পবিত্র বাইবেল

গডস গ্রেইস গিফট
দ্বিতীয় বিবরণ
1. আকাশমণ্ডল। কর্ণ দেও, আমি বলি; পৃথিবীও আমার মুখের কথা শুনুক।
2. আমার উপদেশ বৃষ্টির ন্যায় বর্ষিবে, আমার কথা শিশিরের ন্যায় ক্ষরিবে, তৃণের উপরে পতিত বিন্দু বিন্দু বৃষ্টির ন্যায়, শাকের উপরে পতিত জলধারার ন্যায়।
3. কেননা আমি সদাপ্রভুর নাম প্রচার করিব; তোমরা আমাদের ঈশ্বরের মহিমা কীর্ত্তন কর।
4. তিনি শৈল, তাঁহার কর্ম্ম সিদ্ধ, কেননা তাঁহার সমস্ত পথ ন্যায্য; তিনি বিশ্বাস্য ঈশ্বর,তাঁহাতে অন্যায় নাই; তিনিই ধর্ম্মময় ও সরল।
5. ইহারা তাঁহার সম্বন্ধে ভ্রষ্টাচারী, তাঁহার সন্তান নয়, এই ইহাদের কলঙ্ক; ইহারা বিপথগামী ও কুটিল বংশ।
6. তোমরা কি সদাপ্রভুকে এই প্রতিশোধ দিতেছ? হে মূঢ় ও অজ্ঞান জাতি। তিনি কি তোমার পিতা নহেন, যিনি তোমাকে লাভ করিলেন। তিনিই তোমার নির্ম্মাতা ও স্থিতিকর্ত্তা।
7. পুরাকালের দিন সকল স্মরণ কর, বহুপুরুষের বৎসর সকল আলোচনা কর; তোমার পিতাকে জিজ্ঞাসা কর, সে জানাইবে; তোমার প্রাচীনদিগকে জিজ্ঞাসা কর, তাহারা বলিবে।
8. পরাৎপর যখন জাতিগণকে অধিকার প্রদান করিলেন, যখন মনুষ্য-সন্তানগণকে পৃথক্‌ করিলেন, তখন ইস্রায়েল-সন্তানগণের সংখ্যানুসারেই সেই লোকবৃন্দের সীমা নিরূপণ করিলেন।
9. কেননা সদাপ্রভুর প্রজাই তাঁহার দায়াংশ; যাকোবই তাঁহার রিক্‌থ অধিকার।
10. তিনি তাহাকে পাইলেন প্রান্তর-দেশে, পশুগর্জ্জনময় ঘোর মরুভূমিতে; তিনি তাহাকে বেষ্টন করিলেন, তাহার তত্ত্ব লইলেন, নয়ন-তারার ন্যায় তাহাকে রক্ষা করিলেন।
11. ঈগল যেমন আপন বাসা জাগাইয়া তুলে, আপন শাবকগণের উপরে পাখা দোলায়, পক্ষ বিস্তার করিয়া তাহাদিগকে তুলে, পালখের উপরে তাহাদিগকে বহন করে;
12. তদ্রূপ সদাপ্রভু একাকী তাহাকে লইয়া গেলেন; তাঁহার সহিত কোন বিজাতীয় দেবতা ছিল না।
13. তিনি পৃথিবীর উচ্চস্থলী সকলের উপর দিয়া তাহাকে আরোহণ করাইলেন, সে ক্ষেত্রের শস্য ভোজন করিল; তিনি তাহাকে পাষাণ হইতে মধু পান করাইলেন, চক্‌মকি প্রস্তরময় শৈল হইতে তৈল [দিলেন];
14. তিনি গোরুর নবনীত, মেষীর দুগ্ধ, মেষশাবকের মেদ সহ, বাশন দেশজাত মেষ, ও ছাগ, এবং উত্তম গোমের সার তাহাকে দিলেন; তুমি দ্রাক্ষার রক্ত দ্রাক্ষারস পান করিলে।
