পবিত্র বাইবেল

বাইবেল সোসাইটি অফ ইন্ডিয়া (BSI)
মার্ক

মার্ক অধ্যায় 10

1 সেই স্থান হইতে উঠিয়া তিনি যিহূদিয়ার অঞ্চলে ও যর্দ্দনের পরপারে আসিলেন; তাহাতে তাঁহার নিকটে আবার লোক সমাগত হইতে লাগিল, এবং তিনি নিজ রীতি অনুসারে আবার তাহাদিগকে উপদেশ দিলেন। 2 তখন ফরীশীরা নিকটে আসিয়া পরীক্ষাভাবে তাঁহাকে জিজ্ঞাসা করিল, স্ত্রী পরিত্যাগ করা কি পুরুষের পক্ষে বিধেয়? 3 তিনি উত্তর করিয়া তাহাদিগকে কহিলেন, মোশি তোমাদিগকে কি আজ্ঞা দিয়াছেন? 4 তাহারা কহিল, ত্যাগপত্র লিখিয়া আপন স্ত্রীকে পরিত্যাগ করিবার অনুমতি মোশি দিয়াছেন । 5 যীশু তাহাদিগকে কহিলেন, তোমাদের অন্তঃকরণ কঠিন বলিয়া তিনি এই বিধি লিখিয়াছেন; 6 কিন্তু সৃষ্টির আদি হইতে ঈশ্বর পুরুষ ও স্ত্রী করিয়া তাহাদিগকে নির্ম্মাণ করিয়াছেন; 7 “এই কারণ মনুষ্য আপন পিতামাতাকে ত্যাগ করিয়া আপন স্ত্রীতে আসক্ত হইবে, 8 আর সে দুই জন একাঙ্গ হইবে;” সুতরাং তাহারা আর দুই নয়, কিন্তু একাঙ্গ। 9 অতএব ঈশ্বর যাহার যোগ করিয়া দিয়াছেন, মনুষ্য তাহার বিয়োগ না করুক। 10 পরে শিষ্যেরা গৃহে আবার সেই বিষয় তাঁহাকে জিজ্ঞাসা করিলেন। 11 তিনি তাঁহাদিগকে কহিলেন, যে কেহ আপন স্ত্রীকে পরিত্যাগ করিয়া অন্যাকে বিবাহ করে, সে তাহার বিরুদ্ধে ব্যভিচার করে; 12 আর স্ত্রী যদি আপন স্বামীকে পরিত্যাগ করিয়া আর এক জনকে বিবাহ করে, তবে সেও ব্যভিচার করে। 13 পরে লোকেরা কতকগুলি শিশুকে তাঁহার নিকটে আনিল, যেন তিনি তাহাদিগকে স্পর্শ করেন; তাহাতে শিষ্যেরা উহাদিগকে ভর্ৎসনা করিলেন। 14 কিন্তু যীশু তাহা দেখিয়া অসন্তুষ্ট হইলেন, আর তাঁহাদিগকে কহিলেন, শিশুদিগকে আমার নিকটে আসিতে দেও, বারণ করিও না; কেননা ঈশ্বরের রাজ্য এই মত লোকদেরই। 15 আমি তোমাদিগকে সত্য বলিতেছি, যে ব্যক্তি শিশুবৎ হইয়া ঈশ্বরের রাজ্য গ্রহণ না করে, সে কোন মতে তাহাতে প্রবেশ করিতে পাইবে না। 16 পরে তিনি তাহাদিগকে কোলে করিলেন, ও তাহাদের উপরে হস্তার্পণ করিয়া আশীর্ব্বাদ করিলেন। 17 পরে তিনি বাহির হইয়া পথে যাইতেছেন, এমন সময়ে এক জন দৌড়িয়া আসিয়া তাঁহার সম্মুখে জানু পাতিয়া জিজ্ঞাসা করিল, হে সদ্‌গুরু, অনন্ত জীবনের অধিকারী হইবার জন্য আমি কি করিব? 18 যীশু তাহাকে কহিলেন, আমাকে সৎ কেন বলিতেছ? এক জন ব্যতিরেকে সৎ আর কেহ নাই, তিনি ঈশ্বর। 