Bengali বাইবেল

বিচারকচরিত total 21 অধ্যায়গুলির

বিচারকচরিত

বিচারকচরিত অধ্যায় 19
বিচারকচরিত অধ্যায় 19

1 তৎকালে ইস্রায়েলের মধ্যে রাজা ছিল না। আর পর্ব্বতময় ইফ্রয়িম প্রদেশের প্রান্তভাগে এক জন লেবীয় প্রবাস করিত; সে বৈৎলহেম-যিহূদা হইতে এক উপপত্নি গ্রহণ করিয়াছিল।

2 পরে সেই উপপত্নী তাহার বিরুদ্ধে বেশ্যাচার করিল, এবং তাহাকে ত্যাগ করিয়া বৈৎলেহম-যিহূদায় আপন পিতার বাটীতে গিয়া চারি মাস কাল সে স্থানে থাকিল।

3 পরে তাহার পুরুষ উঠিয়া তাহাকে চিত্তপ্রবোধক কথা কহিতে ও ফিরাইয়া আনিতে তাহার কাছে গেল, তাহার সঙ্গে তাহার চাকর ও দুইটী গর্দ্দভ ছিল। তাহার উপপত্নী তাহাকে পিতার বাটীর মধ্যে লইয়া গেলে সেই যুবতীর পিতা তাহাকে দেখিয়া আনন্দ সহকারে তাহার সহিত সাক্ষাৎ করিল;

বিচারকচরিত অধ্যায় 19

4 তাহার শ্বশুর ঐ যুবতীর পিতা আগ্রহ করিয়া তাহাকে রাখিলে সে তাহার সহিত তিন দিন বাস করিল; এবং তাহারা সেই স্থানে ভোজন পান ও রাত্রি যাপন করিল।

5 পরে চতুর্থ দিবসে তাহারা প্রত্যূষে গাত্রোত্থান করিল, আর সে যাইবার জন্য উঠিল। তখন সেই যুবতীর পিতা জামাতাকে কহিল, কিঞ্চিৎ আহার করিয়া তোমার অন্তঃকরণ সুস্থির কর, পরে আপন পথে যাইও।

6 তাহাতে তাহারা দুই জন একত্র বসিয়া ভোজন পান করিল; পরে যুবতীর পিতা সেই ব্যক্তিকে কহিল, বিনয় করি, সম্মত হও, এই রাত্রিটুকু বিলম্ব কর, প্রফুল্লচিত্ত হও।

বিচারকচরিত অধ্যায় 19

7 তথাপি সেই ব্যক্তি যাইবার জন্য উঠিল; কিন্তু তাহার শ্বশুর তাহাকে সাধ্যসাধনা করিলে সে সেই রাত্রিও তথায় যাপন করিল।

8 পরে পঞ্চম দিবসে সে যাইবার জন্য প্রত্যূষে উঠিল; আর যুবতীর পিতা তাহাকে কহিল, বিনয় করি, তোমার অন্তঃকরণ সুস্থির কর, বৈকাল পর্য্যন্ত তোমরা বিলম্ব কর, তাহাতে তাহারা উভয়ে আহার করিল।

9 পরে সেই পুরুষ, তাহার উপপত্নী ও চাকর যাইবার জন্য উঠিলে তাহার শ্বশুর ঐ যুবতীর পিতা তাহাকে কহিল, দেখ, প্রায় দিবাবসান হইল, বিনয় করি, তোমরা এই রাত্রিটুকু বিলম্ব কর; দেখ, বেলা শেষ হইয়াছে; তুমি এই স্থানে রাত্রিবাস কর, প্রফুল্লচিত্ত হও; কল্য তোমরা প্রত্যূষে উঠিলেই তুমি তোমার তাম্বুতে যাইতে পারিবে।