15. কিন্তু যিশুরূণ হৃষ্টপুষ্ট হইয়া পদাঘাত করিল। তুমি হৃষ্টপুষ্ট, স্থূল ও তৃপ্ত হইলে; অমনি সে আপন নির্ম্মাতা ঈশ্বরকে ছাড়িল, আপন পরিত্রাণের শৈলকে লঘু জ্ঞান করিল।
16. তাহারা বিজাতীয় দেবগণ দ্বারা তাঁহার অন্তর্জ্বালা জন্মাইল, ঘৃণার্হ বস্তু দ্বারা তাঁহাকে অসন্তুষ্ট করিল।
17. তাহারা বলিদান করিল ভূতগণের উদ্দেশে, যাহারা ঈশ্বর নয়, দেবগণের উদ্দেশে, যাহাদিগকে তাহারা জানিত না, নূতন, নবজাত দেবগণের উদ্দেশে, যাহাদিগকে তোমাদের পিতৃগণ ভয় করিত না।
18. তুমি আপন জন্মদাতা শৈলের প্রতি উদাসীন, আপন জনক ঈশ্বরকে বিস্মৃত হইলে।
19. সদাপ্রভু দেখিলেন, ঘৃণা করিলেন, নিজ পুত্রকন্যাদের কৃত অসন্তোষজনক কার্য্য প্রযুক্ত।
20. তিনি কহিলেন, আমি উহাদের হইতে আপন মুখ আচ্ছাদন করিব; উহাদের শেষদশা কি হইবে, দেখিব; কেননা উহারা বিপরীতাচারী বংশ, উহারা বিশ্বাসঘাতক সন্তান।
21. উহারা অনীশ্বর দ্বারা আমার অন্তর্জ্বালা জন্মাইল, স্ব স্ব অসার বস্তু দ্বারা আমাকে অসন্তুষ্ট করিল; আমিও নজাতি দ্বারা উহাদের অন্তর্জ্বালা জন্মাইব, মূঢ় জাতি দ্বারা উহাদিগকে অসন্তুষ্ট করিব।
22. কেননা আমার ক্রোধে অগ্নি প্রজ্বলিত হইল, তাহা অধঃস্থ পাতাল পর্য্যন্ত দগ্ধ করে, পৃথিবী ও তদুৎপন্ন বস্তু গ্রাস করে, পর্ব্বত সকলের মূলে আগুন লাগায়।
23. আমি তাহাদের উপরে অমঙ্গল রাশি করিব, তাহাদের প্রতি আমার বাণ সকল ছুড়িব।
24. তাহারা ক্ষুধাতে ক্ষীণ হইবে, জ্বলন্ত অঙ্গারে ও উগ্র সংহারে কবলিত হইবে; আমি তাহাদের কাছে জন্তুদের দন্ত পাঠাইব, ধূলিস্থ উরোগামীদের বিষ সহকারে।
25. বাহির খড়গ, গৃহমধ্যে মহাভয় বিনাশ করিবে; যুবক ও কুমারীকে, দগ্ধপোষ্য শিশু ও শুক্লকেশ বৃদ্ধকে মারিবে।
26. আমি বলিলাম, তাহাদিগকে উড়াইয়া দিব, মনুষ্যদের মধ্য হইতে তাহাদের স্মৃতি লোপ করিব।
27. কিন্তু ভয় করি, পাছে শত্রু বিরক্ত করে, পাছে তাহাদের বিপক্ষগণ বিপরীত বিচার করে, পাছে তাহারা বলে, আমাদেরই হস্ত উন্নত, এ সকল কার্য্য সদাপ্রভু করেন নাই।
28. কেননা উহারা যুক্তিবিহীন জাতি, উহাদের মধ্যে বিবেচনা নাই।
29. আহা, কেন তাহারা জ্ঞানবান হইয়া এই কথা বুঝে না? কেন আপনাদের শেষদশা বিবেচনা করে না?