19 তুমি আজ্ঞা সকল জান, “নরহত্যা করিও না, ব্যভিচার করিও না, চুরি করিও না, মিথ্যাসাক্ষ্য দিও না, প্রবঞ্চনা করিও না, তোমার পিতামাতাকে সমাদর করিও”। 20 সেই ব্যক্তি তাঁহাকে কহিল, হে গুরু, বাল্যকাল অবধি এই সকল পালন করিয়া আসিতেছি। 21 যীশু তাহার প্রতি দৃষ্টিপাত করিয়া তাহাকে ভাল বাসিলেন, এবং কহিলেন, এক বিষয়ে তোমার ত্রুটি আছে, যাও, তোমার যাহা কিছু আছে, বিক্রয় কর, আর দরিদ্রদিগকে দান কর, তাহাতে স্বর্গে ধন পাইবে; আর আইস, আমার পশ্চাদগামী হও। 22 এই কথায় সে বিষণ্ণ হইল, দুঃখিত হইয়া চলিয়া গেল, কারণ তাহার বিস্তর সম্পত্তি ছিল। 23 তখন যীশু চারিদিকে দৃষ্টিপাত করিয়া আপন শিষ্যদিগকে কহিলেন, যাহাদের ধন আছে, তাহাদের পক্ষে ঈশ্বরের রাজ্যে প্রবেশ করা কেমন দুষ্কর! 24 তাঁহার কথায় শিষ্যেরা চমৎকৃত হইলেন; কিন্তু যীশু পুনর্ব্বার তাঁহাদিগকে কহিলেন, বৎসগণ, যাহারা ধনে নির্ভর করে, ঈশ্বরের রাজ্যে প্রবেশ করা তাহাদের পক্ষে কেমন দুষ্কর! 25 ঈশ্বরের রাজ্যে ধনবানের প্রবেশ করা অপেক্ষা বরং সূচীর ছিদ্র দিয়া উটের যাওয়া সহজ। 26 তখন তাঁহারা অতিশয় আশ্চর্য্য মনে করিলেন, কহিলেন, তবে কাহার পরিত্রাণ হইতে পারে? 27 যীশু তাঁহাদের প্রতি দৃষ্টি করিয়া কহিলেন, ইহা মনুষ্যের অসাধ্য বটে, কিন্তু ঈশ্বরের অসাধ্য নয়, কারণ ঈশ্বরের সকলই সাধ্য। 28 তখন পিতর তাঁহাকে বলিতে লাগিলেন, দেখুন, আমরা সমস্তই পরিত্যাগ করিয়া আপনার পশ্চাদগামী হইয়াছি। 29 যীশু বলিলেন, আমি তোমাদিগকে সত্য কহিতেছি, এমন কেহ নাই, যে আমার নিমিত্ত ও সুসমাচারের নিমিত্ত বাটী কি ভ্রাতৃগণ কি ভগিনী কি মাতা কি পিতা কি সন্তানসন্ততি কি ক্ষেত্র ত্যাগ করিয়াছে, কিন্তু এখন ইহকালে তাহার শতগুণ না পাইবে; 30 সে বাটী, ভ্রাতা, ভগিনী, মাতা, সন্তান ও ক্ষেত্র, তাড়নার সহিত এই সকল পাইবে, এবং আগামী যুগে অনন্ত জীবন পাইবে। 31 কিন্তু যাহারা প্রথম, এমন অনেক লোক শেষে পড়িবে, ও যাহারা শেষের, তাহারা প্রথম হইবে। 32 একদা তাঁহারা পথে ছিলেন, যিরূশালেমে যাইতেছিলেন, এবং যীশু তাঁহাদের অগ্রে অগ্রে চলিতেছিলেন, তখন তাঁহারা চমৎকার জ্ঞান করিলেন; আর যাঁহারা পশ্চাতে চলিতেছিলেন, তাঁহারা ভয় পাইলেন। পরে তিনি আবার সেই বারো জনকে লইয়া আপনার প্রতি যাহা যাহা ঘটিবে, তাহা তাঁহাদিগকে বলিতে লাগিলেন। 