বিচারকচরিত অধ্যায় 19

10 কিন্তু ঐ ব্যক্তি সেই রাত্রি বিলম্ব করিতে অসম্মত হইল; সে উঠিয়া যাত্রা করিয়া যিবূষের অর্থাৎ যিরূশালেমের সম্মুখে আসিয়া উপস্থিত হইল; তাহার সঙ্গে দুইটী সজ্জিত গর্দ্দভ ছিল; আর তাহার উপপত্নীও সঙ্গে ছিল।

11 যিবূষের কাছে উপস্থিত হইলে দিবা প্রায় একেবারে অবসান হইল; তাহাতে চাকরটী আপন কর্ত্তাকে কহিল, বিনয় করি, আইসুন, আমরা যিবূষীয়দের এই নগরে প্রবেশ করিয়া রাত্রি যাপন করি।

বিচারকচরিত অধ্যায় 19

12 কিন্তু তাহার কর্ত্তা তাহাকে কহিল, যাহারা ইস্রায়েল-সন্তান নয়, এমন বিজাতীয়দের নগরে আমরা প্রবেশ করিব না; আমরা বরং অগ্রসর হইয়া গিবিয়াতে যাইব।

13 সে চাকরটীকে আরও কহিল, আইস, আমরা এই অঞ্চলের কোন স্থানে যাই, গিবিয়াতে কিম্বা রামাতে রাত্রি যাপন করি।

14 এইরূপে তাহারা অগ্রসর হইয়া চলিল; পরে বিন্যামীনের অধিকারস্থ গিবিয়ার নিকটে উপস্থিত হইলে সূর্য্য অস্তগত হইল।

বিচারকচরিত অধ্যায় 19

15 তখন তাহারা গিবিয়াতে প্রবেশ ও রাত্রিবাস করণার্থে পথ ছাড়িয়া তথায় গেল; সে প্রবেশ করিয়া ঐ নগরের চকে বসিয়া রহিল; কোন ব্যক্তি তাহাদিগকে আপন বাটীতে রাত্রিবাসার্থে গ্রহণ করিল না।

16 আর দেখ, এক জন বৃদ্ধ সন্ধ্যাকালে ক্ষেত্র হইতে কর্ম্ম করিয়া আসিতেছিলেন; সেই ব্যক্তি পর্ব্বতময় ইফ্রয়িম দেশের লোক; আর তিনি গিবিয়াতে প্রবাস করিতেছিলেন, কিন্তু নগরের লোকেরা বিন্যামীনীয় ছিল।

বিচারকচরিত অধ্যায় 19

17 সেই ব্যক্তি চক্ষু তুলিয়া নগরের চকে ঐ পথিককে দেখিলেন; আর বৃদ্ধ জিজ্ঞাসা করিলেন, তুমি কোথায় যাইতেছ? কোথা হইতে আসিতেছ?

18 সে তাঁহাকে কহিল, আমরা বৈৎলেহম-যিহূদা হইতে পর্ব্বতময় ইফ্রয়িম প্রদেশের প্রান্তভাগে যাইতেছি; আমি সেই স্থানের লোক; বৈৎলেহম-যিহূদা পর্য্যন্ত গিয়াছিলাম; আমি সদাপ্রভুর গৃহে যাইতেছি। আর আমাকে কোন ব্যক্তি বাটীতে গ্রহণ করে না।

19 আমাদের সঙ্গে গর্দ্দভদের জন্য পোয়াল ও কলাই, এবং আমার জন্য, আপনার এই দাসীর জন্য এবং আপনার দাসদাসীর সঙ্গী এই যুবকের জন্য রুটী ও দ্রাক্ষারস আছে, কোন দ্রব্যের অভাব নাই।

বিচারকচরিত অধ্যায় 19

20 বৃদ্ধ কহিলেন, তোমার শান্তি হউক, তোমার যাহা কিছু প্রয়োজনীয়, তাহার ভার আমার উপরে থাকুক; তুমি কোন ক্রমে এই চকে রাত্রি যাপন করিও না।

21 পরে বৃদ্ধ তাহাকে আপন বাটীতে আনিয়া গর্দ্দভদিগকে তৃণ দিলেন, এবং তাহারা পা ধুইয়া ভোজন পান করিল।

