পবিত্র বাইবেল

গডস গ্রেইস গিফট
সামুয়েল ১
1. পরে দায়ূদ তথা হইতে প্রস্থান করিয়া অদুল্লম গুহাতে পলাইয়া গেলেন; আর তাঁহার ভ্রাতৃগণ ও তাঁহার সমস্ত পিতৃকুল তাহা শুনিয়া সেই স্থানে তাঁহার নিকটে নামিয়া গেল।
2. আর ক্লিষ্ট, ঋণী ও তিক্তপ্রাণ সমস্ত লোক তাঁহার নিকটে একত্র হইল, আর তিনি তাহাদের সেনাপতি হইলেন; এইরূপে অনুমান চারিশত লোক তাঁহার সঙ্গী হইল।
3. পরে দায়ূদ তথা হইতে মোয়াবের মিস্পীতে গিয়া মোয়াব-রাজকে কহিলেন, বিনয় করি, ঈশ্বর আমার প্রতি কি করিবেন, তাহা যে পর্য্যন্ত আমি জ্ঞাত না হই, তাবৎ আমার পিতামাতা আসিয়া আপনাদের কাছে থাকুন।
4. পরে তিনি তাঁহাদিগকে মোয়াব-রাজের সম্মুখে আনিলেন; আর যাবৎ দায়ূদ সেই দুর্গম স্থানে থাকিলেন, তাবৎ তাঁহারা ঐ রাজার সহিত বাস করিলেন।
5. পরে গাদ ভাববাদী দায়ূদকে কহিলেন, তুমি আর এই দুর্গম স্থানে থাকিও না, প্রস্থান করিয়া যিহূদা দেশে যাও। তখন দায়ূদ যাত্রা করিয়া হেরৎ বনে উপস্থিত হইলেন।
6. পরে শৌল শুনিতে পাইলেন যে, দায়ূদের ও তাঁহার সঙ্গীদের উদ্দেশ পাওয়া গিয়াছে। সেই সময়ে শৌল শল্যহস্তে গিবিয়ায়, রামাস্থ ঝাউ গাছের তলে বসিয়া ছিলেন, এবং তাঁহার চারিদিকে তাঁহার সমস্ত দাস দাঁড়াইয়াছিল।
7. তখন শৌল আপনার চতুর্দ্দিকে দণ্ডায়মান আপন দাসগণকে কহিলেন, হে বিন্যামীনীয়েরা, শ্রবণ কর। যিশয়ের পুত্র কি তোমাদের প্রত্যেক জনকেই ক্ষেত্র ও দ্রাক্ষার উদ্যান দিবে? সে কি তোমাদের সকলকেই সহস্রপতি ও শতপতি করিবে?
8. এই জন্য তোমরা সকলে কি আমার বিরুদ্ধে চক্রান্ত করিয়াছ? যিশয়ের পুত্রের সহিত আমার পুত্র যে নিয়ম করিয়াছে, তাহা কেহ আমার কর্ণগোচর করে নাই; এবং আমার পুত্র অদ্যকার মত আমার বিরুদ্ধে ঘাঁটি বসাইবার জন্য আমার দাসকে যে উষ্কাইয়া দিয়াছে, ইহাতেও তোমাদের মধ্যে কেহ আমার জন্য দুঃখিত হয় নাই বা আমাকে তাহা জ্ঞাত করে নাই।
9. তখন ইদোমীয় দোয়েগ—যে শৌলের দাসগণের নিকটে দাঁড়াইয়াছিল—সে উত্তর করিল, আমি নোবে অহীটূবের পুত্র অহীমেলকের নিকটে যিশয়ের পুত্রকে যাইতে দেখিয়াছিলাম।
10. সেই ব্যক্তি তাহার নিমিত্ত সদাপ্রভুর কাছে জিজ্ঞাসা করিয়াছিল, ও তাহাকে খাদ্য দ্রব্য দিয়াছিল, এবং পলেষ্টীয় গলিয়াতের খড়্‌গ তাহাকে দিয়াছিল।
11. তখন রাজা লোক পাঠাইয়া অহীটূবের পুত্র অহীমেলক যাজককে ও তাঁহার সমস্ত পিতৃকুলকে, নোবনিবাসী যাজকদিগকে ডাকাইলেন; আর তাঁহারা সকলে রাজার নিকটে আসিলেন।