33 তিনি বলিলেন, দেখ, আমরা যিরূশালেমে যাইতেছি, আর মনুষ্যপুত্র প্রধান যাজক ও অধ্যাপকগণের হস্তে সমর্পিত হইবেন; এবং তাহারা তাঁহার প্রাণদণ্ড বিধান করিবে, এবং পরজাতীয়দের হস্তে তাঁহাকে সমর্পণ করিবে। 34 আর তাহারা তাঁহাকে বিদ্রূপ করিবে, তাঁহার মুখে থুথু দিবে, তাঁহাকে কোড়া মারিবে ও বধ করিবে; আর তিন দিন পরে তিনি আবার উঠিবেন। 35 পরে সিবদিয়ের দুই পুত্র, যাকোব ও যোহন, তাঁহার নিকটে আসিয়া কহিলেন, হে গুরু, আমাদের বাঞ্ছা এই, আমরা আপনার কাছে যাহা যাচ্ঞা করিব, আপনি তাহা আমাদের জন্য করুন। 36 তিনি তাঁহাদিগকে কহিলেন, তোমাদের বাঞ্ছা কি? তোমাদের নিমিত্ত আমি কি করিব? 37 তাঁহারা কহিলেন, আমাদিগকে এই বর দান করুন, যেন আপনি মহিমাপ্রাপ্ত হইলে আমরা এক জন আপনার দক্ষিণ পার্শ্বে, আর এক জন বাম পার্শ্বে বসিতে পাই। 38 যীশু তাঁহাদিগকে বলিলেন, তোমরা কি যাচ্ঞা করিতেছ, তাহা বুঝ না। আমি যে পাত্রে পান করি, তাহাতে কি তোমরা পান করিতে পার, এবং আমি যে বাপ্তিস্মে বাপ্তাইজিত হই, তাহাতে কি তোমরা বাপ্তাইজিত হইতে পার? 39 তাঁহারা বলিলেন, পারি। যীশু তাঁহাদিগকে কহিলেন, আমি যে পাত্রে পান করি, তাহাতে তোমরা পান করিবে; এবং আমি যে বাপ্তিস্মে বাপ্তাইজিত হই, তাহাতে তোমরাও বাপ্তাইজিত হইবে; 40 কিন্তু যাহাদের জন্য স্থান প্রস্তুত করা গিয়াছে, তাহাদের ভিন্ন আর কাহাকেও আমার দক্ষিণ পার্শ্বে কি বাম পার্শ্বে বসিতে দিতে আমার অধিকার নাই। 41 এই কথা শুনিয়া অন্য দশ জন যাকোব ও যোহনের প্রতি রুষ্ট হইতে লাগিলেন। 42 কিন্তু যীশু তাঁহাদিগকে কাছে ডাকিয়া কহিলেন, তোমরা জান, জাতিগণের মধ্যে যাহারা শাসনকর্ত্তা বলিয়া গণ্য, তাহারা তাহাদের উপরে প্রভুত্ব করে, এবং তাহাদের মধ্যে যাহারা মহান্‌, তাহারা তাহাদের উপরে কর্ত্তৃত্ব করে। 43 তোমাদের মধ্যে সেরূপ নয়; কিন্তু তোমাদের মধ্যে যে কেহ মহান্‌ হইতে চায়, সে তোমাদের পরিচারক হইবে; 44 এবং তোমাদের মধ্যে যে কেহ প্রধান হইতে চায়, সে সকলের দাস হইবে। 45 কারণ বাস্তবিক মনুষ্যপুত্রও পরিচর্য্যা পাইতে আসেন নাই, কিন্তু পরিচর্য্যা করিতে এবং অনেকের পরিবর্ত্তে আপন প্রাণ মুক্তির মূল্যরূপে দিতে আসিয়াছেন। 46 পরে তাঁহারা যিরীহোতে আসিলেন। আর তিনি যখন আপন শিষ্যগণের ও বিস্তর লোকের সহিত যিরীহো হইতে বাহির হইয়া যাইতেছেন, তখন তীময়ের পুত্র বর্‌তীময় নামে এক জন অন্ধ ভিক্ষুক পথের পার্শ্বে বসিয়াছিল। 