আমি কি তখনই তোমার কাছে লোক পাঠাইয়া তাহা তোমার কর্ণগোচর করিব না? 13 যদি তোমার অমঙ্গল করিতে আমার পিতার মনোরথ থাকে, আর আমি তাহা তোমার কর্ণগোচর না করি, সদাপ্রভু যোনাথনকে অমুক ও ততোধিক দণ্ড দিউন; আর আমি তোমাকে পাঠাইয়া দিব, তাহাতে তুমি কুশলে যাইবে; সদাপ্রভু যেমন আমার পিতার সহবর্ত্তী হইয়াছেন, তদ্রূপ তোমারও সহবর্ত্তী থাকুন। 14 আর আমি যেন না মরি, এই জন্য আমি যত দিন জীবিত থাকি, তুমি কেবল আমাকেই সদাপ্রভুর দয়া দেখাইবে, এমন নয়, 15 কিন্তু তুমি আমার কুলের প্রতিও দয়ার ত্রুটি কখন করিবে না; যখন সদাপ্রভু দায়ূদের প্রত্যেক শত্রুকে ভূতল হইতে উচ্ছিন্ন করিবেন, তখনও করিবে না। 16 এইরূপে যোনাথন দায়ূদের কুলের সহিত নিয়ম করিলেন; বলিলেন, আর সদাপ্রভু দায়ূদের শত্রুগণের কাছে পরিশোধ লইবেন। 17 পরে যোনাথন, দায়ূদের প্রতি তাঁহার যে প্রেম ছিল, তৎপ্রযুক্ত পুনর্ব্বার তাঁহাকে শপথ করাইলেন, কেননা তিনি আপন প্রাণের মত তাঁহাকে ভালবাসিতেন। 18 পরে যোনাথন দায়ূদকে কহিলেন, কাল অমাবস্যা; কাল তোমার আসন শূন্য থাকায় তোমার তত্ত্ব জিজ্ঞাসা করা হইবে; 19 তুমি পরশ্ব পর্য্যন্ত থাকিয়া, সেই দিন অতি ত্বরায় নামিয়া আসিয়া পূর্ব্ব কার্য্যের দিন যে স্থানে লুকাইয়া ছিলে, সেই স্থানে এষল নামক প্রস্তরের নিকটে থাকিবে। 20 আমি লক্ষ্য বিদ্ধ করিবার ছলে তিনটী তীর তাহার পার্শ্বে ক্ষেপণ করিব। 21 আর দেখ, আমার বালকটীকে পাঠাইব, বলিব, যাও, তীর কুড়াইয়া আন; আমি যদি বালকটীকে বলি, দেখ, তোমার এদিকে তীর আছে, তুলিয়া লও, তবে তুমি আসিও; জীবন্ত সদাপ্রভুর দিব্য, তোমার মঙ্গল, কোন ভয় নাই। 22 কিন্তু আমি যদি বালকটীকে বলি, দেখ, তোমার ওদিকে তীর আছে, তবে তুমি চলিয়া যাইও, কেননা সদাপ্রভু তোমাকে বিদায় করিলেন। 23 আর দেখ, তোমার ও আমার এই কথোপকথনের বিষয়ে সদাপ্রভু যুগে যুগে আমার ও তোমার মধ্যবর্ত্তী। 24 পরে দায়ূদ ক্ষেত্রে লুকাইয়া রহিলেন, ইতিমধ্যে অমাবস্যা উপস্থিত হইলে রাজা ভোজনে বসিলেন। 25 রাজা অন্য সময়ের ন্যায় আপন আসনে অর্থাৎ ভিত্তির নিকটস্থ আসনে বসিলেন। যোনাথন দাঁড়াইলেন, এবং অব্‌নের শৌলের পার্শ্বে বসিলেন; কিন্তু দায়ূদের স্থান শূন্য থাকিল। 26 তথাপি সে দিন শৌল কিছুই বলিলেন না, কেননা মনে মনে ভাবিলেন, তাহার কিছু হইয়াছে, সে শুচি নয়, সে অবশ্য অশুচি হইয়া থাকিবে। 