Bengali বাইবেল

বংশাবলি ২ total 36 অধ্যায়গুলির

বংশাবলি ২

বংশাবলি ২ অধ্যায় 18
বংশাবলি ২ অধ্যায় 18

1 যিহোশাফট অতিশয় ঐশ্বর্য্যবান্‌ ও প্রতাপান্বিত হইলেন, আর তিনি আহাবের সহিত কুটুম্বিতা করিলেন।

2 কয়েক বৎসর পরে তিনি শমরিয়াতে আহাবের নিকটে গেলেন; আর আহাব তাঁহার নিমিত্ত ও তাঁহার সঙ্গী লোকদের নিমিত্ত অনেক মেষ ও বলদ মারিলেন, এবং রামোৎ-গিলিয়দে যাইতে তাঁহাকে প্ররোচিত করিলেন।

3 আর ইস্রায়েল-রাজ আহাব যিহূদা-রাজ যিহোশাফটকে কহিলেন, আপনি কি রামোৎ-গিলিয়দে আমার সঙ্গে যাইবেন? তিনি উত্তর করিলেন, আমি ও আপনি এবং আমার লোক ও আপনার লোক, সকলেই এক, আমরা যুদ্ধে আপনার সঙ্গী হইব।

বংশাবলি ২ অধ্যায় 18

4 পরে যিহোশাফট ইস্রায়েলের রাজাকে কহিলেন, বিনয় করি, অদ্য সদাপ্রভুর বাক্যের অন্বেষণ করুন।

5 তাহাতে ইস্রায়েলের রাজা ভাববাদিগণকে, চারি শত জনকে, একত্র করিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, আমরা রামোৎ-গিলিয়দে যুদ্ধযাত্রা করিব, না আমি ক্ষান্ত হইব? তখন তাহারা কহিল, যাত্রা করুন, ঈশ্বর তাহা মহারাজের হস্তে সমর্পণ করিবেন।

6 কিন্তু যিহোশাফট কহিলেন, ইহাদের ছাড়া সদাপ্রভুর এমন কোন ভাববাদী কি এ স্থানে নাই যে, আমরা তাঁহারই কাছে অন্বেষণ করিতে পারি?

বংশাবলি ২ অধ্যায় 18

7 ইস্রায়েলের রাজা যিহোশাফটকে কহিলেন, আমরা যাহার দ্বারা সদাপ্রভুর কাছে অন্বেষণ করিতে পারি, এমন আর এক জন আছে, কিন্তু আমি তাহাকে ঘৃণা করি, কেননা আমার উদ্দেশে সে কখনই মঙ্গলের নয়, সর্ব্বদাই কেবল অমঙ্গলের ভাবোক্তি প্রচার করে; সে ব্যক্তি যিম্লের পুত্র মীখায়। যিহোশাফট কহিলেন, মহারাজ, এমন কথা কহিবেন না।

8 তখন ইস্রায়েলের রাজা এক জন কর্ম্মচারীকে ডাকিয়া আজ্ঞা দিলেন, যিম্লের পুত্র মীখায়কে শীঘ্র লইয়া আইস।

বংশাবলি ২ অধ্যায় 18

9 সেই সময়ে ইস্রায়েলের রাজা ও যিহূদা-রাজ যিহোশাফট আপন আপন রাজবস্ত্র পরিধান করিয়া আপন আপন সিংহাসনে বসিয়াছিলেন, তাঁহারা শমরিয়ার দ্বার-প্রবেশস্থানের খোলা জায়গায় বসিয়াছিলেন, এবং তাঁহাদের সম্মুখে ভাববাদীরা সকলে ভাবোক্তি প্রচার করিতেছিল।

10 আর কনানার পুত্র সিদিকিয় লৌহময় শৃঙ্গযুগল নির্ম্মাণ করিয়া কহিল, সদাপ্রভু এই কথা কহেন, ‘ইহা দ্বারা আপনি অরামের বিনাশ সাধন পর্য্যন্ত গুঁতাইবেন’।