47 সে যখন শুনিতে পাইল, তিনি নাসরতীয় যীশু, তখন চেঁচাইয়া বলিতে লাগিল, হে যীশু, দায়ূদ-সন্তান, আমার প্রতি দয়া করুন। 48 তখন অনেক লোক চুপ চুপ বলিয়া তাহাকে ধমক্‌ দিল; কিন্তু সে আরও অধিক চেঁচাইয়া বলিতে লাগিল, হে দায়ূদ-সন্তান, আমার প্রতি দয়া করুন। 49 তখন যীশু থামিয়া বলিলেন, উহাকে ডাক; তাহাতে লোকেরা সেই অন্ধকে ডাকিয়া বলিল, ওহে, সাহস কর, উঠ, উনি তোমাকে ডাকিতেছেন। 50 তখন সে আপনার কাপড় ফেলিয়া লম্ফ দিয়া উঠিয়া যীশুর নিকটে গেল। 51 যীশু তাহাকে কহিলেন, তুমি কি চাও? আমি তোমার নিমিত্ত কি করিব? অন্ধ তাঁহাকে কহিল, রব্বূণী *হে গুরু , যেন দেখিতে পাই। 52 যীশু তাহাকে কহিলেন, চলিয়া যাও, তোমার বিশ্বাস তোমাকে সুস্থ করিল। তখনই সে দেখিতে পাইল, এবং পথ দিয়া তাঁহার পশ্চাৎ পশ্চাৎ চলিতে লাগিল।
1. সেই স্থান হইতে উঠিয়া তিনি যিহূদিয়ার অঞ্চলে ও যর্দ্দনের পরপারে আসিলেন; তাহাতে তাঁহার নিকটে আবার লোক সমাগত হইতে লাগিল, এবং তিনি নিজ রীতি অনুসারে আবার তাহাদিগকে উপদেশ দিলেন। 2. তখন ফরীশীরা নিকটে আসিয়া পরীক্ষাভাবে তাঁহাকে জিজ্ঞাসা করিল, স্ত্রী পরিত্যাগ করা কি পুরুষের পক্ষে বিধেয়? 3. তিনি উত্তর করিয়া তাহাদিগকে কহিলেন, মোশি তোমাদিগকে কি আজ্ঞা দিয়াছেন? 4. তাহারা কহিল, ত্যাগপত্র লিখিয়া আপন স্ত্রীকে পরিত্যাগ করিবার অনুমতি মোশি দিয়াছেন । 5. যীশু তাহাদিগকে কহিলেন, তোমাদের অন্তঃকরণ কঠিন বলিয়া তিনি এই বিধি লিখিয়াছেন; 6. কিন্তু সৃষ্টির আদি হইতে ঈশ্বর পুরুষ ও স্ত্রী করিয়া তাহাদিগকে নির্ম্মাণ করিয়াছেন; 7. “এই কারণ মনুষ্য আপন পিতামাতাকে ত্যাগ করিয়া আপন স্ত্রীতে আসক্ত হইবে, 8. আর সে দুই জন একাঙ্গ হইবে;” সুতরাং তাহারা আর দুই নয়, কিন্তু একাঙ্গ। 9. অতএব ঈশ্বর যাহার যোগ করিয়া দিয়াছেন, মনুষ্য তাহার বিয়োগ না করুক। 10. পরে শিষ্যেরা গৃহে আবার সেই বিষয় তাঁহাকে জিজ্ঞাসা করিলেন। 11. তিনি তাঁহাদিগকে কহিলেন, যে কেহ আপন স্ত্রীকে পরিত্যাগ করিয়া অন্যাকে বিবাহ করে, সে তাহার বিরুদ্ধে ব্যভিচার করে; 12. আর স্ত্রী যদি আপন স্বামীকে পরিত্যাগ করিয়া আর এক জনকে বিবাহ করে, তবে সেও ব্যভিচার করে। 