27 কিন্তু পরদিবসে, মাসের দ্বিতীয় দিবসে, দায়ূদের স্থান শূন্য থাকাতে শৌল আপন পুত্র যোনাথনকে জিজ্ঞাসা করিলেন, যিশয়ের পুত্র কল্য ও অদ্য ভোজনে কেন আসিতেছে না? 28 যোনাথন শৌলকে উত্তর করিলেন, দায়ূদ বৈৎলেহমে যাইবার জন্য আমার কাছে অনেক বিনতি করিয়াছিল; 29 সে কহিল, অনুগ্রহ করিয়া আমাকে যাইতে দেও, কেননা নগরে আমাদের গোষ্ঠীর এক যজ্ঞ আছে, এবং আমার ভ্রাতাই আমাকে যাইতে আজ্ঞা করিয়াছেন; অতএব বিনয় করি, আমি যদি তোমার দৃষ্টিতে অনুগ্রহ পাইয়া থাকি, তবে আমি গিয়া আমার জ্ঞাতিদিগকে দেখিয়া আসি। এই জন্য সে রাজার মেজে আইসে নাই। 30 তখন যোনাথনের প্রতি শৌলের ক্রোধ প্রজ্বলিত হইল, তিনি তাঁহাকে কহিলেন, অরে বক্রশীলা বিদ্রোহিণী স্ত্রীর পুত্র, আমি কি জানি না যে, তুই আপনার লজ্জা ও মাতার আবরণীয়ের লজ্জা জন্মাইতে যিশয়ের পুত্রকে মনোনীত করিয়াছিস্‌? 31 ফলে যিশয়ের পুত্র যাবৎ ভূতলে থাকিবে, তাবৎ তুই স্থির থাকিবি না, তোর রাজ্যও স্থির থাকিবে না। অতএব এখন লোক পাঠাইয়া তাহাকে আমার কাছে আন্‌, কেননা সে মৃত্যুর সন্তান। 32 তাহাতে যোনাথন উত্তর করিয়া আপন পিতা শৌলকে কহিলেন, সে কেন হত হইবে? 33 সে কি করিয়াছে? তখন শৌল তাঁহাকে আঘাত করিবার জন্য তাঁহার দিকে আপন বড়শা নিক্ষেপ করিলেন। ইহাতে যোনাথন জানিতে পারিলেন যে, তাঁহার পিতা দায়ূদকে বধ করিতে মনস্থ করিয়াছেন। 34 তখন যোনাথন মহাক্রুদ্ধ হইয়া মেজ হইতে উঠিলেন, মাসের দ্বিতীয় দিবসে আহার করিলেন না; কেননা দায়ূদের জন্য তাঁহার দুঃখ হইল, কারণ তাঁহার পিতা তাঁহার অপমান করিয়াছিলেন। 35 পরে প্রাতঃকালে যোনাথন একটী ক্ষুদ্র বালককে সঙ্গে লইয়া ক্ষেত্রে, দায়ূদের সহিত যে স্থান নিরূপিত হইয়াছিল, তথায় গেলেন। 36 পরে তিনি বালকটীকে কহিলেন, আমি যে কয়েকটী তীর নিক্ষেপ করিব, তুমি দৌড়িয়া গিয়া তাহা কুড়াইয়া আন। তাহাতে বালকটী দৌড়িলে তিনি তাহার ওদিকে পড়িবার মত তীর নিক্ষেপ করিলেন। 37 আর বালকটী যোনাথনের নিক্ষিপ্ত তীরের কাছে উপস্থিত হইলে যোনাথন বালকটীকে ডাকিয়া কহিলেন, তোমার ওদিকে কি তীর নাই? 38 আবার যোনাথন বালককে ডাকিয়া কহিলেন, শীঘ্র দৌড়িয়া আইস, বিলম্ব করিও না। তখন যোনাথনের সেই বালক তীরগুলি কুড়াইয়া লইয়া আপন কর্ত্তার কাছে আসিল। 39 কিন্তু বালকটী কিছুই বুঝিল না, কেবল যোনাথন ও দায়ূদ সেই বিষয় জ্ঞাত ছিলেন। 40 পরে যোনাথন আপন তীর ধনুকাদি বালকটীকে দিয়া কহিলেন, এগুলি নগরে লইয়া যাও। 