30. এক জন কিরূপে সহস্র লোককে তাড়াইয়া দেয়, দুই জন দশ সহস্রকে পলাতক করে? না, তাহাদের শৈল তাহাদিগকে বিক্রয় করিলেন, সদাপ্রভু তাহাদিগকে সমর্পণ করিলেন।
31. কেননা উহাদের শৈল আমাদের শৈলের তুল্য নয়, আমাদের শত্রুরাও এইরূপ বিচার করে।
32. কারণ তাহাদের দ্রাক্ষালতা সদোমের দ্রাক্ষালতা হইতে উৎপন্ন; ঘমোরার ক্ষেত্রস্থ দ্রাক্ষালতা হইতে উৎপন্ন; তাহাদের দ্রাক্ষাফল বিষময়, তাহাদের গুচ্ছ তিক্ত;
33. তাহাদের দ্রাক্ষারস নাগদিগের গরল, তাহা কালসর্পের উৎকট হলাহল।
34. ইহা কি আমার কাছে সঞ্চিত নহে? আমার ধনাগারে মুদ্রাঙ্ক দ্বারা রক্ষিত নহে?
35. প্রতিশোধ ও প্রতিফলদান আমারই কর্ম্ম, যে সময়ে তাহাদের পা পিছলিয়া যাইবে; কেননা তাহাদের বিপদের দিন নিকটবর্ত্তী, তাহাদের জন্য যাহা যাহা নিরূপিত, শীঘ্রই আসিবে।
36. কারণ সদাপ্রভু আপন প্রজাদের বিচার করিবেন, আপন দাসদের উপরে সদয় হইবেন; যেহেতু তিনি দেখিবেন, তাহাদের শক্তি গিয়াছে, বদ্ধ কি মুক্ত কেহই নাই।
37. তিনি বলিবেন, কোথায় তাহাদের দেবগণ, কোথায় সেই শৈল, যাহার শরণ লইয়াছিল,
38. যাহা তাহাদের বলির মেদ ভোজন করিত, তাহাদের পেয় নৈবেদ্যের দ্রাক্ষারস পান করিত? তাহারাই উঠিয়া তোমাদের সাহায্য করুক, তাহারাই তোমাদের আশ্রয় হউক।
39. এখন দেখ, আমি, আমিই তিনি; আমি ব্যতীত কোন ঈশ্বর নাই; আমি বধ করি, আমিই সজীব করি; আমি আঘাত করিয়াছি, আমিই সুস্থ করি; আমার হস্ত হইতে উদ্ধারকারী কেহই নাই।
40. কেননা আমি আকাশের দিকে হস্ত উঠাই, আর বলি, আমি অনন্তজীবী,
41. আমি যদি আপন খড়গবজ্রে শাণ দিই, যদি বিচারসাধনে হস্তক্ষেপ করি, তবে আমার বিপক্ষগণের প্রতিশোধ লইব, আমার বিদ্বেষীদিগকে প্রতিফল দিব।
42. আমি নিজ বাণ সকল মত্ত করিব রক্তপানে, হত ও বন্দি লোকদের রক্তপানে; আমার খড়গ মাংস ভক্ষণ করিবে, শত্রু-সেনানিগণের মস্তক [খাইবে]।
43. জাতিগণ, তাঁহার প্রজাদের সহিত হর্ষনাদ কর; কেননা তিনি আপন দাসদের রক্তের প্রতিফল দিবেন, আপন বিপক্ষগণের প্রতিশোধ লইবেন, আপন দেশের জন্য, আপন প্রজাগণের জন্য প্রায়শ্চিত্ত করিবেন।
44. আর মোশি ও নূনের পুত্র হোশেয় আসিয়া লোকদের কর্ণগোচরে এই গীতের সমস্ত কথা কহিলেন।