বংশাবলি ২ অধ্যায় 18

11 আর ভাববাদীরা সকলেই তদ্রূপ ভাবোক্তি প্রচার করিল, কহিল, আপনি রামোৎ-গিলিয়দে যাত্রা করুন, কৃতকার্য্য হউন, কেননা সদাপ্রভু তাহা মহারাজের হস্তে সমর্পণ করিবেন।

12 আর যে দূত মীখায়কে ডাকিতে গিয়াছিল, সে তাঁহাকে কহিল, দেখুন, ভাববাদিগণের বাক্য সকল এক মুখে রাজার পক্ষে মঙ্গলসূচনা করে; অতএব বিনয় করি, আপনার বাক্য উহাদের কোন এক জনের বাক্যের সমানার্থক হউক, আপনি মঙ্গলসূচক কথা বলুন।

বংশাবলি ২ অধ্যায় 18

13 মীখায় কহিলেন, জীবন্ত সদাপ্রভুর দিব্য, আমার ঈশ্বর যাহা বলেন, আমি তাহাই বলিব।

14 পরে তিনি রাজার নিকটে আসিলে রাজা তাঁহাকে জিজ্ঞাসা করিলেন, মীখায়, আমরা রামোৎ-গিলিয়দে যুদ্ধ করিতে যাইব, না আমি ক্ষান্ত হইব? তিনি কহিলেন, আপনারা যাত্রা করুন, কৃতকার্য্য হউন; তথাকার লোকেরা আপনাদের হস্তে সমর্পিত হইবে।

15 রাজা তাঁহাকে কহিলেন, তুমি সদাপ্রভুর নামে আমাকে সত্য ব্যতিরেকে আর কিছুই বলিবে না, আমি কত বার তোমাকে এই শপথ করাইব?

বংশাবলি ২ অধ্যায় 18

16 তখন তিনি কহিলেন, আমি সমস্ত ইস্রায়েলকে অরক্ষক মেষপালের ন্যায় পর্ব্বতগণের উপরে ছিন্নভিন্ন দেখিলাম, এবং সদাপ্রভু কহিলেন, উহাদের স্বামী নাই; উহারা প্রত্যেকে কুশলে আপন আপন বাটীতে ফিরিয়া যাউক।

17 তখন ইস্রায়েলের রাজা যিহোশাফটকে কহিলেন, আমি কি অগ্রেই আপনাকে বলি নাই যে, এই ব্যক্তি আমার উদ্দেশে মঙ্গলের নয়, কেবল অমঙ্গলের ভাবোক্তি প্রচার করে?

18 আর মীখায় কহিলেন, এ জন্য আপনারা সদাপ্রভুর বাক্য শুনুন; আমি দেখিলাম, সদাপ্রভু তাঁহার সিংহাসনে উপবিষ্ট, আর তাঁহার দক্ষিণে ও বামে স্বর্গের সমস্ত বাহিনী দণ্ডায়মান।

বংশাবলি ২ অধ্যায় 18

19 পরে সদাপ্রভু কহিলেন, ইস্রায়েল-রাজ আহাব যেন যাত্রা করিয়া রামোৎ-গিলিয়দে পতিত হয়, এই জন্য কে তাহাকে মুগ্ধ করিবে? তাহাতে কেহ এক প্রকারে, কেহ বা অন্য প্রকারে কহিল।

20 শেষে এক আত্মা গিয়া সদাপ্রভুর সম্মুখে দাঁড়াইয়া কহিল, আমি তাহাকে মুগ্ধ করিব।

21 সদাপ্রভু কহিলেন, কিসে? সে কহিল, আমি গিয়া তাহার সমস্ত ভাববাদীর মুখে মিথ্যাবাদী আত্মা হইব। তখন তিনি কহিলেন, তুমি তাহাকে মুগ্ধ করিবে, কৃতকার্য্যও হইবে; যাও, সেইরূপ কর। অতএব দেখুন,

বংশাবলি ২ অধ্যায় 18

22 সদাপ্রভু আপনার এই সমস্ত ভাববাদীর মুখে মিথ্যাবাদী আত্মা দিয়াছেন; আর সদাপ্রভু আপনার বিষয়ে অমঙ্গলের কথা কহিয়াছেন।

23 তখন কনানার পুত্র সিদিকিয় নিকটে আসিয়া মীখায়ের গালে চড় মারিয়া কহিল, সদাপ্রভুর আত্মা তোর সঙ্গে কথা কহিবার জন্য আমার নিকট হইতে কোন্‌ পথে গিয়াছিলেন?