41 বালকটী যাইবামাত্র দায়ূদ দক্ষিণদিক্‌স্থ কোন স্থান হইতে উঠিয়া আসিয়া তিন বার ভূমিতে উবুড় হইয়া পড়িয়া প্রণিপাত করিলেন, এবং তাঁহারা দুই জনে পরস্পর চুম্বন ও রোদন করিলেন, কিন্তু দায়ূদ অধিক রোদন করিলেন। 42 পরে যোনাথন দায়ূদকে কহিলেন, কুশলে যাও, আমরা ত দুই জন সদাপ্রভুর নামে এই দিব্য করিয়াছি যে, সদাপ্রভু যুগে যুগে আমার ও তোমার মধ্যবর্ত্তী, এবং আমার বংশের ও তোমার বংশের মধ্যবর্ত্তী থাকিবেন। পরে তিনি উঠিয়া প্রস্থান করিলেন, আর যোনাথন নগরে চলিয়া গেলেন।
1 পরে দায়ূদ রামাস্থ নায়োৎ হইতে পলাইয়া যোনাথনের নিকটে আসিয়া কহিলেন, আমি কি করিয়াছি? আমার অপরাধ কি? তোমার পিতার কাছে আমার দোষ কি যে, তিনি আমার প্রাণ লইতে চেষ্টা করিতেছেন? .::. 2 যোনাথন তাঁহাকে কহিলেন, এমন না হউক, তুমি মরিবে না; দেখ, আমার পিতা আমার কর্ণগোচর না করিয়া ক্ষুদ্র কি মহৎ কোন কর্ম্ম করেন না; তবে আমার পিতা আমা হইতে এই কথা কেন গোপন করিবেন? এ কথা কিছু নয়। .::. 3 তাহাতে দায়ূদ দিব্য করিয়া পুনর্ব্বার কহিলেন, আমি তোমার দৃষ্টিতে অনুগ্রহ পাইয়াছি, ইহা তোমার পিতা বিলক্ষণ জানেন; এই জন্য কহিলেন, যোনাথন এ বিষয় জ্ঞাত না হউক, পাছে দুঃখিত হয়। কিন্তু জীবন্ত সদাপ্রভুর দিব্য, ও তোমার জীবিত প্রাণের দিব্য, আমার ও মৃত্যুর মধ্যে নিতান্ত এক পাদমাত্র অন্তর। .::. 4 যোনাথন দায়ূদকে কহিলেন, তোমার প্রাণে যাহা বলে, আমি তোমার জন্য তাহাই করিব। .::. 5 তখন দায়ূদ যোনাথনকে কহিলেন, দেখ, কাল অমাবস্যা, আমাকে রাজার সহিত ভোজনে বসিতেই হইবে; কিন্তু তুমি আমাকে যাইতে দেও, আমি তৃতীয় দিবস সায়ংকাল পর্য্যন্ত ক্ষেত্রে লুকাইয়া থাকি। .::. 6 যদি তোমার পিতা আমার তত্ত্ব জিজ্ঞাসা করেন, তবে তুমি বলিবে, দায়ূদ আপন নগর বৈৎলেহমে তাড়াতাড়ি যাইবার জন্য আমার অনুমতি যাচ্ঞা করিল, কেননা সে স্থানে তাহাদের সমস্ত গোষ্ঠীর জন্য বার্ষিক যজ্ঞ হইতেছে। .::. 7 তিনি যদি বলেন, ভাল, তবে তোমার এই দাসের কুশল; নতুবা যদি বাস্তবিক তিনি ক্রুদ্ধ হন, তবে তুমি জানিবে, তিনি অমঙ্গল করিবেন, স্থির করিয়াছেন। .::. 8 অতএব, তুমি তোমার এই দাসের প্রতি সদয় ব্যবহার কর, কেননা তুমি তোমার সহিত তোমার এই দাসকে সদাপ্রভুর এক নিয়মে বদ্ধ করিয়াছ। কিন্তু যদি আমার কোন অপরাধ থাকে, তবে তুমিই আমাকে বধ কর; তুমি কেন তোমার পিতার নিকটে আমাকে লইয়া যাইবে? .::. 