Bengali বাইবেল
যেরেমিয়া total 52 অধ্যায়গুলির
যেরেমিয়া
যেরেমিয়া অধ্যায় 44
যেরেমিয়া অধ্যায় 44
1 মিসর দেশে বাসকারী, মিগ্দোলে, তফন্হেষে, নোফে ও পথ্রোষ প্রদেশে বাসকারী যিহূদীদের বিষয়ে যিরমিয়ের নিকটে এই বাক্য উপস্থিত হইল, বাহিনীগণের সদাপ্রভু,
2 ইস্রায়েলের ঈশ্বর, এই কথা কহেন, যিরূশালেমের উপরে ও যিহূদার সমুদয় নগরের উপরে আমি যে সমস্ত অমঙ্গল উপস্থিত করিয়াছি, তাহা তোমরা দেখিয়াছ; দেখ, আজ সে সকল উৎসন্ন স্থান আছে, তথায় কেহ বাস করে না;
3 ইহার কারণ লোকদের দুষ্টতা, যাহা আমাকে অসন্তুষ্ট করণার্থে তাহারা করিত; তাহাদের, তোমাদের ও তোমাদের পিতৃপুরুষদের অপরিচিত অন্য দেবগণের সেবা করণার্থে তাহারা তাহাদের উদ্দেশে ধূপদাহ করিতে গমন করিত।
যেরেমিয়া অধ্যায় 44
4 তথাপি আমি আমার সমস্ত দাস ভাববাদিগণকে তোমাদের নিকটে পাঠাইতাম, প্রত্যূষে উঠিয়া পাঠাইয়া বলিতাম, আহা, তোমরা আমার ঘৃণিত এই জঘন্য কার্য্য করিও না।
5 কিন্তু তাহারা অবধান করিত না, এবং আপন আপন দুষ্ক্রিয়া হইতে ফিরিবার নিমিত্ত, অন্য দেবগণের উদ্দেশে আর ধূপ না জ্বালাইবার নিমিত্ত, কর্ণপাত করিত না।
6 এই জন্য আমার কোপ ও ক্রোধ বর্ষিত হইল, যিহূদার নগরে নগরে ও যিরূশালেমের পথে পথে জ্বলিয়া উঠিল, তাহাতে সে সকল অদ্য যেমন রহিয়াছে, তেমনি উৎসন্ন ও ধ্বংসিত হইয়াছে।
যেরেমিয়া অধ্যায় 44
7 অতএব এখন সদাপ্রভু, বাহিনীগণের ঈশ্বর, ইস্রায়েলের ঈশ্বর, এই কথা কহেন, তোমরা কেন আপন আপন প্রাণের বিরুদ্ধে মহাপাপ করিতেছ? এ কার্য্যে ত আপনাদের সম্পর্কীয় পুরুষ, স্ত্রী, বালক ও স্তন্যপায়ী শিশুদিগকে যিহূদার মধ্য হইতে উচ্ছিন্ন করিবে, আপনাদের কাহাকেও অবশিষ্ট রাখিবে না।
8 তোমরা এই যে মিসর দেশে প্রবাসার্থে আসিয়াছ, এখানে অন্য দেবগণের উদ্দেশে ধূপদাহ করিয়া কেন আপনাদের হস্তকৃত কর্ম্ম দ্বারা আমাকে অসন্তুষ্ট করিতেছ? তোমরা উচ্ছিন্ন হইবে, এবং পৃথিবীস্থ সমুদয় জাতির মধ্যে শাপের ও টিটকারির পাত্র হইবে।
যেরেমিয়া অধ্যায় 44
9 তোমাদের পিতৃপুরুষদের দুষ্ক্রিয়া যিহূদার রাজাদের দুষ্ক্রিয়া, তাহাদের স্ত্রীগণের দুষ্ক্রিয়া, তোমাদের নিজেদের দুষ্ক্রিয়া ও তোমাদের স্ত্রীগণের দুষ্ক্রিয়া, যাহা যিহূদা দেশে ও যিরূশালেমের পথে পথে করা হইত, সে সমস্ত কি ভুলিয়া গিয়াছ?