13. পরে লোকেরা কতকগুলি শিশুকে তাঁহার নিকটে আনিল, যেন তিনি তাহাদিগকে স্পর্শ করেন; তাহাতে শিষ্যেরা উহাদিগকে ভর্ৎসনা করিলেন। 14. কিন্তু যীশু তাহা দেখিয়া অসন্তুষ্ট হইলেন, আর তাঁহাদিগকে কহিলেন, শিশুদিগকে আমার নিকটে আসিতে দেও, বারণ করিও না; কেননা ঈশ্বরের রাজ্য এই মত লোকদেরই। 15. আমি তোমাদিগকে সত্য বলিতেছি, যে ব্যক্তি শিশুবৎ হইয়া ঈশ্বরের রাজ্য গ্রহণ না করে, সে কোন মতে তাহাতে প্রবেশ করিতে পাইবে না। 16. পরে তিনি তাহাদিগকে কোলে করিলেন, ও তাহাদের উপরে হস্তার্পণ করিয়া আশীর্ব্বাদ করিলেন। 17. পরে তিনি বাহির হইয়া পথে যাইতেছেন, এমন সময়ে এক জন দৌড়িয়া আসিয়া তাঁহার সম্মুখে জানু পাতিয়া জিজ্ঞাসা করিল, হে সদ্‌গুরু, অনন্ত জীবনের অধিকারী হইবার জন্য আমি কি করিব? 18. যীশু তাহাকে কহিলেন, আমাকে সৎ কেন বলিতেছ? এক জন ব্যতিরেকে সৎ আর কেহ নাই, তিনি ঈশ্বর। 19. তুমি আজ্ঞা সকল জান, “নরহত্যা করিও না, ব্যভিচার করিও না, চুরি করিও না, মিথ্যাসাক্ষ্য দিও না, প্রবঞ্চনা করিও না, তোমার পিতামাতাকে সমাদর করিও”। 20. সেই ব্যক্তি তাঁহাকে কহিল, হে গুরু, বাল্যকাল অবধি এই সকল পালন করিয়া আসিতেছি। 21. যীশু তাহার প্রতি দৃষ্টিপাত করিয়া তাহাকে ভাল বাসিলেন, এবং কহিলেন, এক বিষয়ে তোমার ত্রুটি আছে, যাও, তোমার যাহা কিছু আছে, বিক্রয় কর, আর দরিদ্রদিগকে দান কর, তাহাতে স্বর্গে ধন পাইবে; আর আইস, আমার পশ্চাদগামী হও। 22. এই কথায় সে বিষণ্ণ হইল, দুঃখিত হইয়া চলিয়া গেল, কারণ তাহার বিস্তর সম্পত্তি ছিল। 23. তখন যীশু চারিদিকে দৃষ্টিপাত করিয়া আপন শিষ্যদিগকে কহিলেন, যাহাদের ধন আছে, তাহাদের পক্ষে ঈশ্বরের রাজ্যে প্রবেশ করা কেমন দুষ্কর! 24. তাঁহার কথায় শিষ্যেরা চমৎকৃত হইলেন; কিন্তু যীশু পুনর্ব্বার তাঁহাদিগকে কহিলেন, বৎসগণ, যাহারা ধনে নির্ভর করে, ঈশ্বরের রাজ্যে প্রবেশ করা তাহাদের পক্ষে কেমন দুষ্কর! 25. ঈশ্বরের রাজ্যে ধনবানের প্রবেশ করা অপেক্ষা বরং সূচীর ছিদ্র দিয়া উটের যাওয়া সহজ। 26. তখন তাঁহারা অতিশয় আশ্চর্য্য মনে করিলেন, কহিলেন, তবে কাহার পরিত্রাণ হইতে পারে? 27. যীশু তাঁহাদের প্রতি দৃষ্টি করিয়া কহিলেন, ইহা মনুষ্যের অসাধ্য বটে, কিন্তু ঈশ্বরের অসাধ্য নয়, কারণ ঈশ্বরের সকলই সাধ্য। 28. তখন পিতর তাঁহাকে বলিতে লাগিলেন, দেখুন, আমরা সমস্তই পরিত্যাগ করিয়া আপনার পশ্চাদগামী হইয়াছি। 