9 যোনাথন কহিলেন, তোমার প্রতি এমন না ঘটুক; বরঞ্চ আমার পিতা তোমার প্রতি অমঙ্গল ঘটাইতে স্থির করিয়াছেন, ইহা যদি আমি নিশ্চয় জানিতে পারি, তবে কি তোমাকে বলিয়া দিব না? .::. 10 দায়ূদ যোনাথনকে কহিলেন, তোমার পিতা যদি তোমাকে কর্কশ ভাবে উত্তর দেন, কে আমাকে জানাইবে? .::. 11 যোনাথন দায়ূদকে কহিলেন, চল, আমরা বাহির হইয়া ক্ষেত্রে যাই। তাহাতে তাঁহারা দুই জন বাহির হইয়া ক্ষেত্রে গেলেন। .::. 12 পরে যোনাথন দায়ূদকে কহিলেন, ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভু *সাক্ষী , কল্য বা পরশ্ব অনুমান এই সময়ে পিতার কাছে কথা পাড়িয়া দেখিব; দেখ, দায়ূদের পক্ষে ভাল বুঝিলে আমি কি তখনই তোমার কাছে লোক পাঠাইয়া তাহা তোমার কর্ণগোচর করিব না? .::. 13 যদি তোমার অমঙ্গল করিতে আমার পিতার মনোরথ থাকে, আর আমি তাহা তোমার কর্ণগোচর না করি, সদাপ্রভু যোনাথনকে অমুক ও ততোধিক দণ্ড দিউন; আর আমি তোমাকে পাঠাইয়া দিব, তাহাতে তুমি কুশলে যাইবে; সদাপ্রভু যেমন আমার পিতার সহবর্ত্তী হইয়াছেন, তদ্রূপ তোমারও সহবর্ত্তী থাকুন। .::. 14 আর আমি যেন না মরি, এই জন্য আমি যত দিন জীবিত থাকি, তুমি কেবল আমাকেই সদাপ্রভুর দয়া দেখাইবে, এমন নয়, .::. 15 কিন্তু তুমি আমার কুলের প্রতিও দয়ার ত্রুটি কখন করিবে না; যখন সদাপ্রভু দায়ূদের প্রত্যেক শত্রুকে ভূতল হইতে উচ্ছিন্ন করিবেন, তখনও করিবে না। .::. 16 এইরূপে যোনাথন দায়ূদের কুলের সহিত নিয়ম করিলেন; বলিলেন, আর সদাপ্রভু দায়ূদের শত্রুগণের কাছে পরিশোধ লইবেন। .::. 17 পরে যোনাথন, দায়ূদের প্রতি তাঁহার যে প্রেম ছিল, তৎপ্রযুক্ত পুনর্ব্বার তাঁহাকে শপথ করাইলেন, কেননা তিনি আপন প্রাণের মত তাঁহাকে ভালবাসিতেন। .::. 18 পরে যোনাথন দায়ূদকে কহিলেন, কাল অমাবস্যা; কাল তোমার আসন শূন্য থাকায় তোমার তত্ত্ব জিজ্ঞাসা করা হইবে; .::. 19 তুমি পরশ্ব পর্য্যন্ত থাকিয়া, সেই দিন অতি ত্বরায় নামিয়া আসিয়া পূর্ব্ব কার্য্যের দিন যে স্থানে লুকাইয়া ছিলে, সেই স্থানে এষল নামক প্রস্তরের নিকটে থাকিবে। .::. 20 আমি লক্ষ্য বিদ্ধ করিবার ছলে তিনটী তীর তাহার পার্শ্বে ক্ষেপণ করিব। .::. 21 আর দেখ, আমার বালকটীকে পাঠাইব, বলিব, যাও, তীর কুড়াইয়া আন; আমি যদি বালকটীকে বলি, দেখ, তোমার এদিকে তীর আছে, তুলিয়া লও, তবে তুমি আসিও; জীবন্ত সদাপ্রভুর দিব্য, তোমার মঙ্গল, কোন ভয় নাই। .::. 22 কিন্তু আমি যদি বালকটীকে বলি, দেখ, তোমার ওদিকে তীর আছে, তবে তুমি চলিয়া যাইও, কেননা সদাপ্রভু তোমাকে বিদায় করিলেন। .::. 