45. মোশি সমস্ত ইস্রায়েলের কাছে এই সকল কথা সমাপ্ত করিলেন;
46. আর তাহাদিগকে কহিলেন, আমি অদ্য তোমাদের কাছে সাক্ষ্যরূপে যাহা যাহা কহিলাম, তোমরা সেই সমস্ত কথায় মনোযোগ কর, আর তোমাদের সন্তানগণ যেন এই ব্যবস্থার সকল কথা পালন করিতে যত্নবান হয়, এই জন্য তাহাদিগকে তাহা আদেশ করিতে হইবে।
47. বস্তুতঃ ইহা তোমাদের পক্ষে নিরর্থক বাক্য নহে, কেননা ইহা তোমাদের জীবন, এবং তোমরা যে দেশ অধিকার করিতে যর্দ্দন পার হইয়া যাইতেছ, সেই দেশে এই বাক্য দ্বারা দীর্ঘায়ু হইবে।
48. সেই দিবসে সদাপ্রভু মোশিকে কহিলেন, তুমি এই অবারীম পর্ব্বতে,
49. অর্থাৎ যিরীহোর সম্মুখে অবস্থিত মোয়াব দেশস্থ নবো পর্ব্বতে উঠ, এবং আমি অধিকারার্থে ইস্রায়েল-সন্তানগণকে যে দেশ দিতেছি, সেই কনান দেশ দর্শন কর।
50. আর তোমার ভ্রাতা হারোণ যেমন হোর পর্ব্বতে মরিয়া আপন লোকদের নিকট সংগৃহিত হইল, তদ্রূপ তুমি যে পর্ব্বতে উঠিবে, তোমাকে তথায় মরিয়া আপন লোকদের নিকটে সংগৃহীত হইতে হইবে;
51. কেননা সিন প্রান্তরে কাদেশস্থ মরীবা জলের নিকটে তোমরা ইস্রায়েল-সন্তানগণের মধ্যে আমার বিরুদ্ধে সত্যলঙ্ঘন করিয়াছিলে, ফলতঃ ইস্রায়েল-সন্তানগণের মধ্যে আমাকে পবিত্র বলিয়া মান্য কর নাই।
52. তুমি আপনার সম্মুখে দেশ দেখিবে, কিন্তু আমি ইস্রায়েল-সন্তানগণকে যে দেশ দিতেছি, তথায় প্রবেশ করিতে পাইবে না।

Notes

No Verse Added

Total 34 Chapters, Current Chapter 32 of Total Chapters 34
দ্বিতীয় বিবরণ 32:6
1. আকাশমণ্ডল। কর্ণ দেও, আমি বলি; পৃথিবীও আমার মুখের কথা শুনুক।
2. আমার উপদেশ বৃষ্টির ন্যায় বর্ষিবে, আমার কথা শিশিরের ন্যায় ক্ষরিবে, তৃণের উপরে পতিত বিন্দু বিন্দু বৃষ্টির ন্যায়, শাকের উপরে পতিত জলধারার ন্যায়।
3. কেননা আমি সদাপ্রভুর নাম প্রচার করিব; তোমরা আমাদের ঈশ্বরের মহিমা কীর্ত্তন কর।
4. তিনি শৈল, তাঁহার কর্ম্ম সিদ্ধ, কেননা তাঁহার সমস্ত পথ ন্যায্য; তিনি বিশ্বাস্য ঈশ্বর,তাঁহাতে অন্যায় নাই; তিনিই ধর্ম্মময় সরল।
5. ইহারা তাঁহার সম্বন্ধে ভ্রষ্টাচারী, তাঁহার সন্তান নয়, এই ইহাদের কলঙ্ক; ইহারা বিপথগামী কুটিল বংশ।