12. তখন শৌল কহিলেন, হে অহীটূবের পুত্র, শুন। তিনি উত্তর করিলেন, হে আমার প্রভু, দেখুন, এই আমি।
13. শৌল তাঁহাকে কহিলেন, তুমি ও যিশয়ের পুত্র আমার বিরুদ্ধে কেন চক্রান্ত করিলে? সে যেন অদ্যকার মত আমার বিরুদ্ধে উঠিয়া ঘাঁটি বসায়, সেই জন্য তুমি তাহাকে রুটী ও খড়্‌গ দিয়াছ, এবং তাহার জন্য ঈশ্বরের কাছে জিজ্ঞাসা করিয়াছ।
14. অহীমেলক রাজাকে উত্তর করিলেন, আপনার সমস্ত দাসের মধ্যে কে দায়ূদের তুল্য বিশ্বস্ত? তিনি ত মহারাজের জামাতা, আপনার গুপ্ত মন্ত্রণা জানিবার অধিকারী, ও আপনার বাটীতে সম্ভ্রান্ত।
15. আমি কি এই প্রথম বার তাঁহার জন্য ঈশ্বরের নিকটে জিজ্ঞাসা করিয়াছি? কখনই নয়; মহারাজ আপনার এই দাসকে ও আমার সমস্ত পিতৃকুলকে দোষ দিবেন না, কেননা আপনার দাস এ বিষয়ের অল্প কি অধিক কিছুমাত্র জ্ঞাত নহে।
16. কিন্তু রাজা কহিলেন, হে অহীমেলক, তোমাকে ও তোমার সমস্ত পিতৃকুলকে মরিতে হইবে।
17. তখন রাজা আপনার চতুর্দ্দিকে দণ্ডায়মান ধাবকগণকে কহিলেন, তোমরা ফিরিয়া দাঁড়াও, সদাপ্রভুর এই যাজকগণকে বধ কর; কেননা ইহারাও দায়ূদের সাহায্য করে, এবং তাহার পলায়নের কথা জানিয়াও আমার কর্ণগোচর করে নাই। কিন্তু সদাপ্রভুর যাজকদিগকে আক্রমণ করিবার জন্য হস্ত বিস্তার করিতে রাজার দাসগণ সম্মত হইল না।
18. পরে রাজা দোয়েগকে কহিলেন, তুমি ফিরিয়া এই যাজকগণকে আক্রমণ কর। তখন ইদোমীয় দোয়েগ ফিরিয়া দাঁড়াইল, ও যাজকগণকে আক্রমণ করিয়া সেই দিবসে মসীনা-সূত্রের এফোদ পরিধায়ী পঁচাশী জনকে বধ করিল।
19. পরে সে খড়্‌গধারে যাজকদের নোব নগরে আঘাত করিল; সে স্ত্রী, পুরুষ, বালকবালিকা ও স্তন্যপায়ী শিশু এবং গোরু, গর্দ্দভ ও মেষ সকল খড়্‌গধারে বধ করিল।
20. ঐ সময়ে অহীটূবের পুত্র অহীমেলকের একটী মাত্র পুত্র রক্ষা পাইলেন; তাঁহার নাম অবিয়াথর; তিনি দায়ূদের কাছে পলাইয়া গেলেন।
21. অবিয়াথর দায়ূদকে এই সংবাদ দিলেন যে, শৌল সদাপ্রভুর যাজকগণকে বধ করিয়াছেন।
22. দায়ূদ অবিয়াথরকে কহিলেন, ইদোমীয় দোয়েগ সে স্থানে থাকাতে আমি সেই দিনই বুঝিয়াছিলাম যে, সে নিশ্চয়ই শৌলকে সংবাদ দিবে। আমিই তোমার পিতৃকুলের সমস্ত প্রাণীর বধের কারণ।
23. তুমি আমার সহিত থাক, ভীত হইও না; কেননা যে আমার প্রাণনাশের চেষ্টা করে; সেই তোমার প্রাণনাশের চেষ্টা করিতেছে; কিন্তু আমার সঙ্গে তুমি সুরক্ষিত থাকিবে।