29. যীশু বলিলেন, আমি তোমাদিগকে সত্য কহিতেছি, এমন কেহ নাই, যে আমার নিমিত্ত ও সুসমাচারের নিমিত্ত বাটী কি ভ্রাতৃগণ কি ভগিনী কি মাতা কি পিতা কি সন্তানসন্ততি কি ক্ষেত্র ত্যাগ করিয়াছে, কিন্তু এখন ইহকালে তাহার শতগুণ না পাইবে; 30. সে বাটী, ভ্রাতা, ভগিনী, মাতা, সন্তান ও ক্ষেত্র, তাড়নার সহিত এই সকল পাইবে, এবং আগামী যুগে অনন্ত জীবন পাইবে। 31. কিন্তু যাহারা প্রথম, এমন অনেক লোক শেষে পড়িবে, ও যাহারা শেষের, তাহারা প্রথম হইবে। 32. একদা তাঁহারা পথে ছিলেন, যিরূশালেমে যাইতেছিলেন, এবং যীশু তাঁহাদের অগ্রে অগ্রে চলিতেছিলেন, তখন তাঁহারা চমৎকার জ্ঞান করিলেন; আর যাঁহারা পশ্চাতে চলিতেছিলেন, তাঁহারা ভয় পাইলেন। পরে তিনি আবার সেই বারো জনকে লইয়া আপনার প্রতি যাহা যাহা ঘটিবে, তাহা তাঁহাদিগকে বলিতে লাগিলেন। 33. তিনি বলিলেন, দেখ, আমরা যিরূশালেমে যাইতেছি, আর মনুষ্যপুত্র প্রধান যাজক ও অধ্যাপকগণের হস্তে সমর্পিত হইবেন; এবং তাহারা তাঁহার প্রাণদণ্ড বিধান করিবে, এবং পরজাতীয়দের হস্তে তাঁহাকে সমর্পণ করিবে। 34. আর তাহারা তাঁহাকে বিদ্রূপ করিবে, তাঁহার মুখে থুথু দিবে, তাঁহাকে কোড়া মারিবে ও বধ করিবে; আর তিন দিন পরে তিনি আবার উঠিবেন। 35. পরে সিবদিয়ের দুই পুত্র, যাকোব ও যোহন, তাঁহার নিকটে আসিয়া কহিলেন, হে গুরু, আমাদের বাঞ্ছা এই, আমরা আপনার কাছে যাহা যাচ্ঞা করিব, আপনি তাহা আমাদের জন্য করুন। 36. তিনি তাঁহাদিগকে কহিলেন, তোমাদের বাঞ্ছা কি? তোমাদের নিমিত্ত আমি কি করিব? 37. তাঁহারা কহিলেন, আমাদিগকে এই বর দান করুন, যেন আপনি মহিমাপ্রাপ্ত হইলে আমরা এক জন আপনার দক্ষিণ পার্শ্বে, আর এক জন বাম পার্শ্বে বসিতে পাই। 38. যীশু তাঁহাদিগকে বলিলেন, তোমরা কি যাচ্ঞা করিতেছ, তাহা বুঝ না। আমি যে পাত্রে পান করি, তাহাতে কি তোমরা পান করিতে পার, এবং আমি যে বাপ্তিস্মে বাপ্তাইজিত হই, তাহাতে কি তোমরা বাপ্তাইজিত হইতে পার? 39. তাঁহারা বলিলেন, পারি। যীশু তাঁহাদিগকে কহিলেন, আমি যে পাত্রে পান করি, তাহাতে তোমরা পান করিবে; এবং আমি যে বাপ্তিস্মে বাপ্তাইজিত হই, তাহাতে তোমরাও বাপ্তাইজিত হইবে; 40. কিন্তু যাহাদের জন্য স্থান প্রস্তুত করা গিয়াছে, তাহাদের ভিন্ন আর কাহাকেও আমার দক্ষিণ পার্শ্বে কি বাম পার্শ্বে বসিতে দিতে আমার অধিকার নাই। 