23 আর দেখ, তোমার ও আমার এই কথোপকথনের বিষয়ে সদাপ্রভু যুগে যুগে আমার ও তোমার মধ্যবর্ত্তী। .::. 24 পরে দায়ূদ ক্ষেত্রে লুকাইয়া রহিলেন, ইতিমধ্যে অমাবস্যা উপস্থিত হইলে রাজা ভোজনে বসিলেন। .::. 25 রাজা অন্য সময়ের ন্যায় আপন আসনে অর্থাৎ ভিত্তির নিকটস্থ আসনে বসিলেন। যোনাথন দাঁড়াইলেন, এবং অব্‌নের শৌলের পার্শ্বে বসিলেন; কিন্তু দায়ূদের স্থান শূন্য থাকিল। .::. 26 তথাপি সে দিন শৌল কিছুই বলিলেন না, কেননা মনে মনে ভাবিলেন, তাহার কিছু হইয়াছে, সে শুচি নয়, সে অবশ্য অশুচি হইয়া থাকিবে। .::. 27 কিন্তু পরদিবসে, মাসের দ্বিতীয় দিবসে, দায়ূদের স্থান শূন্য থাকাতে শৌল আপন পুত্র যোনাথনকে জিজ্ঞাসা করিলেন, যিশয়ের পুত্র কল্য ও অদ্য ভোজনে কেন আসিতেছে না? .::. 28 যোনাথন শৌলকে উত্তর করিলেন, দায়ূদ বৈৎলেহমে যাইবার জন্য আমার কাছে অনেক বিনতি করিয়াছিল; .::. 29 সে কহিল, অনুগ্রহ করিয়া আমাকে যাইতে দেও, কেননা নগরে আমাদের গোষ্ঠীর এক যজ্ঞ আছে, এবং আমার ভ্রাতাই আমাকে যাইতে আজ্ঞা করিয়াছেন; অতএব বিনয় করি, আমি যদি তোমার দৃষ্টিতে অনুগ্রহ পাইয়া থাকি, তবে আমি গিয়া আমার জ্ঞাতিদিগকে দেখিয়া আসি। এই জন্য সে রাজার মেজে আইসে নাই। .::. 30 তখন যোনাথনের প্রতি শৌলের ক্রোধ প্রজ্বলিত হইল, তিনি তাঁহাকে কহিলেন, অরে বক্রশীলা বিদ্রোহিণী স্ত্রীর পুত্র, আমি কি জানি না যে, তুই আপনার লজ্জা ও মাতার আবরণীয়ের লজ্জা জন্মাইতে যিশয়ের পুত্রকে মনোনীত করিয়াছিস্‌? .::. 31 ফলে যিশয়ের পুত্র যাবৎ ভূতলে থাকিবে, তাবৎ তুই স্থির থাকিবি না, তোর রাজ্যও স্থির থাকিবে না। অতএব এখন লোক পাঠাইয়া তাহাকে আমার কাছে আন্‌, কেননা সে মৃত্যুর সন্তান। .::. 32 তাহাতে যোনাথন উত্তর করিয়া আপন পিতা শৌলকে কহিলেন, সে কেন হত হইবে? .::. 33 সে কি করিয়াছে? তখন শৌল তাঁহাকে আঘাত করিবার জন্য তাঁহার দিকে আপন বড়শা নিক্ষেপ করিলেন। ইহাতে যোনাথন জানিতে পারিলেন যে, তাঁহার পিতা দায়ূদকে বধ করিতে মনস্থ করিয়াছেন। .::. 34 তখন যোনাথন মহাক্রুদ্ধ হইয়া মেজ হইতে উঠিলেন, মাসের দ্বিতীয় দিবসে আহার করিলেন না; কেননা দায়ূদের জন্য তাঁহার দুঃখ হইল, কারণ তাঁহার পিতা তাঁহার অপমান করিয়াছিলেন। .::. 35 পরে প্রাতঃকালে যোনাথন একটী ক্ষুদ্র বালককে সঙ্গে লইয়া ক্ষেত্রে, দায়ূদের সহিত যে স্থান নিরূপিত হইয়াছিল, তথায় গেলেন। .::. 