10 এই লোকেরা অদ্য পর্য্যন্ত চূর্ণমনা হয় নাই, ভয়ও করে নাই, এবং আমি আপনার যে ব্যবস্থা ও বিধিকলাপ তোমাদের সম্মুখে ও তোমাদের পিতৃপুরুষদের সম্মুখে রাখিয়াছি ইহারা তদনুসারে আচরণ করে নাই।
যেরেমিয়া অধ্যায় 44
11 এই জন্য বাহিনীগণের সদাপ্রভু, ইস্রায়েলের ঈশ্বর, এই কথা কহেন, দেখ, আমি তোমাদের অমঙ্গল করিতে ও সমস্ত যিহূদাকে উচ্ছিন্ন করিতে উন্মুখ হইলাম।
12 আর আমি যিহূদার অবশিষ্টাংশকে, অর্থাৎ যাহারা মিসর দেশে প্রবাস করিতে যাইবার জন্য উন্মুখ হইয়াছে, তাহাদিগকে ধরিব; তাহারা সকলে বিনষ্ট হইবে, মিসর দেশেই পতিত হইবে; তাহারা খড়্গ ও দুর্ভিক্ষ দ্বারা বিনষ্ট হইবে; ক্ষুদ্র ও মহান্ সকলে খড়্গে ও দুর্ভিক্ষে মারা পড়িবে, এবং অভিসম্পাত, বিস্ময়, শাপ ও টিটকারির পাত্র হইবে।
যেরেমিয়া অধ্যায় 44
13 আমি যেমন খড়্গ, দুর্ভিক্ষ ও মহামারী দ্বারা যিরূশালেমকে দণ্ড দিয়াছি, তদ্রূপ মিসর দেশ-নিবাসীদিগকে দণ্ড দিব;
14 তাহাতে যিহূদার যে অবশিষ্ট লোক মিসরে প্রবাস করিতে আসিয়াছে, তাহাদের মধ্যে কেহ উত্তীর্ণ কি রক্ষাপ্রাপ্ত হইবে না; সেই যিহূদা দেশে ফিরিয়া যাইতে পারিবে না, সেখানে বাস করিবার জন্য ফিরিয়া যাইতে বাঞ্ছা করিতেছে; কতকগুলি পলাতক ভিন্ন আর কেহ ফিরিয়া যাইবে না।
যেরেমিয়া অধ্যায় 44
15 তখন যে সকল পুরুষ জ্ঞাত ছিল যে, তাহাদের স্ত্রীরা অন্য দেবগণের উদ্দেশে ধূপ জ্বালাইয়াছে, তাহারা এবং নিকটে দণ্ডায়মান সমস্ত স্ত্রীলোক, এক মহাসমাজ, অর্থাৎ মিসরের পথ্রোষ প্রদেশে বাসকারী সমস্ত লোক যিরমিয়কে উত্তর দিয়া কহিল,
16 তুমি সদাপ্রভুর নামে আমাদিগকে যে কথা বলিয়াছ, তোমার সে কথা আমরা শুনিব না;
17 কিন্তু আমাদেরই মুখনির্গত সমস্ত বাক্যানুরূপ কার্য্য করিবই করিব, আকাশরাণীর উদ্দেশে ধূপ জ্বালাইব ও পেয় নৈবেদ্য ঢালিব; আমরা ও আমাদের পিতৃপুরুষগণ, আমাদের রাজগণ, ও আমাদের অধ্যক্ষগণ যিহূদার নগরে নগরে ও যিরূশালেমের পথে পথে তাহাই করিতাম, আর তৎকালে আমরা ভক্ষ্যদ্রব্যে তৃপ্ত হইতাম, এবং সুখে ছিলাম, কোন অমঙ্গল দেখিতাম না।
যেরেমিয়া অধ্যায় 44
18 কিন্তু যে অবধি আমরা আকাশরাণীর উদ্দেশে ধূপ জ্বালান ও পেয় নৈবেদ্য ঢালা ছাড়িয়া দিয়াছি, সে অবধি আমাদের সমস্ত বস্তুর অভাব হইতেছে, এবং আমরা খড়্গ ও দুর্ভিক্ষ দ্বারা বিনষ্ট হইতেছি।
19 আর আমরা যখন আকাশরাণীর উদ্দেশে ধূপ জ্বালাইতাম ও পেয় নৈবেদ্য ঢালিতাম, তখন কি আপন আপন স্বামী ব্যতিরেকে তাঁহার পূজার জন্য পূপ প্রস্তুত করিতাম, ও তাঁহার উদ্দেশে পেয় নৈবেদ্য ঢালিতাম?
যেরেমিয়া অধ্যায় 44
20 পরে যিরমিয় সমস্ত লোককে, পুরুষ, কি স্ত্রী যত লোক সেই উত্তর দিয়াছিল, সেই সমস্ত লোককে এই কথা কহিলেন,
21 যিহূদার নগরে নগরে ও যিরূশালেমের পথে পথে তোমরা ও তোমাদের পিতৃপুরুষগণ, তোমাদের রাজগণ, ও অধ্যক্ষগণ, এবং জনপদস্থ প্রজাগণ যে, ধূপদাহ করিতে, সদাপ্রভু কি সেই ধূপদাহ স্মরণ করেন নাই, তাহা কি তাঁহার মনে পড়ে নাই?