6. তোমরা কি সদাপ্রভুকে এই প্রতিশোধ দিতেছ? হে মূঢ় অজ্ঞান জাতি। তিনি কি তোমার পিতা নহেন, যিনি তোমাকে লাভ করিলেন। তিনিই তোমার নির্ম্মাতা স্থিতিকর্ত্তা।
7. পুরাকালের দিন সকল স্মরণ কর, বহুপুরুষের বৎসর সকল আলোচনা কর; তোমার পিতাকে জিজ্ঞাসা কর, সে জানাইবে; তোমার প্রাচীনদিগকে জিজ্ঞাসা কর, তাহারা বলিবে।
8. পরাৎপর যখন জাতিগণকে অধিকার প্রদান করিলেন, যখন মনুষ্য-সন্তানগণকে পৃথক্‌ করিলেন, তখন ইস্রায়েল-সন্তানগণের সংখ্যানুসারেই সেই লোকবৃন্দের সীমা নিরূপণ করিলেন।
9. কেননা সদাপ্রভুর প্রজাই তাঁহার দায়াংশ; যাকোবই তাঁহার রিক্‌থ অধিকার।
10. তিনি তাহাকে পাইলেন প্রান্তর-দেশে, পশুগর্জ্জনময় ঘোর মরুভূমিতে; তিনি তাহাকে বেষ্টন করিলেন, তাহার তত্ত্ব লইলেন, নয়ন-তারার ন্যায় তাহাকে রক্ষা করিলেন।
11. ঈগল যেমন আপন বাসা জাগাইয়া তুলে, আপন শাবকগণের উপরে পাখা দোলায়, পক্ষ বিস্তার করিয়া তাহাদিগকে তুলে, পালখের উপরে তাহাদিগকে বহন করে;
12. তদ্রূপ সদাপ্রভু একাকী তাহাকে লইয়া গেলেন; তাঁহার সহিত কোন বিজাতীয় দেবতা ছিল না।
13. তিনি পৃথিবীর উচ্চস্থলী সকলের উপর দিয়া তাহাকে আরোহণ করাইলেন, সে ক্ষেত্রের শস্য ভোজন করিল; তিনি তাহাকে পাষাণ হইতে মধু পান করাইলেন, চক্‌মকি প্রস্তরময় শৈল হইতে তৈল দিলেন;
14. তিনি গোরুর নবনীত, মেষীর দুগ্ধ, মেষশাবকের মেদ সহ, বাশন দেশজাত মেষ, ছাগ, এবং উত্তম গোমের সার তাহাকে দিলেন; তুমি দ্রাক্ষার রক্ত দ্রাক্ষারস পান করিলে।
15. কিন্তু যিশুরূণ হৃষ্টপুষ্ট হইয়া পদাঘাত করিল। তুমি হৃষ্টপুষ্ট, স্থূল তৃপ্ত হইলে; অমনি সে আপন নির্ম্মাতা ঈশ্বরকে ছাড়িল, আপন পরিত্রাণের শৈলকে লঘু জ্ঞান করিল।
16. তাহারা বিজাতীয় দেবগণ দ্বারা তাঁহার অন্তর্জ্বালা জন্মাইল, ঘৃণার্হ বস্তু দ্বারা তাঁহাকে অসন্তুষ্ট করিল।
17. তাহারা বলিদান করিল ভূতগণের উদ্দেশে, যাহারা ঈশ্বর নয়, দেবগণের উদ্দেশে, যাহাদিগকে তাহারা জানিত না, নূতন, নবজাত দেবগণের উদ্দেশে, যাহাদিগকে তোমাদের পিতৃগণ ভয় করিত না।
18. তুমি আপন জন্মদাতা শৈলের প্রতি উদাসীন, আপন জনক ঈশ্বরকে বিস্মৃত হইলে।