36 পরে তিনি বালকটীকে কহিলেন, আমি যে কয়েকটী তীর নিক্ষেপ করিব, তুমি দৌড়িয়া গিয়া তাহা কুড়াইয়া আন। তাহাতে বালকটী দৌড়িলে তিনি তাহার ওদিকে পড়িবার মত তীর নিক্ষেপ করিলেন। .::. 37 আর বালকটী যোনাথনের নিক্ষিপ্ত তীরের কাছে উপস্থিত হইলে যোনাথন বালকটীকে ডাকিয়া কহিলেন, তোমার ওদিকে কি তীর নাই? .::. 38 আবার যোনাথন বালককে ডাকিয়া কহিলেন, শীঘ্র দৌড়িয়া আইস, বিলম্ব করিও না। তখন যোনাথনের সেই বালক তীরগুলি কুড়াইয়া লইয়া আপন কর্ত্তার কাছে আসিল। .::. 39 কিন্তু বালকটী কিছুই বুঝিল না, কেবল যোনাথন ও দায়ূদ সেই বিষয় জ্ঞাত ছিলেন। .::. 40 পরে যোনাথন আপন তীর ধনুকাদি বালকটীকে দিয়া কহিলেন, এগুলি নগরে লইয়া যাও। .::. 41 বালকটী যাইবামাত্র দায়ূদ দক্ষিণদিক্‌স্থ কোন স্থান হইতে উঠিয়া আসিয়া তিন বার ভূমিতে উবুড় হইয়া পড়িয়া প্রণিপাত করিলেন, এবং তাঁহারা দুই জনে পরস্পর চুম্বন ও রোদন করিলেন, কিন্তু দায়ূদ অধিক রোদন করিলেন। .::. 42 পরে যোনাথন দায়ূদকে কহিলেন, কুশলে যাও, আমরা ত দুই জন সদাপ্রভুর নামে এই দিব্য করিয়াছি যে, সদাপ্রভু যুগে যুগে আমার ও তোমার মধ্যবর্ত্তী, এবং আমার বংশের ও তোমার বংশের মধ্যবর্ত্তী থাকিবেন। পরে তিনি উঠিয়া প্রস্থান করিলেন, আর যোনাথন নগরে চলিয়া গেলেন। .::.
  • সামুয়েল ১ অধ্যায় 1  
  • সামুয়েল ১ অধ্যায় 2  
  • সামুয়েল ১ অধ্যায় 3  
  • সামুয়েল ১ অধ্যায় 4  
  • সামুয়েল ১ অধ্যায় 5  
  • সামুয়েল ১ অধ্যায় 6  
  • সামুয়েল ১ অধ্যায় 7  
  • সামুয়েল ১ অধ্যায় 8  
  • সামুয়েল ১ অধ্যায় 9  
  • সামুয়েল ১ অধ্যায় 10  
  • সামুয়েল ১ অধ্যায় 11  
  • সামুয়েল ১ অধ্যায় 12  
  • সামুয়েল ১ অধ্যায় 13  
  • সামুয়েল ১ অধ্যায় 14  
  • সামুয়েল ১ অধ্যায় 15  
  • সামুয়েল ১ অধ্যায় 16  
  • সামুয়েল ১ অধ্যায় 17  
  • সামুয়েল ১ অধ্যায় 18  
  • সামুয়েল ১ অধ্যায় 19  
  • সামুয়েল ১ অধ্যায় 20  
  • সামুয়েল ১ অধ্যায় 21  
  • সামুয়েল ১ অধ্যায় 22  
  • সামুয়েল ১ অধ্যায় 23  
  • সামুয়েল ১ অধ্যায় 24  
  • সামুয়েল ১ অধ্যায় 25  
  • সামুয়েল ১ অধ্যায় 26  
  • সামুয়েল ১ অধ্যায় 27  
  • সামুয়েল ১ অধ্যায় 28  
  • সামুয়েল ১ অধ্যায় 29  
  • সামুয়েল ১ অধ্যায় 30  
  • সামুয়েল ১ অধ্যায় 31  
×

Alert

×

Bengali Letters Keypad References