Notes

No Verse Added

Total 31 Chapters, Current Chapter 22 of Total Chapters 31
সামুয়েল ১ 22:1
1. পরে দায়ূদ তথা হইতে প্রস্থান করিয়া অদুল্লম গুহাতে পলাইয়া গেলেন; আর তাঁহার ভ্রাতৃগণ তাঁহার সমস্ত পিতৃকুল তাহা শুনিয়া সেই স্থানে তাঁহার নিকটে নামিয়া গেল।
2. আর ক্লিষ্ট, ঋণী তিক্তপ্রাণ সমস্ত লোক তাঁহার নিকটে একত্র হইল, আর তিনি তাহাদের সেনাপতি হইলেন; এইরূপে অনুমান চারিশত লোক তাঁহার সঙ্গী হইল।
3. পরে দায়ূদ তথা হইতে মোয়াবের মিস্পীতে গিয়া মোয়াব-রাজকে কহিলেন, বিনয় করি, ঈশ্বর আমার প্রতি কি করিবেন, তাহা যে পর্য্যন্ত আমি জ্ঞাত না হই, তাবৎ আমার পিতামাতা আসিয়া আপনাদের কাছে থাকুন।
4. পরে তিনি তাঁহাদিগকে মোয়াব-রাজের সম্মুখে আনিলেন; আর যাবৎ দায়ূদ সেই দুর্গম স্থানে থাকিলেন, তাবৎ তাঁহারা রাজার সহিত বাস করিলেন।
5. পরে গাদ ভাববাদী দায়ূদকে কহিলেন, তুমি আর এই দুর্গম স্থানে থাকিও না, প্রস্থান করিয়া যিহূদা দেশে যাও। তখন দায়ূদ যাত্রা করিয়া হেরৎ বনে উপস্থিত হইলেন।
6. পরে শৌল শুনিতে পাইলেন যে, দায়ূদের তাঁহার সঙ্গীদের উদ্দেশ পাওয়া গিয়াছে। সেই সময়ে শৌল শল্যহস্তে গিবিয়ায়, রামাস্থ ঝাউ গাছের তলে বসিয়া ছিলেন, এবং তাঁহার চারিদিকে তাঁহার সমস্ত দাস দাঁড়াইয়াছিল।
7. তখন শৌল আপনার চতুর্দ্দিকে দণ্ডায়মান আপন দাসগণকে কহিলেন, হে বিন্যামীনীয়েরা, শ্রবণ কর। যিশয়ের পুত্র কি তোমাদের প্রত্যেক জনকেই ক্ষেত্র দ্রাক্ষার উদ্যান দিবে? সে কি তোমাদের সকলকেই সহস্রপতি শতপতি করিবে?
8. এই জন্য তোমরা সকলে কি আমার বিরুদ্ধে চক্রান্ত করিয়াছ? যিশয়ের পুত্রের সহিত আমার পুত্র যে নিয়ম করিয়াছে, তাহা কেহ আমার কর্ণগোচর করে নাই; এবং আমার পুত্র অদ্যকার মত আমার বিরুদ্ধে ঘাঁটি বসাইবার জন্য আমার দাসকে যে উষ্কাইয়া দিয়াছে, ইহাতেও তোমাদের মধ্যে কেহ আমার জন্য দুঃখিত হয় নাই বা আমাকে তাহা জ্ঞাত করে নাই।
9. তখন ইদোমীয় দোয়েগ—যে শৌলের দাসগণের নিকটে দাঁড়াইয়াছিল—সে উত্তর করিল, আমি নোবে অহীটূবের পুত্র অহীমেলকের নিকটে যিশয়ের পুত্রকে যাইতে দেখিয়াছিলাম।
10. সেই ব্যক্তি তাহার নিমিত্ত সদাপ্রভুর কাছে জিজ্ঞাসা করিয়াছিল, তাহাকে খাদ্য দ্রব্য দিয়াছিল, এবং পলেষ্টীয় গলিয়াতের খড়্‌গ তাহাকে দিয়াছিল।
11. তখন রাজা লোক পাঠাইয়া অহীটূবের পুত্র অহীমেলক যাজককে তাঁহার সমস্ত পিতৃকুলকে, নোবনিবাসী যাজকদিগকে ডাকাইলেন; আর তাঁহারা সকলে রাজার নিকটে আসিলেন।