22 তাহারা আপন আপন অন্তঃকরণ আপ্যায়িত করিতেছে, এমন সময়ে, দেখ, নগরের লোকেরা, কতকগুলি পাষণ্ড, সেই বাটীর চারিদিকে ঘেরিয়া কবাটে আঘাত করিতে লাগিল, এবং বাটীর কর্ত্তাকে, ঐ বৃদ্ধকে, কহিল, তোমার বাটীতে যে পুরুষ আসিয়াছে, তাহাকে বাহির করিয়া আন; আমরা তাহার পরিচয় লইব।

বিচারকচরিত অধ্যায় 19

23 তাহাতে সেই ব্যক্তি, বাটীর কর্ত্তা, বাহির হইয়া তাহাদের নিকটে গিয়া কহিলেন, হে আমার ভ্রাতৃগণ, না, না; বিনয় করি, এমন দুষ্কর্ম্ম করিও না; ঐ পুরুষ আমার বাটীতে আসিয়াছে, অতএব এমন মূঢ়তার কর্ম্ম করিও না।

24 দেখ, আমার অনূঢ়া কন্যা এবং তাহার উপপত্নী; ইহাদিগকে বাহির করিয়া আনি; তোমরা তাহাদিগকে মানভ্রষ্ট কর, ও তাহাদের প্রতি তোমাদের যাহা ভাল বোধ হয়, তাহাই কর; কিন্তু সেই পুরুষের প্রতি এমন মূঢ়তার কর্ম্ম করিও না।

বিচারকচরিত অধ্যায় 19

25 তথাপি তাহারা তাঁহার কথা শুনিতে অস্বীকার করিল; তখন ঐ পুরুষ আপন উপপত্নীকে ধরিয়া তাহাদের নিকটে বাহির করিয়া আনিল; আর তাহারা তাহার পরিচয় লইল, এবং প্রভাত পর্য্যন্ত সমস্ত রাত্রি তাহার প্রতি অত্যাচার করিল; পরে আলো হইয়া আসিলে তাহাকে ছাড়িয়া দিল।

26 তখন রাত্রি পোহাইলে ঐ স্ত্রী পতির আতিথ্যকারী বৃদ্ধের বাটীর দ্বারে আসিয়া সূর্য্যোদয় পর্য্যন্ত পড়িয়া রহিল।

বিচারকচরিত অধ্যায় 19

27 প্রাতঃকাল হইলে তাহার পতি উঠিয়া পথে যাইবার জন্য গৃহের কবাট খুলিয়া বাহির হইল, আর দেখ, সেই স্ত্রীলোক, তাহার উপপত্নী, গৃহের দ্বারে গোবরাটের উপরে হস্ত রাখিয়া পড়িয়া রহিয়াছে।

28 তাহাতে সে তাহাকে কহিল, গা তুল, চল, আমরা যাই; কিন্তু সে কিছুই উত্তর দিল না। পরে ঐ পুরুষ গর্দ্দভের উপরে তাহাকে তুলিয়া লইল, এবং উঠিয়া স্বস্থানে প্রস্থান করিল।

29 পরে সে আপন বাটীতে আসিয়া একখানা ছুরী লইয়া আপনার উপপত্নীকে ধরিয়া অস্থি অনুসারে দ্বাদশ খণ্ড করিয়া ইস্রায়েলের সমস্ত অঞ্চলে পাঠাইয়া দিল।

বিচারকচরিত অধ্যায় 19

30 যাহারা তাহা দেখিল সকলে কহিল, ইস্রায়েল-সন্তানগণের মিসর দেশ হইতে বাহির হইয়া আসিবার দিন হইতে অদ্য পর্য্যন্ত এমন কর্ম্ম কখনও হয় নাই, দেখাও যায় নাই; এ বিষয়ে বিবেচনা কর, মন্ত্রণা কর, কি কর্ত্তব্য বল।