19. সদাপ্রভু দেখিলেন, ঘৃণা করিলেন, নিজ পুত্রকন্যাদের কৃত অসন্তোষজনক কার্য্য প্রযুক্ত।
20. তিনি কহিলেন, আমি উহাদের হইতে আপন মুখ আচ্ছাদন করিব; উহাদের শেষদশা কি হইবে, দেখিব; কেননা উহারা বিপরীতাচারী বংশ, উহারা বিশ্বাসঘাতক সন্তান।
21. উহারা অনীশ্বর দ্বারা আমার অন্তর্জ্বালা জন্মাইল, স্ব স্ব অসার বস্তু দ্বারা আমাকে অসন্তুষ্ট করিল; আমিও নজাতি দ্বারা উহাদের অন্তর্জ্বালা জন্মাইব, মূঢ় জাতি দ্বারা উহাদিগকে অসন্তুষ্ট করিব।
22. কেননা আমার ক্রোধে অগ্নি প্রজ্বলিত হইল, তাহা অধঃস্থ পাতাল পর্য্যন্ত দগ্ধ করে, পৃথিবী তদুৎপন্ন বস্তু গ্রাস করে, পর্ব্বত সকলের মূলে আগুন লাগায়।
23. আমি তাহাদের উপরে অমঙ্গল রাশি করিব, তাহাদের প্রতি আমার বাণ সকল ছুড়িব।
24. তাহারা ক্ষুধাতে ক্ষীণ হইবে, জ্বলন্ত অঙ্গারে উগ্র সংহারে কবলিত হইবে; আমি তাহাদের কাছে জন্তুদের দন্ত পাঠাইব, ধূলিস্থ উরোগামীদের বিষ সহকারে।
25. বাহির খড়গ, গৃহমধ্যে মহাভয় বিনাশ করিবে; যুবক কুমারীকে, দগ্ধপোষ্য শিশু শুক্লকেশ বৃদ্ধকে মারিবে।
26. আমি বলিলাম, তাহাদিগকে উড়াইয়া দিব, মনুষ্যদের মধ্য হইতে তাহাদের স্মৃতি লোপ করিব।
27. কিন্তু ভয় করি, পাছে শত্রু বিরক্ত করে, পাছে তাহাদের বিপক্ষগণ বিপরীত বিচার করে, পাছে তাহারা বলে, আমাদেরই হস্ত উন্নত, সকল কার্য্য সদাপ্রভু করেন নাই।
28. কেননা উহারা যুক্তিবিহীন জাতি, উহাদের মধ্যে বিবেচনা নাই।
29. আহা, কেন তাহারা জ্ঞানবান হইয়া এই কথা বুঝে না? কেন আপনাদের শেষদশা বিবেচনা করে না?
30. এক জন কিরূপে সহস্র লোককে তাড়াইয়া দেয়, দুই জন দশ সহস্রকে পলাতক করে? না, তাহাদের শৈল তাহাদিগকে বিক্রয় করিলেন, সদাপ্রভু তাহাদিগকে সমর্পণ করিলেন।
31. কেননা উহাদের শৈল আমাদের শৈলের তুল্য নয়, আমাদের শত্রুরাও এইরূপ বিচার করে।
32. কারণ তাহাদের দ্রাক্ষালতা সদোমের দ্রাক্ষালতা হইতে উৎপন্ন; ঘমোরার ক্ষেত্রস্থ দ্রাক্ষালতা হইতে উৎপন্ন; তাহাদের দ্রাক্ষাফল বিষময়, তাহাদের গুচ্ছ তিক্ত;
33. তাহাদের দ্রাক্ষারস নাগদিগের গরল, তাহা কালসর্পের উৎকট হলাহল।
34. ইহা কি আমার কাছে সঞ্চিত নহে? আমার ধনাগারে মুদ্রাঙ্ক দ্বারা রক্ষিত নহে?