22 সদাপ্রভু তোমাদের আচারের দুষ্টতা ও তোমাদের কৃত ঘৃণার্হ ক্রিয়া প্রযুক্ত আর সহ্য করিতে পারিলেন না, এই জন্য তোমাদের দেশ অদ্য যেমন রহিয়াছে, তেমনি উৎসন্ন, বিস্ময়জনক, শাপগ্রস্ত ও নিবাসী-বিহীন হইল।
যেরেমিয়া অধ্যায় 44
23 তোমরা ধূপদাহ করিয়াছ, সদাপ্রভুর বিরুদ্ধে পাপ করিয়াছ, সদাপ্রভুর রবে অবধান কর নাই, এবং তাঁহার ব্যবস্থা, বিধি ও সাক্ষ্যানুসারে চল নাই, তজ্জন্যই অদ্য যেমন রহিয়াছে, তেমনি তোমাদের প্রতি এই অমঙ্গল ঘটিয়াছে।
24 যিরমিয় সমস্ত পুরুষলোককে এবং সমস্ত স্ত্রীলোককে আরও কহিলেন, হে মিসর দেশস্থ সমস্ত যিহূদী, তোমরা সদাপ্রভুর বাক্য শুন;
25 বাহিনীগণের সদাপ্রভু, ইস্রায়েলের ঈশ্বর, এই কথা কহেন, তোমরা ও তোমাদের স্ত্রীরা মুখে যাহা বলিয়াছ, হস্ত দ্বারা তাহা সম্পন্ন করিয়াছ, তোমরা বলিয়াছ, ‘আমরা আকাশরাণীর উদ্দেশে ধূপদাহ করিবার ও পেয় নৈবেদ্য ঢালিবার যে মানত করিয়াছি, তাহা অবশ্য সিদ্ধ করিব;’ ভাল, তোমাদের মানত অটল কর, তোমাদের মানত সিদ্ধ কর।
যেরেমিয়া অধ্যায় 44
26 অতএব, হে মিসর-দেশনিবাসী সমস্ত যিহূদী, সদাপ্রভুর বাক্য শুন; সদাপ্রভু কহেন, দেখ, আমি আপন মহানামে শপথ করিয়াছি, ‘জীবন্ত প্রভু সদাপ্রভুর দিব্য,’ এই কথা বলিয়া মিসর দেশস্থ কোন যিহূদী আমার নাম আর মুখে আনিবে না।
27 দেখ, আমি তাহাদের অমঙ্গলের নিমিত্ত জাগরূক, মঙ্গলের নিমিত্ত নয়; তাহাতে মিসর দেশস্থ সমস্ত যিহূদার লোক খড়্গ, দুর্ভিক্ষ ও মহামারী দ্বারা নিঃশেষে বিনষ্ট হইবে।
যেরেমিয়া অধ্যায় 44
28 খড়্গ হইতে উত্তীর্ণ অতি অল্প লোক মিসর দেশ হইতে যিহূদা দেশে ফিরিয়া যাইবে; ইহাতে যিহূদার অবশিষ্ট সমস্ত লোক, যাহারা মিসর দেশে প্রবাস করণার্থে এখানে আসিয়াছে, তাহারা জানিতে পারিবে যে, কাহার বাক্য অটল থাকিবে, আমার কি তাহাদের।
29 সদাপ্রভু কহেন, তোমাদের কাছে ইহাই চিহ্ন হইবে যে, আমি এই স্থানে তোমাদিগকে প্রতিফল দিব, যেন তোমরা জানিতে পার যে, তোমাদের বিরুদ্ধে আমার বাক্য অবশ্য অটল থাকিবে, অমঙ্গলের নিমিত্ত।
যেরেমিয়া অধ্যায় 44
30 সদাপ্রভু এই কথা কহেন, দেখ, আমি যেমন যিহূদা-রাজ সিদিকিয়কে তাহার প্রাণনাশে সচেষ্ট শত্রু বাবিল-রাজ নবূখদ্রিৎসরের হস্তে সমর্পণ করিয়াছি, তেমনি মিসর-রাজ ফরৌণ-হফ্রাকেও তাহার শত্রুদের হস্তে, যাহারা তাহার প্রাণনাশে সচেষ্ট, তাহাদের হস্তে সমর্পণ করিব।