12. তখন শৌল কহিলেন, হে অহীটূবের পুত্র, শুন। তিনি উত্তর করিলেন, হে আমার প্রভু, দেখুন, এই আমি।
13. শৌল তাঁহাকে কহিলেন, তুমি যিশয়ের পুত্র আমার বিরুদ্ধে কেন চক্রান্ত করিলে? সে যেন অদ্যকার মত আমার বিরুদ্ধে উঠিয়া ঘাঁটি বসায়, সেই জন্য তুমি তাহাকে রুটী খড়্‌গ দিয়াছ, এবং তাহার জন্য ঈশ্বরের কাছে জিজ্ঞাসা করিয়াছ।
14. অহীমেলক রাজাকে উত্তর করিলেন, আপনার সমস্ত দাসের মধ্যে কে দায়ূদের তুল্য বিশ্বস্ত? তিনি মহারাজের জামাতা, আপনার গুপ্ত মন্ত্রণা জানিবার অধিকারী, আপনার বাটীতে সম্ভ্রান্ত।
15. আমি কি এই প্রথম বার তাঁহার জন্য ঈশ্বরের নিকটে জিজ্ঞাসা করিয়াছি? কখনই নয়; মহারাজ আপনার এই দাসকে আমার সমস্ত পিতৃকুলকে দোষ দিবেন না, কেননা আপনার দাস বিষয়ের অল্প কি অধিক কিছুমাত্র জ্ঞাত নহে।
16. কিন্তু রাজা কহিলেন, হে অহীমেলক, তোমাকে তোমার সমস্ত পিতৃকুলকে মরিতে হইবে।
17. তখন রাজা আপনার চতুর্দ্দিকে দণ্ডায়মান ধাবকগণকে কহিলেন, তোমরা ফিরিয়া দাঁড়াও, সদাপ্রভুর এই যাজকগণকে বধ কর; কেননা ইহারাও দায়ূদের সাহায্য করে, এবং তাহার পলায়নের কথা জানিয়াও আমার কর্ণগোচর করে নাই। কিন্তু সদাপ্রভুর যাজকদিগকে আক্রমণ করিবার জন্য হস্ত বিস্তার করিতে রাজার দাসগণ সম্মত হইল না।
18. পরে রাজা দোয়েগকে কহিলেন, তুমি ফিরিয়া এই যাজকগণকে আক্রমণ কর। তখন ইদোমীয় দোয়েগ ফিরিয়া দাঁড়াইল, যাজকগণকে আক্রমণ করিয়া সেই দিবসে মসীনা-সূত্রের এফোদ পরিধায়ী পঁচাশী জনকে বধ করিল।
19. পরে সে খড়্‌গধারে যাজকদের নোব নগরে আঘাত করিল; সে স্ত্রী, পুরুষ, বালকবালিকা স্তন্যপায়ী শিশু এবং গোরু, গর্দ্দভ মেষ সকল খড়্‌গধারে বধ করিল।
20. সময়ে অহীটূবের পুত্র অহীমেলকের একটী মাত্র পুত্র রক্ষা পাইলেন; তাঁহার নাম অবিয়াথর; তিনি দায়ূদের কাছে পলাইয়া গেলেন।
21. অবিয়াথর দায়ূদকে এই সংবাদ দিলেন যে, শৌল সদাপ্রভুর যাজকগণকে বধ করিয়াছেন।
22. দায়ূদ অবিয়াথরকে কহিলেন, ইদোমীয় দোয়েগ সে স্থানে থাকাতে আমি সেই দিনই বুঝিয়াছিলাম যে, সে নিশ্চয়ই শৌলকে সংবাদ দিবে। আমিই তোমার পিতৃকুলের সমস্ত প্রাণীর বধের কারণ।
23. তুমি আমার সহিত থাক, ভীত হইও না; কেননা যে আমার প্রাণনাশের চেষ্টা করে; সেই তোমার প্রাণনাশের চেষ্টা করিতেছে; কিন্তু আমার সঙ্গে তুমি সুরক্ষিত থাকিবে।
Total 31 Chapters, Current Chapter 22 of Total Chapters 31
×

Alert

×

bengali Letters Keypad References