24 মীখায় কহিলেন, দেখ, যে দিন তুমি লুকাইবার জন্য এক ভিতরের কুঠরীতে যাইবে, সেই দিন তাহা জানিবে।

বংশাবলি ২ অধ্যায় 18

25 পরে ইস্রায়েলের রাজা বলিলেন, মীখায়কে ধরিয়া পুনরায় নগরাধ্যক্ষ আমোনের ও রাজপুত্র যোয়াশের নিকটে লইয়া যাও।

26 আর বল, রাজা এই কথা কহেন, ইহাকে কারাগারে বদ্ধ করিয়া রাখ, এবং যে পর্য্যন্ত আমি কুশলে ফিরিয়া না আসি, সে পর্য্যন্ত ইহাকে আহারার্থে কষ্টযুক্ত অন্ন ও কষ্টযুক্ত জল দেও।

27 মীখায় কহিলেন, যদি আপনি কোন মতে কুশলে ফিরিয়া আইসেন, তবে সদাপ্রভু আমার দ্বারা কথা কহেন নাই। আর তিনি কহিলেন, হে জাতিগণ, তোমরা সকলে শ্রবণ কর।

বংশাবলি ২ অধ্যায় 18

28 পরে ইস্রায়েলের রাজা ও যিহূদা-রাজ যিহোশাফট রামোৎ-গিলিয়দে যাত্রা করিলেন।

29 আর ইস্রায়েলের রাজা যিহোশাফটকে কহিলেন, আমি অন্য বেশ ধারণ করিয়া যুদ্ধে প্রবেশ করিব, আপনি রাজবস্ত্র পরিধান করুন। পরে ইস্রায়েলের রাজা অন্য বেশ ধরিলে তাঁহারা যুদ্ধে প্রবেশ করিলেন।

30 অরামের রাজা আপন রথাধ্যক্ষ সেনাপতিগণকে এই আজ্ঞা দিয়াছিলেন, তোমরা কেবল ইস্রায়েলের রাজা ব্যতিরেকে ক্ষুদ্র কি মহান্‌ আর কাহারও সহিত যুদ্ধ করিও না।

বংশাবলি ২ অধ্যায় 18

31 পরে রথাধ্যক্ষগণ যিহোশাফটকে দেখিয়া উনিই অবশ্য ইস্রায়েলের রাজা, এই বলিয়া তাঁহার সহিত যুদ্ধ করিবার জন্য ঘুরিয়া আসিলেন; তখন যিহোশাফট চেঁচাইয়া উঠিলেন, আর সদাপ্রভু তাঁহার সাহায্য করিলেন, এবং ঈশ্বর তাঁহার নিকট হইতে তাঁহাদিগকে যাইতে প্রবৃত্তি দিলেন।

32 বস্তুতঃ রথাধ্যক্ষগণ যখন দেখিলেন, ইনি ইস্রায়েলের রাজা নহেন, তখন তাঁহার পশ্চাদগমন হইতে ফিরিয়া গেলেন।

বংশাবলি ২ অধ্যায় 18

33 কিন্তু একটা লোক লক্ষ্য ব্যতিরেকে ধনুক আকর্ষণ করিয়া ইস্রায়েলের রাজার উদর-ত্রাণের ও বুকপাটার সন্ধিস্থানে বাণাঘাত করিল; তাহাতে তিনি আপন সারথিকে কহিলেন, হস্ত ফিরাইয়া সৈন্যদলের মধ্য হইতে আমাকে লইয়া যাও, আমি দারুণ আঘাত পাইয়াছি।

34 সেই দিবস তুমুল যুদ্ধ হইল; আর ইস্রায়েলের রাজা অরামীয়দের সম্মুখে সন্ধ্যাকাল পর্য্যন্ত রথে আপনাকে দণ্ডায়মান রাখিলেন, কিন্তু সূর্য্যাস্তকালে মরিয়া গেলেন।

বংশাবলি ২ অধ্যায় 18