35. প্রতিশোধ প্রতিফলদান আমারই কর্ম্ম, যে সময়ে তাহাদের পা পিছলিয়া যাইবে; কেননা তাহাদের বিপদের দিন নিকটবর্ত্তী, তাহাদের জন্য যাহা যাহা নিরূপিত, শীঘ্রই আসিবে।
36. কারণ সদাপ্রভু আপন প্রজাদের বিচার করিবেন, আপন দাসদের উপরে সদয় হইবেন; যেহেতু তিনি দেখিবেন, তাহাদের শক্তি গিয়াছে, বদ্ধ কি মুক্ত কেহই নাই।
37. তিনি বলিবেন, কোথায় তাহাদের দেবগণ, কোথায় সেই শৈল, যাহার শরণ লইয়াছিল,
38. যাহা তাহাদের বলির মেদ ভোজন করিত, তাহাদের পেয় নৈবেদ্যের দ্রাক্ষারস পান করিত? তাহারাই উঠিয়া তোমাদের সাহায্য করুক, তাহারাই তোমাদের আশ্রয় হউক।
39. এখন দেখ, আমি, আমিই তিনি; আমি ব্যতীত কোন ঈশ্বর নাই; আমি বধ করি, আমিই সজীব করি; আমি আঘাত করিয়াছি, আমিই সুস্থ করি; আমার হস্ত হইতে উদ্ধারকারী কেহই নাই।
40. কেননা আমি আকাশের দিকে হস্ত উঠাই, আর বলি, আমি অনন্তজীবী,
41. আমি যদি আপন খড়গবজ্রে শাণ দিই, যদি বিচারসাধনে হস্তক্ষেপ করি, তবে আমার বিপক্ষগণের প্রতিশোধ লইব, আমার বিদ্বেষীদিগকে প্রতিফল দিব।
42. আমি নিজ বাণ সকল মত্ত করিব রক্তপানে, হত বন্দি লোকদের রক্তপানে; আমার খড়গ মাংস ভক্ষণ করিবে, শত্রু-সেনানিগণের মস্তক খাইবে
43. জাতিগণ, তাঁহার প্রজাদের সহিত হর্ষনাদ কর; কেননা তিনি আপন দাসদের রক্তের প্রতিফল দিবেন, আপন বিপক্ষগণের প্রতিশোধ লইবেন, আপন দেশের জন্য, আপন প্রজাগণের জন্য প্রায়শ্চিত্ত করিবেন।
44. আর মোশি নূনের পুত্র হোশেয় আসিয়া লোকদের কর্ণগোচরে এই গীতের সমস্ত কথা কহিলেন।
45. মোশি সমস্ত ইস্রায়েলের কাছে এই সকল কথা সমাপ্ত করিলেন;
46. আর তাহাদিগকে কহিলেন, আমি অদ্য তোমাদের কাছে সাক্ষ্যরূপে যাহা যাহা কহিলাম, তোমরা সেই সমস্ত কথায় মনোযোগ কর, আর তোমাদের সন্তানগণ যেন এই ব্যবস্থার সকল কথা পালন করিতে যত্নবান হয়, এই জন্য তাহাদিগকে তাহা আদেশ করিতে হইবে।
47. বস্তুতঃ ইহা তোমাদের পক্ষে নিরর্থক বাক্য নহে, কেননা ইহা তোমাদের জীবন, এবং তোমরা যে দেশ অধিকার করিতে যর্দ্দন পার হইয়া যাইতেছ, সেই দেশে এই বাক্য দ্বারা দীর্ঘায়ু হইবে।
48. সেই দিবসে সদাপ্রভু মোশিকে কহিলেন, তুমি এই অবারীম পর্ব্বতে,
49. অর্থাৎ যিরীহোর সম্মুখে অবস্থিত মোয়াব দেশস্থ নবো পর্ব্বতে উঠ, এবং আমি অধিকারার্থে ইস্রায়েল-সন্তানগণকে যে দেশ দিতেছি, সেই কনান দেশ দর্শন কর।
50. আর তোমার ভ্রাতা হারোণ যেমন হোর পর্ব্বতে মরিয়া আপন লোকদের নিকট সংগৃহিত হইল, তদ্রূপ তুমি যে পর্ব্বতে উঠিবে, তোমাকে তথায় মরিয়া আপন লোকদের নিকটে সংগৃহীত হইতে হইবে;
51. কেননা সিন প্রান্তরে কাদেশস্থ মরীবা জলের নিকটে তোমরা ইস্রায়েল-সন্তানগণের মধ্যে আমার বিরুদ্ধে সত্যলঙ্ঘন করিয়াছিলে, ফলতঃ ইস্রায়েল-সন্তানগণের মধ্যে আমাকে পবিত্র বলিয়া মান্য কর নাই।
52. তুমি আপনার সম্মুখে দেশ দেখিবে, কিন্তু আমি ইস্রায়েল-সন্তানগণকে যে দেশ দিতেছি, তথায় প্রবেশ করিতে পাইবে না।
Total 34 Chapters, Current Chapter 32 of Total Chapters 34
×

Alert

×

bengali Letters Keypad References