41. এই কথা শুনিয়া অন্য দশ জন যাকোব ও যোহনের প্রতি রুষ্ট হইতে লাগিলেন। 42. কিন্তু যীশু তাঁহাদিগকে কাছে ডাকিয়া কহিলেন, তোমরা জান, জাতিগণের মধ্যে যাহারা শাসনকর্ত্তা বলিয়া গণ্য, তাহারা তাহাদের উপরে প্রভুত্ব করে, এবং তাহাদের মধ্যে যাহারা মহান্‌, তাহারা তাহাদের উপরে কর্ত্তৃত্ব করে। 43. তোমাদের মধ্যে সেরূপ নয়; কিন্তু তোমাদের মধ্যে যে কেহ মহান্‌ হইতে চায়, সে তোমাদের পরিচারক হইবে; 44. এবং তোমাদের মধ্যে যে কেহ প্রধান হইতে চায়, সে সকলের দাস হইবে। 45. কারণ বাস্তবিক মনুষ্যপুত্রও পরিচর্য্যা পাইতে আসেন নাই, কিন্তু পরিচর্য্যা করিতে এবং অনেকের পরিবর্ত্তে আপন প্রাণ মুক্তির মূল্যরূপে দিতে আসিয়াছেন। 46. পরে তাঁহারা যিরীহোতে আসিলেন। আর তিনি যখন আপন শিষ্যগণের ও বিস্তর লোকের সহিত যিরীহো হইতে বাহির হইয়া যাইতেছেন, তখন তীময়ের পুত্র বর্‌তীময় নামে এক জন অন্ধ ভিক্ষুক পথের পার্শ্বে বসিয়াছিল। 47. সে যখন শুনিতে পাইল, তিনি নাসরতীয় যীশু, তখন চেঁচাইয়া বলিতে লাগিল, হে যীশু, দায়ূদ-সন্তান, আমার প্রতি দয়া করুন। 48. তখন অনেক লোক চুপ চুপ বলিয়া তাহাকে ধমক্‌ দিল; কিন্তু সে আরও অধিক চেঁচাইয়া বলিতে লাগিল, হে দায়ূদ-সন্তান, আমার প্রতি দয়া করুন। 49. তখন যীশু থামিয়া বলিলেন, উহাকে ডাক; তাহাতে লোকেরা সেই অন্ধকে ডাকিয়া বলিল, ওহে, সাহস কর, উঠ, উনি তোমাকে ডাকিতেছেন। 50. তখন সে আপনার কাপড় ফেলিয়া লম্ফ দিয়া উঠিয়া যীশুর নিকটে গেল। 51. যীশু তাহাকে কহিলেন, তুমি কি চাও? আমি তোমার নিমিত্ত কি করিব? অন্ধ তাঁহাকে কহিল, রব্বূণী [হে গুরু], যেন দেখিতে পাই। 52. যীশু তাহাকে কহিলেন, চলিয়া যাও, তোমার বিশ্বাস তোমাকে সুস্থ করিল। তখনই সে দেখিতে পাইল, এবং পথ দিয়া তাঁহার পশ্চাৎ পশ্চাৎ চলিতে লাগিল।
  • মার্ক অধ্যায় 1  
  • মার্ক অধ্যায় 2  
  • মার্ক অধ্যায় 3  
  • মার্ক অধ্যায় 4  
  • মার্ক অধ্যায় 5  
  • মার্ক অধ্যায় 6  
  • মার্ক অধ্যায় 7  
  • মার্ক অধ্যায় 8  
  • মার্ক অধ্যায় 9  
  • মার্ক অধ্যায় 10  
  • মার্ক অধ্যায় 11  
  • মার্ক অধ্যায় 12  
  • মার্ক অধ্যায় 13  
  • মার্ক অধ্যায় 14  
  • মার্ক অধ্যায় 15  
  • মার্ক অধ্যায় 16  
×

Alert

×

Bengali Letters Keypad References